তুরস্কে ইসলামী আন্দোলন পর্যবেক্ষণ ও কৌশল অধ্যয়নের সমীক্ষা
Share on:
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আমরা দুই সদস্য বিশিষ্ট একটি সমীক্ষা দল তুরস্কে ইসলামী আন্দোলন পর্যবেক্ষণ তার দাওয়া ও তরবিয়াতি কাজের নীতি কৌশল অধ্যয়ন এবং বাংলাদেশে ইসলামী আন্দোলনের জন্য শিক্ষণীয় বিষয়াবলী নিরূপণের লক্ষ্যে তুরস্ক সফর করি।
তুরস্কে পৌঁছার আগে আমরা ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি শ্রীলঙ্কা সফর করি এবং সেখানকার মূলধারা ইসলামী আন্দোলনের (জামায়াত ইসলামী শ্রীলঙ্কা) দপ্তর পরিদর্শন করি। শ্রীলঙ্কান জামায়াতের পক্ষ থেকে সেখানকার আন্দোলনের কর্মপন্থা এবং সামগ্রিক অবস্থা সম্পর্কে আমাকে অবহিত করা হয়। জামায়াতের কর্মকর্তাবৃন্দ বাংলাদেশের জনগণ বিশেষ করে জামায়াতের নেতা কর্মী ও সমর্থকদের প্রতি শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন।
বলাবহুল্য, তারা আমাদের সফর উপলক্ষে তাদের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা ও কর্মপরিষদের একটি যৌথ সভার আয়োজন করেন। সেখানে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কান আন্দোলনের বর্তমান অবস্থা, সমস্যাবলী ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়। এ আলোচনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে আমি ও আমার অপর সফরসঙ্গী জনাব আ জ ম ওবায়দুল্লাহ অংশগ্রহণ করি এবং ইসলামী আন্দোলনের বিদ্যমান অবস্থা সম্পর্কে বক্তব্য পেশ করি। বক্তব্য শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে আমরা অংশগ্রহণ করি। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, ১৯৪১ সালে মরহুম মাওলানা মওদূদী (র:) কর্তৃক সূচীত ভারতীয় জামায়াতে ইসলামীরই একটি বর্ধিত রূপ হচ্ছে শ্রীলঙ্কা জামায়াতে ইসলামী। ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর শ্রীলঙ্কায় স্বতন্ত্র সত্তা হিসেবে জামায়াত সেখানে কাজ শুরু করে এবং ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশের জামায়াত তথা ইসলামী আন্দোলনের আকীদা বিশ্বাস, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, কর্মসূচি ও কর্মকৌশলের সাথে কোন ব্যতিক্রমধর্মী গড়মিল শ্রীলঙ্কায় নেই। মুসলমানরা শ্রীলঙ্কায় সংখ্যালঘু হিসেবে তারা সেখানকার সরকার এবং জনগণের কাছ থেকে বৈষম্যমূলক কোন আচরণের শিকার এখনো হননি। তারা স্বাধীনভাবে তাদের দাওয়াত ও তরবিয়াতি কাজ পরিচালনা করতে পারেন। তারা ব্যাপকভাবে শিক্ষা-প্রশিক্ষণ ও জনসেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ করেন। ইতিমধ্যে অর্থনীতির ইসলামিকীকরণের একটি বড় ধরনের সাফল্য তারা অর্জন করেছেন এবং সেটি হচ্ছে একটি ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠা এবং ব্যাংকটির নাম হচ্ছে ‘আমানা ব্যাংক’। আমানা ব্যাংক প্রতিষ্ঠার কাজে শ্রীলঙ্কার তবলীগ জামায়াতও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে বলে জানা যায়। বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড এর পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচীর আদলে জামায়াতের তরফ থেকে মাইক্রো ফাইন্যান্সিং এর একটি কর্মসূচি গত ১০ বছর থেকে চালু আছে। এই কর্মসূচির শরনদ্বীপ ত্রাণ ও উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। এই ফাউন্ডেশনটি হচ্ছে শ্রীলঙ্কা জামায়াতে ইসলামী সমাজসেবা, ত্রাণ পুনর্বাসন কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত একটি বেসরকারি সংস্থা। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে দুস্থ, অত্যাচারিত প্রাকৃতিক দুর্যোগগ্রস্ত, দরিদ্র মানুষদের সেবা প্রদান এর প্রধান কাজ, প্রতিষ্ঠানটি মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা প্রতিষ্ঠা এবং এতিম প্রতিপালন ও মুসলিম সম্প্রদায়ের দরিদ্র এবং মধ্যম আয়ের পরিবারসমূহের ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা দীক্ষা এবং প্রশিক্ষণের আয়োজন করে থাকে। এই প্রতিষ্ঠানের কাজ ইসলামী আন্দোলনের সম্প্রসারণে অনুকূল ভূমিকা পালন করছে। শ্রীলঙ্কান জামায়াতের উদ্যোগে টেন্ড (Trend) নামে একটি ইংরেজি মাসিক পত্রিকাও প্রকাশিত হয়। পত্রিকাটি নাম প্রশংসনীয়।
শ্রীলঙ্কান জামায়াত, শরনদ্বীপ ফাউন্ডেশন, ট্র্যান্ড এর দপ্তর এবং ইসলামিক পাঠাগার ও পুস্তক বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্র আমরা পরিদর্শন করি। ৯ ফেব্রুয়ারি তার্কিস এয়ারলাইন্সযোগে আমরা আঙ্কারার উদ্দেশে রওনা হই এবং ১০ ফেব্রুয়ারি ইস্তাম্বুল হয়ে আঙ্কারায় পৌঁছি।
তুরস্কের ইসলামী আন্দোলন পর্যবেক্ষণের লক্ষ্যে প্রথমে আমরা বিদ্যমান দলসমূহের অবস্থা বিবেচনা করে পার্টিগুলোর সাথে যোগযোগ এবং তাদের সাথে পরামর্শক্রমে কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশী ছাত্রদের মধ্যে দায়িত্ব বন্টন করে দেই। বন্টনকৃত এই দায়িত্বানুযায়ী বুরহান উদ্দিন ও আফজালুর রহমানকে মূলধারার ইসলামী আন্দোলন বিশেষ করে সাদাত পার্টি, আলেম সমাজ এবং গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী ব্যক্তিত্বের/গ্রুপের এবং মিল্লিগুরুসভুক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহের সাথে যোগাযোগ দায়িত্ব প্রদান করা হয় এবং ছাত্র ফোরামের সভাপতি সেক্রেটারি যথাক্রমে জনাব পারভেজ ও হাফিজুর রহমানকে করা হয় এবং একে পার্টি তার গুরুত্বপূর্ণ নেতৃবৃন্দ এবং অঙ্গসংগঠনের সাথে যোগাযোগের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। কাজের সুবিধার্থে এবং সমীক্ষা কাজ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে জনাব আ জ ম ওবায়দুল্লাহকে একে পার্টি ও তৎসশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে যোগাযোগের দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং আমার উপর সাদাত পার্টি ও