তেল, গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের উদ্যোগ নিন
Share on:
অনেক দিন আগে একটি মার্কিন কোম্পানি বাংলাদেশে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য এসেছিল। তারা উদ্যোগ নিয়েছিল বাংলাদেশে কি পরিমাণ তেল-গ্যাস আছে তার নিরূপন করার জন্য। বিশেষ করে গ্যাসর সম্ভাব্য মজুদ নির্ধারণ করার জন্য তারা চেষ্টা করে।
যে চুক্তির আওতায় তারা বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছিল তার একটি শর্ত ছিল কোম্পানিটি বাংলাদেশে কোনো সাংবাদিক সম্মেলন করতে পারবে না। একই সঙ্গে বাংলাদেশের ভূগর্ভস্থ গ্যাসের মজুদ সম্পর্কে কোনো তথ্য সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রকাশ করা যাবে না। কোম্পানি শর্ত সাপেক্ষে গ্যাস রপ্তানির অনুমতি পাবে এমন কথাও চুক্তিতে উল্লেখ ছিল। বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ গ্যাস মজুদ আছে এটা প্রকাশ করে তারা গ্যাস রপ্তানির ক্ষেত্র তৈরি করার জন্য চেষ্টা করে।
যেহেতু বাংলাদেশে কোনো সাংবাদিক সম্মেলন আয়োজনের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ ছিল তাই কোম্পানিটি তাদের নিজ খরচে বাংলাদেশী কয়েকজন সাংবাদিককে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরের ব্যবস্থা করে। সাংবাদিকগণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে কোম্পানিটি তাদের জানায়, বাংলাদেশ কার্যত গ্যাসের উপর ভাসছে। বাংলাদেশে এত বিপুল পরিমাণ গ্যাস আছে যা দেশটির চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি। প্রয়োজন অতিরিক্ত গ্যাস রপ্তানি করা হলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা কোনো ঠেকিয়ে রাখা যাবে না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণরত সাংবাদিকগণ স্ব স্ব পত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশ করেন। সংবাদটি প্রকাশের পর চারিদিকে হৈচৈ পড়ে যায়। বাংলাদেশে এত বিপুল পরিমাণ গ্যাস আছে তা নিয়ে সর্বস্তরে আলোচনা শুরু হয়। আসলে মার্কিন কোম্পানির দেয়া সেই তথ্যের কোনো বাস্তবতা ছিল না। তারা মূলত গ্যাস রপ্তানিতে বাংলাদেশে জনমত সৃষ্টির জন্যই এমন একটি সংবাদ প্রকাশ করিয়েছিল। বাংলাদেশ অবশ্যই গ্যাস সম্পদে সমৃদ্ধ। কিন্তু তার পরিমাণ এমন নয় যে কোনোভাবেই নিঃশেষ হবে না। বাংলাদেশে কি পরিমাণ গ্যাস মজুদ আছে তা নিয়ে কেউই নিশ্চিত তথ্য দিতে পারবেন না। কারণ বিষয়টি মিমাংসিত বা প্রমাণিত নয়।
এ পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট ২৯টি গ্যাস ফিল্ড আবিস্কৃত হয়েছে। এসব গ্যাস ফিল্ডের মধ্যে ২০টি গ্যাস ফিল্ড থেকে বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। অবশিষ্ট ৯টি গ্যাস ফিল্ড থেকে এখনো বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস উত্তোলন কার্যক্রম শুরু হয়নি। বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস উত্তোলনকারি এবং উত্তোলনযোগ্য গ্যাস ফিল্ডগুলো থেকে যে গ্যাস পাওয়া যাবে তা দিয়ে বাংলাদেশের আগামী ১০ থেকে ১২ বছরের বর্ধিত গ্যাস চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হতে পারে। অর্থাৎ আগামী ১০/১২ বছরের মধ্যে যদি নতুন নতুন গ্যাস ফিল্ড আবিস্কৃত এবং গ্যাস উত্তোলন শুরু না করা যায় তাহলে বাংলাদেশ সম্পূর্ণরূপে গ্যাস শূন্য হয়ে যেতে পারে। সেই অবস্থায় বাংলাদেশকে কেমন জ¦ালানি সঙ্কটে পতিত হতে হবে তা সহজেই অনুমেয়। যারা মনে করেন, বাংলাদেশ গ্যাস সম্পদে অত্যন্ত সমুদ্ধ তারা নিশ্চিতভাবেই ভুল করছেন।
