এমন নজিরবিহীন স্বাধীনতার পুনরুদ্ধার, দুনিয়াবাসী যা আর কখনো দেখেনি
Share on:
এমন নজিরবিহীন নজির দুনিয়াবাসী আর কখনোই দেখেনি। হিংস্র-হায়েনাসম তস্করের দখলে চলে যাওয়া আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে রক্ত দিয়ে উদ্ধার করেছে আমাদের নাতি-নাতনিসম নিরস্ত্র যুবসমাজ, যাদের পেছনে পাথুরে পর্বতের মতো সুদৃঢ়ভাবে অবন্থান নেয় পুরো দেশবাসী।
দুনিয়াবাসী এমন অভূতপূর্ব অচিন্তনীয় নজির আর কখনো দেখেনি, যা দেখিয়েছে অনন্য বাংলাদেশ। তবে যে ভূখন্ড নিয়ে গঠিত, দুনিয়াবাসীকে এর জনগণ আত্মত্যাগের এমনসব নজির বার বার দেখিয়েছে যা অন্যরা, অন্যদেশীরা ভাবতেও পারেনি। স্বদেশপ্রেম, স্বদেশের জন্য সবকিছু কুরবানি করার সাহস ও আত্মত্যাগী মানসিকতা অন্যদেশীরা করতে দেখাতে পারে নি। আমাদের ইতিহাস এমনকি জাতীয় চেতনাবোধ ঐতিহাসিকভাবেই ভিন্ন।
একটু প্রাগৌতিহাতিক যুগের দিকে ফিরে তাকাই। প্রাচীনকাল, তথা প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে এই জনপদের মানুষ বারবার ঝড়-তুফান-বন্যা, নদী-নালার ভাঙন, হাঙ্গর-কুমিরের হামলা, বন্ধুবেশি বিদেশী শোষণ ও শাসন প্রতিহত করার নজিরের গর্বিত উত্তরাধিকারী। আমাদের নতুন প্রজন্ম আমাদের সেই সোনালী ইতিহাসকে আরো শাণিত, আরো গৌরবান্বিত করেছে। এটা আমাদের প্রাপ্য। এমন রক্তদান আর এভাবে বুকপেতে জীবন দেয়ার সাহসিকতা আমরা উত্তরাধিকারসূত্রেই প্রাপ্ত। এটা আমাদের অহঙ্কার। আমাদের অস্তিত্বের পরশমণি। এটাই আমাদের ইতিহাস।
[২]
আজকের হিন্দুদের পরভূম দখলের কদার্য আচরণের শিকার কাকতালীয়ভাবে হলেও আমাদের পূর্বপুরুষ বর্তমান পাকিস্তান সিন্ধুনদ তীরবর্তী হরপ্পা-মোহেনজোদাড়ো সভ্যতার মালিক সহজ-সরল প্রকৃতির ক্ষর্বকায় দ্রাবিড় জনগোষ্ঠী। এরাই প্রায় পঁচহাজার বছর আগে মেসোপটোমীয়-ব্যবলনীয় সভ্যতার সমকালীন সভ্যতার সমক্ষীয়, তবে সমগেীত্রয় নয় ।
মধ্যএশিয়া থেকে ভাগ্য পরিবর্তনের উদ্দেশে ভেড়ার পাল নিয়ে দ্রাবিড়দের বাসভূমিতে আশ্রয় নেয় বিদেশী জনগোষ্ঠী। নিজেদেরকে আর্য হিসেবে ঘোষণাকারী এই বহিরাগতরা ছিল মূর্তিপূজারী, যারা পরবর্তীতে নিজেদেরকে হিন্দু হিসেবে পরিচয় দেয়। ওই আশ্রিত মূর্তিপূজারী আর্যরা মূল মালিক দ্রাবিড়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে কেবল ওই সভত্যাকে ধ্বংস করেনি, দ্রাবিড়দের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালিয়ে তাদেরকে নিজবাসভূম থেকে উচ্ছেদ করে। দ্রাবিড়দের কিছু অংশ দাক্ষিণ্যাত্যে এবং বর্তমান ভারতের বিভিন্ন জায়গাসহ বর্তমান বাংলাদেশ ভূখণ্ডে আশ্রয় নেয়।
[৩]
