ডেঙ্গুর শঙ্কা ঊর্ধ্বমুখী, মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নেয়া জরুরি
Share on:
ডেঙ্গুর ঊর্ধ্বমুখী যে চিত্র আমরা দেখছি, তাতে জনমনে নতুন করে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। সমকালের প্রতিবেদন অনুসারে, শুধু আগস্টেই ডেঙ্গু আক্রান্ত ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। সারাদেশে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৬ হাজারের বেশি।
এক দিনে চারশর বেশি রোগী ভর্তি হওয়ার খবরও পাওয়া গেছে। বুধবার দেশের এক দৈনিক পত্রিকার মতে, কক্সবাজারে এক মাসের ব্যবধানে তিন গুণ এবং তিন মাসের ব্যবধানে ৩২ গুণ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার দীর্ঘদিন ধরে ডেঙ্গুসহ মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে আসছে। গত দেড় দশকে বিশেষত ঢাকায় দুই সিটি করপোরেশনের তৎপরতা পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশনে যেভাবে বড় করে দেখানো হয়েছে, তাতে শুধু জনসন্তোষ বেড়েছে। এসব উদ্যোগ ও প্রতিশ্রুতির কোনোটাই উল্লেখযোগ্য ফল বয়ে আনেনি। বরং সংবাদমাধ্যমে অসংখ্যবার সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতি ও রাষ্ট্রীয় অর্থ তছরুপের চিত্র উঠে এসেছে। সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন ও বিবিধ অব্যবস্থাপনার কারণে দেশের মানুষের মধ্যে ভয়াবহ ক্ষোভের উদ্রেক হয়েছে। পরিণতিতে আমরা গণঅভ্যুত্থানের মতো একটা অবিশ্বাস্য ঘটনার সাক্ষী হলাম, যা পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব ফেলেছে।
এত বড় পরিবর্তনে দেশের সর্বস্তরের মানুষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে নানামুখী দাবি নিয়ে হাজির হচ্ছে। নতুন করে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন নূরজাহান বেগম। জনগণের প্রত্যাশা, তিনি অতীতের ব্যর্থতা উতরে গিয়ে দেশের স্বাস্থ্য খাতটি ঢেলে সাজাবেন।
নতুন সরকারের অধীনে দেশ পরিচালিত হচ্ছে। প্রশাসনে প্রায় প্রতিদিন রদবদলের ঘটনা ঘটছে। ইতোমধ্যে সিটি করপোরেশনের মেয়র, ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলরদের পদ বাতিল করা হয়েছে। এতে প্রশাসনেও স্বল্পকালীন প্রভাব পড়েছে এবং শহরের মশক নিধন কর্মসূচি বন্ধ রয়েছে।
এরই মধ্যে থেমে থেমে বেশ কয়েকবার বৃষ্টি হয়েছে, যা মশাবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়িয়ে তোলে। এ কারণে গত কয়েক সপ্তাহে ডেঙ্গু পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। চলতি মাসের প্রথম দিন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চার ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা ছিল পাঁচশর কাছাকাছি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক হিসাবে দেখা যাচ্ছে, দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। এপ্রিলে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫০৪। এ ছাড়া মারা যায় দু’জন। আগস্টে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ হাজারে এবং ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত আট মাসে ৮৬ জন মারা গেছে এবং ১৩ হাজার ৩১৯ জন আক্রান্ত হয়েছে। গত কয়েক মাসের রাজনৈতিক অস্থিরতায় এটাই উঠে এসেছে যে, দেশে রাজনৈতিক বন্দোবস্ত না হলে স্বাস্থ্যের মতো মৌলিক শর্তটিও নড়বড়ে হয়ে যায়।
বিশেষজ্ঞরা সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে ডেঙ্গু সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন। তারা জানিয়েছেন, প্রস্তুতি না থাকলে ভয়াবহ পরিস্থিতি হতে পারে। এ জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর তদারকি বাড়ানো, পর্যাপ্ত শনাক্তকরণ কিট ও আইভি ফ্লুইড সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরি। দেশের কয়েকটি দৈনিকের বরাতে জানা গেছে, ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তরে পর্যাপ্ত লোকবলের অভাব। অনুমোদিত ৩৯৬টি পদে দেড়শর বেশি পদ খালি। প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাবে মশক নিধন কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
আমরা দেশের ডেঙ্গু সমস্যা নিরসনকে এই সরকারের সফলতার একটি পরীক্ষা হিসেবেও দেখতে পারি। এতে নতুন সরকারের সক্ষমতা ও দক্ষতা দুটোই সামনে আসবে। ডেঙ্গু সমস্যা নিরসনে লোক দেখানো পুরোনো কর্মসূচি না নিয়ে বরং বাস্তবসম্মত কয়েকটি পদক্ষেপই যথেষ্ট। আশা করি, আগের মতো মশক নিধন নিয়ে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের হাস্যকর ও প্রতারণাপূর্ণ জালিয়াতি আর দেখতে হবে না।