তারুণ্যকে সরকার তাদের শত্রু হিসেবে বিবেচনা করছে
Share on:
সারা দেশে এখনো জারি আছে নির্ধারিত সময়ের কারফিউ। মাঠে নিয়োজিত আছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর মধ্যে চলমান বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘিরে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া; আটক হচ্ছে অসংখ্য মানুষ। শিক্ষার্থীদের শুরু করা এ আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বর্তমানে শিক্ষকরাও পালন করছেন নানা কর্মসূচি।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশে সৃষ্ট বিক্ষোভ, সংঘাত-সহিংসতা দেশবাসীকে অস্থিরতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। এরই মধ্যে প্রাণ হারিয়েছে দুই শতাধিক মানুষ। সারা দেশে এখনো জারি আছে নির্ধারিত সময়ের কারফিউ। মাঠে নিয়োজিত আছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর মধ্যে চলমান বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘিরে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া; আটক হচ্ছে অসংখ্য মানুষ। শিক্ষার্থীদের শুরু করা এ আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বর্তমানে শিক্ষকরাও পালন করছেন নানা কর্মসূচি। এসব কর্মসূচিতে সরব শিক্ষকদের মধ্যে অগ্রগামী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের সাক্ষাৎকার
ড. আব্দুল হাসিব চৌধুরী বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন ও পরবর্তী সহিংস পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি কথা বলেন বণিক বার্তায়।
দুই শতাধিক মৃত্যু, তার মধ্যে ১১৩ জনের মতো শিশু। স্বাধীন দেশে সরকারি বাহিনীর হাতে বেসামরিক মানুষের এ মৃত্যু কী মানে নিয়ে হাজির হচ্ছে আমাদের কাছে?
মনে হচ্ছে, আমরা কোনো স্বাধীন দেশে নেই। বাংলাদেশ বেদখল হয়ে গেছে। এ যেন অধিকৃত ফিলিস্তিন বা কাশ্মীর। অনেকেই নিহত হয়েছেন, যেভাবে স্নাইপারের গুলিতে লোকের মৃত্যু ঘটেছে, যেভাবে চোখে ছররা গুলির আঘাত করা হয়েছে বা ইন্টারনেট বন্ধ করে ব্লক রেইড করা হচ্ছে—এটা তো অতীতে কোনো গণ-আন্দোলনে দেখা যায়নি। এ ধরনের সংবাদ আমরা বরং দেখেছি অধিকৃত কাশ্মীরে। এক রিপোর্টে দেখেছি, চোখে ছররা গুলির আঘাত পেয়ে শুধু জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন ৪২৯ জন। এসব দেখে মনে হয়, আমাদের ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালিয়েছে এক দখলদার বাহিনী। গুলি চালিয়েছে হত্যার উদ্দেশ্যে—সরাসরি মাথায়-গলায়-বুকে-পিঠে, বেপরোয়াভাবে, নির্দয়ভাবে। নিজ দেশের জনগণের ওপর কীভাবে তারা এমন করে গুলি চালাতে পারল, যদি না তারা কার্যত দখলদার হয়ে থাকে? ১৯৭১ সালেই কেবল এ দেশের জনগণ এমন আক্রমণের মুখোমুখি হয়েছে। সেটি ছিল পাকিস্তানি দখলদাররা। আর এখন আমরা এটা দেখছি স্বাধীন বাংলাদেশে। শিশু ও কিশোরদের এভাবে হত্যার মানে এই নবীন প্রাণকেই তারা সবচেয়ে বড় বিপদ মনে করে। সজাগ ও প্রাণবন্ত তারুণ্যকে সহ্য করার ক্ষমতা এদের নেই। এর থেকে এ বার্তাই ছাত্র-তরুণরা পেয়েছে যে, সরকার তাদের শত্রু হিসেবে বিবেচনা করছে। সরকারের জন্য এটা আত্মঘাতী হয়েছে।
বড় আকারের প্রাণ ক্ষয়ের শোক করার আগেই এখন ছাত্রদের মধ্যে, তাদের বাবা-মায়ের মধ্যে নতুন ভয় গ্রেফতার-আটক, গুম আতঙ্ক। গতকালও শতাধিক আটক হলো, সব মিলিয়ে ১০ হাজারেরও বেশি আটক—এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য?
