ইসলামে ‘আমানত রক্ষার’ গুরুত্ব
Share on:
মহান আল্লাহ মানব জাতিকে সঠিক পথের দিশা দিতে যুগে যুগে অসংখ্য নবী ও রাসুল দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। তাদের মধ্যে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসুল হলেন হজরত মুহাম্মদ (সা.)। তিনি ছিলেন সব গুণের আধার। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব।
ছোটবেলায় তাঁর সততা, ন্যায়পরায়ণতা, আমানতদারিতা ও বিশ্বস্ততার জন্য তৎকালে সবাই তাঁকে আল-আমিন বলে ডাকত। আল-আমিন অর্থ অতি বিশ্বস্ত। আমানত অর্থ বিশ্বস্ততা, নিরাপত্তা, সততা, আস্থা ইত্যাদি। যার মধ্যে এ গুণ বিদ্যমান, সে অবশ্যই মহান ব্যক্তিতে রূপান্তরিত হবে।
আমানতের প্রায়োগিক ক্ষেত্র অনেক ব্যাপক। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক তথা মানবজীবনের প্রতিটি স্তরে আমানত রক্ষার ভিন্ন ভিন্ন অনুষঙ্গ রয়েছে। আল্লাহতায়ালা সুরা নিসার ৫৮ আয়াতে এরশাদ করেন, ‘অবশ্যই আল্লাহতায়ালা আমানত তাঁর হকদারকে প্রত্যর্পণ করতে তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন।’ আল্লাহতায়ালা সুরা আনফালের ২৭ আয়াতে আরও এরশাদ করেন, ‘আর তোমরা জেনেশুনে নিজেদের আমানতের খেয়ানত করো না।’
অন্যের গচ্ছিত আমানত রক্ষায় রাসুলে কারিম (সা.) ছিলেন সদা সচেষ্ট ও যত্নবান। মক্কাবাসীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মহান আল্লাহর নির্দেশে যে রাতে তিনি মদিনায় হিজরত করেছিলেন, সে রাতে নিজের কাছে রাখা অনেকের সংরক্ষিত আমানত প্রিয় সাহাবা ও চাচাতো ভাই হজরত আলীর (রা.) কাছে বিছানায় রেখে গিয়েছিলেন, যাতে তিনি প্রাপ্য ব্যক্তিদের কাছে তাদের আমানত যথাযথভাবে পৌঁছে দেন। এই মর্মে হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, হিজরতের রাতে মহানবী (সা.) হজরত আলীকে (রা.) মক্কায় অবস্থান করে নবীজির (সা.) কাছে রাখা আমানত প্রাপ্য ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দেন। (বায়হাকি)
বিদায় হজের ভাষণে মহানবী (সা.) যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কথাটি ছিল– ‘হে আমার সাহাবারা! আল্লাহতায়ালা ওহি পৌঁছানোর যে আমানত আমাকে দিয়েছেন, আমি কি তা তোমাদের কাছে যথাযথভাবে পৌঁছাতে পেরেছি?’ উপস্থিত সবাই বললেন– আপনি তা পরিপূর্ণরূপে পৌঁছিয়েছেন। এ কথা তিনি সাহাবীদের বারবার বলছিলেন। এ প্রসঙ্গে সহিহ বুখারিতে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। বিদায় হজের ভাষণে মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা সতর্ক থাকো। আজকের এই দিনের মতো, এ শহরের মতো এবং এ মাসের মতো আল্লাহতায়ালা তোমাদের রক্ত ও তোমাদের সম্পদ তোমাদের ওপর হারাম করেছেন। বল তো, আমি কি আল্লাহর পয়গাম পৌঁছে দিয়েছি?’ সমবেত সবাই বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, হে আল্লাহ! আপনি সাক্ষী থাকুন। এ কথা তিনবার বললেন। (বুখারি)
নবীজি নিজেও যেমন আমানত আদায়ের ব্যাপারে যত্নবান ছিলেন, তেমনি রাষ্ট্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্তদের আমানত আদায়েও যথেষ্ট গুরুত্ব দিতেন।
বিখ্যাত সাহাবি হজরত আদি ইবনে উমাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন– হে লোকেরা! তোমাদের মধ্যকার কোনো ব্যক্তিকে আমাদের সরকারি কোনো পদে নিয়োগ করার পর সে যদি আমাদের তহবিল থেকে একটি সুই কিংবা তার বেশি আত্মসাৎ করে তবে সে খেয়ানতকারী। কিয়ামতের দিন সে তার এই খেয়ানতের বোঝা নিয়ে উপস্থিত হবে। (আবু দাউদ)
সুতরাং প্রত্যেককে যার যার অবস্থান থেকে নিজেদের আমানতের ব্যাপারে যত্নবান হতে হবে। বিশেষ করে বর্তমান এ দুঃসময়ে জনগণের আমানত পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা উচিত। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে যথাযথ আমানত রক্ষার তৌফিক দান করুন।