তারা হয়তো জানেন না, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতি দিন গড়ে যে পরিমাণ গ্যাস উত্তোলিত হয় তা দ্বারা দেশে অভ্যন্তরীণ চাহিদা পুরোপুরি মেটানো সম্ভব হয় না। গ্যাসের ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমরা কতই না উদাসীন। একটি ম্যাচের কাঠি বাঁচানোর জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা চুলা জ¦ালিয়ে রাখা হয়। গ্যাসের আগুনে কাপড় শুকানো হয়। কথায় বলে, বাঙালি দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বুঝে না। গ্যাস ব্যবহারের ক্ষেত্রে এই কথা সমভাবে প্রযোজ্য। গ্যাস বিল যেহেতু নির্ধারিত হারে আদায় করা হয় তাই গ্যাস ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমরা ততটা সচেতন নই। গ্যাসের মিটার প্রদানের কার্যক্রম চলমান আছে। কিন্তু এখনো সব ক্ষেত্রে গ্যাসের প্রিপেইড মিটার প্রদান করা সম্ভব হয়নি। প্রিপেইড মিটার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা গেলে গ্যাসের অপচয় অনেকটাই হ্রাস পাবে।
গ্যাস, জ্বালানি এবং বিদ্যুৎ এই তিনটি হচ্ছে প্রচালিত জ¦ালানির প্রধান উৎস বা সূত্র। বাংলাদেশ জ¦ালানি তেল বিপুল পরিমানে পাবার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। বিদ্যুতের যোগানও অপরিমিত। একমাত্র গ্যাস সম্পদে বাংলাদেশ সমৃদ্ধ। তবে আবিস্কৃত গ্যাসের পরিমাণ এতটা বিপুল নয় যে তা দ্বারা অনন্তকাল চাহিদা পূরণ করা যাবে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক দিক থেকে উন্নয়নের পথে রয়েছে। আগামীতে বাংলাদেশের উন্নয়ন কার্যক্রম বহাল রাখতে হলে জ¦ালানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। প্রাকৃতিক উৎস থেকে বাংলাদেশে যে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। রেন্টাল বিদ্যুৎ প্লান্ট থেকে যে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে তার মূল্য অনেক বেশি। রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টগুলোর অনেকগুলোই বর্তমানে বেকার বসে আছে। এদের বেকার বসিয়ে রাখলেও তাদের ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে। গত সরকারের ঘনিষ্টজনরাই এসব পাওয়ার প্লান্টের মালিক। তারা নানাভাবে রাষ্ট্রীয় অর্থ লুটে নিচ্ছে। অভ্যন্তরীণভাবে উৎপাদনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি তেলের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়।
তাই এই দু’টি জ¦ালানি উপকরণ আমাদের আমদানির মাধ্যমেই মেটাতে হবে। কিন্তু গ্যাসের ক্ষেত্রে আমদানি না করেও চাহিদা পূরণের সম্ভাবনা আছে। বাংলাদেশে বর্তমানে যে ২০টি গ্যাসল্ফল্ড থেকে বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে তা থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতিদিন গড়ে ৩০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস উত্তোলিত হচ্ছে। দেশে প্রতিদিন গ্যাসের গড় চাহিদা হচ্ছে ৪১০ কোটি ঘনফুট। ফলে চাহিদা ও যোগানের মধ্যে গ্যাপ থাকছে ১১০ কোটি ঘনফুট। তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি) আমদানির মাধ্যমে চাহিদা পূরণের চেষ্টা করা হচ্ছে। বাংলাদেশে বর্তমানে যে গ্যাস উত্তোলিত হচ্ছে তার ৭০ শতাংশই আসে বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ড, হবিগঞ্জ গ্যাস ফিল্ড, তিতাস গ্যাস ফিল্ড এবং জালালাবাদ গ্যাস ফিল্ড থেকে।
হরিপুর গ্যাস ফিল্ড থেকে ৬০০ ব্যারেল জ¦ালানি তেল পাবার সম্ভাবনা রয়েছে। তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানির মাধ্যমে চাহিদা পূরণের চেষ্টা করা হচ্ছে ঠিকই কিন্তু তাতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়। তাই আমাদের এমুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে জ¦ালানি চাহিদা মেটানোর ব্যবস্থা করা।