অনেক টালবাহানার পর আদালতের মারফত কোটা সংস্কারের পর এভাবে গণহারে ছাত্রদের, এমনকি শিশুদের পর্যন্ত গ্রেফতার করা হচ্ছে। এ যেন প্রতিবাদ-প্রতিরোধের জন্য ছাত্র-তরুণদের ওপর প্রতিশোধ নেয়া হচ্ছে। এমন প্রতিহিংসাপরায়ণ নিপীড়ন ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানকালে বা ১৯৮০-এর দশকে জেনারেল এরশাদের সামরিক শাসনামলেও দেখা যায়নি। অনেক বয়স্ক লোককে দেখেছি সে সময়কার সঙ্গে বর্তমান সময়ের তুলনা করে বর্তমান সরকার সম্পর্কে অধিকতর নেতিবাচক সিদ্ধান্তে পৌঁছাচ্ছেন। ছাত্ররা এতে দমে যাবে এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। গ্রেফতার, জেল-জুলুম, আইন-আদালত নিয়ে তরুণ প্রজন্মের ভীতি ও শঙ্কা এর ফলে ক্রমেই ফিকে হয়ে আসছে। এটা শুধু গ্রেফতার হওয়াদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নয়, একই সঙ্গে একটি সামষ্টিক অভিজ্ঞতাও। আর জানেন তো, সাহস হলো সংক্রামক।
বেসামরিক সরকার কর্তৃক কারফিউ জারি এবং তা দীর্ঘায়িত করার সিদ্ধান্তকে শিক্ষক সমাজ কীভাবে দেখছে?
একটি বেসামরিক সরকার কর্তৃক এভাবে দীর্ঘদিন ধরে দেশজুড়ে কারফিউ জারি রাখা নজীরবিহীন ঘটনা। এটার একটা কারণ, সরকার মনে করছে পরিস্থিতি যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে নেই। অন্য আরেকটা কারণ, ব্লক রেইড করার জন্য কারফিউ খুব সুবিধাজনক। তাছাড়া কারফিউর সময় নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জনজীবনের ছন্দ সরকার এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। সন্ধ্যার পর বিয়ে-শাদি, পারিবারিক-সামাজিক বহু অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। সরকারের জন্য এটা কাউকে সরাসরি আঘাত না করে নিজের ক্ষমতা প্রদর্শনের একটা ভালো উপায়। অতীতে সামরিক শাসকরা এটা এভাবে ব্যবহার করেছিলেন। সব মিলিয়ে এটা স্পষ্ট, সরকার এখন রাজনৈতিকভাবে ভয়ানক দুর্বল অবস্থায় আছে এবং দলের রাজনৈতিক শক্তির চেয়ে রাষ্ট্রীয় নানা বাহিনীর ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
শিক্ষকদের একটি অংশ গত কয়েক দিন রাস্তায় নেমেছে। ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ব্যানারে থাকা (সাদা, নীল, বেগুনি) শিক্ষকদের কেউ কি অংশ নিয়েছেন? দেশে শিশুহত্যার বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার ক্ষেত্রেও শিক্ষকরা রাজনৈতিক হিসাব কষছেন কি?
একজন শিক্ষকের রাজনৈতিক পছন্দ-অপছন্দ থাকতে পারে, এটা স্বাভাবিক। আপনি রাজনৈতিক দলের সদস্যও হতে পারেন। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রুপ গঠন করে রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তির যে ধারাটি আছে আমি তার বিরোধী। আমরা যারা ছাত্রদের ওপর নির্যাতনের বিরোধিতা করছি—এটা শিক্ষক হিসেবে করছি। কোনো রাজনৈতিক হিসাব কষে প্রতিবাদে নামিনি আমরা। ১৯৬৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক শামসুজ্জোহা যখন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হয়েছিলেন এবং তাদের গুলিতে শহীদ হয়েছিলেন সেটা কোনো রাজনৈতিক হিসাব কষে তিনি করেননি। শিক্ষকদের প্রতিবাদের এ ঐতিহ্য আমাদের রয়েছে। আমরা শহীদ অধ্যাপক শামসুজ্জোহার উত্তরসূরি।
আর সাদা, নীল, বেগুনি নানা রঙের ব্যানারধারীদের আমি তেমন একটা চিনি না। সুতরাং তাদের কেউ অংশ নিয়েছেন কিনা সেটা আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়।
ডিবি হেফাজতে আন্দোলন সমন্বয়কদের রেখে বিবৃতি দেয়া হলো, তাও আবার অনেককে হাসপাতাল থেকে তুলে এনে! এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য?
