মতামত/কলাম প্রকাশনার সময়: রবিবার ৪, অগাস্ট ২০২৪

এটা কোন গণতন্ত্র, কোথায় আমাদের সংবিধান!

Share on:

স্পষ্ট করেই বলতে চাই, আইনকানুন ও সংবিধান নিয়ে কথা বলার মতো যোগ্যতা আমার নেই। এ বিষয়ে প্রবীণ আইনজ্ঞদের জ্ঞানগত অবস্থান শিখরস্পর্শী। এমনকি নবীন আইনবিদদের কেশাগ্র স্পর্শ করাও আমার জন্য দুঃসাধ্য ও দুঃসাহসের ব্যাপার।


তার পরও বিনয়ের সাথে বলি, দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও আইনের শাসন কায়েমের ক্ষেত্রে বহু ব্যত্যয় প্রতিনিয়ত ঘটছে। জনমনে হাজারো প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। সেটি দেশের ভেতরই নয়, সীমান্ত পেরিয়ে বিশ্বময় ছড়িয়ে গেছে।

দেশের সংবিধানে আইন শাসন, শৃঙ্খলা বিধানের পথ-পদ্ধতি স্পষ্টভাবে সন্নিবেশিত রয়েছে। এখন আইনকানুন ও সংবিধানের প্রতি যে উপেক্ষা সেটিই মানুষকে হাবুডুবু খাওয়াচ্ছে। পরিস্থিতি অনেকটা সাঁতার না জানা মানুষের মতো, যারা পানিতে পড়ে খড়কুটো ধরেই বাঁচতে চায়। সমাজের একজন মানুষ হিসেবে আমারও সেই অবস্থা। আর তাই আমার জন্য কঠিন হলেও খুঁজে দেখার চেষ্টা করছি সংবিধান কোথায়, কিভাবে মানুষের অধিকার নিশ্চিত করেছে এবং কিভাবে তার ব্যত্যয় ঘটানো হচ্ছে।

বাংলাদেশ তার অভ্যুদয়ের পরপরই ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর একটি সংবিধান লাভ করেছিল। এটি ছিল গর্বের ও আনন্দের। স্বীকার না করার কিছু নেই যে, সেই সংবিধান সর্বোত্তম না হলেও সেটি নিয়ে বাংলাদেশ অনেকটা পথ এগোতে পারত। বিশেষ করে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের দিক নিয়ে। একটি মজবুত ভিত্তি রচনার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল। সেটি হতে পারত একটি গুড বিগিনিং।

দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটিই ঐতিহাসিক সত্য যে, সেই যাত্রা শুরুর মাত্র তিন বছরের মধ্যেই সংবিধান নিয়ে বড় একটি পদস্খলন ঘটেছিল। ফলে সেই গুড বিগিনিং যেন মরুপথে হারিয়ে যায়। পূর্বসূরিদের সেই পদস্খলনের দায় আজ নয়, বহুকাল পর্যন্ত আজকের উত্তরসূরিদের বহন করে যেতে হবে। কিন্তু আফসোসের ব্যাপার, এসব উত্তরসূরি সেই স্খলন মেরামত না করে ব্যত্যকে নিয়ে আরো কয়েক কাঠি এগিয়ে গেছে। আইনকানুন বিধিবিধান নিয়ে আরো যথেচ্ছাচার করে, অগ্রজদের অনেক পেছনে ঠেলে দিয়েছে। এতে আপাতত তাদের গোষ্ঠীস্বার্থ সংরক্ষিত হলেও ভবিষ্যতে দেশের জনগণের ক্ষতি হচ্ছে ও হবে অনেক বেশি। সংবিধানকে উপেক্ষা করা এবং নানা ব্যবচ্ছেদের মাধ্যমে সেটিকে এখন যেন ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। যাই হোক, স্রষ্টা কিন্তু ‘ইনটেনশন’ মহৎ হলে অনেক ভুলও ক্ষমা করে দেন। সংবিধান নিয়ে বলাটা যদি ইচ্ছাজনিত। নয় কিছু নয়।

