ছাত্র-জনতার বিপ্লব, হাসিনার পলায়ন ও আমাদের করণীয়
Share on:
গত ৫ আগস্ট কোটি কোটি ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ-বিপ্লব ও অভ্যুত্থানের মুখে জালেম শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। তার এই পালানোর খবর পরিবেশন করতে গিয়ে একটি জাতীয় দৈনিক এই বিপ্লবকে লাল বসন্ত বলে আখ্যায়িত করেছে।
আরেকটি দৈনিক ব্যানার হেডিংয়ে শিরোনাম করেছে, ‘রক্তসমুদ্রে স্বৈরাচারের পতন : ছাত্র অভ্যুত্থানে উড়ে গেল দম্ভ ॥ পালিয়ে গেলেন শেখ হাসিনা।’
বলাবাহুল্য শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও পালানোর খবরে রাজধানীসহ সারা দেশের মানুষ কারফিউ ভেঙ্গে রাজপথে উল্লাসে ফেটে পড়ে। তারা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও তার বাসভবন দখল করে নেয়। সেনাবাহিনী প্রধান জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন এবং জনগণের নিরাপত্তার দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং সংকট উত্তরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন দলের নেতাদের নিয়ে বঙ্গভবনে বৈঠক করে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনে ঐকমত্যে পৌঁছেন। জনগণ ও ছাত্র সমাজ শেখ হাসিনার পতন-উত্তর বাংলাদেশকে নতুন স্বাধীনতার অভ্যুদয় হিসেবে ঘোষণা করেন। আসলে বাংলাদেশে মানুষের জন্য শেখ হাসিনার পতনের ৫ আগস্টের এই দিনটি নতুন স্বাধীনতা দিবসই। তিনি গত পনেরটি বছর এই দেশটি ভারতের করদরাজ্যে পরিণত করেছিলেন। এই দেশের মানুষের উপর তিনি যে জুলুম-নির্যাতন চালিয়েছেন তার নজীর দুনিয়াতে বিরল। তিনি ও তার দল এই দেশের সম্পদকে যেমনি পারিবারিক সম্পদের ন্যায় ব্যবহার-অপব্যবহার করেছেন তেমনি আমাদের ধর্ম-সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ধ্বংস করেছেন। তিনি দেশে কুরআনের চর্চা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। দেশের আলেম সমাজ, ধর্মপ্রাণ মুসল্লি, হিজাবী নারী, নামাযী ছাত্রছাত্রী সবাইকে জঙ্গী আখ্যায়িত করে তাদের ওপর অত্যাচারের স্টিম রোলার চালিয়েছেন। তার দল এবং তার নিয়ন্ত্রিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পবিত্র কুরআন, হাদিস এবং ইসলামী সাহিত্যকে জঙ্গী সাহিত্য ও সন্ত্রাসের উপকরণ হিসেবে আখ্যায়িত করতেন। তিনি এমনকি কুকুরের মাথায় টুপি পরিয়ে মুসলমানদের অপমান করেছিলেন। মানুষের বাকস্বাধীনতা, মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা, হালাল উপার্জনের স্বাধীনতা, আদালতে ইনসাফ পাবার অধিকার সবকিছুই হরণ করে নিয়েছিলেন। ভিন্ন মতাবলম্বী পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেলসমূহকে সত্য ও নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশনের অপরাধে বন্ধ করে দিয়েছেন। পত্রিকাগুলোকে সরকারি বিজ্ঞাপন থেকে এমনভাবে বঞ্চিত করেছেন যাতে করে অর্থ সংকটে তারা আপনাআপনিই বন্ধ হয়ে যায়, হেফাজতের উপর তার সশস্ত্র পুলিশ ও র্যাব বাহিনীর বীভৎস হামলার খবর প্রকাশ করায় দিগন্ত টেলিভিশন ও ইসলামী টেলিভিশনের সম্প্রচার তিনি বন্ধ করে দেন এবং তার দলীয় লোকেরা এই চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার যন্ত্রপাতি লুট করে নিয়ে নতুন চ্যানেল প্রতিষ্ঠা করেছে। তিনি ক্ষমতায় আসার পর থেকে দৈনিক সংগ্রামকে সরকারি বিজ্ঞাপন থেকে শুধু বঞ্চিতই করা হয়নি, পত্রিকার প্রকাশনা সংস্থা বাংলাদেশ পাবলিকেশন্স লিমিটেডের তিনটি বাণিজ্যিক ভবন (একটি ৯ তলা ও দুটি ৪ তলা) তার দল আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা দখল করে নেয়, পুলিশ কমিশনার ও থানার ওসি, সিটি করপোরেশনের মেয়র, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এমনকি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিচার চেয়েও