এ কেমন এফআইআর
Share on:
‘গুলিতে ঝাঁঝরা সাঈদের বুক, পুলিশ বলছে উল্টো কথা’ -এটি ২৮ জুলাই পত্রিকান্তরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের বুক ও পেট পুলিশের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল। তার গলা থেকে উরু পর্যন্ত ছিল ছররা গুলির আঘাত। অথচ পুলিশের করা মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে (এফআইআর) বলা হয়েছে, আন্দোলনকারীদের ছোড়া গুলি ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের এক পর্যায়ে আবু সাঈদের মৃত্যু হয়। অথচ ঘটনার একাধিক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ১৬ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি চলাকালে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে সড়কে পুলিশ আবু সাঈদকে খুব কাছ থেকে গুলি করে। আর আবু সাঈদ এক হাতে লাঠি নিয়ে দুই হাত প্রসারিত করে বুক পেতে দেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি লুটিয়ে পড়েন।
আবু সাঈদের মরদেহের ময়নাতদন্ত করেন রংপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক রাজিবুল ইসলাম। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, আবু সাঈদের বুক ও পেট ছররা গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল। লুকোচুরির কিছু নেই। অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়। কয়েক দিনের মধ্যেই ময়নাতদন্ত রিপোর্ট দেওয়া হবে বলে তিনি জানান। তবে মামলার এফআইআরে আবু সাঈদ পুুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ নেই। আবু সাঈদ নিহত হওয়ার পরদিন ১৭ জুলাই তাজহাট থানায় একটি মামলা হয়। মামলার বাদী ওই থানার উপপরিদর্শক ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বিভূতি ভূষণ রায়। ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদী বিভূতি ভূষণ রায় এজাহার দায়েরের কথা নিশ্চিত করেছেন। তবে তিনি এর বেশি কিছু বলতে চাননি।
আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি কোটা সংস্কার আন্দোলনের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সমন্বয়ক ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা বলেন, আবু সাঈদ আহত হয়ে পড়ে গেলেও পুলিশ নির্বিচার গুলি অব্যাহত রাখে। রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনের অপর সমন্বয়ক সাবিনা আক্তার বলেন, সাঈদকে ‘টার্গেট’ করে হত্যা করা হয়েছে।
আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের এফআইআর নিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন করে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আবু সাঈদকে প্রকাশ্যে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যার ভিডিও ফুটেজ বিশ^বাসী দেখেছে। এখন পুলিশ নিজেদের দায় অন্যদের ওপর চাপানোর চেষ্টা করছে। এর মাধ্যমে পুলিশ প্রশাসনের প্রতি মানুষের আস্থা আরও নষ্ট হবে। প্রশ্ন জাগে, এমন তৎপরতার কি কোনো প্রয়োজন ছিল? বরং এফআইআরটি সত্যনিষ্ঠ হলে পুলিশের ইমেজ বাড়তো। আস্থার সংকটের সময় এটি অনেক বড় বিষয়।