জন–আকাঙ্ক্ষা পূরণে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ‘অর্থনীতি অগ্রাধিকার’ পাক
Share on:
জরিপের মাধ্যমে কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে জনগণের ধারণা তুলে ধরা হয়। যদিও এর ফলাফল নির্ভর করে জরিপ গ্রহণকারীর উদ্দেশ্য ও প্রশ্নের ধরনের ওপর। এই বিবেচনা মাথায় রেখে ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) পরিচালিত ‘পালস সার্ভে ২০২৪: জনগণের মতামত, অভিজ্ঞতা ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক জরিপটির বিশ্লেষণ সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে প্রাসঙ্গিক।
অংশগ্রহণকারী ৭১ শতাংশ মানুষ বলেছেন, দেশ ঠিক পথে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি ৮১ শতাংশ মানুষের চাওয়া, সংস্কার কার্যক্রম শেষ করতে যত দিন প্রয়োজন, অন্তর্বর্তী সরকার তত দিন ক্ষমতায় থাকুক।
জরিপে গ্রাম ও শহরের বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার ২ হাজার ৩৬৩ মানুষের মতামত নেওয়া হয় টেলিফোনে। এতে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ, বর্তমান সময়ের সমস্যা, সংস্কার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করা হয়। গত ২২ আগস্ট থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়।
অর্থনৈতিকভাবে দেশ ঠিক পথে যাচ্ছে বলে মত দিয়েছেন ৬০ শতাংশ মানুষ। রাজনীতি ও অর্থনীতি মিলিয়ে মোট ৫৩ শতাংশ মানুষ আশাবাদী। এর মধ্য দিয়ে তাঁরা জানিয়ে দিয়েছেন, রাজনীতির চেয়ে অর্থনীতিই তাঁদের কাছে অগ্রাধিকার পাচ্ছে। জরিপে আরেকটি প্রশ্ন ছিল—অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ কত দিন হওয়া দরকার? এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি (৩৮ শতাংশ) লোক বলেছেন, সরকারের মেয়াদ তিন বছর বা তার বেশি হওয়া দরকার।
দুই বছর মেয়াদ হওয়া দরকার বলে মত দেন ৯ শতাংশ। এক বছরের পক্ষে মত দেন ১১ শতাংশ। অথচ সরকারের মেয়াদ তিন থেকে ছয় মাস হওয়া দরকার বলে মত দেন ২২ শতাংশ মানুষ। এটি জরিপের বিশ্বাযোগ্যতাকে দুর্বল করবে বলে মনে হওয়া স্বাভাবিক। কেননা, সময় বেশি বা কম চাইলে তার একটি ধারাবাহিকতা থাকার কথা। নির্বাচন দেওয়ার আগে এই সরকারের দাবি সম্পর্কে জানতে চাইলে সর্বোচ্চ ৩২ শতাংশ অর্থনৈতিক সংস্কারের কথা বলেছেন। ১৭ শতাংশ মানুষের কাছে অগ্রাধিকার পেয়েছে রাজনৈতিক ও নির্বাচনী সংস্কার।
এর অর্থ মানুষ রাজনীতি ও নির্বাচনের চেয়েও অর্থনৈতিক সমস্যাকে বেশি গুরুত্ব দেন। ৪০ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, অর্থনীতিই তাঁদের কাছে মুখ্য। এক মাস বয়সী সরকারের (জরিপ চলাকালে) প্রতি মানুষ যে আস্থা দেখিয়েছেন, তা ধরে রাখতে হলে অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোর সমাধান করতেই হবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দলীয় শিক্ষার্থী রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার পক্ষে ৮০ দশমিক ৬ শতাংশ ও শিক্ষক রাজনীতি বন্ধের পক্ষে ৮৪ দশমিক ১ শতাংশ মত দিয়েছেন। এতে প্রমাণিত হয়, শিক্ষার্থীদের চেয়েও শিক্ষকেরা দলীয় রাজনীতির নামে বিশ্ববিদ্যালয়কে বেশি কলুষিত করেছেন। শিক্ষাঙ্গনে দলীয় রাজনীতি প্রত্যাখ্যান মানে সুস্থধারার রাজনীতি নিরুৎসাহিত করা নয়।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর মাত্র এক মাস পার হয়েছে। একটা সরকারকে মূল্যায়ন করার জন্য এক মাস মোটেও যথেষ্ট সময় নয়। বিআইজিডির জরিপে অর্থনীতি ও রাজনীতি নিয়ে মানুষ কী ভাবছেন, তার কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক উঠে এসেছে। সংস্কার কর্মসূচিকে এগিয়ে নিতে ও জনগণের আস্থা ধরে রাখতে হলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য মানুষের অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধানের বিকল্প নেই।