মতামত/কলাম প্রকাশনার সময়: সোমবার ১২, অগাস্ট ২০২৪

তাড়াহুড়ো করে কোনো নির্বাচন করলে তা সফল হবে না

Share on:

বাংলাদেশের নবীন প্রজন্ম বাংলাদেশকে উদ্ধার করার মহৎ আকাঙ্ক্ষা নিয়ে রাজপথে নেমে কাজ শুরু করেছে। তারা অসম সাহসী ও বীর এক প্রজন্ম। এ বয়সে তা-ই হওয়ার কথা।


এ প্রজন্মকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু এর জন্য পাশাপাশি তাদের সজাগ থাকতে অনুরোধ করি যেন তাদের উদ্যোগ দিশা না হারায়। যেন তাদের মধ্যে কেউ বাগড়া দিতে না পারে, আবার তাদের মধ্যেও কেউ লোভ এবং পদের মোহে বা প্রতারণা বা অতি অহংকারী হঠকারিতার বশবর্তী হয়ে ভুল করে পথভ্রষ্ট না হয়। যেহেতু তাদের আকাঙ্ক্ষা বড়, সেহেতু তাদের দায়িত্বও বড়।

এবারের আন্দোলনে যে চমৎকার স্লোগানের উদ্ভব হয়েছিল তা হচ্ছে ‘বৈষম্য’ মানি না। কিসের বৈষম্য এটি না বলতে পারলে কিন্তু বৈষম্য ধারণাটি মূর্ত হয় না। আমরা জানি, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈষম্য হচ্ছে সম্পদ ও আয়ের বৈষম্য। সমভাবে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নানা ধরনের মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকারের বৈষম্য। এছাড়া জেন্ডার বৈষম্য, ধর্মীয় বৈষম্য, জাতিতে জাতিতে বৈষম্য, শ্রেণীগত বৈষম্য—এগুলো হাজার হাজার বছর ধরে সমাজে বিদ্যমান এবং মানবজাতির সর্বজনীন লক্ষ্যই হচ্ছে সভ্যতার অগ্রযাত্রার মাধ্যমে তা ধাপে ধাপে পর্যায়ক্রমে কমিয়ে আনা।

বাংলাদেশে তরুণদের এ বৈষম্যবিরোধী কোটা সংস্কার আন্দোলন কয়েকটি ঐতিহাসিক শান্তিপূর্ণ ধাপের মধ্য দিয়েই অগ্রসর হয়েছিল। আমাদের দেশে শুরুতে তরুণদের আন্দোলনটি ছিল খুবই নিরীহ একটি ‘কোটা বণ্টনে’ বৈষম্য কমানোর আন্দোলন। দেখা যাচ্ছিল প্রথমত, সরকারি চাকরিতে ‘যোগ্যতা’ বা মেধাকে মাত্র ৪৪ শতাংশ গুরুত্ব দিয়ে অন্যান্য যোগ্যতাকে ৫৬ শতাংশ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তরুণরা ভেবেছেন এতে অন্যান্য যোগ্যতার তুলনায় মেধাকে বৈষম্যের শিকারে পরিণত করা হয়েছে। সুতরাং সরকারি কর্মচারী হওয়ার সুবিধা নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে এমন সব বৈশিষ্ট্য বা মাপকাঠি ওপর, যার সঙ্গে পেশাগত দক্ষতার কোনো যোগাযোগ নেই। উপরন্তু প্রচণ্ড স্বজনপ্রীতি, দলীয় প্রীতি এবং ঘুস, ভুয়া সার্টিফিকেট ইত্যাদি নানা ধরনের দুর্নীতির মাধ্যমে এ বৈষম্যকে প্রতিনিয়ত আরো তীব্রতর করা হচ্ছিল।

