নতুন গভর্নরের সামনে যত চ্যালেঞ্জ
Share on:
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রখ্যাত অর্থনীতিবীদ আহসান এইচ মনসুরকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি একজন পরিচিত ও প্রাজ্ঞ অর্থনীতিবিদ।
একসময়ে শিক্ষকতা করলেও পরবর্তীতে জীবনের লম্বা একটি সময় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল তথা আইএমএফ-এর বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি পরিচালনাতেও তার সরাসরি অভিজ্ঞতা আছে। তিনি সাবেক অর্থমন্ত্রী ওয়াহিদুল হকের উপদেষ্টা হিসেবে এর আগেও ভূমিকা পালন করেছেন।
তবে এবার তিনি এমন একটি সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতো স্পর্শকাতর একটি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নিলেন যখন দেশের অর্থনীতি প্রচন্ড নাজুক অবস্থানে রয়েছে। তিনি নিজেও এ সম্পর্কেও ভালভাবেই অবগতও আছেন। গভর্নরের দায়িত্ব পাওয়ার পর মিডিয়ার সাথে কথোপকথোনেও তাকে বেশ সংযত ও বাস্তববাদী মনে হয়েছে। তিনি অতি প্রত্যাশা না করতে বলেছেন। সহসাই সব আর্থিক সংকট কাটিয়ে ওঠা যাবে না বলেও সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকার রাজনৈতিক নিপীড়নের বাইরে সবচেয়ে বেশি অনাচার করেছে অর্থনীতি সংশ্লিষ্ট খাতসমূহে। দেশের অর্থনীতিকে তারা প্রায় পঙ্গুই বানিয়ে দিয়ে গেছে। দেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা এ মুহূর্তে উচ্চ মূল্যস্ফীতি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাইয়ে খাদ্য-বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতিসহ ভোক্তা মূল্যসূচক আগের মাসের তুলনায় ১ দশমিক ৯৪ বেসিস পয়েন্টে বেড়ে ১১.৬৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছাড়িয়েছে ১৪ শতাংশ যা ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। অর্থনীতির এমন টালমাটাল অবস্থায় নতুন গভর্নরের প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে মূল্যস্ফীতি সামাল দেয়া। এক্ষেত্রে অর্থনীতিকে সচল ও স্থিতিশীল রাখাও বড়ো একটি চ্যালেঞ্জ। যদি প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়, তাহলে সার্বিক চাহিদা সামাল দেওয়ার জন্য মুদ্রানীতিতেও পরিবর্তন আনা যেতে পারে।
মূল্যস্ফীতি ছাড়াও দেশের ব্যাংক খাতে বর্তমানে বড় একটি সমস্যা নজিরবিহীন খেলাপি ঋণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চের শেষে এসে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকায়, যা এযাবতকালে সর্বোচ্চ। দায়িত্ব প্রাপ্তির পর মিডিয়ার সাথে কথা বলতে গিয়ে নতুন গভর্নর খেলাপি ঋণ সংকট মোকাবেলায় কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। এটি ভালো উদ্যোগ; তবে এ ধরনের কমিশন গঠন বা কাজ করতেও বেশ কিছুটা সময়ের প্রয়োজন। তাই আপাত কিছু পদক্ষেপও নেওয়া জরুরি।
বর্তমান ব্যাংকিং খাতে দুর্বল ব্যাংকের সংখ্যা অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় সর্বোচ্চ। পূর্ববর্তী গভর্নরের আমলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দুর্বল ব্যাংকগুলো একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। যদিও তা পুরোপুরি সফল হয়নি এবং নানা মহল থেকে এই প্রক্রিয়াটি সমালোচনার মুখেও পড়েছিল। নতুন গভর্নরকে দুর্বল ব্যাংকগুলোর বিষয়ে একটি সিদ্ধান্তে আসতে হবে। যেসব সম্ভাবনাময় ব্যাংকের ম্যানেজমেন্ট দখলে নিয়ে সেগুলোকে দুর্বল করা হয়েছে, সেগুলোর পুরনো ম্যানেজমেন্ট ফিরিয়ে না আনতে পারলে ক্রেতাদের আস্থাও ফিরবে না। এছাড়া পুঁজি সংকটে যেসব ব্যাংক ভুগছে সেখানে পুঁজির যোগান দিয়ে ব্যাংকগুলোকে আগের শক্তিশালী অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায় কি না-এ নিয়েও কাজ করতে হবে।
সংকটে ভোগা ব্যাংকগুলোতে নতুন উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের নিয়ে আসতে হবে। শুধু বেসরকারি না সরকারি ব্যাংকগুলোও তারল্য সংকট থেকে শুরু করে নানা ধরনের অনিয়মে জর্জরিত। তাই বেসরকারি ব্যাংকের পাশাপাশি সরকারি ব্যাংকগুলোতেও সংস্কার করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নরের সফলতা কামনা করছি। দেশের অর্থনীতির স্বার্থেই তার সফলতার কোনো বিকল্প নেই।