দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিন
Share on:
সরকারি কর্মচারী, অফিস সহকারী কিংবা পিয়ন যেখানে শত শত কোটি টাকা বানাতে পারেন, সেখানে সচিব কিনা করতে পারেন। সে তুলনায় তিন কোটি টাকা তো নস্যি! অবশ্য এটা নগদ অর্থ।
অন্য সম্পদের হিসাব আমাদের অজানা। সৎ থেকে কি এত টাকা বানানো সম্ভব? সদ্য বিদায়ী সরকারের সাবেক সচিব শাহ কামালের বাসা থেকে উদ্ধারকৃত অর্থ নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে। ডাল মে কুচ কালা হ্যায়। সর্বশেষ তিনি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ছিলেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার তাঁর রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসায় অভিযান চালিয়ে এসব মুদ্রা উদ্ধার করা হয়।
তিনি এমন একটা বিভাগের সচিব ছিলেন যেখানে দুর্নীতি-অনিয়মের প্রায় মহোৎসব চলত। ঘূর্ণিঝড়, বন্যাপ্রবণ এ দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের যেমন কোনো ঠিক ঠিকানা নেই, যে কোনো সময় তা যে কোনো অঞ্চলে আঘাত হানতে পারে; তেমনি দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের উদ্ধার ও পুনর্বাসনের কাজেরও হিসাব খুব একটা ছিল না। উপরন্তু, সমকালের এক প্রতিবেদনে যেমনটা এসেছে, সচিব থাকাকালে শাহ কামালের বিরুদ্ধে বদলি, কেনাকাটা থেকে শুরু করে উন্নয়ন কাজসহ বিভিন্ন উৎস থেকে অর্থ নেওয়ার অভিযোগ ছিল। ফলে বলা যায়, তাঁর বাসা থেকে পাওয়া তিন কোটি টাকার উৎস অন্তত স্বচ্ছ কিছু নয়। আবার এই প্রশ্নও অসংগত নয়, সাবেক এই কর্মকর্তার যদি নগদ অর্থই এত হয়, তবে ব্যাংক-ব্যালান্স, বাসা-বাড়ি কিংবা অন্যান্য সম্পদের পরিমাণ না জানি কত?
এক ভাত টিপে যেমন হাঁড়ির সব ভাতের খবর জানা যায়, তেমনি গত সরকারের আমলে পুলিশ-আমলা-নেতারা কত অর্থ বানিয়েছেন, তা কয়েকজনের উদাহরণ থেকেই আমরা বুঝতে পারি। এর মধ্যে ভালো নিশ্চয়ই অনেকেই আছেন। কিন্তু ইতোমধ্যে পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ ও ছাগলকাণ্ডে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমানের পাহাড়সম সম্পদ কিংবা আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমুর ঝালকাঠির বাসভবন থেকে ডলার, ইউরোসহ প্রায় ৫ কোটি টাকা উদ্ধারের বিষয়টি যেভাবে সংবাদমাধ্যমে এসেছে, তা পুরো বাহিনী, আমলাতন্ত্র কিংবা ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে, গত দেড় দশকে এদের বাড়াবাড়ি এত বেশি হয়েছে যে, অনেকে ধরাকে সরাজ্ঞান করতেও কুণ্ঠিত হননি। সরকার পরিবর্তনের কারণে তাদের আমলনামা প্রকাশ হচ্ছে।
যেখানে প্রশাসন ক্যাডারের সবার সচিব হওয়ার সৌভাগ্য হয় না, সেখানে শাহ কামাল জ্যেষ্ঠ সচিবও হয়েছেন। রাষ্ট্র তাঁকে ক্ষমতা দিয়েছে জনসেবা করার জন্য, সেই ক্ষমতা তিনি নিজের ভোগে কাজে লাগিয়েছেন। তাঁর দায়িত্ব ছিল রাষ্ট্রীয় আমানতের সুরক্ষা, তা কুক্ষিগত করে তিনি আমানতের খেয়ানত করেছেন। সরকারি কর্মকর্তারা সাংবিধানিকভাবে প্রজাতন্ত্রের সেবক। সাধারণ মানুষের করের অর্থে তাদের বেতন-ভাতা দেওয়া হয়। তাদের জন্য রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধাও কম নয়। সৎভাবে দায়িত্ব পালন করে নির্ধারিত বেতন-ভাতা কিংবা সুবিধা গ্রহণ করেও তারা অনেক ভালো থাকতে পারেন। অথচ অনেকেই তাতে সন্তুষ্ট নন, বরং আত্মসাতের সুযোগ পেয়েই পকেটে ঢালার ধান্দা করেন।
শাহ কামালদের সংখ্যা কত আমরা জানি না, কিন্তু আখেরে তাদের যে খারাপ পরিণতি বরণ করতে হয়, তা আবারও প্রমাণিত হলো। সাবেক এই সচিবকে এখন পুলিশ গ্রেপ্তারের জন্য খুঁজছে। অন্য আমলাদের উচিত এ থেকে শিক্ষা নেওয়া। সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা-১৯৭৯ এবং জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলে সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দেওয়ার কথা বলা হলেও সেটা কার্যকর হয়নি। জনসমক্ষে তাদের হিসাব প্রকাশ হলে একদিকে যেমন তারা নিজেরাই সতর্ক থাকত, অন্যদিক মানুষও বুঝত তাদের সেবকদের আর্থিক অবস্থা কেমন। চলতি বছরের জুলাই মাসেও বিষয়টি নিয়ে কথা উঠে, কিন্তু অধিকাংশ সচিবই এর বিরোধিতা করেছেন। তাই বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধার সময় বোধ হয় এখনি।