জেলেনস্কিকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা পশ্চিমাদের
Share on:
রাশিয়ার বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা (এসভিআর) বলেছে, ‘পশ্চিমা বিশ্ব’ জেলেনস্কিকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। তারা শিগগির এ নিয়ে প্রচারণা শুরু করবে। কথিত
আছে, তাঁর জায়গায় প্রার্থী হবেন আর্সেন অ্যাভাকভ। তিনি আগে ইউক্রেনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
অনেক দেশে এই বিভাগের অধীনে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পরিচালিত হয় (ইউক্রেনে গোয়েন্দা সংস্থা সামরিক বাহিনীর অধীনে থাকলেও সরাসরি প্রেসিডেন্টের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়)। রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে, অ্যাভাকভের ইউরোপীয় নেতাদের এবং ইউক্রেনের ‘জাতীয়তাবাদী’ গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে জোরালো সম্পর্ক রয়েছে।
এসভিআরের প্রতিবেদন কতটুকু সঠিক, নাকি ইউক্রেনের পরিস্থিতি নাড়িয়ে দিতে এটি রাশিয়ানদের এক প্রচেষ্টা, তা মোটেও পরিষ্কার নয়। এসভিআর অনুসারে, পশ্চিমা বিশ্ব জেলেনস্কিকে সরিয়ে দিতে চাওয়ার একটা কারণ, রাশিয়ার সঙ্গে দরকষাকষিতে তাঁর অনিচ্ছা। প্রকৃতপক্ষে রাশিয়ার সঙ্গে যে কোনো চুক্তিতে জেলেনস্কির শর্তগুলো আজভ ও অন্যান্য অতি ডানপন্থি সংগঠনের সঙ্গে বেশ ভালোভাবে মিলে যায়। তাই এসভিআর মনে করে, পশ্চিমারা অ্যাভাকভকে সমর্থন দিয়ে দরকষাকষিতে সুবিধা করে দিতে চায়, যদিও এটি পরস্পরবিরোধী বলে মনে হয়।
রাশিয়ানরা এ যুক্তি তুলে ধরছেন, জেলেনস্কি ইউক্রেনের বৈধ নেতা নন। কারণ তাঁর নির্বাচনী বৈধতা গত মে মাসে শেষ হয়ে গেছে এবং নতুন নির্বাচনে তিনি আগ্রহী নন। ইউক্রেনের সংবিধানে সামরিক আইন জারি সংক্রান্ত কিছু বিধান রয়েছে, যা নির্বাচনকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়; তবে সেই সাংবিধানিক ফাঁকফোকর জেলেনস্কিকে সাহায্য করে না। সম্প্রতি তাঁর জনপ্রিয়তা কমে গেছে। ইউক্রেনবাসী এমন এক রাষ্ট্রে আছেন, যেখানে স্বাভাবিক স্বাধীনতা সীমাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে এবং সংবাদমাধ্যম কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত।
ইউক্রেন সেনাবাহিনীর অবস্থাও ভালো নয়, নতুন সৈন্য নিয়োগেও প্রতিরোধ আছে। কুর্স্কে আগ্রাসন সত্ত্বেও ইউক্রেন ক্রমাগত যুদ্ধক্ষেত্রে জায়গা হারিয়ে ফেলছে এবং তাদের বিপুলসংখ্যক সেনা হতাহতের ঘটনা ঘটছে। এ অবস্থা আর কতদিন চলতে পারে, তা স্পষ্ট নয়। তবে ইউক্রেনবাসীর আস্থা ভেঙে যাওয়ার আগেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় বিশ্লেষকরা যুদ্ধ শেষ করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে শুরু করেছেন।
জেলেনস্কির পর কে আসবেন, তা গ্রীষ্মজুড়ে মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে। যাদের নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বেশির ভাগই পুরোনো, যারা আগে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং তাদের কারও তেমন স্পষ্টত জনপ্রিয়তা নেই। এদের মধ্যে রয়েছেন কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিটসকো, সাবেক প্রেসিডেন্ট পেট্রো পোরোশেঙ্কো এবং ইউক্রেনের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউলিয়া তিমোশেঙ্কো।
এটা স্পষ্ট, জেলেনস্কি দেশের খারাপ অবস্থা নিয়ে জুয়া খেলতে শুরু করেছেন। কুর্স্ক আক্রমণে অন্তত সেটাই স্পষ্ট। রাশিয়ার অভ্যন্তরে এবং অন্যত্র সংবেদনশীল স্থাপনায় হামলার মধ্যেও তা প্রকাশ পায়। গত বছর আগস্টের মাঝামাঝি জাফোরাইজ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ড্রোন হামলা এবং কুর্স্ক পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলার হুমকিও তার বাইরে নয়। এ ধরনের আক্রমণ শুধু রাশিয়া ও ইউক্রেনের জন্যই হুমকি নয়, একই সঙ্গে এর দ্বারা বড় পারমাণবিক হামলার ঘটনা ঘটলে ইউরোপের জন্যও হুমকির কারণ হতো। এর আগে ১৯৮৬ সালে চেরনোবিলের চুল্লিতে আগুন ধরে যাওয়া বা ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর যে পারমাণবিক দুর্ঘটনা ঘটে, তার ফলে ইউরোপে যেমন প্রভাব পড়েছিল, তেমনটা পড়তে পারত। ইউক্রেন ইতোমধ্যে রাশিয়ার বিমান ঘাঁটিতে হামলা করে কয়েকটি পারমাণবিক বোমারু বিমান ধ্বংস করেছে। তারা রাশিয়ার দুটি কৌশলগত রাডার স্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, যা রাশিয়ার পারমাণবিক তিন কর্মসূচির অংশ এবং রাশিয়ার ভাষ্যমতে, কুর্স্ক ও বেলগোরোড বেসামরিক অ্যাপার্টমেন্ট, শহর ও গ্রামে ইউক্রেন আক্রমণ করেছে। অভিযোগ রয়েছে, ন্যাটোর কিছু অংশীদার ইউক্রেনীয়দের বলেছে, রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলার জন্য ইউক্রেনে তাদের সরবরাহ করা দূরপাল্লার অস্ত্র ব্যবহার করা যাবে না, যদিও সে নিষেধাজ্ঞার কোনো বাস্তব প্রমাণ নেই।
ন্যাটোর অধিকাংশ অংশীদার এখন বলছে, রাশিয়াকে আসন্ন শান্তি আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। যদিও এ ধরনের আলোচনার সুযোগ নেই। এমনকি জেলেনস্কিও এমনটি বলছেন। তা ছাড়া রাশিয়ানরা বলছেন, তারা এ আলোচনায় আগ্রহী নন। কারণ রাশিয়াকে আগ্রহী করার মতো এমন কোনো প্রস্তাব এখানে নেই। তবে অদূর ভবিষ্যতে এমন কোনো আলোচনা বাস্তবায়ন করতে পারে কিনা, তা দেখার বিষয়।
ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যকার সমস্যা ইউক্রেন ছাড়িয়েও ন্যাটোকে প্রভাবিত করে। ইউক্রেনে ন্যাটোর উপস্থিতি এবং ইউরোপের সামগ্রিক নিরাপত্তা কাঠামোও এর সঙ্গে যুক্ত। সত্য বিষয় হলো, পশ্চিমে কেউ ন্যাটো সমীকরণের কথা