পত্রিকাটি বিচার পায়নি। দৈনিক দিনকাল ও দৈনিক আমার দেশ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তিনি দলীয় লাঠিয়ালে পরিণত করেছিলেন। বিরোধীদের দমনের জন্য এই বাহিনীকে মামলার টার্গেট দেয়া হতো। সভা-সমাবেশ মানববন্ধন ছিল নিষিদ্ধ। এমনকি সেটা হোক রাজনৈতিক অথবা পারিবারিক কোনো অনুষ্ঠান কিংবা ইফতার বা দোয়া মাহফিল। সরকার এগুলোকে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনার প্রস্তুতি মিটিং বলে অভিহিত করে তার পুলিশ বাহিনীকে রাজনৈতিক দলগুলোর বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছিলেন। ফলে এই ১৫ বছরে বিএনপি-জামায়াতের প্রায় ৬৫ লাখ নেতাকর্মী তার মামলার আসামী হন। তারা বাড়িতে থাকতে পারতেন না। তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, আয়-উপার্জন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বলাবাহুল্য পুলিশ শুধু মামলা দেয়নি, গ্রেফতারি বাণিজ্যের মাধ্যমে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের পরিবারের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকাও হাতিয়ে নিয়েছে। এদের সহযোগী ছিল আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনসমূহের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী। তাদের চাহিদা অনুযায়ী চাঁদা না দেয়ায় বহু পরিবারের সম্পত্তি লুট, জবরদখল হয়েছে। হত্যা, গুম ও লুণ্ঠনের বিস্তারিত বিবরণ এখন প্রতিদিনই পত্রপত্রিকা ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত হচ্ছে। নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ, আইনসভা এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে তিনি এমনভাবে কলুষিত করেছেন যে, সেগুলো নাগরিকদের ইনসাফ ও নাগরিক সেবা দেয়ার যোগ্যতা হারিয়ে রাষ্ট্রকে অকার্যকর একটি পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। প্রতিবেশী দেশের নির্দেশনায় এ দেশের প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হতো। উপজেলা, জেলা থেকে শুরু করে সেক্রেটারিয়েটের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দফতর, অধিদফতর, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার গুরুত্বপুর্ণ পদসমূহে প্রতিবেশী দেশের সরকারের অনুগত ব্যক্তিদের বসিয়ে দেয়া হয়েছে। অর্থ প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংক, তফসীলি ব্যাংক, বীমা প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং ব্যাংক বহির্ভূত অর্থ প্রতিষ্ঠানসমূহ তারা দখল করে নেন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি, স্বর্ণ চুরি, কয়লাখনির কয়লা চুরি প্রভৃতির সাথে যুক্ত হয়ে তাদের অনেকেই ভারতে পালিয়ে যান। ভারতীয় আধিপত্য ও ভারতীয় শোষণ নিশ্চিত করে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বাংলাদেশ আর্মির গোয়েন্দা দফতরকে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার ‘র’ (RAW)-এর সদর দফতরে রূপান্তর করেন এবং তাদের পরামর্শ অনুযায়ী বিরোধীদল দমন নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংসের ও মানুষের মৌলিক অধিকার হরণের রূপরেখা প্রণয়ন করেন। হত্যা, গুম ও আয়নাঘর তৈরির ঘৃণিত কাজ তারই দৃষ্টান্ত। তিনি পালিয়েছেন। ১২০৬ সালে এই অঞ্চলের আরেকজন শাসক পালিয়েছিলেন তার নাম লক্ষণ সেন। ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খিলজীর ভয়ে তিনি পালান। তার পালানোর মধ্য দিয়ে এই দেশে মুসলিম শাসন ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার নবযুগের সূচনা হয়। শেখ হাসিনা পালিয়েছেন বখতিয়ার খিলজীর উত্তরসূরী এ দেশের ছাত্র-জনতার ভয়ে। মানুষের প্রশ্ন এর ফলে পূর্বাকাশে নতুন সূর্য কি উদিত হবে? আমাদের নতুন স্বাধীনতা কি সার্থকতার মুখ দেখবে?
