মতামত/কলাম প্রকাশনার সময়: শুক্রবার ১৩, সেপ্টেম্বর ২০২৪

ক্রীড়াঙ্গন সংস্কারে যে বিষয়গুলো ভাবা জরুরি

Share on:

চারপাশে বইছে পরিবর্তন আর সংস্কারের হাওয়া। সে হাওয়ায় দুলছে ক্রীড়াঙ্গনও। এমনিতেই ক্রীড়াঙ্গনে পরিবর্তন অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। চিরাচরিত যে নিয়মে ক্রীড়াঙ্গন চলেছে, তা সেই মান্ধাতার আমলের।


ব্যক্তি বদলালেও সিস্টেম অপরিবর্তিত রয়ে গেছে। অনেকটা থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড়। ৫৩ বছর পেরিয়ে এলেও আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশের বড় কোনো অর্জন নেই বললেই চলে।

আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে সাফল্য পেতে হলে আগের নিয়ম অনুসরণে তা ফলপ্রসূ হবে না। মুখ বদল হলেই পরিবর্তন আসবে না। বদলে ফেলতে হবে খোলনলচে। বদল আনতে হবে সিস্টেমে। আগে তো মনের আনন্দে খেলতে দিতে হবে। কিন্তু কোথায় খেলার মাঠ! মাঠ বা এক টুকরো খোলা জায়গা পেলেই আগে যেখানে শিশু-কিশোররা খেলাধুলা করত, সেই মাঠ ও জায়গা ক্রমশ অবরুদ্ধ করে ফেলা হয়েছে।

ক্রীড়াঙ্গনকে নতুনভাবে ঢেলে সাজানোর চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে যেসব সিদ্ধান্ত খুব সহজেই নেওয়া সম্ভব এবং তাতে বড় ধরনের আর্থিক কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই, সে রকম কিছু বিষয় ভেবে দেখা যেতে পারে। যেমন সর্বজনের মতামতের আলোকে যুগোপযোগী একটি ক্রীড়ানীতি প্রণয়ন; সাফল্য ও জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে খেলার ‘ক’, ‘খ’ ও ‘গ’ ক্যাটেগরি করা এবং সেই আলোকে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া। সাফল্য ও ব্যর্থতার ভিত্তিতে নির্ধারিত সময়ে ক্যাটেগরির পরিবর্তন; যথাযথ ও দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণ এবং ন্যূনতম এসএ গেমস টাইমিং বা যথোপযুক্ত মান না হলে বড় ক্রীড়ার আসরে দল পাঠানোয় সতর্ক থাকা এবং সুনির্দিষ্ট নিয়মনীতি মেনে চলা। সরকারি অর্থে বিদেশে দল পাঠানোর ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, অলিম্পিক, সংশ্লিষ্ট ক্রীড়া ফেডারেশন এবং ক্রীড়াসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ; অনাহূত ও অপ্রয়োজনীয়দের সরকারি বহরে না পাঠানো; ফেডারেশন বা অ্যাসোসিয়েশনের কলেবর নিয়ে নতুনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ; সাফল্য ও জনপ্রিয়তার আলোকে ফেডারেশন/অ্যাসোসিয়েশনের মূল্যায়ন এবং অনর্থক সংখ্যা বৃদ্ধি না করা। ক্রীড়া পরিদপ্তর, ক্রীড়া পরিষদ ও বিকেএসপির মধ্যে সমন্বয় সাধন করে খেলাধুলা পরিচালনা করা; ক্রীড়া এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারকের আলোকে স্কুলভিত্তিক খেলাধুলার সম্প্রসারণ ঘটানো এবং স্কুল-কলেজে খেলাধুলা বাধ্যতামূলক করা। সারাদেশে উন্মুক্ত খেলার মাঠ সম্প্রসারণ করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

যেসব ক্রীড়া ফেডারেশন মেয়াদোত্তীর্ণ কিংবা শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে, সে বিষয়ে আশু পদক্ষেপ গ্রহণ এবং যাদের মেয়াদ রয়েছে, সেসব ফেডারেশনে সাধারণ সভার মাধ্যমে কমিটি গঠন করতে হবে।

