ইসলামে আত্মীয়তা রক্ষার তাগিদ
Share on:
প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে আল্লাহতায়ালা বিশ্বজাহানের রহমত করে পাঠিয়েছেন। জীবনের সর্বক্ষেত্রে রাসুল (সা.) মুমিনের আদর্শ। রাসুলের দেখানো পথে চললেই দুনিয়ার শান্তি ও আখেরাতের মুক্তি। রবিউল আউয়ালে বিশেষভাবে প্রিয় নবীকে স্মরণ করি।
রাসুল (সা.) আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার তাগিদ দিয়েছেন। পরিবার ও আত্মীয়তার বন্ধন সুদৃঢ়করণের উপকারিতা অনেক। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহতায়ালা আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষাকারীদের বিবেকবান বলে আখ্যা দিয়েছেন।
পবিত্র কোরআনের সুরা রা’দ-এর ২১ আয়াতে এরশাদ হয়েছে, ‘তারাই বিবেকবান, আল্লাহ যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ন রাখতে আদেশ দিয়েছেন, যারা তা অক্ষুণ্ন রাখে এবং তাদের প্রতিপালককে ভয় করে, আর ভয় করে কঠোর হিসাবকে।’
এ আয়াতে বলা হয়েছে, বিবেকবান ইমানদাররা আত্মীয়তার সম্পর্কের ব্যাপারে অত্যন্ত যত্নবান। পাশাপাশি তারা সার্বিক বিষয়ে আল্লাহকে ভয় করে। এই ভয় উৎসারিত হয় সম্মান, জ্ঞান, ভক্তি ও ভালোবাসা থেকে। তাদের কাছে প্রতিটি কাজে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই মুখ্য।
বিবেকবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ অনুকূল-প্রতিকূল সব পরিস্থিতিতে পরকালের জবাবদিহির ভয় করে। আল্লাহর ভয় এবং পরকালে জবাবদিহির ভয় মানুষকে বিশ্বাস ও বিবেক নির্দেশিত পথে পরিচালিত করে। এর বিনিময়ে মহান আল্লাহতায়ালা তাদের দুনিয়া ও আখিরাতে যেমন সম্মানী করেন, তেমনি তাদের হায়াত ও রিজিকেও বরকত দান করেন।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘আমি মহানবী (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি তার রিজিক প্রশস্ত ও আয়ু বৃদ্ধি করতে চায়, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে।’ (বুখারি)
যারা তাদের আত্মীয়দের খোঁজখবর রাখে না, তাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করে না, তাদের হক আদায় করে না; তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছেন মহানবী (সা.)। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলে কারিম (সা.) বলেছেন, আত্মীয়তার হক রহমানের মূল। যে তা সংরক্ষণ করবে, আমি তাকে সংরক্ষণ করব। আর যে তা ছিন্ন করবে, আমি তাকে আমার হতে ছিন্ন করব। (বুখারি)
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘জ্ঞাতিবন্ধন আরশে ঝুলন্ত আছে এবং সে বলছে, যে আমাকে অবিচ্ছিন্ন রাখবে, আল্লাহ তার সম্পর্ক তাঁর সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন রাখবেন। আর যে আমাকে বিচ্ছিন্ন করবে, আল্লাহ তার সম্পর্ক তাঁর সঙ্গে বিচ্ছিন্ন করবেন।’ (রিয়াদুস সালেহিন)
কারণ আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা জাহান্নামে যাওয়ার অন্যতম কারণ। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ সুরা মুহাম্মদের ২২-২৩ আয়াতে এরশাদ করেন, ‘ক্ষমতা লাভ করলে সম্ভবত তোমরা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। এদের প্রতি মহান আল্লাহ অভিসম্পাত করেন, অতঃপর তাদের বধির ও দৃষ্টিশক্তিহীন করেন।’
পারিবারিক সম্পর্ক অটুট থাকলে মানুষ ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা পায়। পার্থিব লাভ-ক্ষতির বিবেচনা করে পরিবার-পরিজনকে এড়িয়ে চলা কোনোভাবেই কাম্য নয়। কেননা, রাসুলে কারিম (সা.) সম্পর্ক রক্ষাকারীর জন্য পার্থিব কল্যাণের সুসংবাদ দান করেছেন। তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি চায় তার জীবিকা প্রশস্ত হোক এবং আয়ু বৃদ্ধি পাক, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে।’ (সহিহ বুখারি)
একটি সমীক্ষায় আছে, যাদের পারিবারিক বন্ধন বেশ শক্তিশালী, তারা তুলনামূলক রোগে কম আক্রান্ত হচ্ছেন। অন্যদিকে পরিবারের সঙ্গে যাদের সম্পর্ক খারাপ, তারা বেশি মাত্রায় অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বয়স্ক লোকদের মধ্যে যারা রোগাক্রান্ত, তাদের পারিবারিক ইতিহাস খুঁজে দেখা গেছে, প্রত্যেকেই পরিবারের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন করছেন না।
তাই আমাদের উচিত পারিবারিক বন্ধন ও আত্মীয়তার সম্পর্কগুলোকে আরও শক্তিশালী করা। অবসর সময়ে পরিবারের লোকদের সঙ্গে সময় কাটানো; তাদের বোঝার চেষ্টা করা; তাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করা। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুন।