সম্পাদকীয় প্রকাশনার সময়: সোমবার ১২, অগাস্ট ২০২৪

‘চাই জনবান্ধব পুলিশ’

Share on:

স্বৈরাচারের পতনের পর রাষ্ট্রের সংকটগুলো আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে হাসিনা সরকারের পতনের পর ভেঙে পড়েছে পুলিশের ‘চেইন অব কমান্ড’। টানা তিনদিন বন্ধ ছিল পুলিশের সব কার্যক্রম।


গত শুক্রবার থেকে পুলিশ সদস্যরা কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন। অনেক থানায় সীমিত পরিসরে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কিন্তু পুলিশের আজ এই অবস্থা কেন? সুশাসন থাকলে তো আজ পুলিশের এমন করুণ অবস্থা হতো না। স্বৈরাচারের পলায়নের পর পুলিশের কাঠামো এভাবে ধসে পড়তো না। পুলিশের সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব হলো, ‘দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন’। এই দায়িত্ব পালিত না হলে সমাজে শান্তি ও স্বস্তি থাকে না। স্বৈরাচারের সময় পুলিশ তার নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। বরং বিরোধী পক্ষকে দমন-পীড়নসহ নানা অনৈতিক ও দুর্নীতির কাজে ব্যবহৃত হয়েছে পুলিশ। এর বড় উদাহরণ আইজি বেনজির।

জনগণ এখন দ্বিতীয় স্বাধীনতার কথা বলছে, নতুন বাংলাদেশ গড়ার কথা বলছে। তবে এজন্য প্রয়োজন হবে সংস্কারের। অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো পুলিশ বিভাগেও সংস্কার প্রয়োজন। সংস্কারের কথা যে শুধু ছাত্র-জনতা বলছে তা কিন্তু নয়, সংস্কারের কথা বলছেন স্বায়ং পুলিশ সদ্যরাও। তারা বলছেন, টানা তিন মেয়াদে হাসিনা সরকার ক্ষমতায় থাকার কারণে পুলিশের মধ্যে ব্যাপকভাবে দলীয়করণ হয়েছে। বাহিনীর কর্মকর্তাদের মধ্যে অতি উৎসাহী একটি অংশ দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে পুলিশকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেছেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ ও বেপরোয়াভাবে গুলী করে মানুষ হত্যার ক্ষেত্রেও অতি উৎসাহী কর্মকর্তাদের ভূমিকা রয়েছে। যদিও শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর পাওয়া মাত্র ওইসব কর্মকর্তা দ্রুত আত্মগোপনে চলে যান। পুলিশের নবনিযুক্ত মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলামও দায়িত্ব গ্রহণের পর বলেন, ‘আমাদের কতিপয় উচ্চাভিলাষী, অপেশাদার কর্মকর্তার কারণে এবং কর্মকৌশল প্রণয়নে বলপ্রয়োগের স্বীকৃত নীতিমালা অনুসরণ না করায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। নেতৃত্বের ব্যর্থতায় আমাদের অনেক সহকর্মী আহত, নিহত ও নিগৃহীত হয়েছেন।

এমন বাস্তবতায় বাহিনী পুনর্গঠন ও সংস্কারে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এখন জরুরি কাজ হচ্ছে পুলিশ সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তাদের কর্মস্থলে ফিরানো। একই সঙ্গে বাহিনীর শীর্ষ পদগুলোতে সৎ ও দক্ষ ব্যক্তিদের বসানো। এছাড়া দলীয় পরিচয়ে প্রভাব বিস্তারকারী ও অপেশাদার কর্মকান্ডে যুক্ত কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনার ব্যবস্থা গড়ে তোলা। তারা আরও মনে করেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে পদোন্নতি ও পদায়নে নতুন অতি উৎসাহী গোষ্ঠীর তৎপরতা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে সংস্কার চিন্তা ও উদ্যোগ হোচট খেতে পারে।

পুলিশ সদস্যরা আরও বলেন, কোনো দলীয় সরকার যেন তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে পুলিশকে ব্যবহার করতে না পারে, সেজন্য স্বাধীন পুলিশ কমিশনের অধীনে বাহিনীটিকে পরিচালনা করা প্রয়োজন। আমরা পুলিশ সদস্যদের বক্তব্য জানলাম। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও আমাদের পুলিশ বাহিনীর সংকট সম্পর্কে জানেন। এখন প্রয়োজন দেশ ও জনগণের সেবক হিসেবে পুলিশ বাহিনীকে গড়ে তোলা। সঙ্গত সংস্কার আনার এখনই সময়।

দৈনিক সংগ্রাম