মতামত/কলাম প্রকাশনার সময়: শনিবার ৭, সেপ্টেম্বর ২০২৪

কোমল পানীয়ের ‘কর’ বাড়ানোর সুফল

Share on:

বাংলাদেশে কোমল পানীয়ের বিস্তার এতটা ঘটেছে, শহর কিংবা গ্রাম সবখানেই তা পাওয়া যায়। এমনকি যেখানে ভালো রাস্তা নেই, বিদ্যুৎ এবং মোবাইলের মতো জরুরি সেবা নেই, সেখানেও কোমল পানীয়ের দেখা মিলবে।


এ ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রতিবছর ২০ শতাংশ হারে কোমল পানীয়ের বাজার বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্বের প্রায় সব বড় কোমল পানীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এখন বাংলাদেশে কাজ করছে। এসব তথ্য আমাদের এই ইঙ্গিত দেয়, মানুষ যথেষ্ট পরিমাণে কোমল পানীয় গ্রহণ করছে।

কিন্তু অসংক্রামক রোগ হওয়ার পেছনে যে কয়েকটি কারণ দায়ী, তার মধ্যে অতিরিক্ত চিনি ও লবণযুক্ত কোমল পানীয় গ্রহণ অন্যতম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবমতে, একজন প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক উভয়ের প্রতিদিনের মোট ক্যালরির ৫ থেকে ১০ শতাংশ চিনি ও লবণ থেকে আসতে পারে। অথচ প্রতি ২৫০ মিলিলিটার কোমল পানীয়ে কম করেও ৫০ গ্রাম চিনি মেশানো হয়, যা থেকে একজন মানুষের শরীরে ২০০ ক্যালরির বেশি ঢোকে।

এ প্রেক্ষাপটে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এটি বিক্রি ও বিপণন বন্ধে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মাঝে একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা হলো পণ্যটির ওপর কর আরোপ। একেক দেশ কোমল পানীয়ের ওপর একেক রকম কর বসিয়ে রেখেছে। তবে কয়েকটি দেশ যেমন– ফ্রান্স, আয়ারল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা কোমল পানীয়তে চিনি ও লবণের হারের ওপর নির্ভর করে শুল্ক ধার্য করে। ধরা যাক, ৫০০ মিলিলিটার একটি কোমল পানীয়র বোতলে প্রতি ১০০ মিলিলিটারে যদি ১২ গ্রাম চিনি মেশানো হয়, তাহলে প্রতি গ্রামের বিপরীতে নির্ধারিত শতকরা হারে কর দিতে হয়। কোনো কোনো দেশে আবার চিনির পরিমাণকে বিভিন্ন স্তরে ভাগ করা হয়। যেমন ১০০ মিলিলিটারে ৫ গ্রাম চিনি মেশানো হলে এক রকম শুল্ক; ১০ গ্রাম থাকলে আরেক রকম শুল্ক।

এ পদ্ধতিতে কোমল পানীয়ের শুল্ক ধার্য করার দুটি সুবিধা আছে। প্রথমত, রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পাবে। অন্যদিকে কোমল পানীয় প্রস্তুতকারী কোম্পানি অতিরিক্ত চিনি ও লবণ যুক্ত করার প্রবণতা থেকে সরে আসে, যা আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব রাখে। বিশ্বব্যাংকের ২০২০ সালের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ব্রিটেনে উচ্চ চিনিযুক্ত কোমল পানীয়ের ওপর শুল্ক ধার্য করার ফলে এর বিক্রি ৪৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে কম চিনিযুক্ত কোমল পানীয়ের চাহিদা বেড়েছে।

তথ্য বলছে, এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশও পিছিয়ে নেই। এখানে যে হারে শুল্ক আছে, তা দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি। আমাদের দেশে কোমল পানীয়তে মোট ৪৮ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে– ২৫ শতাংশ সম্পূরক কর, ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর, ৩ শতাংশ আয়কর এবং ৫ শতাংশ আবগারি কর। তবে এত শুল্ক থাকার পরও এর বিক্রি কমেনি। যদি বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমরা চিনি ও লবণের হারের ওপর ভিত্তি করে শুল্কহার বসাতাম তাহলে এটি ভালো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করত। কারণ এতে কোমল পানীয় প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান শুল্কহার কমিয়ে আনার চিন্তা থেকে অতিমাত্রায় চিনি ও লবণ মেশাতে না, যা আমাদের ভোক্তার জন্য ইতিবাচক প্রমাণিত হতো।

আমাদের বুঝতে হবে কোনটি বেশি প্রয়োজন– মানুষের সুস্থতা, না সরকারের আয়। মানুষ যদি কোমল পানীয় পান করে অসুস্থ হয় আর হাসপাতাল ও ওষুধের পেছনে অর্থ খরচ করে, তাহলে যে রাজস্ব সরকার পেল, তার কোনো কার্যকারিতা থাকবে না।

দৈনিক সমকাল