যোগ্য-মেধাবী-পরিশ্রমী-দরিদ্র পিতার বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ ছাত্ররা এতে বঞ্চিত ও অসম আচরণের শিকার হতে থাকেন এবং তাদের মধ্যে সঞ্চারিত হতে থাকে পুঞ্জীভূত বিক্ষোভ। তবে কেউ কেউ বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই না করে কীভাবে ওপরে ওঠা যায় তার চেষ্টাও করেছে। কষ্ট করে ঘুসের টাকা বা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য পারিবারিক জমি বেঁচে বা বাপের সর্বস্ব ধন পুঁজি করে অথবা তথাকথিত ‘বড় ভাইকে’ ধরে বা বাধ্য হয়ে ক্ষমতাসীন রাজনীতির টুপি মাথায় দিয়ে ওপরে ওঠার চেষ্টা করেছেন তারা। কিন্তু বাস্তবে তারাও ওপরে ওপরে আনুগত্য দেখালেও মন থেকে মেনে নেননি। যদিও হলে হলে ছাত্রলীগ নেতারা তা বুঝতে পারেনি। ট্র্যাজেডি হচ্ছে, হলগুলোয় ছাত্রলীগের বিকল্প কোনো রাজনৈতিক আদর্শবাদী শক্তিও তাদের পাশে দাঁড়াতে সক্ষম হয়নি।

ব্যাপক নির্যাতিত ছাত্রদের মধ্যে এতে রাজনীতির প্রতিও তীব্র বীতশ্রদ্ধা জমতে থাকে। এ নতুন প্রজন্ম নিজের অভিজ্ঞতায় জেনেছে, রাজনীতির অপব্যবহার রাজনীতিকে কীভাবে নিছক ক্ষমতা ও বিত্তের বিনিয়োগে পরিণত করেছে। তাই তারা ওয়েবসাইট তৈরি করে ইস্যুভিত্তিক এবং রাজনৈতিক মতামত নির্বিশেষে একটি ব্যাপক ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম গড়ে তোলেন। সেই অরাজনৈতিক নানা বর্ণের প্লাটফর্ম আন্দোলনই আজ অনেক মূল্যের বিনিময়ে ধাপে ধাপে বিকশিত হয়ে স্বৈরাচার উৎখাত করে বিশাল এক প্রাথমিক বিজয় অর্জন করেছে। কিন্তু এ প্রাথমিক বিজয়ই ‘রাষ্ট্রক্ষমতা’ অর্থাৎ স্বৈরাচারের বিদায়ের পর কে সেখানে বসবে সেই প্রশ্নটিকে আজ তাদের এবং জাতির সামনে নিয়ে এসেছে। এ কথা সত্য যে, এ কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়করা নিজেরা কখনো প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রী হতে চাননি বা চাওয়ার কোনো কথাও ছিল না। সেজন্যই হয়তো জনগণের রয়েছিল তাদের প্রতি অগাধ বিশ্বাস। তাই রাস্তায় যখন নিঃস্বার্থ তরুণরা প্রাণ দিয়েছেন, তখন জনগণও অকুণ্ঠভাবে তাদের পাশে বিশ্বাস নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন।

কিন্তু এত আত্মত্যাগের পর আবার যদি কোনো নতুন সাম্রাজ্যবাদ বা মৌলবাদের আদর্শপুষ্ট ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক শক্তি বা আরো বৈষম্যপূর্ণ কোনো সরকার শূন্য আসনে এসে বসে তাহলে ছাত্রসমাজ এবং জনগণের এ গৌরবময় আন্দোলন ব্যর্থ হয়ে যাবে। সেটিও নিশ্চয় ছাত্র-জনতা চাইবেন না। তাই রাজনৈতিক প্রশ্নটিকে এখন কিছুটা বিবেচনায় ছাত্র-জনতার না নিয়ে উপায় নেই।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বিদ্যমান ডানপন্থা বা বামপন্থা কিংবা ধর্মভিত্তিক প্রতিযোগী রাজনৈতিক দলগুলো কি এখন পর্যন্ত ক্ষমতায় গিয়ে কে কী করবেন এ রকম কোনো কর্মসূচি দিয়েছেন। আন্দোলনের ফসল হিসেবে আজ যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তৈরি হয়েছে তাদেরও কি কোনো ১০০ দিনের ইতিবাচক কর্মসূচি বা পরিকল্পনা আছে? অন্তর্বর্তীকালীন তরুণদের মধ্যে যারা সরকারে আছেন তাদের কাছে কি নিজেদের বিপুল পরিমাণ কর্মসংস্থান এবং বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার কোনো সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি আছে?