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ‘ক’ শ্রেণির খেলাগুলোতে প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচি নিয়মিত আয়োজনের মাধ্যমে পরিষদের কোচদের কাজে লাগানো; এই মুহূর্তে পর্যাপ্ত কোচ না থাকায় আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে তাদের নিয়োগ দেওয়া; ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোর সভাপতি হিসেবে ক্রীড়ানুরাগী ও পৃষ্ঠপোষকদের মনোনয়ন দেওয়া জরুরি। প্রতিটি ক্রীড়া ফেডারেশনে ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়াসংশ্লিষ্ট কাউন্সিলরদের ফেডারেশনের নির্বাচনে অংশ নেওয়া; একই ব্যক্তিকে একাধিক ফেডারেশনের কাউন্সিলর হতে না দেওয়া এবং একই ব্যক্তিকে একাধিক ফেডারেশন বা অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে না দেওয়া।

অস্বাভাবিক পরিস্থিতি না হলে প্রতিটি ক্রীড়া ফেডারেশনকে প্রতিবছরের লিগ/জাতীয় প্রতিযোগিতা সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা, নতুবা সেই ফেডারেশনের কমিটি রদবদল কিংবা বার্ষিক বরাদ্দ স্থগিতসহ কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া; যেসব জেলা ক্রীড়া সংস্থা কোনো খেলায় টানা দু’বছর জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবে না, সেসব জেলাকে সংশ্লিষ্ট খেলায় সংশ্লিষ্ট ফেডারেশনে প্রতিনিধিত্ব করতে না দেওয়া।

যোগ্য ও দক্ষ লোকদের সমন্বয়ে অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন পুনর্গঠন এবং সে ক্ষেত্রে মানানসই নীতিমালা প্রণয়ন; জেলা ক্রীড়া সংস্থায় সম্পৃক্ত কাউকে কোনো জাতীয় ক্রীড়া ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কিংবা কোষাধ্যক্ষ হতে না দেওয়া; ক্রীড়া পরিদপ্তরের তৃণমূল পর্যায়ে বিদ্যমান অবকাঠামোকে খেলাধুলার প্রসার ও মানোন্নয়নে কাজে লাগানো এবং জাতীয় ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোর ফোরাম জাতীয় কোনো তৎপরতার সুযোগ ও ক্রীড়াঙ্গন নির্দিষ্ট বলয়ের কাছে কুক্ষিগত হতে না দেওয়া।

ক্রীড়াসামগ্রী ক্রয়ে স্বচ্ছতা ও সুষ্ঠু বিতরণের ব্যবস্থা করা; জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে জেলা এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে উপজেলায় ক্রীড়াসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও স্কুল-কলেজে ক্রীড়াসামগ্রী বিতরণ, বিতরণকৃত মালপত্রের তালিকা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে প্রেরণ নিশ্চিতকরণ; আর্থিক অনটনে থাকা ক্রীড়াবিদদের সাহায্য এবং খেলোয়াড়দের বৃত্তি প্রণয়নে যথাযথ নীতিমালা অনুসরণ; প্রতিটি জাতীয় ক্রীড়া ফেডারেশন, বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলার ক্রীড়া সংস্থার নিজস্ব ওয়েবসাইট থাকা এবং স্ব-স্ব ক্রীড়াবিদদের যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণ; প্রতিটি ক্রীড়া ফেডারেশন, বিভাগ, জেলা ও উপজেলার গঠনতন্ত্র হালনাগাদ করা; ক্রীড়াপল্লি ও ক্রীড়া হোস্টেলে খেলোয়াড় ছাড়া অন্যদের অবস্থান করতে না দেওয়া।

পল্টন ময়দানকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া; একই সঙ্গে দখলকৃত সব মাঠ উদ্ধার করার উদ্যোগ গ্রহণ; জাতীয়ভাবে ক্রীড়া পুরস্কার প্রদানের ক্ষেত্রে একটি কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন এবং ক্রীড়াবিদদের তথ্য যাচাই-বাছাই করার ব্যবস্থা থাকা ও ডেটাবেজ তৈরি করা।

ক্রীড়া পৃষ্ঠপোষকদের এগিয়ে আসার পথ সুগম করা; বেসরকারি পর্যায়ে খেলাধুলাকে উৎসাহিত করা; খেলাধুলার প্রসার ও মানোন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশমালা পেশের জন্য সব অংশীজনকে নিয়ে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করা। সুপারিশগুলো যাচাই-বাছাই ও সংযোজন-বিয়োজন করে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হলে ক্রীড়াঙ্গনে গতির সঞ্চার হবে বলে আশা করা যায়।

দৈনিক সমকাল