নেতানিয়াহুকে থামান, নয়তো লেবাননও গাজায় পরিণত হবে
Share on:
বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে থামাতে হবে। লেবাননে ভয়াবহ হামলার মধ্য দিয়ে তিনি আরেকটি অপরাধ করেছেন।
ব্রিটেন, জাতিসংঘ এবং অন্যদের মধ্যে যারা বেসামরিক জীবন ও মানবাধিকার, আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি যত্নশীল বলে মনে করা হয়, তারা কি সত্যিই মুখ ফিরিয়ে রাখবে যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী আবার এই অপরাধ করেন? এমন ঘটনা বিশ্বাস করা যায় না।
এ প্রেক্ষাপটে বলা যায়, নেতানিয়াহু হয়তো দক্ষিণ লেবানন, এমনকি পুরো লেবাননকে দ্বিতীয় গাজায় পরিণত করতে চলেছেন। গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের নৃশংসতার পর ৪১ সহস্রাধিক ফিলিস্তিনি মারা গেছেন, যার বেশির ভাগই সাধারণ নাগরিক। সোমবার লেবাননে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে প্রায় ৫০০ মানুষ নিহতের মধ্যে অনেকেই শিশু। হাজার হাজার মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছেন। এ লোকটি দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার আগে আর কত নিরপরাধ ব্যক্তি হত্যা করবেন?
নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘নিরাপত্তা ভারসাম্য পুনরুদ্ধারের জন্য’ সর্বশেষ হত্যযজ্ঞটির প্রয়োজন ছিল। বাস্তবতা হলো, নেতানিয়াহু নিজেই ভারসাম্যহীন। দক্ষিণ লেবানন থেকে একটি সার্বভৌম দেশের জনগণকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, সেখানে ইসরায়েলের নজিরবিহীন বিমান হামলা আরও তীব্র হবে। লেবাননের ভূখণ্ডে একটি সামরিক অভিযানও হতে পারে।
তাঁর এ কৌশল ২০০৬ সালে কাজ করেনি এবং এখনও করবে না। নেতানিয়াহুর কৌশল বরাবরের মতো স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যর্থ। সোমবার ১ হাজার ৩০০টি ইসরায়েলি হামলার বিপরীতে হিজবুল্লাহ সেখানে আগের চেয়ে বেশি রকেট নিক্ষেপ করছে। তা ছাড়া তারা হামলা সম্প্রসারণ করেছে। বাস্তুচ্যুত ইসরায়েলি বাসিন্দারা যেন নিরাপদে ফিরে আসতে না পারে; আপাতত সেটাই তাদের লক্ষ্য। সহিংসতা থেকে সহিংসতার সৃষ্টি হয়। এটি নিরাপত্তা নিয়ে আসে না, বরং শুধু ঘৃণা ও প্রতিহিংসার জন্ম দেয়।
যথারীতি নেতানিয়াহু মিশ্র বার্তা দিচ্ছেন। কোনটি বিশ্বাস করবেন? তিনি দাবি করেছেন, সামগ্রিকভাবে অভিযানটির একটি সীমিত উদ্দেশ্য রয়েছে– হিজবুল্লাহকে সংযত করা এবং তাদের লিটানি নদীর উত্তর সীমান্ত থেকে দূরে তাড়িয়ে দেওয়া। তিনি লেবাননের বেসামরিক নাগরিকদের যত্ন নেওয়ার দাবি করেন, যেমনভাবে ৭ অক্টোবর থেকে হামাসের কাছে ইসরায়েলি জিম্মিদের যত্ন নেওয়ার দাবি করেছেন, যাদের মধ্যে অনেকেই শোচনীয়ভাবে মারা গেছেন।
কিন্তু সত্যিকার অর্থে হামাসকে ধ্বংস করতে তাঁর ভ্রান্ত লক্ষ্যে ব্যর্থ হয়ে নেতানিয়াহু পরিকল্পিতভাবে হিজবুল্লাহর সঙ্গে সংঘর্ষ বাড়িয়ে দ্বিতীয় সংঘাত বাধিয়েছেন, যা প্রতিরোধ করতে মার্কিন কূটনীতিকরা কয়েক মাস সময় ব্যয় করেছেন। গত সপ্তাহের ওয়াকিটকি ও পেজার হামলা এবং মূল কমান্ডারদের হত্যার মধ্য দিয়ে তা কেবল শুরু হলো। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা, শুধু ‘নিরবচ্ছিন্নভাবে যুদ্ধ চালিয়ে গিয়ে’ তিনি দাপ্তরিক দায়িত্ব ও ক্ষমতায় থাকতে চান।