আমরা তাদেরই বংশধর। কালক্রমে ভূগৌলিক কারণে যোগাযোগ দুরূহ হওয়ায় তাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। ওই সময়ে আমাদের এই অঞ্চল বন-জঙ্গলাকীর্ণ বাঘ-কুমির তথা হিংস্র জন্তু-জানোয়ারে পরিপূর্ণ ছিল। আমাদের পূর্বপুরুষা প্রকৃতি ও শ্বাপদ-শংকুল’এর সাথে লড়াই করেই টিকে ছিলেন। মৃত্যু ছিল তাদের নিত্যদিনের সাথী। তারা মরে মরেই বেঁচেছিলেন। আমরাও তাদের মতো করেই বাঁচতে শিখেছি। আমরা তাই যুগে যুগে ভিনদেশীদের বিরুদ্ধে লড়েছি, এখনো লড়ছি। শত্রুর কাছে বার বার হেরেও আমরা পরাজয় মানি নি। বার বার তাদেরকে হারিয়ে আমরা বিজয়ী হবে। আমরা ভিনদেশী তস্কর আর্যদের উত্তাধিকার আরএসএস’বাদী মোদিদের হিংস্রতার শিকার হয়েও তাদের এবং তাদের বাংলাদেশী দাস-দাসীদের গোলামীর জিঞ্জির ছিন্ন করে স্বাধীনতাকে আবার উদ্ধার করেছি। আমরা হারিয়েছি আমাদের মতো নিঃস্বার্থবাদী দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধাদের সার্থক উত্তরাধিকার ছাত্র-যুব-জনতাকে। তারা মরেন নি। তারা শহীদ হয়েছেন।
বিস্ময়কর বিষয় হলো, আমাদের প্রিয়নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) নিজেই দক্ষিণ এশিয়া ভূখণ্ডকে ‘হিন্দ’ নামে অভিহিত করেছিলেন। এমনকি ‘হিন্দ’ সম্পর্কে তার একটি বিখ্যাত হাদিসও রয়েছে। তিনি বলেছেন: আমি হিন্দ থেকে সুগন্ধ পাচ্ছি। ‘হিন্দ’ অধিবাসীদের সাথে যেসব মুসলিম শহীদ হবেন, তারা হাশরের দিন আমার সাথী হবেন। ( দেখুন: খিলাফত ও মুলকিয়াত, জাভেদ আহমাদ গামিদি) মহানবী (সাঃ)’এর এমন মন্তব্যের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে হিন্দুদের হাতে শান্তিতে-সমরে যতো মুসলিম জীবন হারিয়েছেন তাদের সবাই শহীদের মর্যাদা পাবেন এবং রোজ হাশরের দিন মহানবীর (সাঃ)’এর সাথী হবেন।
[৪]
এই অঞ্চলের লেখ্য ইতিহাস শুরু হয় দ্রাবিড়দের আগমনের সাথে সাথে, অর্থাৎ হযরত ঈশা (আঃ)’এর আবির্ভাবের তিন থেকে চার হাজার বছর আগে। ইসলামের আগমনের সাথে সাথে। আরব-পারস্য, মধ্যএশিয়া, তুরস্ক, আফ্রিকার মুসলিম বণিক, পর্যটক, বিশেষত পীর-দরবেশ-আউলিয়া, শাসক, সুলতান, বাদশাহদের ইসলামী জিন্দেগী, সুশাসন, পারস্পরিক সাম্য-মৈত্রী, ভ্রাতৃত্ববোধ, মমত্ববোধ, সবার জন্য সুবিচার, সমানাধিকার এবং ধর্মচর্চার সমান অধিকার, এক কাতারে নামায পড়া এবং একত্রে বসে খাওয়া-দাওয়া করা স্থানীয় অমুসলিমদেরকে বিস্মিত করে।
অন্যদিকে হিন্দুদের পরস্পরের মধ্যে জন্ম ও কর্মকেন্দ্রিক অমানবিক কঠোর বর্ণভেদ প্রথা, পারস্পরিক অপাঙক্তেয়তা, হিংসা-বিদ্বষ স্থানীয় হিন্দু অধিবাসীদেরকে ইসলাম ধর্মের দিকে আকৃষ্ট করে। বস্তুত হিন্দুদের ধর্মীয় ও সামাজিক কুশাসন এই অঞ্চলকে মুসলিম প্রধান জনপদে পরিণত করে।
মুসলিম শাসকদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য তথা গুণ নিম্নবর্ণের হিন্দু তো বটেই রাজা-মহারাজাদেরকেও হতবাক করে।
মুসলিম দেশের শাসক, বাজ্য-বিজেতা, সুলতানা-বাদশাহরা উপমহাদেশকে তাদের স্বদেশ হিসেবে গ্রহণ করে এদেশের সম্পদ তাদের স্বদেশ তথা পিতৃ-পুরুষদের দেশে নিয়ে যান নি। তারা এদেশকে শোষণ করে তা আরব-ইরানে, আগানিস্তান, তুরস্কে পাচার করেন নি। এদেশের সম্পদ এদেশেই রেখেছিলেন, এদেশকে গড়েছিলেন।