বলতে ভুলে গেছি যে, শেখ হাসিনার দুঃশাসনের বিগত ১৫ বছরে তার নিষ্পেষণের সবচেয়ে বড় শিকার হয়েছিল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এই দলটির সিনিয়র ও প্রতিভাবাবন নেতৃবৃন্দের বেশির ভাগকেই তথাকথিত মানবতা বিরোধী অপরাধে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। অবশিষ্ট যারা ছিলেন তারা প্রকাশ্যে কাজ করতে পারেননি। জামায়াতের অফিসসমূহ পুলিশ দিয়ে সিলগালা করা হয়েছে, অফিস সরঞ্জামাদি লুট করা হয়েছিল। বছরের পর বছর ধরে নিজ পরিবার-পরিজন ছেড়ে তারা গোপন স্থানে মানবেতর জীবন যাপন করেছেন এবং সংগঠনের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছেন। ছাত্র-জনতার এই বিজয় তাদের জন্য আল্লাহর অশেষ কৃপা বয়ে এনেছে বলে অনেকে মনে করেন। এই বিজয় ও স্বাধীনতার এই নতুন প্রাপ্তি থেকে দেশবাসীর প্রত্যাশা হচ্ছে :
১। স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ বিভাজনের অবসান ও জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা।
২। আধিপত্যবাদের মূলোৎপাটন।
৩। রাষ্ট্রীয় সেবা ও স্বাধীনতার সুফল মানুষের দুয়ারে পৌঁছিয়ে দেয়া।
৪। ইনসাফের নিশ্চয়তা, শোষণ-নির্যাতন ও বৈষম্যের অবসান, কর্মসংস্থান ও বেকারত্বের অবসান।
৫। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি, শিক্ষা ব্যবস্থায় ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার অন্তর্ভুক্তি এবং সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক লোক তৈরির ব্যবস্থা গ্রহণ, সাধারণ শিক্ষা ও মাদরাসা শিক্ষার জন্য প্রণীত নতুন কারিকুলাম বাতিল করে ফলপ্রসূ কারিকুলাম তৈরীর জন্য উপযুক্ত শিক্ষাবিদ ও আলেমদের সমন্বয়ে শিক্ষা কমিশন গঠন।
৬। শাসক/রাজনীতিবিদরা জনগণের প্রভু নয়, খাদেম, জনগণের খেদমতই যে কোনো রাজনৈতিক দলের নির্বাচনে অংশগ্রণের প্রাথমিক শর্ত হওয়া উচিত।
নোবেল বিজয়ী পণ্ডিত ড. মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ১৭ সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন একটি সরকার গঠিত হয়েছে, এদের মধ্যে ১৫ জন উপদেষ্টা ইতোমধ্যে শপথ গ্রহণ করেছেন। পতিত সরকারের ইতঃস্তত বিক্ষিপ্ত ধ্বংসাবশেষের উপর তারা একটি নতুন সরকার গঠন করেছেন। তারা ট্রেডিশনাল পদ্ধতিতে সরকার চালাবেন না। উপরে উল্লেখিত প্রত্যাশাগুলোকে সামনে রেখে তারা রাষ্ট্র সংস্কারের গুরু দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের সামনে বিরাট কাজ। সেনাবাহিনী প্রধান তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ^াস দিয়েছেন। উপদেষ্টারা দেশপ্রেমিক, তাদের কোনো দল নেই। ড. ইউনূসের পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা পর্বতপ্রমাণ। আমি তাকে শ্রদ্ধা করি। তার প্রতিভা ও উদ্ভাবনী শক্তি বিশাল এবং জনসেবার আগ্রহ ও সম্পৃক্তি প্রশ্নাতীত। তিনি বিশ^ব্যাপী সমাদৃত একজন লোক এবং প্রতিবেশী ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের মোকাবেলায় পাশ্চাত্যের গণতান্ত্রিক বিশে^র কাছে বাংলাদেশের একমাত্র গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব। তাকে রাষ্ট্র মেরামতের কাজে সম্পৃক্ত করতে পারাটা ছাত্রদেরই কৃতিত্ব।
