মতামত/কলাম প্রকাশনার সময়: রবিবার ১৮, অগাস্ট ২০২৪

পলিথিন নিষিদ্ধের আইন কবে কার্যকর হবে?

Share on:

পলিথিনের ব্যবহার কোনোভাবে থামাতে দিচ্ছে না। পলিথিন সামগ্রি জনগণের হাতে হাতে। পরিবার, সমাজ রাষ্ট্রের রন্দ্রে রন্দ্রে এই পণ্যের ব্যবহার আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আইনে আছে, পলিথিনের উৎপাদনকারীর জন্য ১০ বছরের জেল ও ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।


তবে প্রথমে বছর দু’য়েক এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকলেও পরে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ বিষয়ে দুর্নীতি, রাজনৈতিক প্রভাবসহ নানা কারণে উদাসীনতা প্রদর্শন করতে থাকে। আর সে সুযোগে পলিথিনের উৎপাদন, বিক্রি এবং ব্যবহার পুনরায় শুরু হয়ে যায়।

পলিথিন বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে পলিথিনের উৎপাদন বাজারজাত ব্যবহার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ না করলে ভবিষ্যতের জন্য পরিবেশের আরো বড় হুমকি অপেক্ষা করছে। এখন শহর নগর গ্রাম সর্বত্রয়ই প্রকাশ্যে ব্যবহার হচ্ছে পলিথিন ব্যাগ। যদিও বিভিন্ন সময়ে পরিবেশ অধিদফতরের উদ্যোগে উৎপাদনকারী কারখানা বন্ধ ও শপিং ব্যাগ জব্দ করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার খবর গণমাধ্যমে আসছে; কিন্তু তারপরও পলিথিনের আগ্রাসন কমছে না কিছুতেই। এতে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য পড়ছে চরম হুমকিতে।

সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, দেশে একাধিক শক্তিশালি সিন্ডিকেট পলিথিনব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। আর এসব সিন্ডিকেটের কারণেই পরিবেশবান্ধব ব্যাগের ব্যবহার নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। পলিথিন উৎপাদন ও বিক্রিতে জেল জরিমানার বিধান থাকলেও কঠোর প্রয়োগ না থাকায় পলিথিন সিন্ডিকেটগুলো দিনদিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। উল্লেখ্য, পলিথিনের ব্যাগ এমন একটি বস্তু যার দ্বারা দেশের প্রতিটি পরিবারই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর্থিক ক্ষতির পশাপাশি স্বাস্থ্য ও পরিবেশের চরম ক্ষতি হয় পলিথিনের ব্যবহারে। স্লো পয়জন বলতে যা বোঝায়, পলিথিন তাই। এর মধ্য থেকে বিসোফেনোল নামক বিষ নির্গত হয় এবং খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে মিশে যায়। পলিথিন ধীরে ধীরে মানুষকে মৃত্যুর দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।

পলিথিন উৎপাদনকারী থেকে শুরু করে এটির বাজার জাতকারী ও ব্যবহারকারী পর্যন্ত সবাই চরমভাবে স্বাস্থ্য

ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এই আশঙ্কা কোনোভাবেই দুর্বল ভাবা উচিত নয়। এই পলিথিন ব্যবহারে চর্মরোগ, ক্যান্সার সহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে মানুষ। পলিথিনে মাছ, মাংস মুড়িয়ে রাখলে কিছুক্ষণ পর এতে রেডিয়েশন তৈরি হয়ে খাবার বিষাক্ত হয়ে ্ওঠে। পলিথিনে রং করার জন্য ক্যাডমিয়াম মানব শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। উন্নত দেশগুলোয় ক্যাডমিয়াম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পলিথিন অপচনশীল বিধায় শহরে গ্রামে সকল এলাকায় তার ক্ষতিকর প্রভাব রেখে যায়। পলিথিন মাটির সঙ্গে মেশে না। ডাস্টবিনে ফেলা পলিথিন বৃষ্টির পানির সঙ্গে ড্রেনে ঢুকে পড়ে। ফলে শহরে নালা নর্দমার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা অকেজো হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। পলিথিন নদীর তলদেশে জমা হয়ে ভরাট করে ফেলে। পলিথিন পোড়ালে তীব্র বায়ুদূষণ ঘটে। পলিথিন পোড়ানোর ফলে বিষাক্ত গ্যাস কার্বন মনোক্সাইড বেড়ে য্ওায়ায় মানুষের শরীরে হাপানি, ব্রঙ্কাইটিস, শ^াসকষ্ট ইত্যাদি জটিল রোগের সৃষ্টি হয়।