আজকের সৌদি আরবে তেল আবিষ্কৃত হবার আগে এই সেইদিন পর্যন্ত আরবের অধিবাসীরা হজে¦র আসা হাজীদের ওপর নির্ভর করতেন। বাহির থেকে আসা হাজীরা ছিলেন আরববাসীর আয়ের প্রধান উৎস। আর আফগানিস্তান কেমন গরীব তা দুনিয়াবাসী আজও দেখছে। অথচ আফগানরা বহু শতক ধরে উপমহাদেশ শাসন করেছিলেন। তারা উপমহাদেশের সম্পদ আফগানিস্থানে নিয়ে যান নি। সুলতান মাহমুদের সোমনাথ মন্দির লুট ছাড়া মুসলিমদের উপমহাদেশ শাসনামলে অন্যকোন অঘটন নেই।
মুসলমানরা উপমহাদেশ লুট করতে আসেন নি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা হিন্দু রাজাদের বা জনগণের দাওয়াতে এসেছিলেন। এসেছেন এদেশে সুশাসন ও স্বচ্ছতা, শান্তি ও সমৃদ্ধি স্থাপন করতে। ভারতের গর্ব করার মতো সব স্থাপত্য কর্মই মুসলমানদের অমর কৃতিত্ব যার জন্য হিন্দুরাই এখন গর্ব করে।
আন্যদিকে কোন মুসলিম শাসকই স্থানীয়দেরকে জোরপূর্বক ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করতেও আসেন নি। মুসলমানরা একহাতে তরবারি, অন্যহাতে কুরআন নিয়ে বিজিত দেশে এসেছে এমন অভিযোগও সত্যি নয়।
যদি তা-ই হতো তাহলে ৭১১ সালে মোহাম্মদ বীন কাসেমের সিন্ধু-মুলতান বিজয়ের পর থেকে ১৮৫৭-৫৮ সনে হিন্দুদের চক্রান্ত ও ইংরেজদের পক্ষে দালালী করার কারণে প্রথম আজাদী লড়াইয়ে সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহের পরাজিত হওয়া পর্যন্ত ১,১৪৭ পুরো উপমহাদেশে একজন হিন্দুও থাকার কথা নয়। অথচ ১৯৪৭ সনে ভারত স্বাধীন হবার সময় সারা উপমহাদেশে মোট জনসংখ্যার তিনভাগের দুইভাগই ছিল হিন্দু। মুসলমানদের মূলকেন্দ্র দিল্লি ১৯৪৭ও ছিল হিন্দু
অধ্যুষিত।
আবার অন্যের সম্পদ চুরি করার রেকর্ড ভারতেরই রয়েছে। ১৯৭১ সনে ভারতই আমাদের সম্পদ চুরি করে নিজেদের দেশে নিয়ে যাওয়ার কুৎসিত নজির স্থাপন করে। গত ৫৪ বছর ভারত বাংলাদেশকে বন্ধুত্বের আবরণে শোষণ করে ফকির থেকে ধনী হয়েছে। এই শোষণের প্রধান সহায়ক ছিল দেশদ্রোহী হাসিনা।
[৫]
শেখ হাসিনাকে ভারতের আশ্রয় নেয়ার পর থেকে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে বাংলাদেশে হিন্দুবিরোধী দাঙ্গা, মন্দির ভাঙচুর, হিন্দুদের বাড়ি, জায়গা-জমি, ব্যবসা দখলের বানানো তথা মিথ্যা অভিযোগ প্রচার করা হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের নামকরা যতোগুলো সংবাদ মাধ্যম কাজ করছে, তাদের কোনটিই এই ধরনের অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পায় নি। এর মানে হচ্ছে, ভারত শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়াকে বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা চালানোর পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করছে।
