দুই বছর ধরে শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন বন্ধ, জড়িতদের জবাবদিহির আওতায় আনুন
Share on:
স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সেই শাসনামলের দুর্নীতি-অনিয়ম ও ক্ষমতাচর্চার অনেক বিষয় এখন প্রকাশ পাচ্ছে। বিগত সরকারের সময় একজন সংসদ সদস্যের প্রভাবে যেভাবে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন বন্ধ করে দেওয়া হয়, তা চরমভাবে নিন্দনীয়। এ ঘটনা ঘটেছে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার।
সেখানকার একটি মাদ্রাসার ২৮ জন শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন দুই বছর ধরে বন্ধ। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে এমন ঘটনা ঘটেছে। এই সিদ্ধান্ত শুধু গর্হিতই নয়, অন্যায়মূলক আচরণও।
প্রথম আলোর প্রতিবেদনে জানা যায়, ১৯৯১ সালে উপজেলার কাউলিবেড়া ইউনিয়নে প্রতিষ্ঠিত ইকামাতেদ্বীন মডেল কামিল (এমএ) মাদ্রাসাটি ১৯৯৫ সালে এমপিওভুক্ত হয়। ছয়টি ভবন নিয়ে গড়ে ওঠা এ মাদ্রাসায় বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা সহস্রাধিক। শিক্ষক-কর্মচারী আছেন ৫৮ জন। মাদ্রাসা পর্যায়ে জেলার শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান হিসেবে কয়েকবার স্বীকৃতিও পেয়েছে মাদ্রাসাটি।
বিগত সরকারের স্থানীয় সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরী ২০২১ সাল থেকে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রীর কাছে মোট ২১টি ডিও লেটার পাঠান। এতগুলো ডিও লেটার পাঠানোর কারণ ছিল একটি, মাদ্রাসাটির অধ্যক্ষসহ শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা স্থগিত করতে হবে। তিনি মাদ্রাসাটির প্রতি এমন রুষ্ট হওয়ার কারণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি বিএনপি সরকারের আমলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ডিও লেটারেই তিনি বিষয়টি উল্লেখ করেন। সেখানে আরও বলেন, মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকারি নির্দেশনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল নন এবং নানা সময়ে তাঁর আদেশের অবজ্ঞা করেছেন। এতে তিনি মর্মাহত।
নিক্সন চৌধুরী স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হলেও বিগত ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গসংগঠন আওয়ামী যুবলীগের একজন নেতা ছিলেন। তাঁর একের পর এক এমন ডিও লেটার পাওয়ার পর ২০২২ সালে অধ্যক্ষসহ মাদ্রাসাটির ২৮ জন শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন বন্ধ করে দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ১ সেপ্টেম্বর তাঁরা পুনরায় বেতন-ভাতা চালুর জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ আবু ইউসুফ মৃধা বলেন, ‘নিক্সন চৌধুরীর অনৈতিক রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের নির্দেশ অমান্য করায় তিনি আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে মন্ত্রণালয়ে ডিও লেটার দিয়ে বেতন-ভাতা বন্ধের সুপারিশ করেন। তাঁর সুপারিশের পর ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে তৎকালীন সরকার তা আমলে নিয়ে আমাদের বেতন-ভাতা স্থগিত করে দেয়। আমরা নিক্সনের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে কয়েক বছর মানবেতর জীবন যাপন করছি। নিক্সন চৌধুরীর কথার বাইরে গেলেই এ রকম ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হতো আমার মতো অনেকেরই।’
একজন সংসদ সদস্যের অনৈতিক অনুরোধকে গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্তও অনৈতিক। এ কাজের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। আমরা আশা করব, দ্রুত মাদ্রাসাটির ভুক্তভোগী শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন চালু করা হবে এবং গত দুই বছরের বকেয়া বেতনও পরিশোধ করা হবে।