মিল্লিগুরুসের সহযোগী প্রতিষ্ঠান, ওলামায়ে কেরাম এবং রাজনৈতিক নেতাদের সাথে যোগাযোগের দায়িত্ব অর্পিত হয়। তবে, একে পার্টি অপেক্ষাকৃত নতুন হওয়ার প্রেক্ষাপটে এবং তাদের ইসলামিক এজেন্ডা ও সহযোগী প্রতিষ্ঠান কম হওয়ায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা সাদাত পার্টি এবং আলেম ওলামাদের সাথে যোগাযোগের কাজ একত্রে করেছি। জনাব আ জ ম ওবায়দুল্লাহ স্বতন্ত্রভাবে তার উপর অর্পিত প্রতিষ্ঠানসমূহের সঙ্গে যোগাযোগের ভিত্তিতে স্বতন্ত একটি রিপোর্ট তৈরি করে পেশ করেছেন বলে জানিয়েছেন।
তুর্কি জাতির উৎপত্তি ও ইতিহাস : তুরস্কে ইসলামী আন্দোলনের অবস্থা পর্যালোচনার আগে তুর্কি জাতির ইতিহাস সম্পর্কে কিছু বলা দরকার। বলাবাহুল্য মাওয়ারাউন নামক নদীর অববাহিকায় অবস্থিত আজকের তুর্কিস্তান নামক অঞ্চলটি এবং মঙ্গোলীয়া থেকে উত্তর চীন ও পশ্চিমে কাম্পিয়ান সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত আবার উত্তর সার্বিয়া থেকে দক্ষিণ ভারত এবং ইরান পর্যন্ত IDRনামক যে এলাকা অবস্থিত তাতে বসবাসকারী বিভিন্ন গোত্রের লোকেরা তুর্ক নামে পরিচিত ছিল। খ্রিস্টীয় ৬ষ্ঠ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় তারা নিজেদের বাসভূমি ছেড়ে বর্তমান তুরস্কের আনাতোলিয়ায় এসে বসবাস শুরু করে। ঐতিহাসিকদের মতে, তাদের তুলনায় জনবল এবং অর্থবলে শক্তিশালী মঙ্গল গোত্রের চাপ এবং জুলুমসহ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণে তারা নিজেদের বাসভূমি ছেড়ে আনাতোলিয়ায় চলে আসতে বাধ্য হয়। এই গোত্রসমূহ ধীরে ধীরে পশ্চিমে চলে আসে এবং জেইহুম নদীর তীরে আবাসস্থল গড়ে তুলে। নিহাবেন যুদ্ধ এবং ইরানের সাসানী সাম্রাজ্যের পতনের পর ৬৪১ সালে মুসলমানরা এই অঞ্চল তাদের শাসনের অধীনে নিয়ে আসেন। ৬৪২ সালে মুসলিম বাহিনী আরও পশ্চিমের অঞ্চলসমূহকে জয় করার জন্য অভিযান পরিচালনা করেন। এ সমস্ত অঞ্চলে সেই সময় তুর্কিরা বসবাস করতো। মুসলিম বাহিনীর সেনাপতি আব্দুর রহমান বিন রাবিয়ার সৈন্যরা তুর্কিদের সুলতান শাহিব রাজের মুখোমুখি হন। শাহিব রাজ সন্ধির প্রস্তাব দেন এবং আরমেনিয়দের বিরুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর সাথে মিলেমিশে যুদ্ধ পরিচালনার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। বিষয়টি ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর (রা.)-এর গোচরীভূত করা হয় এবং তিনি তুর্কি বাদশাহর সন্ধির প্রস্তাব অনুমোদন করেন। ফলে তুর্কিদের সাথে মুসলমানদের কোনো যুদ্ধ হয়নি এবং তারা একে অপরের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আর্মেনিয়া অঞ্চলকে জয় করে সেখানে ইসলামের পতাকা উত্তোলন করেন। তুর্কি জাতি ইসলামের অনুপম আদর্শের সন্ধান পেয়ে ইসলামকে মনেপ্রাণে গ্রহণ করে নেয় এবং আল্লাহ তায়ালার কালেমাকে বুলন্দ করার লক্ষ্যে ইসলামী সেনাবাহিনীর সাথে বীর মুজাহিদে পরিণত হয়।
