ইতিবাচক রাজনীতি চর্চার সময় এখন
Share on:
গণমানুষের কল্যাণকামিতা থেকে রাজনীতির পথচলা শুরু। আর এই কল্যাণকামিতা রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বা রাজনৈতিক দলের ধারণার সৃষ্টি। আর্ত-মানবতার কল্যাণ গণমানুষের সকল সমস্যা সমাধানের জন্য সম্মিলিতভাবে প্রচেষ্টা চালানোর ঐক্যবদ্ধ প্লাটফরমই হচ্ছে রাজনৈতিক দল।
এক্ষেত্রে মতভিন্নতা ও ভিন্নতর প্রক্রিয়ার কারণেই বহুদলীয় রাজনীতির প্রবর্তন হয়েছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর চিন্তা-চেতনা ও আদর্শগত পার্থক্য থাকলেও লক্ষ্য এক এবং অভিন্ন। সকল রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো আর্ত-মানবতার কল্যাণ এবং গণমানুষের সকল সমস্যা সমাধানের জন্য নিজস্ব পন্থা ও আদর্শ অনুযায়ী প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালানো। সভ্যতার সূচনা লগ্ন থেকে রাজনীতিতে এমন আদর্শই অনুসৃত হয়ে আসছে এবং এখন পর্যন্ত আমরা রাজনীতিকদের মুখে এমন আস্তবাক্যই শুনে আসছি। কিন্তু সভ্যতার ক্রম বিবর্তনের সাথে চলমান রাজনীতি বোধহয় কিছুটা হলেও গতিপথ হারিয়েছে। বিশেষ করে একশ্রেণির স্বার্থান্ধ রাজনীতিকের কারণেই রাজনীতি হারিয়েছে গণমুখী চরিত্র। ফলে রাজনীতি কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। মধ্যস্বত্ত্ব ভোগ করছেন একশ্রেণীর সুবিধাবাদী রাজনীতিক এবং তাদের পাত্রমিত্ররা।
নিকট অতীতেই আমরা লক্ষ্য করেছি বনেদী ঘরের সন্তানরা রাজনীতিতে এসে রীতিমত ফতুর হয়ে গেছেন। তাদের শরীরে একাধিক জামা লক্ষ্যকরা যায়নি। পুরাতন ও চটাধরা জামা-কাপড় নিয়ে চলেফেরা করতেন। তাদের ব্যবহৃত আসবাবপত্রেও লক্ষ্য করা গেছে মলিনতার ছাপ। দারিদ্রতা ও অস্বচ্ছলতা তাদের নিত্যসঙ্গী হলেও মানুষের কল্যাণকামীরা তাদের জীবনের মহান ব্রত ছিল। কিন্তু হালে সে অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। এখন একশ্রেণীর নিম্নবিত্তের মানুষ রাজনীতিতে এসে বিত্তশালী হচ্ছেন। আস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে অর্থ সম্পদ। অবশ্য এসব কথা আমাদের দেশের সকল রাজনীতিকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় বরং একশ্রেণীর বিপথগামী ও আত্মকেন্দ্রিক রাজনীতিক কথাই বলা হচ্ছে। আমরা রাজনীতিকে নিজেদের ব্যবসায়িক পণ্যে পরিণত করেছেন। জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের কথা বলে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করে নিচ্ছেন প্রতিনিয়ত। কিন্তু জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে তাদের কোন ভূমিকা লক্ষ্য করা যায় না।