ভুললে চলবে না যে, হাসিনা যদি আর দু’বছর ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারতেন তাহলে বাংলাদেশের বুকে ভারতীয় পতাকা উড্ডয়নের সকল রাস্তা পরিষ্কার হয়ে যেত।
নতুন সরকার তার কাজ শুরু করেছেন। এদের মধ্যে সবাই অভিজ্ঞ এবং তারা তাদের অগ্রাধিকার তালিকা নিশ্চয়ই তৈরি করছেন। আমার দৃষ্টিতে এই বিপ্লবকে সংহত করাই তাদের প্রথম কাজ হওয়া উচিত। এই জন্য আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত জরুরি। Revolution আর Evaluation-এর মেজাজ এক নয়। Revolution- এর দাবি হচ্ছে তাৎক্ষণিক, Evaluation আস্তে ধীরে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার উপর নির্ভরশীল। আমরা Revolution করেছি এবং পরিবর্তনের জন্য অনেকগুলো কাজ তাৎক্ষণিকভাবে সূচনা করা অপরিহার্য। তা না হলে প্রতিবিপ্লব বা Counter Revolution আমাদের সব অর্জনকে ধ্বংস করে দিতে পারে। বিষাক্ত সাপের প্রাণ মাথায় নয় লেজে, মাথা ভেঙ্গে লেজ রেখে দিলে সে পুনরায় শক্তি সঞ্চার করে ছোবল মারতে পারে। স্বল্প কয়েকদিনের ব্যবধানে এর অনেকগুলো লক্ষণ পরিষ্কারভাবে দেখা যাচ্ছে। জালেম হাসিনা ও তার দল এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন সেক্টরে বসানো সুবিধাভোগী আমলারা এবং বিদেশী এজেন্টরা মানবতা বিরোধী যে অপরাধ করেছে তার শাস্তি হওয়া অপরিহার্য। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ক্ষমাশীল, তিনি ইচ্ছা করলে তাঁর হক নষ্ট করলে যে কাউকে ক্ষমা করতে পারেন।
কিন্তু মানুষের হক নষ্ট করলে মানুষ ক্ষমা না করলে আল্লাহ তাওয়ালা তা ক্ষমা করেন না। এ ধরনের অপরাধের শাস্তি না হলে অপরাধীরা উৎসাহিত হয়, গুম, খুন, বিচারিক ও বিচার বহির্ভূত হত্যা, শোষণ, সম্পত্তি দখল, লুটপাট, নিরপরাধ মানুষকে শারীরিক-মানসিক ও আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত করার যে অপরাধ হাসিনা ও তার দোসররা করেছেন তার বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার বিষয়টি দেরি করা যায় না। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে আইন হাতে তুলে নেয়ার সুযোগ না দিয়ে উপরোক্ত অপরাধীদের তালিকা তৈরি সাপেক্ষে তাদের গ্রেফতার এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে তাদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা প্রয়োজন।
এজন্য শেখ হাসিনাসহ পলাতক সকল অপরাধীকে দেশে এনে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় তদন্ত অনুষ্ঠানের সূচনা করতে হবে। এই বিষয়টি দেশের মানুষের আস্থা পুনর্গঠনের পূর্বশর্ত, হাসিনার আমলে যে লক্ষ লক্ষ রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে সেগুলো তুলে নেয়া, ফরমায়েসী রায়ের মাধ্যমে যাদের শাস্তি হয়েছে ঐসব রায় ও মামলার পর্যালোচনা করে মানুষকে তার প্রাপ্য ইনসাফ ফিরিয়ে দেয়া দরকার। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল কর্তৃক সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ফাঁসির দন্ড প্রদানের উপর বৃটিশ সুপ্রিম কোর্টের ফুল বেঞ্চের একটি সাম্প্রতিক রায় এক্ষেত্রে আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করতে পারে।