এটা নিঃসন্দেহে রাজনৈতিকভাবে একটি কাঁচা কাজ হয়েছে, প্রায় শিশুতোষ, হাস্যকরও বটে। এর আগে সরকারের আইনমন্ত্রী ছাত্রদের সঙ্গে বসার জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু জুলাই হত্যাকাণ্ডের পর সেটা যে আর সম্ভব নয়—এটা বুঝতে তাদের সময় লেগেছে। ছাত্ররা আর সরকারকে বিশ্বাস করে না বা নির্দেশ মানতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে, এটা তারা মেনে নিতে পারেনি। বলপ্রয়োগের রাজনীতিতে অভ্যস্ত সরকার ক্ষেপে গিয়ে পুলিশের ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ দিয়ে জোর করে আটক, শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের পর শেষ পর্যন্ত যেটা আদায় করতে পারল সেটার কোনো মূল্য পুলিশ ছাড়া আর কারোর কাছে ছিল না। ছাত্রদের যে দাবি-দাওয়া রয়েছে সে বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনাটা আবশ্যিকভাবে একটি রাজনৈতিক কাজ। পুলিশ দিয়ে সে কাজ করতে যাওয়া থেকে বোঝা যায়, সরকার কতটা রাজনৈতিকভাবে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে এবং তার ফলে তাদের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে।
শান্তিপূর্ণ এ আন্দোলন সহিংস রূপ নেয়ার পেছনে সরকারের কর্তাব্যক্তিদের ভূমিকার কথা অনেকে বলছেন। সরকার কি এখনো সমঝোতার পথে হাঁটছে নাকি কঠোর পথেই এগোচ্ছে?
আমি অন্যত্র বলেছি, ছাত্রদের আন্দোলন মোটেও সহিংস ছিল না। সহিংস হয়ে ওঠার কোনো প্রস্তুতিও ছাত্রদের দিক থেকে ছিল না। শুরুতে এটা ছিল এমন এক প্রশ্ন নিয়ে আন্দোলন যার মধ্যে সহিংস হয়ে ওঠার কোনো অন্তর্নিহিত তাগিদ ছিল না। ছাত্ররা কোনো সশস্ত্র বাহিনী গঠন করেনি বা তাদের হাতে কোনো অস্ত্রও ছিল না। একটি দেশে সর্বোচ্চ সহিংসতা দেখাতে পারে কেবল রাষ্ট্র নিজে।
আমার মনে হয়েছে, যেভাবে হঠাৎ করে আদালতের আদেশ দিয়ে ৫৬ শতাংশ কোটা পুনর্বহাল করা হলো, যে সময়টায় করা হলো, এর মধ্যে অন্য এজেন্ডা ছিল। এ আদেশের ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যে কী প্রতিক্রিয়া হতে পারে সেটা হিসাব করেই যেন এসব করা হয়েছে। সম্ভবত ভাবা হয়েছিল সময়মতো আন্দোলনকে ধমক দিয়ে নিভিয়ে দেবে। কিন্তু সরকারের রাজনৈতিক আত্মম্ভরিতা, ধমক দিয়ে আন্দোলনকে আবার খাঁচায় বন্দি করার চেষ্টা—এটা ছিল শুকনো খড়কুটোয় অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো। এটা সরকারের বিবেচনায় ছিল না।
এ সরকার বরাবরই হার্ড লাইনের সরকার। আলোচনা ও সমঝোতা তার ধাতে নেই। শুরুতে দলীয় গুণ্ডাদের দিয়ে গায়ের জোরে আন্দোলন থামানোর চেষ্টা করা হয়। সেটা ব্যর্থ হলে পুলিশ ও তারপর বিজিবি নামিয়ে গুলি চালিয়ে দমনের চেষ্টা এবং সেনাবাহিনী ও কারফিউ ইত্যাদি। অর্থাৎ বলপ্রয়োগের সব হাতিয়ার এবং আরো বেশি কিছু ব্যবহার করা হলো, ঘটানো হলো ব্যাপক হত্যাকাণ্ড। তারপর আইনমন্ত্রীকে দিয়ে আলোচনার চেষ্টা, দ্রুততম সময়ে আপিল বিভাগের রায়। এরপর আবার নির্যাতন, হাজার হাজার গ্রেফতার, ডিবি দিয়ে জোর করে বিবৃতি আদায়। সেখানে ব্যর্থ হয়ে হঠাৎ করে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত। সব মিলিয়ে সরকার অস্থির হয়ে উঠেছে।
সরকারি চাকরিতে ৯৩ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নেয়া হবে। ৫৬ শতাংশ কোটা থেকে এক লাফে ৭ শতাংশে নিয়ে আসা হলো। সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, ছাত্রদের বড় একটি দাবি মেনে নেয়া হয়েছে। তাহলে আন্দোলন করছে কেন? সরকারের এ অবস্থানকে কীভাবে দেখছেন?