তুরস্কের ঐতিহাসিক কিছু ঘটনা ও ইসলামের উপর তার প্রভাব : তৃতীয় খলীফা হযরত উসমান (রা.)-এর সময়ে তাবারিস্তানও মুসলমানদের দখলে আসে। ৬৫১ খ্রিস্টাব্দে (হিজরী ৫১) মুসলমানরা জেইহুন নদী অতিক্রম করে মাওয়ারউন নদীর আশেপাশের এলাকাকে দখল করে নেয়। পরবর্তীকালে সেখানে বসবাসরত তুর্কিদের বিশাল একটি অংশ দ্বীন ইসলামে প্রবেশ করে এবং বিশ^ব্যাপী আল্লাহর দ্বীনকে পৌঁছে দেয়ার জন্য ইসলামী সেনাবাহিনীতে অংশগ্রহণ করে। তুর্কীরা ইসলামের সাথে পরিচয়ের পর আব্বাসী খেলাফতের অধীনে একটি বিশাল ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। উল্লেখ্য যে, এশিয়া মহাদেশের অনেক দেশ শত শত বছর ধরে রোমান সাম্রাজ্যের কুফরি শক্তির অন্ধকার শাসনাধীনে ছিল। দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমার (রা.) তাদের এই বিশাল সাম্রাজ্য দখল করার আগ পর্যন্ত এই শাসন অব্যাহত ছিল। নবী করিম (সা.)-এর সাহাবীগণ রাসূল (সা.)-এর আদর্শ ও শিক্ষায় অনুপ্রাণিত হয়ে রোমান সাম্রাজ্যের জুলুম ও নির্যাতন থেকে মানুষদের রক্ষা করে ইসলামের অনুপ্রাণিত করার জন্য এই সাম্রাজ্যে জয় করে নেয়। ঐতিহাসিকদের ভাষ্য অনুযায়ী, ঐ সময় তুরস্কের মুসলমানরা সমরকন্দ ও বুখারা দিয়ে আনাতোলিয়ায় (আনাদোলু) আসেন। ১০৪৮ সালে বাইজেন্টাইনদের যুদ্ধে পরাজিত করে মুসলমানরা স্বাধীনতার দ্বারকে উন্মোচিত করেন। পরবর্তীতে ১০৭১ সালে মালাজগিরত যুদ্ধের মাধ্যমে তারা আনাতোলিয়া প্রবেশের সকল দরজা উন্মুক্ত করেন এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যে আনাতোলিয়া তাদের করতলগত হয় এবং তারা শেলচুকলু রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করেন। এই রাষ্ট্রটি বিভিন্ন কারণে বেশিদিন টিকে থাকতে পারেনি। তুরস্কের সর্বপশ্চিমের নগরী বুরসাতে হযরত উসমানের বংশধরগণ তাদের পূর্বপুরুষদের অনুসৃত ইসলামের মৌলিক চিন্তাধারাকে সামনে নিয়ে আসেন এবং তারা যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে মোঙ্গল ও খ্রিস্টান রাজ্যগুলোকে পরাজিত করে তাদের রাষ্ট্রের পরিসীমা বৃদ্ধি করেন। পরবর্তীকালে আল্লাহ তায়ালার অশেষ মেরেহবানীতে তাঁবুর নিচে গড়ে উঠা এই রাষ্ট্রটি বিশাল উসমানী খেলাফতে রূপান্তরিত হয়। ১৪৫৩ সালে ইস্তাম্বুল বিজয়ের মধ্য দিয়ে তুর্কি মুসলমানরা উসমানি খেলাফতকে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী ইসলামিক রাষ্ট্রে পরিণত করেন। ইসলামী ঐক্যকে শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাড় করানোর লক্ষ্যে তারা ইরানের উপর প্রভাব বিস্তার করেন। এর পর পরই ইয়াবুজ সুলতান সেলিম পবিত্র মক্কাকে পৌত্তলিক ও ম্যামলুক রাষ্ট্রের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য মিশরে সৈন্য পাঠান। তিনি মিশর বিজয়ের পর মিশরকে উসমানি খেলাফতের অন্তর্ভুক্ত করেন।