সংবিধান বা শাসনতন্ত্র আসলে কী। সেটি হচ্ছে রাষ্ট্রের নির্ধারিত মৌলিক আইন। সংবিধানের মাধ্যমে রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থার কাঠামো, রূপরেখা, সরকারের গঠনপদ্ধতি, সরকারের বিভিন্ন অঙ্গের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন, সরকারি কার্যক্ষেত্রের পরিধি ও প্রয়োগ পদ্ধতি এবং শাসক ও শাসিতের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণীত হয়ে থাকে। সংবিধান হলো কোনো শাসনব্যবস্থার মূল গ্রন্থ, যাতে স্বায়ত্তশাসিত কোনো রাজনৈতিক সত্তার কর্তব্য নির্ধারণের মৌলিক নিয়ম ও সূত্রগুলো লিপিবদ্ধ থাকে। কোনো দেশের ক্ষেত্রে এই শব্দ সেই দেশের জাতীয় সংবিধান বোঝায়, যা রাজনৈতিক মৌলিক নিয়ম ও সরকারের পরিকাঠামো, পদ্ধতি, ক্ষমতা ও কর্তব্য প্রতিস্থাপন করে। সর্বোপরি মানুষের অধিকার নিশ্চিত করে।

স্মরণ রাখা দরকার যে, রাষ্ট্রপক্ষে সরকার সংবিধান বা প্রধান আইন গ্রন্থকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ও অবজ্ঞা করে। পাশ কাটিয়ে নিজেদের ধ্যান-ধারণার বশবর্তী হয়ে চলে বা চলতে চায়। বহু বিজ্ঞজনের অভিমত, এভাবে চলার অর্থ, রাষ্ট্রব্যবস্থাকে অর্থহীন করে দেয়ার প্রয়াস। তখন সে রাষ্ট্রকে মৃতপ্রায় বলে গণ্য করা হয়ে থাকে।

বাংলাদেশের শাসনতন্ত্রের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, এ সংবিধান জনগণের অভিপ্রায়ের অভিব্যক্তিস্বরূপ। এই বাক্যের নির্যাস থেকে আমরা বুঝি এই সংবিধান প্রকৃতপক্ষে জনগণের সম্পত্তি; অর্থাৎ এটি কোনো ব্যক্তি, দল বা নির্দিষ্ট কোনো গোষ্ঠীর সম্পত্তি নয়। এ বোধটি সংবিধানের অন্যত্র সন্নিবেশিত আছে। এই প্রস্তাবনায় চারটি বিষয় উল্লেখ করে তাকে এই সংবিধানের মূলনীতি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তার অন্যতম হচ্ছে ‘গণতন্ত্র’। তারই প্রতিফলন ঘটেছে ১১ অনুচ্ছেদে। সেখানে বলা আছে, ‘প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র’। অর্থাৎ গণতন্ত্রকে সংবিধানে যথাযথভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আর গণতন্ত্রের প্রকৃত এসেন্স বা সৌরভ নিহিত রয়েছে সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্যে। জনগণ নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রাষ্ট্রে শাসনব্যবস্থায় অংশগ্রহণ করতে পারে। নির্বাচনে নিজস্ব পছন্দের প্রতিফলন ঘটিয়ে; অর্থাৎ পছন্দের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের সুযোগ হয় শাসনব্যবস্থায় সম্পৃক্ত হতে।

শর্ত হচ্ছে, সে নির্বাচন হবে প্রশ্নমুক্ত। সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে নির্বাচন কমিশন গঠনের একটি রূপরেখা দিয়ে দেয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন যাতে সুষ্ঠু ও প্রশ্নমুক্তভাবে চলতে পারে সে জন্য ১১৮(৪) বলা হয়েছে, ‘নির্বাচন কমিশন’ তার দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকিবেন। সংবিধানের প্রস্তাবনাসহ এ পর্যন্ত যা বলা ও উদ্ধৃত করা হয়েছে, তাতে এটিই প্রশ্নহীনভাবে সাব্যস্ত হয় যে, সুষ্ঠু গণতন্ত্রে নির্বাচন নিয়ে কোনো কুয়াশা ধোঁয়াশা থাকতে পারে না। এখন বিবেচনায় নেয়া যেতে পারে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে যে তিন তিনটি নির্বাচন হয়েছে, সেগুলো কতটা অবাধ, সুষ্ঠু প্রশ্নমুক্ত হয়েছে। এই তিন নির্বাচন নিয়ে ঘরে-বাইরের কোনো বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীও বলবে না, সেগুলো অবাধ সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাহলে এ কথা বলতে কি কোনো দ্বিধা থাকতে পারে যে, এসব ক্ষেত্রে সংবিধানকে পুরোপুরি অবজ্ঞা উপেক্ষা করা হয়েছে! এর পূর্ণ দায় থেকে সব রাজনৈতিক নির্বাহী, জনপ্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে অভিযুক্ত করা ভিন্ন কোনো বিকল্প থাকতে পারে না। আর এই তিন শক্তি মিলে সংবিধানের চেতনা ভূলুণ্ঠিত করেছে।

