ইতিহাসের পটভূমি রচিত হয়েছে, এবার বিশ্ব বদলে দাও
Share on:
যুগে যুগে মানবতা, মানবাধিকার, ন্যায্য দাবি আদায়সহ দুঃশাসন, নিপীড়ন, দুরাচারিতার বিরুদ্ধে বিপ্লব ও সংগ্রামে ছাত্রশক্তির অনবদ্য অবদানের কথা লেখা রয়েছে বিশ্ব ইতিহাসের পাতায়। এর কোনোটি দিন বদলের সূচনা করেছে, আবার কোনোটি এনেছে সাম্য ও সমতা।
কোথাও ছাত্রশক্তি যেমন সার্বভৌম রাষ্ট্রের বুকে মানুষের মুক্তি দিয়েছে, কোথাও আবার পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে বিশ্বের মানচিত্রে লিখেছে স্বাধীন রাষ্ট্রের নাম। এক কথায় বলতে গেলে, পৃথিবীর যেখানে যখনই ছাত্রশক্তির বৈপ্লবিক অভ্যুত্থান ঘটেছে, সেখানে হয় ইতিহাস বদলে গেছে; নয় তো নতুন ইতিহাসের পটভূমি রচিত হয়েছে।
চীনের বিতর্কিত সরকারি নীতিবিরোধী আন্দোলন থেকে ফরাসি বিপ্লব ও বোহেমিয়ান আন্দোলন। নাৎসিবিরোধী হোয়াইট রোজ বিপ্লব থেকে গ্রিনসবোরো ও অন্যান্য বর্ণবৈষম্যবিরোধী আন্দোলন যেমন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও সাম্যবাদী বিশ্ব গড়ার বার্তা দিয়েছে; তেমনি জার্মানির ভেলভেট রেভ্যুলিউশন ও বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন, তৎপরবর্তী স্বাধীনতা সংগ্রাম দেখিয়েছে ছাত্রশক্তির নেতৃত্বে দুঃশাসনের পতন ও গণতন্ত্রকামী জনশক্তির অদম্য সংগ্রামে অনবদ্য বিজয়ের চিত্র।
দেশে আরও একবার ছাত্রশক্তির জাগরণে সংঘটিত রক্তাক্ত বিপ্লবের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারী ক্ষমতাসুরের পতন ও বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জনের বিরল ঘটনা প্রত্যক্ষ করল বিশ্ববাসী। যা জানান দিল, সময়ের সঙ্গে পৃথিবীর অনেক কিছু ক্ষয়ে গেলেও ছাত্রশক্তির প্রজ্বলিত অনির্বাণ শিখা অবিকল রয়েছে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম তা বহন করে এগিয়ে যাচ্ছে আগামীর পথে।
বিভিন্ন সময় ছাত্রশক্তির দ্বারা সংঘটিত এসব বিপ্লব বদলে দিয়েছে ইতিহাসের বাঁক। এই প্রজন্মের এ দুঃসাহসী অভিসারী দল যেভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের আজ ও আগামীকে বদলে দিয়েছে, তা বিস্ময়কর। তাহলে গোটা বিশ্বের ছাত্রশক্তি যদি বৈশ্বিক ছাত্রমৈত্রীর একক মোর্চায় ঐক্যবদ্ধ হয়, তবে কি বিশ্ব বদলে দেওয়া খুব অসম্ভব? ওরা কি দাঁড়াবে এমন একটি অভিন্ন মঞ্চে? বদলে দেবে কি ছিন্নভিন্ন নরদেহের ভাগাড়, সহস্র নিরীহের লাশের স্তূপে চাপা পড়া রক্তাক্ত প্রান্তর আর বোমার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত শিশুর আর্তচিৎকারে ভারী হয়ে আসা এই পৃথিবীকে?
বাংলাদেশের আবু সাঈদ আর মুগ্ধরা নিরাশার পাথরে চাপা পড়া পাঁজরে আশার সঞ্চার করে। এ দেশের শিক্ষাঙ্গন থেকে বিচ্ছুরিত বিপ্লবী রশ্মিগুলো একীভূত হয়ে যখন ছাত্রশক্তির অনির্বাণ শিখায় পরিণত হয় তখনই নিমেষে ভস্ম করে দেয় ক্ষমতাসুরের নিরেট দুর্গ। তখন গোটা বিশ্বের ছাত্রমৈত্রীর জাগরণে এই পৃথিবী বদলে দেওয়ার স্বপ্ন দেখে মন।
মন বলে, পৃথিবীর প্রতিটি ক্যাম্পাস থেকে সারজিস, নাহিদ, আসিফ, হাসনাতরা যদি একযোগে গর্জে ওঠে তবে গাজার উপত্যকায় ফুল ফুটবে। ফিলিস্তিনের কোনো গলিতে থাকবে না কোনো শিশুর বিচ্ছিন্ন মরদেহ। জঙ্গি বিমানগুলো ভয়ে ডানা গুটিয়ে নেবে। ইউক্রেন কিংবা রাশিয়ার জনপদে হানা দেবে না শত্রু সেনারা। কাশ্মীর কিংবা করাচির কোনো এলাকায় আত্মঘাতী বোমার আঘাতে লাশের ঢের সাজবে না। জাতিগত ভাঙনে বিলীন হবে না আর কোনো বাবরি মসজিদ; আগুন লাগবে না দুর্গার আঁচলে। রক্তাক্ত হবে না গির্জার যিশু। গুলিবিদ্ধ হবে না প্যাগোডায় ধ্যানমগ্ন বুদ্ধ।
বাংলার ইতিহাস বদলে দেওয়া ছাত্রসেনারা যেমন প্রবল প্রাণশক্তি সঞ্চারিত করে জাগ্রত করেছিল গোটা জাতিকে। নৈরাজ্য আর দুঃশাসনের বেসাতে বন্দি বাংলাদেশকে মুক্ত করেছে শোষকের আয়নাঘর থেকে। ওদের মতো এই পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্ত থেকে জেগে উঠুক নবতারুণ্যের সেনানীরা। সবাই মিলে জিয়ন সুধায় জাগিয়ে তুলুক বিশ্বমানবতাকে। প্রজন্মের কাণ্ডারিদের হাতে প্রজ্বলিত হোক বিশ্বশান্তির অঞ্জলি। তোমরা এসো, এখনই সময় এই জরাজীর্ণ বিশ্ব সংস্কারের। সমকালে যে পথে বাংলার রণবীরেরা আগুয়ান মাতৃভূমির লাগি, তার পিছু পিছু এসো বিশ্বমাতার উদ্ধারে।