নিষিদ্ধ জামায়াত-শিবির: নতুন উপসর্গগুলোর মোকাবিলায় সফল হবে কী সরকার?
Share on:
অবশেষে নিষিদ্ধ হয়েছে জামায়াতে ইসলামী নামের রাজনৈতিক দল, এর সহযোগী ছাত্রশিবির। বৃহস্পতিবার বিকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা হয়েছে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮(১) ধারা অনুযায়ী এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন।
এ প্রজ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার অধিকার হারালো স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতাকারী দলটি।
জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রসংঘ (ছাত্রশিবিরের পূর্বতন নাম) যে স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, এটা দিবালোকের মতো স্পষ্ট। এ দুই সংগঠন শুধু রাজনৈতিকভাবেই মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেনি, সংঘটিত করেছে অসংখ্য মানবতাবিরোধী অপরাধ। মুক্তিযুদ্ধকালীন সংঘটিত তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। এ দুই সংগঠনের বিরুদ্ধে পাকিস্তানি সৈন্যদের দ্বারা সংঘটিত হত্যা-ধর্ষণে সহযোগিতা করারও অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াতের কয়েকজন শীর্ষ পর্যায়ের নেতার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হয়েছিল এবং সেসব রায় কার্যকরও করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, স্বাধীনতা অর্জনের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ব্যবস্থা করেছিলেন সংবিধানে। ফলে জামায়াত ও অন্যান্য ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল রাজনীতি করতে পারছিল না। কিন্তু জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর সংবিধানের এ অংশটুকু রহিত করা হয় এবং সেই সুযোগে জামায়াত ও শিবির রাজনীতি করার অধিকার পায়। তবে সুশীল সমাজ এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল জনগণের একটি বড় অংশ বরাবরই জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে এসেছে। অন্যদিকে দুই বড় রাজনৈতিক দল এই দাবি মানেনি, বরং রাজনৈতিক কারণে একটি দল জামায়াতকে ক্ষমতার অংশীদার করেছে। চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় জামায়াত-শিবির ভয়াবহ নাশকতা ঘটিয়েছে, এমন অভিযোগ এনে বর্তমান সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের বলে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার মধ্য দিয়ে অনেকের দাবি পূরণ করেছে।
তবে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার পর বেশকিছু প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রথমত, জামায়াত নিষিদ্ধ হওয়ার পর দলটির বিপুলসংখ্যক যে কর্মী-সমর্থক, তারা কী করবেন? তারা কি ভিন্ন কোনো নামে দল গঠন করে রাজনীতিতে ফিরে আসবেন? অথবা তারা কি রাজনীতির গোপন তৎপরতা চালু করবেন, যেটাকে আমরা বলি আন্ডারগ্রাউন্ড পলিটিক্স? দ্বিতীয়টি ঘটলে তা দেশের জন্য বয়ে আনবে আরও কোনো বিপদ। দ্বিতীয় প্রশ্ন, জামায়াতে ইসলামী আর্থিকভাবে একটি শক্তিশালী দল ছিল, অনেক উৎস থেকে দলটি অর্থ পেয়ে থাকে। বিদেশি অর্থ তো আছেই, দেশেও রয়েছে তাদের এমন অনেক প্রতিষ্ঠান, যেগুলো থেকে প্রচুর অর্থের জোগান পেত তারা। এসব প্রতিষ্ঠানের কী হবে? ব্যাংক ও চিকিৎসা খাতে জামায়াতের এমন কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেগুলোর সঙ্গে জনস্বার্থের সম্পর্ক আছে। বলা যেতেই পারে, জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করার পর রাষ্ট্র ও সমাজে যেসব উপসর্গ দেখা দেবে, সেগুলো সরকার কীভাবে মোকাবিলা করবে, তা এক বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দেবে। শুধু বর্তমান সরকার নয়, আগামীতে যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তাদের এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই দেশ শাসন করতে হবে।