সে রকম কোনো ইতিবাচক কর্মসূচির প্রস্তাব তাদের তরফ থেকে কিন্তু কমই দেখা যায়। এখন পর্যন্ত তাদের দাবিগুলো তাদের ভাষায় ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে তাড়িয়ে ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিলোপের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু ফ্যাসিবাদের বিলোপ বা যেকোনো উদারনৈতিক গণতন্ত্রের সঙ্গে সাম্প্রদায়িক নিপীড়ন, মৌলবাদী ধর্মীয় শ্রেষ্ঠত্ববাদ বা রাষ্ট্রধর্ম মতবাদ, অথবা ‘ব্লাসফেমি আইন’ ব্যবহার করে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের তথাকথিত ‘নাস্তিক’ বা ‘আহমদিয়া’ ট্যাগ দিয়ে নিপীড়ন ইত্যাদি প্রবণতার রয়েছে মৌলিক বৈরিতামূলক বিরোধ। কিন্তু এরই মধ্যে এসব প্রবণতা দেশের ভেতরেও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে—এ ব্যাপারে কি তারা সচেতন? যদি এ ব্যাপারে তারা সচেতন হন তাহলে তাদের এবং তাদের সরকারের উচিত হবে কালবিলম্ব না করে এ বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করা।

বেশির ভাগ তরুণ যে দলই অতীতে করুক না কেন বা দলের প্রতি যে আশায়ই তারা সমবেত হন না কেন বাস্তবে সমস্যা সমাধানের একটি সুনির্দিষ্ট রূপকল্প তারা কিন্তু তাদের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত পাননি। একটি বৈষম্যহীন সমাজে প্রত্যেকের কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তার জন্য সমাজের কী ধরনের মৌলিক রূপান্তর প্রয়োজন হবে তা নিয়ে তরুণদের ও প্রতিযোগী দলগুলোর ধারণা আজও অস্পষ্ট। প্রতিযোগী আদর্শগুলো নিয়ে একটি খোলামেলা বিতর্কও আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে হলো না। অন্যদিকে দিকদর্শনবিহীন ছাত্র-তরুণরা প্রত্যাশিত কর্মসংস্থান না পেয়ে ক্রমে হতাশার গভীরে নিমজ্জিত হচ্ছিলেন। অন্যদিকে তার দরিদ্র পিতাদের পক্ষেও ক্রমে বেকার সন্তানের ভার বহন করা অসম্ভব হয়ে ওঠে। এর ফলে শুরু হয়ে যায় তাদের মধ্যে ব্যাপক সংখ্যায় একটি ‘অস্তিত্বের সংকট’। বর্তমান কোটা আন্দোলনের দাহ্য বস্তুগত ভিত্তি ছিল এটাই। সাধারণভাবে তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্রদের মূল কথা ছিল বহু কষ্ট করে ‘গণরুম’ থেকে ‘আধাপেট’ খেয়ে আমি পড়াশোনা করে বিসিএস পরীক্ষায় ভালো ফল করলাম। কিন্তু কোটার কারণে বা রাজনৈতিক আনুকূল্য বা ঘুসের কারণে চাকরিটা অন্য একজন অযোগ্য কেউ পেল তখন দেখে-শুনে ক্ষেপে না গিয়ে অন্য কোনো উপায় আমার থাকে কি? অথবা আমি একজন স্বশিক্ষিত ছাত্র, ঠিকমতো পড়ার সুযোগ পাইনি, টিউশনি করতে হয়েছে, হলেও ঠিকমতো খাবার পাইনি, ঘুমাতে পারিনি, বহু রাত জেগে মোবাইল টিপে আমি নিজে নিজে কিছু শিখে ভালো নম্বর পেয়েছি এবং অবশেষে বিসিএস পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়েছি কিন্তু তারপর আরেকজন শুধু মুক্তিযোদ্ধা পিতার সন্তান বা সন্তানের সন্তান বলে আমাকে অতিক্রম করে যাবেন বা আরো যেটা খারাপ, শাসক দলের অনুগ্রহভাজন বলে অথবা চাচা-নানা-ক্ষমতাসীন দলের নৈকট্যের কারণে এগিয়ে যাবেন তা হতে পারে না। অবশ্য প্রতিবন্ধী বা আদিবাসী বা নারী এ রকম পশ্চাৎপদ গোষ্ঠীর সদস্য তরুণরা হয়তো কিছু বাড়তি কোটা সহানুভূতি পেতে পারেন—এটুকু পর্যন্ত এ মেধাবী ছাত্ররা মানতে রাজি ছিলেন। অবশ্য আত্মসম্মানী কোনো কোনো তরুণী বা মুক্তিযোদ্ধার মেধাবী সন্তান যোগ্যতাকেই সম্মানজনক মনে করে কোনো কোটা সুবিধা চাননি—এটাও আমরা দেখেছি। সেজন্যই তাদের নৈতিক দাবিটি ছিল ‘কোটা বিলুপ্তি’ নয়, কোটার যৌক্তিক সংস্কার। সুতরাং কোটা সমস্যাকে তলিয়ে দেখলে বৃহৎ সামাজিক সমস্যাগুলোকে চূড়ান্ত বিচারে নানা বৈষম্যের সমস্যা হিসেবেই চিহ্নিত করা যায়—আর্থিক সক্ষমতার বৈষম্য, দলীয়-স্বজনপ্রীতি মূলক সুশাসনের বৈষম্য এবং হলগুলোয় আবাসন কেন্দ্র করে দাতা-গ্রহীতা বৈষম্য ইত্যাদি। কোটা বিলুপ্ত হলে বা সংস্কার হলেও এ সমস্যাগুলো রাতারাতি দূর হয়ে যেত না বরং এ আনুষঙ্গিক সংস্কারগুলোর দাবিও পর্যায়ক্রমে সামনে এসে যেত এবং এখনো তা-ই আসছে। কোটা আন্দোলন দৃশ্যত ক্ষুদ্র ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনের আকারে শুরু হলেও এর ছিল বিস্ময়কর বিস্তারের বহুমাত্রিক ইতিবাচক সম্ভাবনা ও শক্তি।

