থাইল্যান্ডের নতুন প্রধানমন্ত্রীর সামনে যত চ্যালেঞ্জ
Share on:
যে বিস্ময়কর দ্রুততার সঙ্গে থাইল্যান্ডের ৩১তম প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রার মনোনয়ন এবং প্রতিনিধি পরিষদের পাশাপাশি রাজদরবারের অনুমোদনের ঘটনা ঘটল, তা থাইল্যান্ডের বান চ্যান সং লা প্রাসাদের (সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার বাসভবন) হস্তক্ষেপ ছাড়া সম্ভব হতো না, তা সবাই জানেন।
সাংবিধানিক আদালত বুধবার নৈতিক অসদাচরণের কারণে প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনকে অপসারণের রায় দেওয়ার পরপরই জোটবদ্ধ দলগুলোর সরকারি হুইপরা বান চ্যান সং লা প্রাসাদে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। এর কয়েক ঘণ্টা পর প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল চাইকাসেম নিতিসিরির নাম ঘোষণা করেন হুইপ। তিনি বলেন, শুক্রবার তাঁর পক্ষে ভোট হবে। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে চাইকাসেম বলেছিলেন, তিনি দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত এবং তাঁর স্বাস্থ্য সমস্যা কোনো বাধা সৃষ্টি করবে না। কারণ, তিনি অসুস্থতা কাটিয়ে উঠেছেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তের কারসাজিতে তাঁর নাম বাদ দিয়ে ফেউ থাই দলের নেতা ও থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার কন্যা পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রার নাম তোলা হয়। দলের কার্যনির্বাহী কমিটি ও সংসদ সদস্যরা তাঁকে এগিয়ে রাখেন এই অর্থে যে, দলের সমর্থকদের মধ্যে পেতংতার্ন জনপ্রিয় এবং চাইকাসেমের স্বাস্থ্য সমস্যা ভবিষ্যতে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
হঠাৎ চাইকাসেমকে বাদ দিয়ে পেতংতার্নকে বেছে নেওয়ার আসল কারণটি অন্যত্র। পলিটিক্যাল পার্টিজ অ্যাক্টের বহিরাগত ‘হস্তক্ষেপ’ সম্পর্কিত ২৮ এবং ২৯ ধারা নিয়ে একটা উদ্বেগ ছিল। তাতে পাঁচ বছর পর্যন্ত জরিমানা, সর্বোচ্চ ১০ বছরের জেল এবং/অথবা দুই লাখ বাথ জরিমানার বিধান রয়েছে। এ আইনে বহিরাগতদের জন্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিষিদ্ধ। আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন এ ধরনের বিষয় বিবেচনার জন্য সাংবিধানিক আদালতে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে।
তবে পেতংতার্নের সামনের পথচলা একেবারে মসৃণ হবে না। তাঁকে অবশ্যই সাবধানে চলতে হবে। সরকার পরিচালনায় তিনি পিতা থাকসিনের হস্তক্ষেপের মুখোমুখি হবেন। এ ধরনের হস্তক্ষেপ আইনের লঙ্ঘন হতে পারে। সে জন্য প্রথম কয়েক মাস তরুণ ও অনভিজ্ঞ ৩৭ বছর বয়সী প্রধানমন্ত্রীর জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হবে। তাঁকে সংসদে বিরোধী সদস্যদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রমাণ করতে হবে– তিনি থাকসিনের সাহায্য ছাড়া নিজেই সক্ষম। পেতংতার্নকে এটাও প্রমাণ করতে হবে– তাঁর দেশের সব চ্যালেঞ্জ, বিশেষ করে অর্থনৈতিক সমস্যা মোকাবিলার মতো নেতৃত্বের গুণ তাঁর আছে। আর প্রিয় বাবা হিসেবে থাকসিনকে তাঁর মেয়ের ওপর আস্থা রাখা উচিত এবং তাঁকে তাঁর কাজ করার জন্য স্বাধীনতা দেওয়া উচিত। কারণ বাবার আদেশ মানার মতো হস্তক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীকে কেবল ঝুঁকিতেই ফেলবে।
বাবার হস্তক্ষেপ ছাড়াও পেতংতার্নকে বিরোধীদের সঙ্গেও সতর্কতার সঙ্গে আচরণ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী হতে প্রত্যাশী প্রবীণ রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে তিনি প্রত্যাশিত আচরণ পাবেন না। পালং প্রচারথ নেতা জেনারেল প্রবিত ওংসুনের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা স্পষ্ট। গত আট বছরেরও অধিক সময় ধরে জেনারেল প্রাউত চান ওচার সময়ে এই বয়স্ক ও দুর্বল জেনারেলকে উপেক্ষা করা হয়েছে। অথচ ২০১৪ সালের মে মাসে প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রার সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী এই প্রাউত তাঁরই সহকর্মী ছিলেন। অনেকেই মনে করেন, পেতংতার্নের প্রধানমন্ত্রিত্ব প্রবিতকে হতাশ করেছে। জেনারেল প্রবিতকে সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করেছিলেন, তিনি পার্লামেন্টে পেতংতার্নের মনোনয়নের লাইভ সম্প্রচার দেখেছেন কিনা। এতে তিনি দৃশ্যত বিরক্ত হয়েছিলেন।
পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা বা তাঁর অতি-সতর্ক বাবা থাকসিনের একটি ভুল পদক্ষেপ পেতংতার্নকে পূর্বসূরি স্রেথা বা তাঁর আত্মীয় ইংলাকের মতো একই পরিণতির মুখোমুখি করতে পারে। ইংলাক এক দশক আগে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান থাউইল প্লিয়েনসরিকে অপসারণের কারণে আদালতের রোষের মুখে পড়েছিলেন।