‘ট্রাম্পকে হত্যাচেষ্টা’ যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে কি প্রভাব ফেলবে?
Share on:
কমলা হ্যারিস-ডোনাল্ড ট্রাম্প বিতর্কের এখনও এক সপ্তাহ পার হয়নি। এতে রিপাবলিকানদের ব্যাপক পরাজয় ঘটেছে বলে ধরে নেওয়া হয়েছিল। এদিকে কথা উঠেছে, নির্বাচন হাইতি অভিবাসীদের কুকুর ও বিড়াল খাওয়ার বিতর্ক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে কিনা।
পপ সুপারস্টার টেইলর সুইফট হ্যারিস ও ওয়ালজকে সমর্থন করছেন। এতে ট্রাম্প তাঁর সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে লিখেছেন ‘আমি টেইলর সুইফটকে ঘৃণা করি!’ এরই মধ্যে এলো ট্রাম্পের ওপর দ্বিতীয় হত্যাচেষ্টার ঘটনা। এসব অসংখ্য উত্তেজনা ও বিতর্কের কোনোটা কি আগামী ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে?
মাত্র দুই মাসের মধ্যে ট্রাম্প দ্বিতীয়বার প্রাণে বেঁচে গেলেন বলে মনে হয়। এবারে সন্দেহভাজন ব্যক্তির কাছে একে-৪৭ রাইফেল পাওয়া গেছে। তবে, এবারের ঘটনা ১৩ জুলাইয়ের হত্যাচেষ্টার মতো ছিল না। এমনকি অভিযুক্ত আততায়ী একটি গুলি ছোড়ার আগেই গোপন পরিষেবা কর্মকর্তারা তাকে অনুসরণ করে শনাক্ত করে ফেলেন।
মার্কিন রাজনীতিতে দুর্ভাগ্যবশত গুপ্তহত্যা বিরল ঘটনা নয়। সব মিলিয়ে আধুনিক ইতিহাসে জো বাইডেনসহ মার্কিন প্রেসিডেন্টদের প্রত্যেকেই বিভিন্ন ধরনের হত্যাচেষ্টার মুখোমুখি হয়েছেন। আরও বিরল দৃষ্টান্ত হলো, ২০২৪ সালের জুলাইয়ের আততায়ীর মতোই এবারেও ঘাতক সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল।
জুলাই মাসে বিতর্কে বাইডেনের দুর্বল পারফরম্যান্স, কিছু আইনি লড়াইয়ে ট্রাম্পের জয়, বাইডেন-হ্যারিস প্রশাসনের জনসমর্থন হ্রাস এবং জুলাইয়ের হত্যাচেষ্টার সময় রক্তাক্ত ট্রাম্পের মুষ্টি উত্থাপনের মধ্য দিয়ে অনেকে মনে করেছিলেন, ট্রাম্প নিশ্চিতভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন।
কিন্তু ২১ জুলাই বাইডেন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান এবং হ্যারিস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে সর্বোচ্চ আসনের টিকিট গ্রহণ করেন। অনেকে ডেমোক্র্যাটদের এই পালাবদলকে রাজনৈতিক ‘পুনর্বিন্যাস’ বলে চিহ্নিত করেছেন। নির্বাচনে অভূতপূর্ব অনেক কিছু বরাবরই ঘটে। তবে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী লড়াইয়ে অংশগ্রহণ না করার ঘটনা সর্বশেষ ১৯৬৮ সালে দেখা গিযেছিল।
বাইডেন নির্বাচনী লড়াই থেকে সরে আসার আগে একাধিক জাতীয় ভোট জরিপে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প (যিনি সম্প্রতি একটি হত্যাচেষ্টা থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন) মাত্র ১ বা ২ শতাংশ পয়েন্টে পিছিয়ে ছিলেন। আর গত সপ্তাহে হ্যারিসের সফল বিতর্কের সমাপ্তির আগে বিভিন্ন জরিপে ট্রাম্পের চেয়ে হ্যারিসকে পিছিয়ে কিংবা দু’জনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কাছাকাছি বলে দেখানো হয়েছিল। এমনকি সাবেক প্রেসিডেন্টের চেয়ে কিছুটা এগিয়েও দেখানো হয়েছে। একইভাবে ১৩ জুলাইয়ের হত্যাচেষ্টায় ট্রাম্পের পক্ষে রেটিং ২ শতাংশেরও কম বেড়েছে। হ্যারিসের বিতর্কের পরে জরিপগুলোতে গড়ে তাঁর পক্ষে কেবল ১ শতাংশেরও কম পয়েন্ট বেড়েছে বলে মনে হচ্ছে।
ছয় মাস আগে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের এসব ঘটনার আগে ট্রাম্পের গড় সমর্থনের হার ছিল ৪৭ শতাংশ। আজও সেই হার একই। গত অর্ধবছর তাঁর পক্ষে সমর্থন এখনও ৪৪ শতাংশের নিচে বা ৪৯ শতাংশের ওপরে যেতে পারে। মূলত এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। অন্য কথায়, এত ঘটনার পরও সম্ভবত ট্রাম্প, হ্যারিস ও বাইডেনের দৃষ্টিভঙ্গির মতো এই অবস্থাও অপরিবর্তিত থাকবে।
দুটি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে খুব সামান্য ব্যবধানে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়, মোট ০.০৩ শতাংশ আমেরিকাবাসী ২০২০ সালের নির্বাচনে সিদ্ধান্ত দিয়েছিল। সুতরাং, সবচেয়ে সূক্ষ্ম পার্থক্যও আপাতদৃষ্টিতে সবচেয়ে অপ্রয়োজনীয় ঘটনা মনে হলেও, নির্ণায়ক হিসেবে দেখা দিতে পারে।