মতামত/কলাম প্রকাশনার সময়: মঙ্গলবার ১৭, সেপ্টেম্বর ২০২৪

কমলা হ্যারিসের পররাষ্ট্রনীতি কেমন হবে?

Share on:

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে আছে প্রেসিডেন্ট পদটি, প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত রাজনীতিবিদ যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে আবির্ভূত হন। যুক্তরাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রতিনিধিত্বের পাশাপাশি পৃথিবীজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কাজগুলোতেও নেতৃত্ব দিতে হয় প্রেসিডেন্টকে।


সাম্প্রতিক সময়ে কর্তৃত্ববাদের উত্থান ঘটেছে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে, যুক্তরাষ্ট্রেও লেগেছে এর ঢেউ। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে তাই আমেরিকানদের পাশাপাশি পৃথিবীজুড়েও আগ্রহ রয়েছে।

প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা দুই প্রার্থীর মধ্যে এখন পর্যন্ত হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস দিচ্ছে জনমত জরিপগুলো। সিয়েনা কলেজ ও নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন বলছে, আজকে ভোট হলে ৪৮ শতাংশ আমেরিকান ট্রাম্পকে ভোট দিত, ৪৭ শতাংশ আমেরিকান ভোট দিতো কমলা হ্যারিসকে। নির্বাচনের মাত্র আট সপ্তাহ বাকি আছে, এর মধ্যে ২৭ শতাংশ ভোটার এখনো মনে করেন তাদের কমলা হ্যারিসের ব্যাপারে আরো জানা প্রয়োজন, ৯ শতাংশ ভোটার মনে করেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যাপারে তাদের আরো জানা প্রয়োজন।

হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস দিচ্ছে সুইং স্টেটগুলোও। উইসকনসিন, মিশিগান, পেনসিলভানিয়া, নেভাদা, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা, অ্যারিজোনা—এ সাত সুইং স্টেটে কমলা এগিয়ে আছেন প্রথম তিনটিতে, বাকি চারটিতে দুজনই ৪৮ শতাংশ সমর্থন নিয়ে সমতায় আছেন। নির্বাচনের আট সপ্তাহ বাকি, এরমধ্যে এসব স্টেটের জনমত যেদিকে মোড় নেবে, নির্বাচনের ফলাফলও সেদিকে ঝুঁকবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতারা রাষ্ট্রের তিন বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য রাখতে গিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াগুলোকে জটিল করেছেন। সে প্রক্রিয়াগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোয় সিদ্ধান্ত নেয়ার চেয়ে পররাষ্ট্রের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ। ফলে অধিকাংশ প্রেসিডেন্টই একসময় পররাষ্ট্রনীতি নির্ভর প্রেসিডেন্ট হয়ে পড়েন, অভ্যন্তরীণ রাজনীতির চেয়ে মনোযোগ দেন পররাষ্ট্রনীতিতে সাফল্য অর্জন করে নির্বাচন কিংবা পুনর্নির্বাচনের রাজনীতি করতে চান। ফলে দেশ কিংবা দেশের বাইরে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রেসিডেন্টদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লিগ্যাসি হয় পররাষ্ট্রনীতি। এবারের নির্বাচনেও তাই প্রার্থীদের মধ্যে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে পররাষ্ট্রনীতি, সম্ভাব্য সাফল্য-ব্যর্থতার প্যারামিটার তৈরি হচ্ছে পররাষ্ট্রনীতিকে কেন্দ্র করেই।

নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে তীব্র অনিশ্চয়তা রয়েছে। সেই অনিশ্চয়তা নিয়েই কমলা হ্যারিস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি কেমন হবে, সেই আলোচনা থাকবে পরবর্তী অংশে।

যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক নেতৃত্বের প্রশ্ন

যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নেতৃত্বের রাজনীতিতে যুক্ত হয় বিংশ শতাব্দীর শুরুতে, প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসনের সময়ে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি অবশ্য পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অর্থনীতি হয়ে যায় এর দুই দশক আগেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র পুঁজিবাদী বিশ্বের নেতৃত্ব নেয়, যুক্তরাষ্ট্রের হাত ধরেই ব্রিটন উডস এগ্রিমেন্টের আলোকে প্রতিষ্ঠিত হয় জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফের মতো প্রতিষ্ঠান। উদার আন্তর্জাতিক মূল্যবোধ, শাসন ব্যবস্থার প্রসার ঘটিয়ে একক পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয় স্নায়ুযুদ্ধের সমাপ্তির পরে।

