কমলা-ট্রাম্পের মধ্যে যত সমালোচনা!
Share on:
মঙ্গলবার রাতে কমলা আর ট্রাম্পের মধ্যে বিতর্ক হলো। ট্রাম্পের বিতর্ক উপস্থিত দর্শকদের কাছে নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করতে পারেনি যে তিনি উচ্চ পদের জন্য অনুপযুক্ত।
আড়াই মাস আগে বাইডেন এমন এক বিতর্কে ভজকট বাধিয়ে ফেলেছিলেন; কিন্তু এমন হলেও ট্রাম্পের জন্য সমস্যা নয়। ভজকট পাকানো বরং ট্রাম্পের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বাড়ায়। এমনকি সবাই তাঁর এলোমেলো চিন্তাকেও স্বাভাবিক বলে ধরে নেয়।
এই ট্রাম্পও পেনসিলভানিয়ার বিতর্কে সর্বনাশের দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিলেন। কমলা যে বিতর্কে এত ভালো করেছেন, পরের দিন সেটি আর আশ্চর্য লাগেনি। আশ্চর্য লেগেছে যে এমন বুদ্ধিমান মানুষও তাহলে আছেন, যাঁরা কমলার এই উন্মাদ প্রতিপক্ষের পক্ষে ওকালতি করতে পারেন।
আমি ভাবছিলাম কমলা হ্যারিসের স্নায়ুর কথা। এ ধরনের অস্বাভাবিক পরিবেশে তিনি কীভাবে নিজেকে শান্ত রাখলেন! বিতর্কের শুরুর মুহূর্তগুলোতে ভাইস প্রেসিডেন্টকে সত্যিই নার্ভাস মনে হয়েছিল; কিন্তু তিনি নিজেকে সামলে নিলেন। আর প্রায় ১৫ মিনিট পরে ঘটনা ঘটতে লাগল। ট্রাম্প চোয়াল শক্ত করে, চোখ পাকিয়ে নিজেকে আর লুকিয়ে রাখতে পারলেন না। পারার কথাও নয়। তিনি কিনা হেরে যাচ্ছেন একজন নারীর কাছে?
পরের দিন আমেরিকান ডানপন্থী সংবাদমাধ্যম তার পাঠকদের জানাল যে বিতর্কে ট্রাম্প মোটামুটি ভালো করেছেন। তবে সঙ্গে ছিল অনেক অজুহাত। ট্রাম্পের দুর্বলতার এই খুব মৃদু স্বীকারোক্তিও কিন্তু এই সংবাদমাধ্যমের জন্য অস্বাভাবিক। ট্রাম্পপন্থী নিউইয়র্ক পোস্ট স্বীকার করেছে যে ট্রাম্প ‘বিচলিত’ হয়েছিলেন। তবে সেই সঙ্গে তারা এবিসি নিউজের বিতর্ক সঞ্চালকের অন্যায় আচরণ নিয়ে একগাদা অভিযোগও করতে ভোলেনি। ট্রাম্প যখন নির্বিকারভাবে বলছেন যে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসীরা লোকজনের পোষা প্রাণী ধরে খেয়ে ফেলছে অথবা ডেমোক্র্যাটরা শিশু হত্যা বৈধ করছেন, তখন এবিসির বিতর্ক সঞ্চালক ট্রাম্পের এসব নির্জলা মিথ্যা কথা থামিয়ে দিয়েছিলেন। এই একটা ভুল কাজ আসলেও এবিসির বিতর্ক সঞ্চালক করেছেন। তবে এটা ঠিক যে বিতর্কের সময় মনে হচ্ছিল, ট্রাম্প যেন ডানপন্থী পত্রিকা ন্যাশনাল এনকোয়ারার থেকে লেখা মুখস্থ করে এসেছেন।
‘ফক্স নিউজ’-এ বিতর্ক-পরবর্তী পণ্ডিতি ছিল বেশি। খুব ব্যথিত মনেই তারা লিখেছে, ‘কমলা বেশ ভালো করেছেন।’ এদিকে শন হ্যানিটি কায়দা করে বললেন, ‘আসলে যিনি হেরেছেন’ তিনি হচ্ছেন এবিসি নিউজ। জেস ওয়াট্টার লিখলেন, যাঁরা বিতর্কে দেখেছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই ভাবছেন না যে দুজনের একজনও জেতার যোগ্য। তবে বলতে ভোলেননি যে ‘স্মরণযোগ্য যা কিছু, তার সব বলেছেন ট্রাম্প।’ কথা অবশ্য ঠিক। আশ্চর্য উদ্ভট কথা বলতে ট্রাম্পের জুড়ি নেই। এরপর ট্রাম স্বয়ং হাজির হলেন প্রচারমাধ্যমে। অভিযোগ করলেন যে বিতর্কে কারচুপি করা হয়েছে। যেকোনো প্রতিযোগিতায় হারলেই ট্রাম্প অবশ্য এ কথা বলেন।
