পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও গ্রাফিতি দেখে দেশবাসী মুগ্ধ
Share on:
আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাতের পর আমাদের তরুণ সমাজ ও ছাত্রছাত্রীদের ট্রাফিক দায়িত্ব পালন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও গ্রাফিতি দেখে দেশবাসী মুগ্ধ।
তারা প্রমাণ করেছে, ইচ্ছা করলেই ভালো কাজ করা সম্ভব। বিশেষ করে দেশের জন্য ভালো কিছু করা যায়। দেশকে সুশৃঙ্খল ও সুন্দর করা যায়।
আমাদের কারও কল্পনায় ছিল না, এ ধরনের একটা পরিবর্তন আসবে। এরই মধ্যে পরিস্থিতির এক পর্যায়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা একেবারেই ভেঙে পড়ে। পুলিশ বাহিনী দায়িত্ব পালন থেকে সরে দাঁড়ায়। আমরা লক্ষ্য করেছি, ৬ আগস্ট থেকে আমাদের ছাত্রছাত্রী বিভিন্ন সড়কে যানজট নিরসনে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের সময় ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন গণপরিবহন ও স্থাপনা সরানোর কাজে নিজেদের নিয়োজিত করেছে। তারা রাস্তাঘাটে পড়ে থাকা বাঁশ, লাকড়ি, ইট, ইটের খোয়া, বালু ও মাটি সরানোর কাজে নিরলসভাবে যুক্ত রয়েছে। তাদের কাজ দেখে আমি ব্যক্তিগতভাবে আবেগাপ্লুত। শুধু ভেবেছি, দেশটা যদি সত্যিকারভাবে পরিবর্তন করা যেত, পরিবর্তন হতো তাহলে কতই না ভালো হতো! তবে এখন আশা জেগেছে। তরুণ প্রজন্ম এগিয়ে আসছে। দেশও এগিয়ে যাবে।
কোনো গাড়ি সন্দেহ হলে তারা চেক করেও দেখছে। সিট বেল্ট পরার জন্য সচেতন করতে দেখা যাচ্ছে। মোটরসাইকেলের যাত্রীদের হেলমেট পরতে বাধ্য করছে, সচেতন করছে। রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে এভাবে ছাত্রছাত্রীদের সড়ক-মহাসড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে আগে কখনও দেখা যায়নি। রাজনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনা রাজনৈতিক লোকদের কাজ। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা দেখভাল করার জন্য দায়িত্ব থাকে নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও সরকারের পদত্যাগের মাধ্যমে সবকিছু ভেঙে পড়ায় আমাদের ছাত্রছাত্রী আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয়। তারা ঢাকা শহর থেকে শুরু করে দেশের বিভাগীয় শহর, জেলা শহর এবং প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে দায়িত্ব পালন করছে। ১৩ আগস্ট থেকে শিক্ষার্থীরা পুলিশ ভাইদের নিয়ে একসঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে।
আমাদের ছাত্রছাত্রী শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও ট্রাফিক দায়িত্বই পালন করছে না; পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও দেয়াল লিখন কাজও করে যাচ্ছে। স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আঙিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ সম্পন্ন করে দেয়াল লিখন ও গ্রাফিতি শুরু করে। ছাত্রছাত্রী নিজ উদ্যোগে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান কার্যক্রম শুরু করে এবং এ কার্যক্রম সারাদেশে এখনও চলমান। দেয়াল লিখন ও গ্রাফিতি কাজে ছাত্রছাত্রী নিজেদের মেধা ও মননের শৈল্পিক বিকাশ ঘটিয়ে দারুণ সব শিল্পকর্ম উপস্থাপন করছে। দেয়াল লিখন ও গ্রাফিতিতে দেশ ও দেশের নিজস্ব সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, স্বাধীনতার মূলমন্ত্র, মুক্তিযুদ্ধ, দেশপ্রেম এবং স্বদেশ চেতনার উদ্দীপ্ত বহ্নিশিখা তুলে ধরা হয়েছে।
এখন হয়তো একটা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ছাত্রছাত্রী এসব কাজ করছে। কিন্তু এই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও সংস্কার কাজ অনেক আগে থেকেই প্রয়োজন ছিল। আমাদের উচিত ছিল ছাত্রছাত্রীর সুযোগ করে দেওয়া। তাহলে আজকে যে অবস্থা তৈরি হয়েছে, তা হয়তো দেখতে হতো না। সরকার পদত্যাগের পর দেশ গঠনে এবারই প্রথম ছাত্রছাত্রী সরাসরি অংশগ্রহণ করে।
আমাদের দেশে ভালো কাজের মূল্যায়ন কম হয়। আমাদের তরুণ প্রজন্মের ছাত্রছাত্রী যেভাবে একযোগে বিভিন্ন সংস্কার কাজ করে দেখিয়ে দিচ্ছে, এটা আমাদের জন্য একটি বড় শিক্ষা। স্বাধীনতার পর যখন যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে, সবাই নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত ছিল। সব সরকারের আমলেই অনিয়ম, ঘুষ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও বিচারহীনতা এতটাই ব্যাপক ছিল যে, সাধারণ মানুষ ছিল দিশেহারা। এবার হয়তো দেশে পরিবর্তন আসবে। পরিবর্তন আসার সময় এসেছে। আমাদের প্রিয় ছাত্রছাত্রী এ সুযোগ করে দিয়েছে। এ জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।