ডিম-মুরগীর বাজারে নৈরাজ্য!
Share on:
ডিম ও মুরগীর বাজারে রীতিমত নৈরাজ্য চলছে। কোনভাবেই দাম নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না বরং দিনের পর দিন পরিস্থিতির অবনতিই হচ্ছে। ফলে দেশের নি¤œ আয়ের মানুষ রীতিমত বেকায়দায় পড়েছেন।
জানা গেছে, সরকারিভাবে ফার্মের মুরগীর ডিম এবং ব্রয়লার ও সোনালি মুরগীর দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও বাজারে তা কার্যকর হয়নি। রাজধানীর কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেঁধে দেওয়া ওই দামে এই তিন পণ্য বিক্রি হচ্ছে না বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে আগের চেয়েও বেশি দামে বিক্রি হয়েছে ডিম ও মুরগী। যা আমাদের দেশের বাজার ব্যবস্থার নৈরাজ্যের কথাই স্মরণ করে দেয়।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ডিম এবং ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। নতুন দর অনুসারে, খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা ও সোনালি মুরগি ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা ঠিক করা হয়। এ ছাড়া খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম নির্ধারণ করা হয় ১১ টাকা ৮৭ পয়সা। তাতে প্রতি ডজন ডিমের দাম পড়ে ১৪২ টাকা ৪৪ পয়সা।
সম্প্রতি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে জানানো হয়েছে, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর এই তিন পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও পোলট্রি খাতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের মতামতের ভিত্তিতে ২০২৪ সালের জন্য ডিম ও মুরগীর এই ‘যৌক্তিক মূল্য’ নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
রাজধানীর শেওড়াপাড়া, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও টাউন হল বাজারে আজ সোমবার সকালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব বাজারে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগি এবং ডিম আগের তুলনায় বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা জানান, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে হাইব্রিড ধরনের সোনালি মুরগির কেজি ২৪০ টাকা। অন্যদিকে, ফার্মের মুরগির প্রতি ডজন বাদামি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকা দরে। তাতে প্রতিটি ডিমের দাম পড়ে ১৩ টাকা ৭৫ পয়সা। ফার্মের মুরগির সাদা ডিমও বিক্রি হচ্ছে প্রতি ডজন ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকার মধ্যে। বাজার সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, কোনো বাজারেই ১৮০ টাকার নিচে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হতে দেখা যাচ্ছে না। এখন সরকারিভাবে ব্রয়লার মুরগির দাম ১৮০ টাকার নিচে নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও এক সপ্তাহের কম সময়ের ব্যবধানে বাজারে আগের চেয়ে বেশি দামে মুরগি বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া গত বৃহস্পতিবার ঢাকার বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি সোনালি মুরগি ২৫০-২৭০ টাকায় এবং ফার্মের মুরগির প্রতি ডজন বাদামি ডিম ১৬০ টাকা ও সাদা ডিম ১৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ আজ বাজারে এসব পণ্যের দাম আগের তুলনায় বেড়েছে।
বাজার নিয়ন্ত্রণে আমদানির ডিম অনুমতি দেওয়ার পর গত সপ্তাহে ২ লাখ ৩১ হাজার ৮০০টি ডিম দেশে আসে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সম্প্রতি কয়েকটি জেলায় বন্যার কারণে অনেক মুরগির খামার নষ্ট হয়েছে। এতে ওই সব এলাকায় মুরগি ও ডিমের সরবরাহ কমেছে। আবার ভারত থেকে সম্প্রতি যে ডিম আমদানি হয়েছে, তা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। ফলে সরবরাহ বৃদ্ধি না পাওয়ায় দাম কমছে না। এর আগেও দাম বেঁধে দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়েছিল। গত বছরের সেপ্টেম্বরে আলু, ডিম ও দেশি পেঁয়াজের দাম বেঁধে দিয়েছিল সরকার। কিন্তু ওই দাম বাজারে কার্যকর হয়নি।
এদিকে বাজারে মাছের দামও বাড়তি দেখা গেছে। মাছ বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, তিন দিন টানা বৃষ্টির কারণে অনেকেই কেনাকাটা করতে পারেননি। ফলে সকাল থেকে বৃষ্টি না থাকায় অনেক ক্রেতা বাজারমুখী হয়েছেন। আবার বাজারে মাছের সরবরাহ কিছুটা কম রয়েছে। এ দুই কারণে রুই, পাঙাশ, কই, তেলাপিয়া প্রভৃতি মাছের দাম কেজিতে ৪০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বাজারে এখন প্রতি কেজি পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা দরে। সাধারণত এই মাছ ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। একইভাবে ৪০০ টাকা কেজির শিং মাছের দাম হয়েছে ৪৭০-৪৮০ টাকা; ১৮০-২০০ টাকা কেজির কই বিক্রি হয়েছে ২২০-২৩০ টাকায়।
গত ৫ আগস্ট বিপ্লবের পর দেশের বাজারে কিছুটা হলেও ইতিবাচক ধারা লক্ষ্য করা গিয়েছিল। নিত্যপণ্যের দাম ছিল নিম্নমুখী। দাবি করা হয়েছিল যে, পথে পথে চাঁদাবাজি না থাকার কারণে বাজার ব্যবস্থায় ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। কিন্তু ব্যতিক্রম ঘটছে ডিম ও মুরগীর ক্ষেত্রে। তাই এই দু’টি পণ্য সরকার নির্ধারিত মূল্যের বিক্রির জন্য খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে যৌথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কেউ যাতে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করতে না পারে সেদিকেও নজর দেওয়া দরকার। অন্যথায় বাজারের নৈরাজ্য থামানো যাবে না।