দেখুন, এটা যদি জুলাইয়ের প্রথম ১০ দিনের মধ্যে করা হতো এবং তার পরও ছাত্ররা আন্দোলন চালিয়ে যেত তাহলে এমন প্রশ্ন যথার্থ হতো। কিন্তু কোটায় পরিবর্তনটা যখন করা হয়েছে ততদিনে দুই শতাধিক নাগরিক যার বিপুল অংশ শিশু, কিশোর ও ছাত্র; তাদের গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যার বিচার হবে—সরকারের ওপর এমন কোনো আস্থা ছাত্রদের নেই। আবু সাঈদের মৃত্যুর যে এফআইআর পুলিশ দাখিল করেছে তার থেকেই এটা স্পষ্ট। আরো দেখুন, কোনো মামলায় গুলিতে নিহতের কোনো উল্লেখ নেই বলে পত্রিকায় রিপোর্ট বেরিয়েছে। সুতরাং নিজেদের দাবি থেকে সরে আসার কোনো কারণ দেখতে পাচ্ছে না ছাত্ররা। সরকার যে এটা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে বা বুঝতে চাইছে না এটা তার রাজনৈতিক ব্যর্থতা। এর মাশুলও সরকারকে গুনতে হবে।
স্পষ্টত ক্যাম্পাসে শুরু হওয়া আন্দোলন এখন পুরো দেশে ছড়িয়ে গেছে। ব্যাপক প্রাণহানি পুরো জাতীয় সংহতি ভেঙে দেয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি করল কি?
বরং উল্টো। প্রথমত, সমগ্র ছাত্রসমাজ, শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাই নয়, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা সবাই একাট্টা হয়েছে, যেন তারা এক দেহ, এক প্রাণ। দ্বিতীয়ত, গ্রাম-শহর সর্বত্র সমাজের নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ ছাত্রদের ব্যাপকভাবে সমর্থন করছে। গত দুই সপ্তাহে যে গান, কবিতা, ছড়া, গল্প, কার্টুন, গ্রাফিক্স, স্লোগান ইত্যাদি তৈরি হয়েছে সংখ্যা, মান ও সৃষ্টিশীলতায় তা সম্ভবত গত ৫০ বছরের আর কোনো দুই সপ্তাহে হয়নি। যেন দীর্ঘদিনের বদ্ধ দুয়ার খুলে গেছে। সৃজনশীলতায় মুক্তি ঘটিয়েছে ছাত্রদের এ আন্দোলন। আবু সাঈদ, মীর মুগ্ধর মতো তরুণরা আগামী কয়েক প্রজন্মের জন্য দৃষ্টান্ত ও আদর্শ হয়ে থাকবেন। তারাই এ সময়ের নায়ক। আর আমি বিশেষ করে বলব এ দেশের মায়েদের কথা। আজ বাংলাদেশের প্রতিটি মা যেন দেশের সব শিশু-কিশোর-তরুণ-যুবকের মা; একটাই হৃৎপিণ্ড, একই তালে হৃৎস্পন্দন। মায়েরা জায়নামাজে বসে যখন মোনাজাত করছেন, তারা সব সন্তানের জন্য মোনাজাত করছেন। আপনি ঘরে ঘরে কথা বলে দেখুন, এটা দেখতে পাবেন। এটা কিন্তু অভূতপূর্ব ব্যাপার। এই-ই তো জাতীয় সংহতি। জাতীয় সংহতি মানে কয়েকটি দলের মধ্যে সমঝোতা নয়। সুতরাং জাতীয় সংহতি ভেঙে যায়নি বরং এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মনে হচ্ছে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ। ছাত্রছাত্রীরা দ্রুত ক্যাম্পাসে ফিরে যেতে চাচ্ছেন। শিক্ষক সমাজ ছাত্রছাত্রীদের দাবির সঙ্গে কতটুকু একমত?
এটা তো একেবারেই অপ্রয়োজনীয় এক প্রশ্ন। ক্যাম্পাসে ছাত্ররা না থাকলে শিক্ষক হিসেবে আমার অস্তিত্বই যেন থাকে না। দ্রুততম সময়ে ক্যাম্পাস খুলে দেয়া হবে—এটিই শিক্ষকরা চান।