বাংলাদেশের সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে মূল নীতিগুলো সন্নিবেশিত রয়েছে। তার কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে। সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদে গণতন্ত্রের পাশাপাশি মানবাধিকার নিয়ে যে কথা রয়েছে তা হচ্ছে, ‘...মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকবে...।’ সেই সাথে সংবিধানের তৃতীয় ভাগে মৌলিক অধিকারসংক্রান্ত যে ২৩টি অনুচ্ছেদ রয়েছে। সেখানেও বিধিবিধানগুলো মানবাধিকারকে উচ্চকিত করা হয়েছে। তবে দুর্ভাগ্য যে, সে ধারাগুলো কাজীর গরুর মতো কেবল কেতাবে আছে কিন্তু গোয়ালে নেই। সে জন্য বাংলাদেশের মানবাধিকার ইস্যুগুলো এখন এতটাই শোচনীয় যে, দেশ-বিদেশে তা নিয়ে তুমুল নেতিবাচক আলোচনা হচ্ছে। মানবাধিকারের অবনতির জন্য সরকার ও বিভিন্ন বাহিনী নিন্দিত হচ্ছে। মানবাধিকারসংক্রান্ত ২৩টি ধারার কয়েকটি নিয়ে সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করা যেতে পারে। প্রথমত, মৌলিক অধিকারের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ কোনো কিছু করা যাবে না ২৬ নম্বর অনুচ্ছেদে সেটা বলা হয়েছে। কিন্তু মানুষের সাথে কত নির্মম আচরণ করা হয়, এখানে তো ভূরি ভূরি প্রমাণ রয়েছে।

বিশেষ করে কোটা বৈষম্যের আন্দোলনে সেটা দেখা গেছে। ৩৭ অনুচ্ছেদে বলা আছে, সভা-সমাবেশ করা যাবে। কিন্তু সেটি যদি কর্তৃপক্ষের পছন্দের সমাবেশ না হয়, তবে গুলি-বোমা মেরে মুহূর্তে ভণ্ডুল করে দেয়া হয়। সংবাদপত্রের স্বাধীনতার কথা হয়, কিন্তু নিয়ত নানা কালাকানুন করে সংবাদপত্রের স্বাধীন পথে ব্যারিকেড তৈরি করা হচ্ছে। বলা যায়, এক হাতে দান করে, অন্য হাতে ফিরিয়ে নেয়ার মতো ঘটনা।

জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী পরিবেশ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বলেছেন, ‘পৃথিবীতে তীব্র তাপ মাহমারী চলছে’। বাংলাদেশের আবহাওয়া কী ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে সেটা অনুভব করতে কারো আর বাকি নেই। পরিবেশগত বিবেচনায় বিশ্বের যেসব দেশ চরম বিপর্যয়ের মুখে রয়েছে বাংলাদেশ তার অন্যতম। আগামী কয়েক বছরে বাংলাদেশ তার অস্তিত্ব নিয়েই সঙ্কটে পড়তে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের সংবিধানের ১৮ক অনুচ্ছেদে বর্ণনা করা হয়েছে, ‘রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করিবেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্য প্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করিবেন।’ পক্ষান্তরে, বাস্তবতা হচ্ছে প্রতিদিন জৈব-বৈচিত্র্য ধ্বংস করা হচ্ছে। সরকারের আশীর্বাদপুষ্টরা পাহাড় কাটছে। শুধু জলাভূমি নয়, নদী দখল ও ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করছে। সরকারি বন-বাদাড়ের গাছ কেটে সাফ করছে, সেখানে স্থাপনা নির্মাণ করছে মদদপুষ্টরা। এখন কেউই আর এসব অপকর্ম দেখার নেই। এসব কি সংবিধানের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনের শামিল নয় কি?

সংবিধানের ১৫ক অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা করা হবে। এই পাঁচ মৌলিক চাহিদাগুলো এ পর্যন্ত (৫২ বছরে) পূরণ হয়েছে বলা যাবে না, এ জন্য কোনো বাস্তব পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতার কোনো নজির খুঁজে পাওয়া যাবে না; বরং উদাসীনতা পরিলক্ষিত। এভাবে সংবিধান সর্বত্রই পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়।