বস্তুগত ভিত্তিসম্পন্ন এ যৌক্তিক আন্দোলন যখন বুলেট দিয়ে দমানোর চেষ্টা করা হলো তখন আর এটা সীমাবদ্ধ থাকল না। একটার পর একটা জায়গা থেকে নির্যাতিত আহত ছাত্ররা দলে দলে এসে যোগ দিতে শুরু করল। তাদের পবিত্র ক্রোধ তখন জেগে উঠল। আমরা সবাই সেই সেন্টিমেন্টটা প্রথম দিকে ধরে উঠতে পারিনি। যারা তাদের কাছাকাছি থাকতেন তারা তা বুঝেছিলেন এবং তখন তাদের পাশে এসে দাঁড়ালেন তাদের শিক্ষকরা এবং পিতা-মাতা-অভিভাবকরা। আর তার বিরুদ্ধে ক্ষমতা-সুবিধা-বৈষম্য রক্ষার জন্য অবস্থান নিল ক্ষমতাসীন শাসক দল ও তার পেটোয়া বাহিনী। এর ফলে আন্দোলনটি পরিণত হলো শিক্ষিত মধ্যবিত্ত স্তরের ব্যাপকাংশের এক নৈতিক বিদ্রোহে। এ বিদ্রোহের ফলে বর্তমান সরকারের মধ্যবিত্ত সমাজে এ পর্যন্ত অনুসৃত নানা অপকৌশলভিত্তিক (যেমন ঘুস, দলীয় স্বজনপ্রীতি, আর্থিক বৈষম্য, ভয়, ব্ল্যাক মেইল, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বিক্রয় ইত্যাদি) ‘হেজেমনি’ বা আধিপত্যটি দ্রুততম সময়ে খান খান হয়ে ভেঙে গেল। দেশে চলছিল মুদ্রাস্ফীতি ও ডলার সংকট। আর এ জুলাইতেই সৃষ্টি হয়েছিল চীন-ভারতের তিস্তা নদীর পানি নিয়ে ভূরাজনৈতিক উভয় সংকট। সামগ্রিকভাবে এসব উপাদানের সমপাতনের ফলে বাংলাদেশে সৃষ্টি হয়েছে একটি ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণ বা ফাটল। এর ফলে স্বৈরাচার এক ধাক্কায় বিদায় হয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে। আরেকবার প্রমাণিত হলো, মানুষ যদি মরতে রাজি থাকে তাহলে তাকে পরাজিত করা যায় না। কিন্তু শূন্যস্থানটি কীভাবে কে পূরণ করবে তার ওপর নির্ভর করবে আন্দোলনের ভবিষ্যৎ স্বার্থকতা। সুতরাং আজ যে ক্ষমতার শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, এখান থেকে রাষ্ট্রকে যদি আমরা উদ্ধার করতে চাই, তরুণ সমাজকে পুনরায় তাদের যথার্থ পাওনা বুঝিয়ে দিতে চাই তাহলে শুধু তাদের আট দফা বা নয় দফা দাবি মানলে তা পূর্ণ হবে না।