হিজবুল্লাহ সবসময় স্পষ্ট কথা বলেছে। তারা বলেছে, গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হলে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ বন্ধ করবে, তার আগে নয়। জানা গেছে, নেতানিয়াহু বহুবার এ ধরনের চুক্তি বাধাগ্রস্ত করেছেন। এটি সত্ত্বেও যুক্তরাজ্যে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত বিবিসির টুডে প্রোগ্রামে জোর দিয়ে বলেছেন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য হিজবুল্লাহ উত্তরাঞ্চলের জন্য হুমকিস্বরূপ। কাদের সন্ত্রাস? জিপি হটোভেলি? তাদের, না আপনার? ইসরায়েলি সরকারের অস্বীকার এবং ভুল নির্দেশনা অব্যাহত রয়েছে, যা ওপর থেকে নিচের দিকে ধাবিত হয়।
নেতানিয়াহুকে থামাতে হবে। কিন্তু কে এ কাজ করবে? মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নন, যিনি এ সপ্তাহে জাতিসংঘে আবারও বলবেন, তাঁর একটি পরিকল্পনা রয়েছে। বাস্তবে এই সংকট তিনি হতাশাজনকভাবে ভুল পথে পরিচালনা করেছেন। তিনি এ জন্য উদ্বিগ্ন– মধ্যপ্রাচ্যব্যাপী দাবানল নভেম্বরের নির্বাচনে কমলা হ্যারিস ও ডেমোক্র্যাটদের সম্ভাবনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তাহলে কেন তিনি পদক্ষেপ নিচ্ছেন না? কারণ তিনি চিন্তিত, পাছে ইসরায়েলের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া হয়ে যায়।
আদালতের অবস্থা কোন পর্যায়ে? আন্তর্জাতিক আইন কি নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন আরও আগ্রাসন বন্ধ করবে? দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হবে না আপনাকে এর জবাব পেতে। কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের বিচারকরা এখনও গাজায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেননি, যা মে মাসে প্রধান প্রসিকিউটর অনুরোধ করেছিলেন। এই দীর্ঘ ও ব্যাখ্যাহীন বিলম্ব সন্দেহ বাড়িয়ে তোলে।
তাহলে স্বয়ং জাতিসংঘের অবস্থান কী? ইসরায়েলের দখলকৃত অঞ্চলগুলো খালি করার দাবি তারা তুলেছে, যেখানে ইসরায়েল ভয়াবহ নিপীড়ন চালাচ্ছে। সেই সঙ্গে তারা অসংখ্য উপেক্ষিত ফিলিস্তিনি প্রস্তাব চূড়ান্তভাবে কার্যকর করার কথাও তুলতে পারে। তবে এগুলোর চেয়ে তাদের ছিন্নভিন্ন কর্তৃত্ব পুনরুদ্ধারের কাজে মনোযোগ দেওয়াই ভালো হবে। অবিশ্বাস্য হলেও নেতানিয়াহুর এ সপ্তাহের শেষে সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেওয়ার কথা।
জাতিসংঘের উচিত নেতানিয়াহুকে এ সুযোগ দেওয়ার পরিবর্তে তাঁকে নিষিদ্ধ করা। যদি তিনি সেখানে আসেন তাহলে তাঁর কূটনৈতিক সুবিধা উপেক্ষা করুন। নিউইয়র্ক শহরের পুলিশ ও এফবিআইর উচিত তাঁকে গ্রেপ্তার করা এবং বিশেষত অভিযুক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া। নেতানিয়াহু বিপজ্জনক। সব ধরনের বিদ্যমান অহিংস উপায়ে তাঁকে অবশ্যই থামাতে হবে।