মূলত আমাদের দেশের চলমান রাজনীতিতে ক্ষমতা ও আত্মকেন্দ্রিক রাজনৈতিক তৎপরতা অতীতের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে। রাজনীতিতে অনুপ্রবেশ ঘটেছে একশ্রেণির ফড়িয়া ও টাউট-বাটপারদের। তাদের অপতৎপরতার কারণেই প্রকৃত ও সুস্থ্যধারার রাজনীতিকরা রাজনীতিকে রীতিমত কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন। রাজনীতিতে চলছে অশুভ শক্তির দৌরাত্ম। ফলে আমাদের দেশের প্রচলিত হারিয়েছে গণমুখী চরিত্র। সঙ্গত কারণেই আমাদের রাজনীতির কক্ষচ্যুতি ঘটেছে। রাজনীতি হয়ে উঠেছে শ্রেণি বিশেষের আত্মস্বার্থ, গোষ্ঠীস্বার্থ, দলীয়স্বার্থ চরিতার্থ করার মোক্ষম হাতিয়ার। রাজনীতিকে পরিণত করা হয়েছে ব্যবসায়িক পণ্যে। ফলে দেশের সাধারণ মানুষ রাজনীতির সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সুস্থ্যধারার রাজনীতিকরা হয়ে পড়েছেন রীতিমত কোনঠাসা। তাই প্রচলিত রাজনীতি এখন আর সাধারণ মানুষের জন্য কল্যাণ ও মুক্তির অনুসঙ্গ নয় বরং শ্রেণী বিশেষের উচ্চভিলাষ আর আত্মপুজার অন্যতম মাধ্যম। যা দেশ ও জাতির জন্য মোটেই কল্যাণকর নয়।
যে রাজনীতি মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে না, সে রাজনীতিকে রাজনীতি বলার সুযোগ আছে বলে মনে হয় না বরং অপরাজনীতি বলায় অধিক যুক্তিযুক্ত। আর এই অপরাজনীতির কালো থাবায় পুরো দেশ ও জাতিকে অক্টোপাসের মত চেপে ধরেছে। একশ্রেণীর উচ্চাভিলাষী রাজনীতিকদের কারণে প্রচলিত রাজনীতি হারিয়েছে গতিপথ। রাজনীতিতে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালনের পরিবর্তে শুরু হয়েছে ভিন্নমুখী তৎপরতা। ফলে প্রচলিত রাজনীতিতে অশুভ শক্তির অপতৎপতা বেড়েছে। সুন্দর ও সুকুমার বৃত্তির পরিবর্তে স্থান করে নিয়েছে কদর্যতা। ফলে প্রচলিত রাজনীতি হয়ে উঠেছে রীতিমত সংঘাতমুখর। রাজনীতিকে অতীতে ভিন্নমতের প্রতি যে সহিষ্ণুতা পরিলক্ষিত হতো তা আর সচরাচর দেখা যায় না। ফলে রাজনীতি হারিয়েছে কল্যাণমুখী চরিত্র। অনেক ক্ষেত্রেই রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে অরাজনৈতিক শক্তির হাতে। রাজনীতির বাইরের পাত্রমিত্ররা রাজনীতির রীতিমত বিড়াল তপসীর ভূমিকা অবতীর্ণ হয়েছেন। ফলে বিনষ্ট হতে চলেছে রাজনীতির প্রাণশক্তি। মূলত রাজনীতি এখন আর প্রকৃত রাজনীতিকদের নিয়ন্ত্রণে নেই বরং রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে সুযোগ সন্ধানী অরাজনীতিকরা। ফলে দেশও জাতিস্বত্ত্বা এখন অস্তিত্ব সংকটের মুখোমুখি। যা অনাকাঙ্খিত ও অনভিপ্রেত।
দেশ ও জাতির এই ক্রান্তিকালে দেশের জনপ্রতিনিধিত্বশীল ও দেশপ্রেমী রাজনীতিকদের নিজেদের অবস্থানের পূনর্মূল্যায়ন ও আগামী দিনের করণীয় নির্ধারণের সময় এসেছে। আত্মসমালোচনাও এখন তাদের জন্য অপরিহার্য অনুসঙ্গ। নেতিবাচক রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে হবে প্রকৃত রাজনীতিকদের। রাজনীতিকে হানাহানীর পরিবর্তে নিশ্চিত করতে হবে সহাবস্থানের পরিবেশ। ফিরিয়ে আনতে হবে রাজনীতির গণমুখী চরিত্র। তাহলে প্রচলিত রাজনীতি মানুষের জন্য কল্যাণকর হবে। এ বিষয়ে জনগণ সংশ্লিষ্টদের কাছে দায়িত্বশীল আচরণ আশা করে।