পলিথিন নষ্ট করে দেয় কৃষি প্রধান বাংলাদেশের উৎপাদনযোগ্য জমিসমূহের উর্বরাশক্তি। অপচনশীল হ্ওয়ার কারণে দীর্ঘদিন প্রকৃতিতে অবিকৃত অবস্থায় থাকায় মাটিতে সূর্যালোক, পানি ও আন্যান্য উপাদান প্রবেশ করতে না পারায় মাটির উর্বরতা শক্তি কমে যায়। মাটিতে উপকারি ব্যাকটেরিয়া বিস্তারে বাধা সৃষ্টি করে। পরিত্যক্ত পলিথিন মাটিতে বীজের শিকড় প্রসারিত হতে বাধা সৃষ্টি করে। মাটি থেকে পুষ্টি উপাদান সংগ্রহ করতে দেয় না। ফলে, কোনোভাবে গাছ বেচে থাকলেও তাতে ফল ধরে না। ফল ধরলেও তা নিম্নমানের। যে এলাকায় মাটির গভীরে পলিথিন আছে সেখানে ঘর বাড়ি নির্মাণ করলে ধসে পড়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে নিম্নমাত্রায় ভূমিকম্পেও পলিথিনমিশ্রিত মাটির উপর নির্মিত দালান কোটা ধসে পড়ে ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি সংঘটিত হয়। তাছাড়া আরো অনেকভাবে পলিথিনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে পরিবেশ ও জনজীবনে।

সঙ্গতকারণে পলিথিনের চরম ক্ষতিকারক দিক বিবেচনায় এর উৎপাদন, বাজারজাতকরণ এবং ব্যবহার বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই। আমরা মনে করি, জনস্বাস্থ্য রক্ষা এবং দেশের পরিবেশকে দূষণমূক্ত রাখা সরকারের একটি প্রধান গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এই দায়িত্বের অংশ হিসেবে জনস্বাস্থ্যের কল্যানে সরকার সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখার জন্যে সারাদেশে বৃক্ষরোপণ ও বনায়ন উপর যেমন অত্যাধিক গুরুত্ব দিয়ে আসছে, তেমনি জনস্বাস্থ্যের জন্যে চরম ক্ষতিকর পলিথিন, অপচনশীল মোড়ক এবং বিভিন্ন বর্জ্যরে বিরুদ্ধ্ওে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।

তবে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যবান্ধব উপায়ে কাগজ ও পাটের উৎপাদন এবং ব্যবহার বৃদ্ধিসহ পরিকল্পিতভাবে নানা বিকল্প ব্যবস্থাও গড়ে তুলতে হবে। বিকল্প পন্থায় পাটজাত পণ্য দিয়ে মানব ব্যবহার্য অপরিহার্য পণ্য তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে। পরিবেশ অধিদপ্তর, জনপ্রতিনিধি, মসজিদের ইমাম, কøাব সমিতি, স্কুলের পাঠ্যসূচিতে পলিথিন উৎপাদন ব্যবহারের আগ্রাসন সম্পর্কে সচেতনতা মূলক উদ্যেগ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে। এর সাথে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার বলিষ্ঠ উদ্যোগ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে গ্রহণ করতে হবে।

দৈনিক সংগ্রাম