আগেই বলা হয়েছে বাংলাদেশে জ¦ালানি তেল এবং বিদ্যুতের চাহিদা অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধি মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে আমাদের হাতে বিকল্প রয়েছে গ্যাস। ভৌগলিক অবস্থান এবং ভুপ্রাকৃতিক গঠনের কারণে বাংলাদেশ গ্যাস সম্পদে সমৃদ্ধ। এখানে প্রচুর পরিমাণে গ্যাস পাবার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু সেই সম্ভাবনা কতটা এবং কি পরিমাণ তা আমরা নিশ্চিতভাবে জানি না। অনেক দিন যাবৎ গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য তেমন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।
একটি বিদেশী কোম্পানি বেশ ক’বছর আগে বাংলাদেশে কি পরিমাণ গ্যাস সম্পদ আছে তা অনুসন্ধানের জন্য উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু সেই উদ্যোগ শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। রাজনৈতিক সরকার আমলে নানা জটিলতার কারণে গ্যাস সম্পদ সম্পর্কিত তথ্য অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছিল বলে অনেকেই অভিযোগ করে থাকেন।
বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন আছে। এই সুবর্ণ সময় গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন কার্যক্রম শুরুর। বিদেশী কোম্পানির সঙ্গে প্রোডাকশন শেয়ারিং চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের অভ্যন্তরভাগ এবং সমুদ্র সীমানায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।
বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা করে এমনভাবে চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে যাতে বাংলাদেশ উত্তোলিত তেল-গ্যাসের একটি বড় অংশ পেতে পারে। বিদেশী কোম্পানি তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের সমুদয় ব্যয়ভার বহন করবে। উত্তোলিত তেল-গ্যাসের একটি বড় অংশই বাংলাদেশ পাবে।
বিদেশী কোম্পানি তাদের অংশের গ্যাস বা তেল তুলনামূলক সাশ্রয়ী মূল্যে বাংলাদেশের কাছে বিক্রি করবে। বাংলাদেশের চাহিদাতিরিক্ত তেল বা গ্যাস বিদেশী কোম্পানি রপ্তানি করতে পারবে। এভাবে চুক্তি স্বাক্ষর করা হলে তা বাংলাদেশের স্বার্থের অনুকূল হতে পারে। বর্তমানে প্রচলিত উৎস থেকে যে গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে তা দিয়ে বেশি দিন চাহিদা পূরণ করা যাবে না। তাই এ ক্ষেত্রে আমাদের বিকল্প উৎস অনুসন্ধান করতে হবে।
বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনের মাধ্যমে পারিবারিক চাহিদা পূরণের মতো গ্যাস উৎপাদন করা সম্ভব। তবে বায়োগ্যাস বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের সম্ভবনা খুব একটা উজ্জ্বল নয়। একই সঙ্গে সোলার এনার্জি উৎপাদনের প্রতি জোর দেয়া যেতে পারে। সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে পারিবারিক চাহিদা মেটানোর মতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেতে পারে। তবে বাংলাদেশ যেহেতু একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ তাই এখানে সোলার প্যানেল স্থাপনের সম্ভাবনা খুব একটা বেশি নয়।
এটা নিশ্চিত যে, যদি দ্রুত গ্যাস অনুসন্ধান এবং উত্তোলনের ব্যবস্থা করা না যায় তাহলে আগামীতে আমরা ভয়াবহ জ¦ালানি সঙ্কটে পড়তে যাচ্ছি। স্থলভাবে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের পাশাপাশি বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে সমুদ্র সীমায় গ্যাস ও জ¦ালানি তেল অনুসন্ধান ও উত্তোলনের উদ্যোগ নিতে হবে। আন্তর্জতিক আদালতের মাধ্যমে সমুদ্র সীমা চিহ্নিত হবার ফলে এখন সমুদ্র সীমায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা বিদ্যমান নেই। আশার কথা ভারত এবং মিয়ানমার তাদের চিহ্নিত সমুদ্র সীমায় ইতিমধ্যেই তেল-গ্যাস অনুসন্ধান এবং উত্তোলনের উদ্যোগ নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে দেশ দু’টি ইতিবাচক সাফল্য অর্জন করেছে। ভারতের নির্ধারিত সমুদ্র সীমা এবং মিয়ানমারের নির্ধারিত সমুদ্র সীমার মাঝখানে বাংলাদেশের সমুদ্র সীমার অবস্থান।
