নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ, রাজনৈতিক পরিবর্তনের সূচনা কিনা?
Share on:
হতাশাগ্রস্ত ইসরায়েলিরা ব্যাপকভাবে সংক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তায় নেমেছে। শনিবার যখন জানা গেল, হামাস ছয় জিম্মিকে হত্যা করেছে, তখন ইসরায়েলিরা সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এটা এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় জনসমাগম।
বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এ সংক্রান্ত একটি চুক্তিতে সম্মত হলে ওই জিম্মিদের বাঁচানো যেত। কিন্তু তিনি তা করেননি। প্রকৃতপক্ষে তিনি সক্রিয়ভাবে কয়েক মাস ধরে সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করেছেন। ৩ লাখ ৫০ হাজার লোক তেল আবিবে প্রতিবাদ করেছিল। সেখানে ব্রিটিশ-আমেরিকানরাও বড় সংখ্যায় ছিল। এমন পরিস্থিতি নেতানিয়াহুর জন্য রাজনৈতিক পরিবর্তনের সূচনা কিনা– তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
উত্তরটি হয়তো নির্ভর করছে এই বিক্ষোভ কতটা টেকসই হবে তার ওপর। তাদের অসন্তোষ কি জোরালো কোনো অবস্থান প্রতিফলিত করে, যা রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপ নেবে? ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট, প্রতিরক্ষা বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় নেতা এবং নেতানিয়াহুর প্রতি গোয়েন্দা সম্প্রদায়ের হতাশা কি আরও বিক্ষোভে ইন্ধন জোগাবে? আমরা এখনও নিশ্চিতভাবে জানতে পারিনি। যদি তাই হয়, তাহলে নেতানিয়াহু একটি বড় রাজনৈতিক দুর্দশার মুখোমুখি হবেন, যা তিনি কয়েক মাস ধরে এড়াতে সক্ষম হয়েছেন। জিম্মিদের হত্যার ব্যাপারে গ্যালান্ট সতর্ক করেছিলেন, যেমনটি মোসাদপ্রধান ও নিরাপত্তাপ্রধান শাবাকও করেছিলেন। তবুও নেতানিয়াহু কখনও জিম্মি চুক্তি চাননি। মূলত তিনি যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী করতে এ লক্ষ্য বেছে নিয়েছিলেন।
এ ছাড়া গাজা যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করার সঙ্গে সঙ্গে হামলা বাড়িয়ে তুলতে তাঁর প্ররোচনা দেওয়া নেতানিয়াহুর বৃহত্তর স্বার্থে এ ধরনের চুক্তি বাধাগ্রস্ত করার স্পষ্ট ইঙ্গিত। তিনি এই বয়ানের প্রচার করতে চান– যুদ্ধ শুধু গাজায় সীমাবদ্ধ নয়; বরং ইরান ও এর প্রক্সিদের সঙ্গে একটি বিস্তৃত সংঘাত। ৭ অক্টোবরের আগে ৯ মাস ইসরায়েলের মানুষ নেতানিয়াহুর গণতন্ত্রবিরোধী সাংবিধানিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ করেছিল। এ সময় এমন একটি আশা জেগেছিল– যুদ্ধ ও নেতানিয়াহুর অযোগ্যতা বৃহৎ আকারের বিক্ষোভ উস্কে দেবে। সেটা ঘটেনি। প্রথমত, এর কারণ ৭ অক্টোবরের ধ্বংসযজ্ঞ, যন্ত্রণা ও অপমান হতাশ জনতাকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল। দ্বিতীয়ত, ইসরায়েলি একজন দেশপ্রেমিক যুদ্ধের সময় বিক্ষোভ করবে না। তৃতীয়ত, ইসরায়েলি জনসাধারণ যুদ্ধকে ন্যায্যতা দিয়েছিল। তারা মরিয়া হয়ে যথাযথ প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিল। হয়তো মনে করেছিল, নেতানিয়াহু কোনো এক সময় স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করবেন। চতুর্থত, বেনি গ্যান্টজ ও গাদি আইজেনকোটের নেতৃত্বে একটি বিরোধী জোট নিজেদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে এবং চরম ডানপন্থিদের ভারসাম্য বজায় রাখতে অস্থায়ীভাবে একটি ‘যুদ্ধ মন্ত্রিসভা’য় যোগ দেয়।
কিন্তু এই যুক্তি ফাঁপা প্রমাণিত হয়েছে। ধ্বংসযজ্ঞটি ১১ মাস ধরে চলছে। এটি তিন বা চার মাস পর স্পষ্ট হওয়া উচিত ছিল, যুদ্ধ ইচ্ছাকৃতভাবে দীর্ঘায়িত করা হচ্ছে। গ্যান্টজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে তাঁর মহৎ ইচ্ছা তাঁকে আট মাস মন্ত্রিসভায় থাকার সুযোগ দিয়েছিল। এ সময়ে তিনি কোনো ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য যুক্ত করেননি এবং খুব কমই নেতানিয়াহুকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। পরিবর্তে তিনি নেতানিয়াহুকে রাজনৈতিকভাবে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন। এর বাইরে অনেক ইসরায়েলিকে বুঝিয়েছিলেন, তিনি যদি মন্ত্রিসভায় থাকেন এবং যুদ্ধ চলমান থাকে, তাহলে বিক্ষোভ করার কোনো মানে নেই।
নেতানিয়াহু ঠিক এটাই চেয়েছিলেন। তাঁর অসংখ্য পররাষ্ট্রনীতি ব্যর্থ হয়েছিল। যেমন– ইরান, গাজা ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক। আর দেশের ভেতরে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা যেমন সাংবিধানিক অভ্যুত্থান, জীবনযাত্রায় উচ্চমূল্য, সামাজিক কলহ। এসব সত্য গোপন করা উচিত নয় যে, তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী যে কোনো রাজনীতিবিদের চেয়ে অনেক বেশি ধূর্ত। সেটা এককভাবেই হোক কিংবা জোটবদ্ধভাবে। তবে তিনি যে রাজনৈতিকভাবে মৃত্যুর দ্বারে পৌঁছেছেন– তার প্রমাণ রয়েছে। সম্প্রতি কয়েকবার ভোট গণনায় দেখা গেছে, ৭০ শতাংশ ইসরায়েলি তাঁর পদত্যাগ চায়। সুতরাং এটা স্পষ্ট বলে মনে হচ্ছে, মার্কিন প্রশাসন, জিম্মিদের ভাগ্য নিয়ে নেতানিয়াহুর অব্যবস্থাপনা একটি হেরফের হতে পারে– এমনকি তাঁর জন্যও।