পত্রপত্রিকা ও সামাজিক মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর একটি মূল্য তালিকা সশস্ত্রবাহিনীর নামে প্রকাশ করা হয়েছে বলে বলা হচ্ছে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতিতে মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত। এজন্য প্রধানত পতিত স্বৈরাচারের পৃষ্ঠপোষকতা ধন্য একটি বাজার সিন্ডিকেট দায়ী। এদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা দরকার। এই কাজটি এখনো হয়নি, আমার বিশ^াস মূল্য তালিকা লটকিয়ে দিলেই জিনিসপত্রের দাম কমবে না। মূলত কমেও নাই। এজন্য উৎপাদন পয়েন্ট থেকে ভোক্তা পর্যায় পর্যন্ত পণ্যসামগ্রীর প্রবাহকে নিষ্কন্টক করতে হবে। পণ্য উৎপাদন বা আমদানি, পণ্য পরিবহন, প্রক্রিয়াকরণ, গুদামজাতকরণ ও পাইকারী বা খুচরা পর্যায়ে বিতরণের প্রবাহ ঠিক থাকলে মার্কেট ফোর্সই পণ্যের মূল্য সহনশীলতার মধ্যে নিয়ে আসবে। এজন্য উৎপাদনকারীদের ন্যায্য মূল্যের নিশ্চয়তা দিলে এবং গুদামে পণ্য মওজুত যৌক্তিক মেয়াদের অতিরিক্ত না হলে এবং যদি কেউ মওজুতদারী করতে চায় তার জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা থাকলে বাজার নিয়ন্ত্রণের দরকার হবে বলে আমি মনে করি না, মনিটরিংই যথেষ্ট।
দেশের আর্থিক খাত ও ব্যাংক ব্যবস্থা ধসে পড়েছে। এর সংস্কার করতে হলে ঋণ খেলাপী এবং পুঁজি পাচারকারীদের টেনে আনতে হবে। এদের সকলেই হাসিনার সরকারের দোসর। স্বনামে বেনামে নেয়া ঋণ পরিশোধের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিন, পরিশোধ না করলে বা লুণ্ঠিত সম্পদ ফেরৎ না দিলে তাদের সম্পত্তি বিক্রি করে সরকারী কোষাগারে জমা করুন, যদিও এই অর্থ গৃহীত ঋণ বা লুন্ঠিত অর্থের সমপরিমাণ হবার সম্ভাবনা খুব কম। কেননা গৃহীত ঋণের জামানত হিসাকে যে সম্পত্তি তারা বন্ধক দিয়েছেন তার Valuation ছিল অতিরঞ্জিত।
ভারতের সাথে শেখ হাসিনা গত ১৫ বছরে যতগুলো চুক্তি সম্পাদন করেছেন সেগুলোর বিস্তারিত বিষয়বস্তু দেশের মানুষ জানে না। এগুলো জনসমক্ষে প্রচার করা ও পর্যালোচনা করা দরকার, চুক্তিগুলোর মধ্যে যেগুলো বাংলাদেশের স্বার্থের অনুকূলে সেগুলো বহাল রাখতে আপত্তি নেই কিন্তু যেগুলো স্বার্থো পরিপন্থী সেগুলো স্থগিত করা অপরিহার্য। এই উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক বিশ্লেষক অর্থনীতিবিদ ও আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি করা যেতে পারে। দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাসহ সংস্কারযোগ্য অন্যান্য খাত সম্পর্কে বারান্তে আমার বিশ্লেষণ ও সুপারিশসমূহ আমি পেশ করার চেষ্টা করবো।
১১ লক্ষ কোটি টাকা ১০০০ টাকার নোট নিয়ে একটার উপর একটা রাখলে উচ্চতা হবে ২৭৫০.৫ কিমি। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উচ্চতার পাহাড় সাকা হাকঙ্গ এর উচ্চতা ১০৬৩ মিটার। এক লেয়ারে সাজালে এই টাকা জায়গা নেয় ১২৪.৭৬ বর্গ কি:মি:। ঢাকার আয়তন ৩০৬ বর্গ কি:মি:, চট্টগ্রামের ১৫৫ বর্গ কি:মি:। এই দুই বিভাগীয় শহর বাদে বাকী সব বিভাগীয় শহর এই টাকা দিয়ে ঢাকা যাবে। পাশাপাশি বসালে লেংথ হবে ১৭৮২৩৪৯.৬ কি:মি:। পৃথিবীর পরিধি ৪০০০০ কি:মি:। এই টাকা পাশাপাশি বসিয়ে পৃথিবীর পুরোটা ৪৪.৫ বার রাউন্ড দেয়া যাবে।