পরিবেশ ও জলবায়ু প্রকাশনার সময়: রবিবার ৪, অগাস্ট ২০২৪

ওয়াসার পয়ঃশোধনাগার প্রকল্পের সুবিধা গ্রাহক কবে পাবে!

Share on:

রাজধানী ও চারপাশের নদী, খাল ও জলাশয়গুলোর পানি কতটা দূষিত, তা নগরবাসী জানেন। রাজধানীবাসীর পয়ঃবর্জ্য পরিবেশবান্ধব উপায়ে শোধন করতে দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্প তৈরি করে ঢাকা ওয়াসা।


এটি একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ হলেও বর্জ্য সংগ্রহের জন্য পাইপলাইন তৈরি না করায় উদ্বোধনের দুই বছরেও কোনো গ্রাহককে সেবার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি।

জানা যায়, চায়না এক্সিম ব্যাংকের উচ্চ সুদের ঋণসহ সরকারের এবং ঢাকা ওয়াসার নিজস্ব অর্থে ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকারও বেশি অর্থে দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল রাজধানীর গুলশান, বনানী, বারিধারা, মহাখালী, তেজগাঁও, কলাবাগান, হাতিরঝিলসহ আশপাশের এলাকার পয়ঃবর্জ্য সংগ্রহ করে তা শোধন করা। ৫০ লাখ মানুষের সেবা দেওয়ার জন্য দৈনিক ৫০ কোটি লিটার পয়ঃবর্জ্য শোধন ক্ষমতাসম্পন্ন প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। তবে এ শোধনাগার প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরুর সময়েই প্রকল্পের পয়ঃবর্জ্য সংগ্রহের লাইন তৈরির কাজ শুরু করা দরকার ছিল। অথচ প্রকল্প চালুর দুবছরেও এর কাজ শুরু করতে পারেনি ঢাকা ওয়াসা। এখনো যদি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়, তা অনুমোদনের পর চালু করতে অন্তত ১০ বছর লাগবে।

ততদিন পর্যন্ত এ প্রকল্প থেকে সেবা পাবে না নগরবাসী এবং ঢাকা ওয়াসা আদায় করতে পারবে না কোনো রাজস্বও। অথচ প্রকল্পটির ব্যয় ও উৎপাদন অক্ষমতার জন্য বছরে ৫১২ কোটি টাকা গচ্চা দিতে হচ্ছে ঢাকা ওয়াসাকে। এজন্য প্রতিষ্ঠানটির জবাবদিহি হওয়া প্রয়োজন। এদিকে ২০২৭ সাল থেকে প্রকল্পের ঋণের কিস্তি শুরু হবে। পরিচালন ব্যয় ও ঋণের কিস্তি দিতে ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ আবারও পানির দাম বাড়িয়ে ব্যয় মেটানোর চিন্তা করতে পারে, এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট অনেকে।

ঢাকা ওয়াসার দাশেরকান্দি প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে অদূরদর্শিতার স্পষ্ট প্রমাণ মিললেও ব্যর্থতার জন্য শাস্তি না দিয়ে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের বিশেষভাবে পুরস্কৃত করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে কেউ যাতে কর্তৃপক্ষের বিপক্ষে না যায়, সেজন্য সংশ্লিষ্টদের পুরস্কৃত করা হয়েছে। একই অবস্থা ঘটেছে পদ্মা পানি শোধনাগার প্রকল্পের ক্ষেত্রেও। সরবরাহ লাইন না করে প্রকল্প চালু করায় অর্ধেক উৎপাদনও করতে পারছে না ঢাকা ওয়াসা। অথচ পুরোপুরি উৎপাদন করা গেলে ঢাকা ওয়াসা রুটিন খরচ, ঋণের কিস্তি পরিশোধ করেও অনেক লাভ করতে পারত। এসব বিষয়ে তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। অনিয়মের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে ঢাকা ওয়াসার সেবার মান বাড়বে কিনা, সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।

দৈনিক যুগান্তর