সুপ্রজননবিদ্যার ভক্ত, পৃথিবীর অন্যতম ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্ক স্বীকার করেছেন যে ট্রাম্পের জন্য দিনটা ভালো ছিল না আর কমলা ‘প্রত্যাশা ছাড়িয়ে গেছেন’। একটু ঢিলেঢালাভাবে হলেও অন্য ট্রাম্প ভক্তদের চেয়ে ভালোভাবে মাস্ক সত্যটা অন্তত স্বীকার করেছেন। এরপর অবশ্য বলতে ভোলেননি যে ‘কমলা হ্যারিস জিতে গেলে আমাদের আর কখনো মঙ্গল গ্রহে যাওয়া হবে না।’ যদি ধরে নিই যে মাস্ক নিজেই মঙ্গলে যাত্রা করতে চাইছেন, আসলেও কমলার বিজয়ে তাহলে একটি ক্ষতি হয়ে যাবে।
এরই মধ্যে ডানপন্থী ব্রিটিশ প্রচারমাধ্যমে ট্রাম্পের ব্যর্থতার সাফাই শুরু হয়ে গেছে। বিতর্কের পর ডেইলি টেলিগ্রাফ বলছে যে ‘কমলা নিজের প্ল্যাটফর্ম নিয়ে এত কম বলেছেন যে তাঁকে জয়ের মালা দেওয়া কঠিন।’ আসলেও কি তা–ই? ভাবুন দুজনের কথা। একজন নারী যিনি নভেম্বরে নির্বাচনে হেরে গেলে পরাজয় মেনে নিতে আপত্তি করবেন না, তা মোটামুটি নিশ্চিত। আরেক দিকে যিনি আছেন, তিনি হেরে গেলে চিৎকার–চেঁচামেচি থেকে লোক খ্যাপানো—কোনো কিছুই বাকি রাখেন না। তবু কিনা ডেইলি মেইল বলছে, ‘দুজনেরই সমান করুণ অবস্থা!’
যে প্রমাণ আমরা দেখলাম আর যা লেখা হচ্ছে—এই দুইয়ের মধ্যে এত ফারাক কেন? কারণ, আসল সত্য হচ্ছে বিতর্কের সময় মঙ্গলবার রাতে ট্রাম্পকে পাগলের মতো দেখাচ্ছিল। রেগে গেলে তাঁর কাঁধ ঝুলে পড়ে, শরীর মোচড় দেয় আর এরপর পরিচিত সব বাক্য বের হয়ে আসতে থাকে মুখ থেকে। যেমন ‘আমি তোমার মতো নই’, বারবার ‘ভয়ংকর’ শব্দের ব্যবহার ইত্যাদি। ট্রাম্প বলেছিলেন যে বাইডেন কমলাকে ‘ঘৃণা করেন, সহ্য করতে পারেন না’। তবে আমার কাছে ট্রাম্পের সবচেয়ে পাগলাটে কথা মনে হয়েছে, যখন তিনি সৌরশক্তির ভয়াবহতা সম্পর্কে বললেন, ‘আপনি কখনো একটি সৌর প্ল্যান্ট দেখেছেন? যাহোক, আমি সৌরশক্তির একজন বড় ভক্ত।’
কমলা বরাবর শান্ত ছিলেন। তাঁর হাসি সবার মনোযোগ কেড়েছে। নিউইয়র্ক পোস্ট অবশ্য সেই ‘বাতিল করে দেওয়ার’ হাসি ভালোভাবে নেয়নি। কারণ বোধ হয় এই যে সেই হাসি ট্রাম্পকে আরও অসংলগ্ন করে দিয়েছিল। আমার মতে, তর্কের সেরা মুহূর্তটি ছিল যখন কমলাও ক্রুদ্ধ হয়ে উঠেছিলেন। অনেকের অভিযোগ, বিতর্কে তিনি আগে থেকে ঠিক করা কথার বাইরে যাননি। তবে গর্ভপাতের বিষয়ে তর্কের সময় মনে হয়েছিল, তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। রাশিয়ার সম্প্রসারণবাদী নীতি নিয়েও এমন মনে হয়েছে, যখন তিনি ট্রাম্পকে বললেন, ‘গণতন্ত্রের চেয়ে তাহলে আপনি শক্তিশালী নেতা বেশি পছন্দ করেন।’
এরপর কমলার ভাষার ধরন বদলে গেছে। সে পরিবর্তন সাধারণত ডেমোক্র্যাটদের বদলে রিপাবলিকানদের সঙ্গে বেশি খাপ খায়। নারী শরীর নিয়ে ট্রাম্প সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বলে তিনি বলেন যে ‘এ তো অনৈতিক।’ এই সময়টা ছিল নাটকীয়। আর কথাটা সব জ্ঞানী-গুণী আমেরিকান আর ট্রাম্প সমর্থক তাঁদের ব্রিটিশ মিত্রদের জন্যও প্রযোজ্য।