মিয়ানমার তার সমুদ্র সীমায় গ্যাস পেয়েছে এবং তারা উত্তোলন শুরু করেছে। আমাদের দু’পাশে যদি তেল-গ্যাস পাওয়া যায় তাহলে আমাদের নির্ধারিত সমুদ্র সীমায় তেল-গ্যাস না পাবার কোনো কারণ থাকতে পারে না। তাই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে আমাদের কার্যক্রম শুরু করতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশ সুমদ্র সীমায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কখন শুরু করবে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। কারণ এখানে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা রয়েছে। একটি মহল চাচ্ছে অভ্যন্তরীণভাবে গ্যাসের অনুসন্ধান ও উত্তোলনের পরিবর্তে বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানি করতে।
কারণ এতে কমিশন লাভের সুযোগ থাকে। বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন আছেন। এখনই উপযুক্ত সময় অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে গ্যাস ও জ¦ালানি তেল অনুসন্ধান ও উত্তোলনের কার্যক্রম শুরু করার। রাজনৈতিক সরকার আমলে ভালো অনেক সিদ্ধান্তও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়। তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন দীর্ঘ মেয়াদি একটি প্রক্রিয়া। কাজেই এখনই কাজ শুরু করা প্রয়োজন। বাংলাদেশের তিন পার্বত্য জেলার বিপুল পরিমাণ গ্যাস এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে জ¦ালানি তেল পাবার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না।
মহল বিশেষ অভ্যন্তরীণভাবে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের চেয়ে বিদেশ থেকে উচ্চ মূল্যে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির প্রতি বেশি আগ্রহী। গত সরকারের কোনো কোনো মহল থেকে এলএনজি আমদানির প্রতি বিশেষ আগ্রহ প্রদর্শন করা হয়। কয়েকটি গোষ্ঠীকে সুবিধা দেবার মানসে এলএনজি আমদানি উৎসাহিত করা হয়। এলএনজি আমদানির নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ কমিশন হিসেবে লোপাট করা হয়। আগামীতে আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজি’র মূল্য আরো ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশে গ্যাস প্রাপ্তির সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল। বাংলাদেশ গ্যাস প্রাপ্তির অনুপাত খুবই ভালো। ৫টি কূপ খনন করলে তিনটি থেকে গ্যাস পাওয়া যায়। বিশ্বের আর কোনো কূপ খনন ও গ্যাস প্রাপ্তির অনুপাত এতটা ভালো নয়।
সমস্ত বাংলাদেশকে কয়েকটি জোনে ভাগ করে ব্যাপকভাবে গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করা যেতে পারে। প্রয়োজনে এ ক্ষেত্রে বিদেশী এক্সপার্টদের সহায়তা গ্রহণ করা যেতে পারে। এমনকি বিদেশী কোম্পানিগুলোকে কন্ট্রাক্ট প্রদানের মাধ্যমে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের উদ্যোগ নিতে হবে। তেল বা গ্যাস এমন এক প্রাকৃতিক সম্পদ যা উত্তোলন না করা হলে এক সময় নষ্ট হয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে পার্বত্য এলাকায় প্রাকৃতিক অবস্থা এমন যে সেখানে মাঝে মাঝেই ভূমিকম্প হতে পারে। একবার ভূমিকম্প হলে মাটির নিচে যে ফাঁটল সৃষ্টি হয় সেখান দিয়ে গ্যাস নির্গত হতে পারে। সমুদ্রসীমা নির্ধারিত হবার পর ভারত ও মিয়ানমার তাদের এলাকায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান শুরু করেছে। এক্ষেত্রে তারা বেশ সাফল্য অর্জন করেছে। কাজেই বাংলাদেশও এ ক্ষেত্রে সফল হতে পারে।