প্রায় চারশ’ বছর পর্যন্ত মুসলমানদের অধিকার সংরক্ষণ করা ও সারা দুনিয়ায় ইসলামী ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় উসমানী খেলাফতের তৎপরতায় ইউরোপ ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে উঠে। যেখানেই জুলুম-নির্যাতনের সংবাদ তারা পেয়েছেন সেখানেই তারা সাহায্য নিয়ে হাজির হতেন। সন্ত্রস্ত ইউরোপীয় নেতাদের মধ্যে সর্বপ্রথম থিউডোর হেক্সেল নামক একজন বিখ্যাত ইহুদি রাজনীতিবিদ তুরস্কের খলিফা আব্দুল হামিদ খানের সাথে চুক্তি করার জন্য সাক্ষাৎ প্রার্থনা করেন এবং খলীফার তরফ থেকে তার সাক্ষাৎকার মঞ্জুর করা হয়। ঐ সময় উসমানী খেলাফতের প্রচুর বৈদেশিক ঋণ ছিল। থিউডোর হেক্সেল এই মর্মে খলিফা আব্দুল হামিদ খানকে প্রস্তাব দেন যে, তাদের সকল ঋণ মওকুফের বিনিময়ে ফিলিস্তিনকে তাদের হাতে তুলে দিতে হবে। সুলতান আব্দুল হামিদ তার এই প্রস্তাবে অত্যন্ত বিরক্তি প্রকাশ করেন এবং জানান যে, শহীদের রক্তে কেনা ভূমি কখনো টাকার বিনিময়ে তারা বিক্রি করতে পারেন না। তার এই জবাবের পর থেকে তুর্কি খেলাফতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার শুরু হয় এবং ইহুদি ও খ্রিস্টানদের চক্রে পড়ে খলিফা আব্দুল হামিদ পদচ্যুত হন এবং তাদের পছন্দমতো খলিফা খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। উসমানি খেলাফতকে প্রথম বিশ^যুদ্ধে যোগদান করতে বাধ্য করা হয়। একই সাথে তাদের জার্মানির মিত্র শক্তি হিসেবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে হয়। এতে তাদের সকল শক্তির অবসান ঘটে। যুদ্ধের পর ইউরোপ থেকে আনাতোলিয়াকে উদ্ধার করার জন্য নবনিযুক্ত খলিফা মোস্তাফা কামাল পাশাকে সশস্ত্র বাহিনীর সেনাপতির দায়িত্ব প্রদান করেন। সমগ্র আনাতোলিয়া নিজেদের শেষ আশ্রয়কে রক্ষা করার জন্য সর্বাত্মক যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মোস্তফা কামাল পাশা নিজেকে আতাতুর্ক ও তুর্কি জাতির পিতা হিসেবে ঘোষণা করেন। তিনি খেলাফতকে বাতিল করে রিপাবলিকান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। মোস্তফা কামাল পাশা ইসলাম বিদ্বেষী ছিলেন। তিনি পাশ্চাত্য সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে উন্নতি অগ্রগতির প্রধান চাবিকাঠি বলে মনে করতেন এবং ইসলামকে এর অন্তরায় বলে বিশ^াস করতেন। খেলাফত ব্যবস্থা বিলোপের বিরুদ্ধে উপমহাদেশের মুসলমানসহ উসমানীয় খেলাফতের অন্তর্ভুক্ত সকল দেশে আন্দোলন হয়েছে, কিন্তু এই আন্দোলণ সফল হয়নি।
খেলাফত ব্যবস্থা বাতিল করে মোস্তফা কামাল পাশা ইসলাম ও মুসলমানদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতন শুরু করেন। তিনি মুসলিম মেয়েদের হিজাব পরা নিষিদ্ধ করেন এবং শর্ট স্কার্ফ পরতে বাধ্য করেন। কুরআন শিক্ষাকে নিষিদ্ধ করা হয়। ইসলামী আদর্শের পরিবর্তে ধর্মনিরপেক্ষতা গ্রহণ, মসজিদে তুর্কি ভাষায় আজান প্রচলন এবং প্রচলিত আরবি হরফকে পরিবর্তন করে ল্যাটিন হরফ ব্যবহার প্রভৃতি ছিল তার ইসলাম ও জাতিসত্তা বিরোধী কাজগুলোর অন্যতম। (চলবে)