কোন খুঁটির জোরে ওয়াসার এমডি এখনও বহাল তবিয়তে?
Share on:
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক-এমডি প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহর সঙ্গে ঢাকা ওয়াসার সদ্য সাবেক এমডি প্রকৌশলী তাকসিম এ খানের মধ্যে বেশ মিল। দু’জন দুই ওয়াসাতে একই বছর তথা ২০০৯ সালে যোগ দিয়েছিলেন।
বারবার ক্ষমতার জোরে উভয়েই এমডি পদের মেয়াদ বাড়িয়ে নিয়েছেন। উভয়ের বিরুদ্ধেই দুর্নীতি-অনিয়মের বিস্তর অভিযোগ। কিন্তু গত মাসে তাকসিম এ খান পদত্যাগ করলেও একেএম ফজলুল্লাহ এখনও চট্টগ্রাম ওয়াসার দায়িত্ব পালন করছেন। অর্থাৎ এক যাত্রায় দুই ফল। স্বাভাবিকভাবেই জনপরিসরে প্রশ্ন উঠেছে, রাজনৈতিক পালাবদলের পরও ফজলুল্লাহ কীভাবে বহাল তবিয়তে থাকেন?
বিগত সরকারের সময়ে না হয় প্রভাবশালী নেতাদের কারণে এবং ওয়াসা বোর্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বারবার এমডি পদের মেয়াদ বাড়াতে সক্ষম হয়েছেন। এখন তাঁর খুঁটির জোর কোথায়? কাজ দেখিয়ে পদ আঁকড়ে থাকবেন– এমন রেকর্ড তাঁর নেই বললেই চলে। তাঁর সময়ে পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য চট্টগ্রাম ওয়াসায় চারটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে বটে, কিন্তু প্রকল্প শেষ হতে অযথা দেরি হয়েছে। পাশাপাশি ব্যয়ও বেড়েছে। অথচ তার সুফল পাননি চট্টলাবাসী।
পানি চুরি, দাম বাড়ানো কিংবা পানির অপচয়ও রোধ করতে পারেননি তিনি। সোমবার সমকালে চট্টগ্রাম ওয়াসা নিয়ে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। উভয়টিই তার এমডি ঘিরে। প্রথমটি, দুর্নীতির নানা অভিযোগেও বহাল এমডি ফজলুল্লাহ, আরেকটি চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডি অবরুদ্ধ, পদত্যাগ দাবি। মঙ্গলবারও তাঁর পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চলেছে।
কোনো প্রতিষ্ঠানপ্রধানের বিরুদ্ধে তাঁরই সহকর্মীরা অনাস্থা জ্ঞাপন করে পদত্যাগের আন্দোলন করার পরও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কীভাবে ওই পদ আঁকড়ে পড়ে থাকেন? বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সামান্য দায়িত্বে অবহেলার কারণেও মন্ত্রী-এমপিদের পদত্যাগের ঘটনা ঘটে। আমাদের দেশে বড় কেলেঙ্কারি ঘটিয়েও তারা পদ আঁকড়ে থাকেন। তাদের সেই নজিরই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানপ্রধান যেন গ্রহণ করছেন। এ ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডি বলা চলে এক কাঠি সরেস।
ওয়াসার এমডি পদের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয় সরকার। তিন-চার বছরের জন্য সাধারণত এসব নিয়োগ হয়। চুক্তির মেয়াদ না হয় একবার বাড়ানো যায়। কিন্তু যখনই সেটা বারবার ঘটে, সেখানে প্রশ্ন জাগে। বোঝা যায়, ডাল মে কুছ কালা হায়। অর্থাৎ একবার এমডি হওয়ার পর যে মধু তিনি একবার পান করেন, সেই সুধা আজীবন পেতে চান। এই অপচর্চা অব্যাহত থাকার ফল কী হয়, সেটা ঢাকা ওয়াসাতে যেমন আমরা দেখেছি, চট্টগ্রাম ওয়াসার ক্ষেত্রেও সমান সত্য।
এখানে ব্যক্তি হিসেবে ওয়াসার এমডি নিজে লাভবান হয়েছেন বটে, গ্রাহক তাঁর সেবাটুকু পাননি। ঢাকা, চট্টগ্রাম উভয় ওয়াসাতেই পানি নিয়ে গ্রাহকের অভিযোগের অন্ত নেই। পর্যাপ্ত পানি পান না বহু গ্রাহক; অন্যদিকে সুপেয় পানি পাওয়ার কথা থাকলেও গ্রাহক যা পান, তা পানের অযোগ্য। এই পানীয় গ্রাহক ঠিকমতো পান না। অথচ বছর বছর পানির দাম কেবল বেড়েছেই। একই সঙ্গে কোষাগার খালি হয়েছে। অপচয় হয়েছে প্রকল্পের নামে হাজার হাজার কোটি টাকার।
প্রতিষ্ঠানপ্রধানের যখন এই হাল তখন সেবা বেহাল হবেই। তারপরও কি মহামান্যরা বুঝবেন না? আন্দোলন অল্প থাকতে আমলে না নেওয়ার ফল আমরা দেখেছি। চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডি নিশ্চয়ই দেখেছেন। তারপরও তিনি কেন বুঝতে চাইছেন না? আমরাও বুঝতে পারছি না, তার খুঁটির জোরটা আসলে কোথায়?