তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে আরো শক্তিশালী করতে হবে
Share on:
ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে বিগত সরকার যেভাবে জুলাই মাসে ইন্টারনেট বন্ধ করেছিল, তাতে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে।
আগের সরকারের আমলে আইসিটি খাতে অনেক অর্থ বরাদ্দ করা হলেও অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে তেমন কোনো কার্যকরী সাফল্য আসেনি। বর্তমানে আইসিটি খাতের ব্যবসায়ীদের দক্ষ জনবল নিয়ে কাজ করা লোকাল ইন্ডাস্ট্রিতে চলছে নানা অস্থিরতা। চলছে সত্যিকারের কাজ করা ব্যবসায়ীদের ঝামেলায় ফেলার অপচেষ্টা।
তথ্যপ্রযুক্তি খাত একটি বিশাল ক্ষেত্র। কিন্তু জুলাই মাসে ইন্টারনেট শাটডাউনের পর এ খাতের প্রতিটি সাব-সেক্টরে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কিছু খাত হয়তো উঠে দাঁড়াতে পেরেছে, কিন্তু সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট এবং অন্যান্য মূল পরিষেবা খাত এখনও সংকটের মধ্যে রয়েছে। এ সমস্যার মূল কারণ হলো, অনেক সাব-সেক্টরের ব্যবসায়ীদের পর্যাপ্ত উদ্বৃত্ত টাকা নেই, যা তাদের ব্যাংক সাপোর্ট ছাড়াই টিকে থাকতে সাহায্য করতে পারে। এর ফলে ব্যাংক সাপোর্টের অভাব এবং উদ্বৃত্ত টাকা না থাকার কারণে তাদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।
আইটি ও আইটিইএস খাত বর্তমানে বড় ধরনের সংকটে রয়েছে। গত বছর থেকেই সমস্যা শুরু হয়েছে। কেননা, নির্বাচনের কারণে নতুন প্রকল্প বা কাজের পরিমাণ বাড়েনি। আবার গত জুলাই মাসে নতুন একটি বড় ধাক্কার সম্মুখীন হতে হয়েছে, যা মহামারিকালীন সংকটের চেয়ে বড় মনে হচ্ছে। এখন প্রশ্ন হলো, এই সংকট থেকে কতটা উত্তরণ সম্ভব হবে? নতুন কাজের অর্ডার আসবে কিনা, তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।
এ খাতে যেসব ব্যবসায়ী কাজ করেছেন, তারা মূলত সরকার বা ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে কাজ করেছেন, যা সময়ের সঙ্গে বদলাবে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে তাদের সঙ্গে কাজ হয়েছে। বিএনপি থাকলে তাদের সঙ্গে হতো। তো একটা ট্রেন্ড শুরু হয়েছে, যারা ওই সরকারের সঙ্গে কাজ করেছে তারা আওয়ামী লীগের– এটা সত্য নয়। কিছু ব্যক্তি হয়তো সরকারপক্ষের, কিন্তু সবাই অবশ্যই নয়। ব্যবসায়ী ও রাজনীতিকে আলাদা করতে হবে এবং ব্যবসায়ীদের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে।
বিগত বছরে দক্ষ জনবল নিয়ে কাজ করা ব্যবসায়ীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে এবং এতে আশপাশের দেশের মদদ থাকতে পারে। কিছু প্রকল্পে সরকার ও ইন্ডাস্ট্রির কিছু ব্যক্তির দুর্নীতির কারণে এখন সত্যিকারের কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে টার্গেট করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে শুধু দেশের কিছু মানুষের মদদই নেই, বরং আশপাশের দেশের সহযোগিতাও রয়েছে। যদি স্থানীয় শিল্পকে দুর্বল করা যায়, তাহলে নতুন সরকারের অধীনে ব্যবসায়ীদের অন্য দেশ থেকে সলিউশন আনার ওপর নির্ভর করতে হবে। দুর্নীতিবাজরা সরকারের ভুল পথে পরিচালিত করে আসল কাজ করা ব্যবসায়ীদের বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা ও মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
ব্যবসায়ীদের দুর্নীতির জন্য দায়ী করা হলেও প্রকৃত সমস্যা হলো সরকারের ভেতরের কর্মকর্তারা। তাদের ভূমিকা পরিবর্তন করা জরুরি। কারণ দুর্নীতির মূল চক্র সরকারযন্ত্রেই গড়ে ওঠে। ব্যবসায়ীরা প্রকল্পের পরিকল্পনা পায় অনেক পরে, সাধারণত দু-তিন বছর পর। আমরা যখন ব্যবসায়ীদের দুর্নীতির জন্য দোষারোপ করি, তখন প্রকৃত সমস্যার দিকে নজর দিই না। উদাহরণস্বরূপ হাই-টেক পার্ক ও বিসিসির একসঙ্গে একই রকম ট্রেনিং প্রোগ্রাম চালু হলেও মানবসম্পদ উন্নয়নে তেমন অগ্রগতি হয়নি। সরকার বিশাল বাজেট বরাদ্দ করলেও সঠিক পরিকল্পনা ও ব্যবহারের অভাবে তার সুফল পাওয়া যায় না। তাই প্রকৃত পরিবর্তন আনতে হলে প্রথমে সরকারি ব্যবস্থায় সঠিক পরিকল্পনা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। তারা যেন একটি সমন্বিত পদক্ষেপ নেন। আইসিটি শিল্প কখনোই বিগত দিনে সরকারের সক্রিয় অংশীদার হিসেবে কাজ করার যথাযথ সুযোগ পায়নি। নতুন সরকারের দায়িত্ব হবে এই অংশীদারিত্বকে শক্তিশালী এবং ব্যবসায়ীদের আইসিটি উন্নয়নে আরও অন্তর্ভুক্ত করা।
তরুণরা তথ্যপ্রযুক্তিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাই নতুন প্রজন্মের জন্য সরকারের ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়া পুনর্বিবেচনা করা দরকার। প্রজেক্টভিত্তিক পদ্ধতির পরিবর্তে সরকারকে একটি উদ্ভাবনী মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারের উচিত হবে কোন খাতে ডিজিটালাইজেশন প্রয়োজন তা নির্ধারণ করে পলিসি ও নিরাপত্তার দিকনির্দেশনা প্রদান ও সমন্বিত কাঠামো তৈরি করা। এর পর বাজারকে উন্মুক্ত করে দেওয়া উচিত, যাতে নতুন প্রজন্ম সহজেই প্রবেশ করে সমস্যা সমাধান এবং দেশের এসএমই খাতকে শক্তিশালী করতে পারে।