যুক্তরাষ্ট্রের একক নেতৃত্বের ক্ষেত্রে প্রথম প্রশ্নটিই আসে নাইন-ইলেভেন আর এর পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ। ইরাক আক্রমণের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র নিজের তৈরি প্রাতিষ্ঠানিক মূল্যবোধগুলো লঙ্ঘন করে, পরাশক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের দুর্বলতা প্রকাশ পায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্ররা যেমন যুক্তরাষ্ট্র-পরবর্তী পৃথিবীতে নিজেদের অবস্থান নিয়ে তৎপর হয়, একই সঙ্গে তৎপর হয় যুক্তরাষ্ট্রের হেজিমনিকে চ্যালেঞ্জ করতে চাওয়া পক্ষগুলোও।

নির্বাচিত হলে প্রেসিডেন্ট হ্যারিসকে সবচেয়ে বেশি সময় যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক নেতৃত্ব টিকিয়ে রাখতেই ব্যয় করতে হবে, নিরাপত্তা সংকটগুলো মোকাবেলা করতে হবে। রাশিয়া, চীন, ইরান আর উত্তর কোরিয়া একটি নতুন বলয় গড়ে তুলেছে, স্নায়ুযুদ্ধের সময়ের চেয়ে এ বলয় থেকে আসা চ্যালেঞ্জ ভিন্ন। চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিস্তৃত বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক প্রকল্প নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এখন পর্যন্ত পলিসিগত সাফল্য নেই।

ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কমলা হ্যারিস যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক নেতৃত্বের প্রশ্নটি এগিয়ে নিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্ব ধরে রাখার প্রতিশ্রুতি দেখিয়েছে। ফলে নির্বাচিত হলে নেতৃত্বের প্রশ্নে প্রেসিডেন্ট হ্যারিসের কাছ থেকে প্রথাগত অবস্থান পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো অপ্রথাগত অবস্থানের চেয়ে।

প্রথাগত যুদ্ধের শঙ্কা

ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে রাশিয়ার ব্ল্যাক সি ফ্লিট পরাজিত হয়েছে, যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়া নতুন প্রজন্মের ট্যাংক আর অস্ত্রপ্রযুক্তি নিয়ে আসতে পারেনি, অফিসার আর সৈনিকদের নিহত হওয়ার তালিকা কেবলই বাড়ছে। এর মধ্যে রুশ সেনাবাহিনী ইউক্রেনের যুদ্ধে নিজেদের অবস্থান টিকিয়ে রেখেছে, কিছু ক্ষেত্রে ইউক্রেনের বাহিনীকে হারিয়ে অগ্রসর হচ্ছে, রাশিয়ার অর্থনীতিও প্রেসিডেন্ট পুতিনের নেতৃত্বে যুদ্ধের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। এর মধ্যে স্পেশাল মিলিটারি অপারেশন থেকে এটি যুদ্ধে রূপ নেয়ার দায় ক্রেমলিন চাপিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলোর ওপর। ফলে রাশিয়া সুযোগ পেলেই ইউক্রেনে এ অভিজ্ঞতার প্রতিশোধ নিতে চাইবে।

রাশিয়ার এ ইচ্ছার সঙ্গে মিলিত হতে পারে চীনের জাতীয়তাবাদী আকাঙ্ক্ষা, তাইওয়ান দখলের ইচ্ছা দীর্ঘদিন ধরে পুষে রেখেছে বেইজিং। চীনের সামরিক প্রকল্পের বিস্তৃতি আর আধুনিকায়ন হচ্ছে, মাও সে তুংয়ের অনুসারীরা যেকোনো সময় তাইওয়ান দখলের উদ্যোগ নিতে পারেন। নিশ্চিতভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো প্রেসিডেন্টের জন্য এটি একটি কৌশলগত সংকট তৈরি করবে। যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে রক্ষা করতে গেলে প্রথাগত যুদ্ধ বেঁধে যাবে, ছেড়ে দিলে সেটি পৃথিবীজুড়ে মিত্রদের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি করবে। আবার ইউক্রেনের মতো কেবল অস্ত্র সরবরাহ করেও এখানে যুদ্ধ চালিয়ে নেয়ার কিংবা মৈত্রী রক্ষার সুযোগ কম।