সংবিধানের ১৯ অনুচ্ছেদে সন্নিবেশিত রয়েছে, ‘সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করিতে রাষ্ট্র সচেষ্ট হইবেন।’ এখন কথা হচ্ছে, সংবিধানের এমন নির্দেশনা কি প্রতিপালিত হচ্ছে? রাষ্ট্র হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে শুধু মহানগরকেন্দ্রিক কিছু মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত করা হয়েছে। খোদ রাজধানী ঢাকার কত শতাংশ মানুষ সেই প্রজেক্টগুলো থেকে উপকৃত হচ্ছে, হবে! বাংলাদেশের বেশির ভাগ মান্ষু গ্রামগঞ্জে বসবাস করে। তারা কি ঢাকার মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেস থেকে কোনো সুবিধা নিতে পারছে। এসব প্রজেক্ট এ সময়ে অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা। অথচ গ্রামগঞ্জে শত ব্রিজ কালভার্ট ব্যবহার অযোগ্য হয়ে তাতে হাজার হাজার মানুষের চরম দুর্ভোগ হচ্ছে। শুধু সংযোগ সড়ক নির্মিত হয়নি বলে। মেগা প্রজেক্টগুলোতে যে বিপুল অর্থ ব্যয় হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সে অর্থ যদি সুচিন্তিতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যেসব প্রকল্প এ সময়ে অগ্রাধিকার পাওয়ার উপযুক্ত সেখানে ব্যয় করলেই ‘সুযোগের সমতা নিশ্চিত’ কিছুটা হলেও সম্ভব হতো। এমন বহু কিছু নিয়ে প্রশ্ন হতে পারে। যেভাবে মানুষের সুযোগের সমতা সৃষ্টি নিয়ে অবহেলা চলছে। এর জবাব কে দেবে। এখানে কি সংবিধানের নির্দেশটা বজায় থাকছে।

একই সাথে এখানে স্মরণ করা যেতে পারে ১৬ নম্বর অনুচ্ছেদের বিষয়টি। যেখানে বলা হয়েছে, ‘নগর ও গ্রামাঞ্চলের জীবনযাত্রার মানের বৈষম্য ক্রমাগতভাবে দূর করিবার উদ্দেশ্যে...’ নানান ছোটখাটো প্রকল্প গ্রহণ বাস্তবায়নের জন্য ‘রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।’ শিক্ষা শিল্প স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ এসব ক্ষেত্রে। এ পর্যন্ত যে বৈষম্য তৈরি হয়েছে তার প্রতিবিধানের ক্ষেত্রে গত অর্ধশতাধিক সময়ে রাষ্ট্রের পক্ষে সরকার কতটুকু সক্ষম বলে প্রমাণ করা যাবে। অন্য দিকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়, পাচার অপচয় করা হচ্ছে অকাতরে। কর্তৃপক্ষের জ্ঞাতসারেই। যদি ‘বেড়ায়ই ক্ষেত খায়’ তবে ফসল গোলায় উঠবে কিভাবে।

সংবিধানের ৭ নম্বর অনুচ্ছেদের সার নির্যাস হচ্ছে ‘প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ’। তিনি শহরে থাকুন বা মহানগরীতে থাকুন, তিনি হতদরিদ্র হন বা আমির হন, তাতে কিছু আসে যায় না। এই চেতনা কে ধারণ করবে? প্রকৃত অর্থে সেই মালিকের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন এবং যাবতীয় প্রয়োজন পূরণ পদক্ষেপ নিতে বহু বিলম্ব হয়ে গেছে। তাদের অভিপ্রায় ও মতানুসারে এখন রাষ্ট্র পরিচালিত কেন হচ্ছে না, এটা একটা বড় প্রশ্ন।

সংবিধানের ২১(১) অনুচ্ছেদে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে, ‘সংবিধান ও আইন মান্য করা, শৃঙ্খলা রক্ষা করা নাগরিকের দায়িত্ব। এই অনুচ্ছেদে শেষ যে কথা বলা হয়েছে, এই আইন মান্য করা ‘প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য।’ একজন ভিখারি যেমন এ দেশের নাগরিক ঠিক তেমন একজন মন্ত্রী-বাহাদুরও এমন একই নাগরিক। সেখানে কোনো ভেদ নেই। তাহলে রাজনৈতিক নির্বাহীগণ কি সেই ‘দায়িত্ব কর্তব্য’ পালনে আন্তরিক। যাই হোক, ক্ষমতার কুরসিতে বসার পূর্বে ‘টপ টু বটম’ রাজনৈতিক নির্বাহীদের একটা শপথনামা পাঠ করতে হয়। তার একটি চরণ হচ্ছে, ‘আমি সংবিধানের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধান করিব।’ এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন ওঠা খুবই স্বাভাবিক, রাজনৈতিক নির্বাহীরা কি সংবিধানের যথাযথভাবে সুরক্ষা করেছেন। তা হলে সংবিধানের হাল কী, সংবিধান এখন কোথায়।

শেষ কথা হচ্ছে, আজ সংবিধানের দুর্যোগের কারণে সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এতে রাষ্ট্রের অবস্থা কেথায় গিয়ে দাঁড়াবে।

দৈনিক নয়াদিগন্ত