চাকরির বয়স নিয়ে জটিলতা কবে দূর হবে!
Share on:
বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে বিতর্ক চলছে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে। একটি পক্ষ বলছে, এ দেশের বাস্তবতায় ৩০ বছর বয়স ঠিক আছে। যদিও চাকরিপ্রার্থীরা বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সদ্য বিদায় নেওয়া সরকারের শিক্ষামন্ত্রীও বয়স বাড়িয়ে ৩৫ বছরে উন্নীত করার সুপারিশ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ডিও লেটার দিয়েছিলেন। পরে তা আর আলোর মুখ দেখেনি। এখন অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর চাকরিপ্রার্থীরা নতুন আশা নিয়ে ফের মাঠে নেমেছেন। আগের সরকার এ ধরনের দাবি মানার ক্ষেত্রে বরাবরই নেতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে।
সংবাদমাধ্যমের জরিপে দেখা যাচ্ছে, বড় অংশই বয়স বৃদ্ধির পক্ষে। বিভিন্ন সময়ে বলা হয়ে থাকে, ২১-২২ বছর থেকে চাকরির আবেদনের সুযোগ পাচ্ছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। বাস্তবতা কি আসলেই তাই? অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন স্নাতক শেষ করতে ২৩-২৪ বছর বয়স লেগে যাচ্ছে। আর স্নাতকোত্তর বা মাস্টার্স শেষ হতে ২৫-২৬ বছর, তাও যদি সেশনজট না থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ও উপাদানকল্প কলেজ কিংবা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোর বাস্তবতা কিন্তু ভিন্ন। তাদের স্নাতকোত্তর শেষ করতে লেগে যাচ্ছে আরও বেশি।
হিসাব করলে দেখা যাচ্ছে, দেশে উচ্চশিক্ষা শেষ করার পর চাকরির পড়াশোনা বা আবেদন করার জন্য তিন থেকে সর্বোচ্চ ছয় বছর পর্যন্ত সময় পাচ্ছেন চাকরিপ্রার্থীরা। অথচ বিসিএসসহ সরকারি চাকরির আবেদন থেকে যোগদানের প্রক্রিয়া শেষ করতে তিন বছর পর্যন্ত লেগে যায়। ফলে স্নাতকোত্তর করা একজন শিক্ষার্থী শুধু চাকরির পেছনে দৌড়ানো ছাড়া বিকল্প কিছু ভাবার সুযোগ পান না। বয়সের বাধ্যকতা না থাকলে তারা হয়তো দেশ-বিদেশে আরও উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে পরে ভালো কিছু ভাবার সুযোগ পেতেন। সে সুযোগ না পেয়ে চাকরির পেছনেই পুরো সময় ব্যয় করছেন।
এখানে বলে রাখা ভালো, মেধাবীদের একটি অংশ উচ্চশিক্ষার জন্য প্রতিবছর বিদেশগামী। তাদের বড় অংশই আর ফিরছে না। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র বড় ক্ষতির শিকার হচ্ছে। তারা উচ্চশিক্ষা শেষ করে দেশে ভালো কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা পেলে দক্ষতা বাড়িয়ে ফিরে এসে দেশের জন্য অনেক কিছু করতে পারতেন।
অনেক সময় উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার কথা বলা হয়। বাস্তবতা কিন্তু তরুণ-যুবাদের পক্ষে কথা বলে না। ব্যাংক ঋণ নিতে গিয়ে ঘুরে ঘুরে গলদঘর্ম হয়ে শেষে ব্যর্থ হতে হয়। দেশের মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত শ্রেণির পরিবারগুলো তাদের এককালীন অর্থ দেওয়ার সক্ষমতা রাখে না। ফলে পড়াশোনা শেষে সন্তান চাকরি করে পরিবারের হাল ধরবে, সে আশায় থাকেন সবাই। দেশে উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগও সীমিত। এ ক্ষেত্রে তরুণ-যুবাদের স্বাবলম্বী করে তুলতে তাদের জন্য সে ধরনের সুযোগও তৈরি করতে হবে।
এবার গুরুত্বপূর্ণ একটি পয়েন্টে। একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের বাংলা বিভাগের সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের সিংহভাগ দেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ থেকে ৪৫ বছর। বাংলাদেশে এ বয়সসীমা ৩০ বছর হলেও, কোটায় ৩২ বছর পর্যন্ত আবেদন করা যায়। বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে বয়সসীমা ২৭ থেকে বাড়িয়ে ৩০ বছর করা হয়। সে সময় দেশে মানুষের গড় আয়ু ছিল ৫৭ বছর, এখন হয়েছে ৭৩।
আমার মত হলো– হয় চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি করা হোক, না হয় এ বয়সসীমা তুলে দেওয়া হোক। যাদের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ইচ্ছা, তারা পড়াশোনা করে নিজেকে প্রস্তুত করবেন। যাদের এ ধরনের আগ্রহ নেই, তারা ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তা ও বেসরকারি চাকরি কিংবা বিকল্প কোনো কর্মসংস্থানের পথে হাঁটবেন।