পররাষ্ট্রসংক্রান্ত বিষয়ে দক্ষদের নিয়োগ

যেকোনো সংকটের ক্ষেত্রেই প্রেসিডেন্টদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন স্তরে কাজ করা কর্মকর্তারা। বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেনের উত্থান হয়েছে স্নায়ুযুদ্ধের সময়। ফলে তিনি অনেক সংকট সামলানোর ক্ষেত্রেই স্নায়ুযুদ্ধের সময়ে তৈরি হওয়া মানসিক অবস্থা থেকে বের হতে পারেননি। ইউক্রেনের ব্যাপারে জনসম্মুখে মন্তব্যের ক্ষেত্রে তিনি রক্ষণশীলতা দেখিয়েছেন, আবার রক্ষণশীলতা দেখিয়েছেন ইউক্রেনে সরঞ্জাম সরবরাহের কিছু ক্ষেত্রেও। এর পরও প্রেসিডেন্ট বাইডেন পূর্ববর্তী রেজিমে তৈরি হওয়া শূন্যস্থানগুলো পূরণ করতে পেরেছেন, গণতন্ত্র বিস্তারে নতুন চেষ্টা শুরু করতে পেরেছেন। এর কারণ প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পাঁচ দশকের কর্মময় জীবন, বিভিন্ন সময়ে তার অধীনে কাজ করা কর্মকর্তাদের ব্যাপারে জ্ঞান আর অভিজ্ঞতা।

সেই তুলনায় ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যারিসের অভিজ্ঞতা কম, কৌশলগত পরামর্শের জন্য তাকে নির্ভর করতে হবে ডেমোক্রেটিক পার্টির তরুণ পরামর্শকদের ওপর। ৩০-৫০ বছরের এ পরামর্শকদের অভিজ্ঞতা শুরু হবে এ শতাব্দী থেকে। ফলে প্রেসিডেন্ট হ্যারিসকে স্নায়ুযুদ্ধের সময়ের অভিজ্ঞতায় আটকে থাকতে হবে না।

আবার প্রেসিডেন্ট বাইডেনের অভিজ্ঞতা আর বিশ্বস্ত একটি বলয় থাকায় পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে তিনি অপ্রথাগত নিয়োগ দিতে পারেননি। অতীতে হ্যানরি কিসিঞ্জার, ব্রেন্ট স্কউক্রফট, জাবিগনিয়ে ব্রজিজিনস্কিরা ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার হিসেবে, সাইসার ভেন্স, জর্জ শুলজ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে, উইলিয়াম ক্যারি আর রবার্ট গেটস প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে কাজ করেছেন। প্রেসিডেন্ট হ্যারিসের সামনে সুযোগ আছে প্রেসিডেন্ট ওবামার লিগ্যাসি অনুসরণ করে দক্ষতার ভিত্তিতে এ রকম কিছু নিয়োগ দেয়ার, যারা শ্রদ্ধার সঙ্গেই প্রেসিডেন্টের ভুলগুলো ধরিয়ে দিতে সক্ষম হবেন।

নির্বাচিত হলে প্রেসিডেন্ট হ্যারিসের সুযোগ থাকবে ডেমোক্রেটিক পার্টির বাইরের লোকজনকে ক্যাবিনেটে নিয়ে আসার। এরই মধ্যে সেই প্রতিশ্রুতি অবশ্য কমলা হ্যারিস দিয়েছেন, নির্বাচিত হলে অন্তত একজন রিপাবলিকানকে ক্যাবিনেটে রাখার আগ্রহ দেখিয়েছেন।

