মতামত/কলাম প্রকাশনার সময়: শনিবার ১৪, সেপ্টেম্বর ২০২৪

‘ডেঙ্গু রোধে’ যেসব বিষয়ে আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয়া উচিৎ

Share on:

গত কয়েক দশক ধরে ঢাকা নগরীতে এডিস মশার উৎপাত বেড়েই চলেছে। আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে ঢাকার দুটি সিটি করপোরেশন এলাকায় বিশেষ কার্যক্রম হিসেবে নাগরিকদের কল্যাণে কিছু উদ্ভাবনমূলক প্রকল্প নিয়ে অনেক দিন ধরে ভাবছি। আমাদের বিশ্বাস, এগুলো নগরবাসীর রোগব্যাধিমুক্ত সুস্থ ও প্রশান্তিময় জীবনযাপনে সহায়তা করবে।


এ ছাড়া নিশ্চিতভাবে বলা যায়, উদ্যোগগুলো নগরীর দূষণমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করবে। অদক্ষ ও দেশপ্রেমহীন আমলাতান্ত্রিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ঊর্ধ্বে উঠে সত্যিকার মানবিক, উন্নত জীবন-সংস্কৃতি এবং সুষ্ঠু, আনন্দ ও স্বস্তিময় দিনযাপনের পথ প্রদর্শন করতে পারে আমাদের এই প্রকল্পগুলো।

এটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত, করোনা সংক্রমণের কারণে যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে, সেগুলোর নগর ও পৌর এলাকার নাগরিকদের মাঝে প্রচণ্ড দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ড ও স্বাস্থ্যবিধি না মানার চরম প্রবণতা দেখা গেছে। অথচ ভ্যাকসিন দেওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কার্যক্রম আরও সম্প্রসারণ করে প্রতিটি দেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শতভাগ নিশ্চিত করা জরুরি। পাশাপাশি আরও কার্যকর ভ্যাকসিন আবিষ্কার ও উৎপাদনে আমাদের কাজ করতে হবে।

এ কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া দরকার: ১. নগরের সব জায়গায় বাড়ির আশপাশ, আঙিনা, চারপাশের ঝোপঝাড় ও পানিধারক বদ্ধ জলাশয় নিশ্চিহ্ন করতে হবে; ২. পরিত্যক্ত টায়ার, নারকেলের খোসা, যে কোনো ধরনের পাত্র, জলাধার, ভাঙা হাঁড়ি বা অন্য কোনো পাত্র, পানি ধারণ করে এমন যে কোনো আধার, বাড়ির ভেতরে অব্যবহৃত কমোড বা টয়লেট প্যান, গাছের টব, ড্রাম, সুইমিং পুল বা কৃত্রিম ঝরনা-জলাধার থাকলে তিন দিন পরপর বাধ্যতামূলক পানি বদলাতে হবে; ৩. এসব কর্মকাণ্ডে অবশ্যই সিটি করপোরেশনের মোবাইল কোর্ট সদাতৎপর থাকবে। পৌর সংস্থাগুলো তদারকির জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত করতে হবে। আইন লঙ্ঘনকারীর কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা থাকবে; ৪. পাড়ায় পাড়ায় কল্যাণ সংঘ ও স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষকের নেতৃত্বে টিম করে এলাকা বা ওয়ার্ডভিত্তিক এই স্বেচ্ছাসেবীদের কাজে লাগাতে হবে। তারা মোবাইল কোর্টকে সহায়তা করবে। তারা বাড়ি বাড়ি, মার্কেট, শপিংমল, কাঁচাবাজার, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসা, মসজিদ, ক্লাবঘরসহ নালা-নর্দমা, অলিগলি, পার্ক ও লেক, মাঠ ঘুরে ঘুরে তদারক করবে; ৫. মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সময় ম্যাজিস্ট্রেটরা এলাকার স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর সহায়তা নেবেন। তবে কঠোর নিয়ম-বিধি অনুসরণ করে উভয় পক্ষ কাজ করবে, যাতে কেউ এ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার সুযোগ না পায় এবং নাগরিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘন বা মৌলিক অধিকার হরণের ঘটনা না ঘটে।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে স্বেচ্ছাসেবক দরকার হতে পারে ৩০ হাজার। সারাদেশের অবশিষ্ট এলাকার সব সিটি করপোরেশন ও পৌর এলাকার জন্য স্বেচ্ছাসেবক দরকার হতে পারে আরও প্রায় ৪০ হাজার। এই মোট ৭০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক সারাবছর ধরে পরিচ্ছন্নতা কাজ তদারকি ও সরাসরি শ্রমদান করলে সারাদেশে মশা-মাছির উপদ্রব, রোগব্যাধি ও জঞ্জালমুক্ত স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব। ফলে সারাদেশে অবশ্যই ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও ম্যালেরিয়ামুক্ত হতে পারে। এ ছাড়া অন্যান্য রোগব্যাধি, এমনকি করোনা সংক্রমণও ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।

স্বেচ্ছাসেবকরা অবশ্যই কাজের সময় খাবারসহ সব ধরনের প্রয়োজনীয় জিনিস হাতে রাখবেন। স্বেচ্ছাসেবকদের একটা গ্রুপ কাজ করবে ভোর ৬টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত। তাদের জন্য সকালের নাশতা ও দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা থাকবে। আরেক গ্রুপ দুপুর দেড়টায় এসে খাবার খেয়ে কাজ শুরু করবে এবং সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ কাজে থাকবে। তারা দুপুরের খাবার ও বিকেলের নাশতা পাবে। এ কাজে স্বেচ্ছাসেবকদের কিছু সরঞ্জাম যেমন হ্যান্ডগ্লাভ, মিনি ইউনিফর্ম, লাঠি ইত্যাদি সরবরাহ করা হবে। কর্মসূচি বাস্তবায়ন কাজসহ খাবার-পানীয় ইত্যাদি বাবদ বছরে অন্তত ৯০০ কোটি টাকা বাড়তি ব্যয় হবে। বিভিন্ন করপোরেট হাউস তাদের সামাজিক দায়িত্বশীলতা তহবিল থেকে অনুদান দিলে কোনো সমস্যাই হওয়ার কথা নয়।

বিশ্বের বহু দেশে কয়েক সপ্তাহ ধরে মাঙ্কি পক্সের সংক্রমণ জনজীবনকে শঙ্কায় ফেলছে। এতে স্বল্প হারে হলেও প্রাণহানি ঘটছে। এখনও করোনা সংক্রমণ ও প্রাণহানি কিছুতেই শূন্যে নেমে আসছে না। তবে সেই শুভদিনের জন্য আমাদের অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও ম্যালেরিয়া উচ্ছেদ করা গেলে মানুষের মূল্যবান প্রাণ রক্ষা পাবে। চিকিৎসা ব্যয় থেকে মুক্তির মাধ্যমে কয়েক লাখ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলে নিশ্চিত করে বলা যায়।

দৈনিক সমকাল