‘প্রতারণা’ মানুষের হক নষ্ট করে
Share on:
কারও সঙ্গে প্রতারণা করা, কাউকে ধোঁকা দেওয়া কিংবা ঠকানো ইসলামে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। শরিয়তের পাশাপাশি এটি দুনিয়ার প্রচলিত আইনেও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ইসলামী শরিয়তে ধোঁকা বা প্রতারণায় তিনটি গুরুতর অপরাধ সংঘটিত হয়।
এ কারণে প্রতারক, ধোঁকাবাজ কিংবা ঠকবাজ সম্পর্কে কঠিন ঘোষণা দিয়েছেন মানবতার মুক্তির দিশারি মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)।
হাদিস শরিফে বর্ণিত, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এরশাদ করেন–
‘যে ব্যক্তি আমাদের ধোঁকা দেয় সে ব্যক্তি আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।’ (মুসলিম)
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) মানুষকে কেনাবেচায় ধোঁকা দিতে নিষেধ করেছেন। হাদিস শরিফে বর্ণিত,
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এরশাদ করেন, ‘বাজারে পৌঁছার আগেই অল্প দামে কেনার জন্য ব্যবসায়ী কাফেলার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে শলা-পরামর্শ করবে না। পশুর স্তনে দুধ জমিয়ে রাখবে না এবং কেউ অন্যের পণ্য চালানোর জন্য প্রতারণার অপচেষ্টা করবে না।’ (তিরমিজি)
শুধু তাই নয়, বেচার সময় ওজনে কম দেওয়া এবং নেওয়ার সময় ওজনে বেশি নেওয়া দুনিয়া ও পরকালের জন্য গুরুতর অপরাধ। এ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনের সুরা মুতাফফিফিনের ১-৭ আয়াতে এরশাদ করেন: ‘যারা মাপে কম দেয়, তাদের জন্য রয়েছে দুর্ভোগ, যারা লোকের কাছ থেকে যখন মেপে নেয়, তখন পূর্ণমাত্রায় নেয় এবং যখন লোকদের মেপে দেয় কিংবা ওজন করে দেয়, তখন কম করে দেয়। তারা কি চিন্তা করে না যে, তারা পুনরুত্থিত হবে। সেই মহাদিনে, যেদিন মানুষ দাঁড়াবে বিশ্ব পালনকর্তার সামনে। এটা কিছুতেই উচিত নয়, নিশ্চয়ই পাপাচারীদের আমলনামা সিজ্জিনে আছে।’
অন্যায়ভাবে কারও ক্ষতি করা কিংবা প্রতারণার মাধ্যমে অন্যের সম্পদ গ্রাস করার কারণে এটি হক্কুল ইবাদ বা বান্দার হক নষ্ট হওয়ার শামিল। ইসলামের দৃষ্টিতে এটি ভয়ংকর অপরাধ। যে অপরাধ আল্লাহতায়ালা ক্ষমা করবেন না।
যার হক নষ্ট করা হবে তার সঙ্গেই সমঝোতা করতে হবে। ধোঁকা-প্রতারণায় বান্দার হক নষ্ট করার যথাযথ সমাধানে ব্যর্থ হলে পরকালে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। ফলে পরকালে বিচারের দিন মহান আল্লাহ ন্যায়বিচারের মাধ্যমে ধোঁকা বা প্রতারণাকারীর নেকিগুলো যার সঙ্গে ধোঁকা দেওয়া বা প্রতারণা করা হয়েছে, তাকে দিয়ে দেবেন। এখানেই শেষ নয়, প্রতারিত ব্যক্তির গোনাহগুলো ধোঁকাবাজ-প্রতারকের কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া হবে। সুতরাং ধোঁকাবাজ বা প্রতারক হয়ে পড়বে আমলহীন নিঃস্ব। অবশেষে প্রতারক ব্যক্তি জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। আর যদি প্রতারক বা ধোঁকা দেওয়া ব্যক্তি দুনিয়ায় প্রতারণার সম্পদ ও সংঘটিত বিষয়ের সমাধান করে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তবেই সে এ অপরাধ থেকে মুক্ত হতে পারে।
ধোঁকা বা প্রতারণা প্রচলিত আইনের লঙ্ঘন ও শান্তি বিনষ্টকারী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। দেশের প্রচলিত আইনে ৪১৫ ও ৪২০ ধারায় এ অপরাধ চিহ্নিত। রাষ্ট্রীয় আইনে যার শাস্তি সর্বোচ্চ সাত বছর কারাদণ্ড।
তাই রাষ্ট্রের কোনো নাগরিক যদি অন্য কোনো নাগরিকের সঙ্গে বস্তু, সম্পদ বা যে কোনো বিষয় নিয়ে ধোঁকা বা প্রতারণার আশ্রয় নেয়, তবে ওই ব্যক্তির শান্তি, নিরাপত্তা ও সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে এ দুটি ধারায় শাস্তি ও জরিমানার বিধান রেখেছে রাষ্ট্র।
আমাদের মনে রাখতে হবে, ধোঁকা বা প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ দিয়ে দান-খয়রাত বা কাউকে সহযোগিতা করা, ধর্মীয় কাজ যেমন হজ কিংবা কোরবানি, মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণ, জনসাধারণের জন্য রাস্তাঘাট-কালভার্ট ইত্যাদি নির্মাণ কোনোটিই বৈধ নয়। প্রতারণা বা ধোঁকা দেওয়া হারাম হওয়ায় এর মাধ্যমে অর্জিত আয়ও নিশ্চিতভাবে হারাম। আর হারাম পন্থায় অর্জিত অর্থ বা সম্পদ ভোগ করলে তার কোনো ইবাদতই মহান আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না।