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বাইডেন প্রশাসনের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা ছিল আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের সময়কার ঘটনাগুলো, প্রথম প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্প আক্রমণ করেছেন এই ইস্যুতে জো বাইডেনকে। কমলা হ্যারিস আফগানিস্তানের সৈন্য প্রত্যাহারের ইস্যু থেকে নিজেকে কিছুটা দূরে রাখলেও যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির মুখ তিনি। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় নিয়মিতই সফর করেছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায়।

৩৮টি দেশের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বসবাস করে পৃথিবীর দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অর্ধেক হয় এ অঞ্চলে। প্রেসিডেন্ট যে-ই হোন, যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যবোধগুলো আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে টিকিয়ে রাখতে হলে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবেলায় উদ্ভাবনী শক্তি আর কূটনৈতিক সক্ষমতায় পাল্লা দিচ্ছে চীন, রয়েছে উত্তর কোরিয়ার মতো পারমাণবিক শক্তিসম্পন্ন দেশও। একইভাবে এ অঞ্চলে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের শতবর্ষের পুরনো মিত্ররা, যাদের নিরাপত্তা অনেক ক্ষেত্রেই যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের ওপর নির্ভরশীল।

আগস্টের শুরুতে ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত জ্যাক সুলিভান, অ্যান্থনি ব্লিংকেন আর লয়েড অস্টিনের যৌথ অপ-এডে পররাষ্ট্রনীতিতে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির গুরুত্ব আলোকপাত হয়েছে, কমলা হ্যারিস প্রেসিডেন্ট হলেও একই নীতি ধরে এগিয়ে যাবেন।

ইসরায়েল ও মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র

গত বছর শুরু হওয়া ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নিরবচ্ছিন্নভাবে ইসরায়েলের সমর্থন দিয়ে গেছে, জো বাইডেন থেকে শুরু করে প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা নিয়মিত ইসরায়েলে সফর করেছেন। জো বাইডেনের অবস্থানের কারণে ডেমোক্রেটিক পার্টি সুইং স্টেটগুলোয় মুসলিমদের ভোট হারাতে পারে, সেই বিবেচনায় কমলা হ্যারিস ফিলিস্তিনের পক্ষে কিছুটা উচ্চবাক্য হলেও তার অবস্থানও নীতিগতভাবে আলাদা নয়। বরং ‘ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে’—এই ন্যারেটিভের মাধ্যমে তিনিও ইসরায়েলের নজিরবিহীন গণহত্যাকে সমর্থনই করেছেন।

লক্ষণীয় হচ্ছে, জো বাইডেন সরে দাঁড়ানোর পর থেকে ইসরায়েলকেন্দ্রিক মধ্যস্থতায় হোয়াইট হাউজ কমলা হ্যারিসের উপস্থিতি আলোচনায় আনছে। ১ আগস্ট বাইডেন ও নেতানিয়াহুর মধ্যে ফোনে আলোচনা কিংবা ডেমোক্রেটিক পার্টির কনভেনশনের সময় ফোনে আলোচনা—প্রতিটি ক্ষেত্রেই কমলা হ্যারিসের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট হ্যারিসের ইসরায়েল পলিসির বিষয়ে। সব মিলিয়ে ৭ অক্টোবরের পর বাইডেন আর নেতানিয়াহুর মধ্যে হওয়া অন্তত ২০টি আলোচনায় কমলা হ্যারিস উপস্থিত ছিলেন। ফলে ইসরায়েলের ব্যাপারে জো বাইডেনের ধারাবাহিকতাই ধরে রাখবেন কমলা হ্যারিস, যদি প্রেসিডেন্ট হন।

নিশ্চিতভাবেই ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হলে এর অনেক কিছুই বদলে যাবে। কিছু জিনিস আবার অপরিবর্তিত থাকবে। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নতুন যুদ্ধ শুরু না করার কৃতিত্ব দেয়া হয়। আবার জো বাইডেনের সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো বিদেশের কোনো যুদ্ধক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য না থাকার ঘটনা ঘটেছে। অর্থাৎ যে পরিবর্তন ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় শুরু হয়েছিল তা সামগ্রিক একটি কৌশলের অংশই হয়তো ছিল।

দৈনিক বণিকবার্তা