এজন্য ‘বৈষম্য’ সমস্যার মূলে প্রবেশ করতে হবে। স্বজনতোষণমূলক পুঁজিবাদী অর্থনীতি থেকে মুক্ত একটি সমতাভিত্তিক অর্থনীতি ও সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কিছু যৌক্তিক নারী কোটা এখনো রেখে দিতে হতে পারে এবং সেদিক থেকে কিছুটা কল্যাণমূলক অর্থনীতির কথাও ছাত্রনেতারা ভাবতে পারেন। টাকা পাচারকারী ও অতিধনীদের কাছ থেকে সম্পদ সংগ্রহ করে একটি গণতান্ত্রিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। সর্বাগ্রে কায়েম করতে হবে গণতান্ত্রিক সুশাসন ও থ্রি এমের (Money, Muscle and Manupulation) প্রভাবমুক্ত সুষ্ঠু নির্বাচনী ব্যবস্থা। সবচেয়ে কঠিন হবে এ তৃতীয় সমস্যাটির সমাধান এবং এটিই হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান এক নম্বর চ্যালেঞ্জ। এজন্য প্রকৃত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো না তৈরি করে তাড়াহুড়ো করে কোনো নির্বাচন করলে তা ফলপ্রসূ হবে না। আবার সেই সুযোগে অগণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে সুসংগঠিত হয়ে পুনরায় ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনাটাও কাঙ্ক্ষিত হবে না। একই সঙ্গে আরো খারাপ কোনো ধর্মীয় তালেবানি বা মৌলবাদী শক্তি কারো জুনিয়র পার্টনার বা সিনিয়র লিডার হয়ে এ সুযোগে ক্ষমতায় ফিরে এলে তাতেও দেশের কোনো মঙ্গল হবে না।

তাই ভবিষ্যৎ সমাধানটি ব্যক্তি বা দল বদলের সমাধান নয়, মৌলিক প্রাতিষ্ঠানিক সমাধান হতে হবে। না হলে তরুণরা এখন প্রাথমিক এক দফা অর্জনের পর ঘরে বসে থাকলে তাদের আসল সমস্যাগুলোর কোনো সুরাহা হবে না। কিছুদিন পর আবার রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে তারা এবং নতুন শাসকরা অর্বাচীনের মতো গুলি চালিয়ে তখন তা দমন করতে যদি চায় তাহলে তখনো আবার একই সমস্যার পুনরাবৃত্তি হবে। তাই তরুণ ছাত্রসমাজ এবং বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্র উভয়ই যদি এ মৌলিক প্রাতিষ্ঠানিক সমস্যা গভীরভাবে উপলব্ধি করে তা সমাধান করতে সচেষ্ট হয় তাহলেই এবারের আন্দোলন সার্থক হবে। এ আন্দোলনের আশু উপলব্ধিকে তাই দীর্ঘমেয়াদি করণীয়তে রূপান্তর করতে হবে। আবারো তরুণদের ওপর ভরসা রেখে এ লেখা শেষ করছি।

প্রথম আলো