তথ্যাভিজ্ঞমহল মনে করেন, শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাবার নাটক সম্পূর্ণরূপে ‘র’ তথা ভারত সরকার প্রযোজিত ও অগ্রিম আয়োজিত। শেখ হাসিনাকে ভারতীয় সশস্ত্রবাহিনীর হেলিকপ্টার তুলে নিয়ে যায়। তাকে ভারতে নিয়ে যাওয়া ভারতের জন্য অতীব জরুরি ও প্রয়োজনীয় ছিল। কারণ শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের জনগণ অথবা সেনাবাহিনী আটক করলে, কিংবা তিনি কোন দূতাবাসে আশ্রয় নিলে তা ভারতের জন্য ভয়ঙ্কর পরিণতি বয়ে আনতো। ভারত শেখ হাসিনাকে কিভাবে বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে, বাংলাদেশের স্বার্থ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ববিরোধী চুক্তি করিয়েছে, এবং দেশপ্রেমিক বাংলাদেশী জনগণকে বিনা অপরাধে গুম ও খুন করিয়েছে সেসব নির্মমকাহিনী ফাঁস হয়ে যাবে, যা ভারতের জন্য ভয়ঙ্কর পরিণতি ডেকে আনবে।
আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি ভারত মুখে যা-ই বলুক বাস্তবে কখনই শেখ হাসিনাকে তৃতীয় কোন দেশে আশ্রয় নিতে দিবে না। শেখ হাসিনা চাইলেও ভারত তাকে সেই সুযোগ দিবে না। শেখ হাসনাকে হয়তো আমৃত্যু ‘সেইফ হোম’ তথা বন্দী-শিবিরে কাটাতে হবে, অথবা আত্মহত্যার আবরণে অপমৃত্যুর শিকার হতে হবে। হাসিনার অবস্থান নিয়ে ভারত দ্বিমুখী ও পরস্পরবিরোধী কথা বলে। এদিকে বলে শেখ হাসিনা ভারতে থাকতে চান না, আবার বলে তিনি ইউরোপীয় কোন দেশে যেতে চান। এ দু’এর কোনটাই হাসিনার কথা নয়। বরং ভারত এর দ্বিমুখী প্রচারণা। বাংলাদেশের অস্তিত্ববিরোধী অনেকগুলো চক্রান্ত কার্যকর করার জন্য ‘র’ শেখ হাসিনাকে ভারতেই রেখে দেবে । ডঃ মোহাম্মদ ইউনূসের বিপ্লবী ছাত্র-জনতার সরকারকে বিব্রত তথা ব্যর্থ করার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে ভারত হাসিনাকে দিয়ে বাংলাদেশবিরোধী অপতৎপরতা চালাতে পারে। ভারতে আশ্রয় নেয়া কিংবা লুকিয়ে থাকা বাংলাদেশী হাসিনার অনুসারী খুনিদেরকে সংগঠিত করে হিন্দু সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়িতে, ব্যবসা-বাণিজ্যে, অরাজকতা, খুনাখুনি, গুপ্তহত্যা, রাহাজানি, এমনকি দেশকে রাজাকারমুক্ত করার অজুহাতে সশস্ত্র হামলা তথা যুদ্ধ শুরু করাতে পারে।
ভারত কখনোই বাংলাদেশে তার কর্তৃত্ব তথা দখলদারিত্ব হারানোর শোক মেনে নিবে না। কারণ রাজনৈতিক মতভেদ নির্বিশেষে সব হিন্দুদের আমৃত্যু স্বপ্ন বাংলাদেশকে ভারতভুক্ত করা, যা হবে অখণ্ড ভারত তথা রামরাজ্য প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক পদক্ষেপ। আর এটা সম্ভব না হলে ভারতের বর্তমান ভূখণ্ডই টুকরা টুকরা হয়ে যাবে। এটা কেবল আরএসএস-বিজেপি তথা মোদির দুশ্চিন্তা নয়, কংগ্রেসী নেতৃত্ব থেকে শুরু করে তৃণমূলী মমতারও। আমরা ভারতের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করলেও ভারত আমাদেরকে কখনই আমাদের সাথে সৎ ও বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করবে না। সুতরাং আমাদেরকে অবিরাম সজাগ থাকতে হবে। আর যা-ই হোক ভারতকে বিশ্বাস করা যাবে না। তাই আমাদের গৌরবময় ছাত্র-যুব-জনতা এবং বীর সেনাবাহিনীকে খুব ভেবেচিন্তে অনাগত প্রজন্মের পর প্রজন্মকে সর্বক্ষেত্রে সুশিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে।