আইনসভার দ্বিকক্ষায়ন এবং এমপিদের ভোগবিলাস বীভৎসতা!
Share on:
চার দশক ধরে উন্নয়ন চিন্তায় ব্যাপক পরিবর্তন সাধন করেছে প্রাতিষ্ঠানিক অর্থনীতি। এক কথায় একে বলে ‘ইনস্টিটিউশনস’। শুনলে মনে হবে এ শুধু প্রতিষ্ঠানের কথা, তা নয়।
আইন-কানুন, রীতি-সংস্কৃতি, বিচারিক গতি, দুর্নীতির মাত্রা ও গভীরতা, তথ্যের প্রবাহ, কথা বলার স্বাধীনতা, গণতন্ত্রের মাত্রা, সামাজিক প্রত্যাশা এ সবকিছুই প্রাতিষ্ঠানিক অর্থনীতির অঙ্গ। ১৯৯০-এর দশক থেকে অর্থনীতির প্রতিটি নোবেল পুরস্কার কোনো না কোনোভাবে প্রাতিষ্ঠানিক চিন্তার সঙ্গে জড়িত।
পুঁজিবাদের সমালোচক আমেরিকার অর্থনীতিবিদ থরস্টাইন ভেবলেনকে এ ধারার প্রথম চিন্তক হিসেবে ভাবা হয়। তার জন্ম হয়েছিল ১৮৫৭ সালে যখন প্রচলিত চিন্তার বাইরে অর্থনীতির কথা বললে লোকে তাকে নমঃশূদ্র মনে করত। প্রচলিত চিন্তা বলত আয় বাড়লে ভোগ বাড়ে। ভেবলেন বললেন, ভোগ দেখাদেখি থেকেও বাড়ে যা প্রচলিত অর্থনীতির মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা এনে এক ভিন্ন সুর যুক্ত করল। কিন্তু আজ বাংলাদেশের এমপিদের ভোগবিলাসের বীভৎসতা দেখলে মনে হয় ভেবলেন সত্য কথা বলেছিলেন।
‘হোয়াই নেশনস ফেইল’ গ্রন্থের মাধ্যমে ব্যাপক পরিচিতি পাওয়া ডেরেন এসেমৌলো ও জেমস রবিনসন প্রাতিষ্ঠানিক অর্থনীতিবিদ। কিন্তু তাদের আগে অ্যাডাম স্মিথ থেকে শুরু করে অনেকেই অর্থনীতিতে প্রতিষ্ঠান, আইন ও বিচারের গুরুত্ব উল্লেখ করেছেন। স্মিথের নৈতিকতার শিক্ষা মানলে বাজার অর্থনীতিতেও দুর্নীতির সুযোগ থাকে না। কার্ল মার্ক্স শোষণহীন সমাজের স্বপ্নে শ্রমজীবী প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব দিয়ে গেছেন। জন মেনার্ড কেইনস বেকারত্ব ও মন্দা নিরসনে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ভূমিকায় গুরুত্ব দিয়েছেন। এ তালিকা দীর্ঘ না করে একটি বিষয় নিশ্চিত করে বলা যায় যে প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে প্রতিষ্ঠানের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। উত্তর কোরিয়ার মানুষের চেয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষ ১০ গুণ বেশি পরিশ্রম করে না। কিন্তু মাথাপিছু আয় ও জীবনযাত্রার মানের বিচারে দক্ষিণ কোরিয়া উত্তর কোরিয়ার চেয়ে কমপক্ষে ১০ গুণ বেশি উন্নত, যার মূল কারণ দক্ষিণ কোরিয়ার উন্নত প্রতিষ্ঠান। এগুলোর শিক্ষা ও মডেল দক্ষিণ কোরিয়া নিয়েছে জাপান থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর।
একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য এর আইনসভা বা সংসদ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও জার্মানি পৃথিবীর অনেক দেশের জন্য রোল মডেল এদের অর্থনীতির কারণে। কিন্তু এদের মধ্যে একটি বিষয়ে এক ঐতিহাসিক মিল রয়েছে। এদের প্রত্যেকেই আইনসভার সংস্কার ও শুদ্ধিসাধনে অনেক সময় নিয়েছে এবং এদের প্রত্যেকেরই আইনসভা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট। এ দুই ধাপের আইনসভা বা সংসদ সৃষ্টির প্রধান কারণ তিনটি—এক. ক্ষমতার বিভাজন বা বিকেন্দ্রীকরণ, দুই. আইন সৃষ্টিতে ভারসাম্য বা চেক অ্যান্ড ব্যালান্স এবং তিন. বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষকে নিয়ে এক অন্তর্ভুক্তিমূলক আইনসভা রচনা। পৃথিবীর ইতিহাসে অন্তর্ভুক্তিমূলক আইনসভা ছাড়া অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি রচিত হয়েছে এমন উদাহরণ নেই।
তাই আইনসভা শুদ্ধির প্রথম ধাপ একে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট করা। এ প্রস্তাব বিএনপি ছাড়াও অন্য দু-একটি দল এরই মধ্যে পেশ করেছে। আওয়ামী লীগ আপাতত ‘পলায়ন যুগ’ পার করছে। তাই তাদের মতামত পাওয়া যাচ্ছে না। তবে দূরদর্শিতার স্বার্থে অন্য সব বড় দলের উচিত হবে এ ধরনের একটি ভারসাম্যপূর্ণ সংসদের রূপরেখা দেয়া। বর্তমান সংসদ একটি ক্রম-অবনতিসম্পন্ন ব্যবসায়ী ক্লাব, যা সাধারণ মানুষের স্বার্থরক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। এখানে ব্যবসায়ীর সংখ্যা ৬১ শতাংশ। বাকিদের একটা বড় অংশ অবসরপ্রাপ্ত আমলা, যাদের অনেকের সঙ্গে এলাকার মানুষের যোগাযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রীর আশপাশে থেকে প্রবল আনুগত্যের প্রমাণ দিয়েছেন, যোগ্যতা এটুকুই। তাকে উড়িয়ে এলাকায় এনে মাসখানেকের জন্য ‘জনদরদি’ সাজিয়ে এমপি বানানো হলো। বঞ্চিত করা হলো দীর্ঘদিনের রাজনীতিকদের।
এভাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নিজে রাজনীতিক হয়ে শেষতক রাজনীতিচর্চার কাজটি তুলে দিয়ে গেছেন ব্যাংক লুটেরা, দাগী খেলাপি, অর্থ পাচারকারী, মাফিয়া, পারিবারিক সম্পর্কের রাজনীতির ইজারাদার, জনবিচ্ছিন্ন আমলা, পুলিশ, কখনো-বা স্বর্ণ ও মাদক ব্যবসায়ী এবং সংখ্যালঘু রাজনীতিকের হাতে। এতে আইনসভার চরিত্র বদলে গেছে এবং অর্থনীতি ক্রমান্বয়ে ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে, যা মেগা প্রজেক্টের মেগাবৃত্তান্ত দিয়ে ঢাকা যাচ্ছে না। ঢাকার ‘দরবেশ’ কিংবা চট্টগ্রামের ‘আউলিয়া’দের দায়িত্ব দিয়েছেন ব্যাংক খাত দেখাশোনার। তারা সযতনে অর্থ খাতকে রক্তশূন্য করেছে। খেলাপিদের দায়মুক্তি কিংবা ব্যাংক পরিচালক নীতি যে সংসদে আলোচনা বা বিতর্ক ছাড়াই চিপাগলি দিয়ে পাস হয়ে যায় তার প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা থাকে না। ‘সংসদ’ শব্দের আগে যতই ‘মহান’ শব্দটি যুক্ত করা হোক না কেন এর মানুষগুলো মহান নন। যারা পাচারকৃত বা কালো টাকা সাদা বানানোর বিধান করেন তাদের অন্তত সাদা জগতের মানুষ ভাবার কোনো কারণ নেই। টাকা পাচারের মিডিয়া রিপোর্ট বিচারালয়ে অবরুদ্ধ করে দিলে আইনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা থাকে না।
যারা অন্যায্য সুবিধা নিতে ওস্তাদ, রাজস্বদুর্বল দেশে শুল্কমুক্ত গাড়ি এনে কোটি কোটি টাকার আয় থেকে রাষ্ট্রকে বঞ্চিত করেন তাদের হাত দিয়ে ন্যায্যতার আইন পাস হবে এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। এ জাতীয় আইনসভার শুদ্ধি ছাড়া ন্যায্যতার অর্থনীতি প্রত্যাশা করা যায় না। জ্ঞানী-গুণী ও পেশাজীবীদের সমন্বয়ে আরেকটি সমান্তরাল সংসদ চালু করলে দেশের আইন প্রণয়নে যে একটি ভারসাম্য আসবে তা উন্নত অর্থনীতির অজস্র দৃষ্টান্ত দেখে নিশ্চিত করে বলা যায়। এ ‘চেক অ্যান্ড ব্যালান্স’ ছাড়া বর্তমান একপেশে সংসদ অন্তর্ভুক্তিমূলক একটি সমাজের স্বার্থ নিশ্চিত করবে না।
এ জাতীয় আইনসভার আরোপিত আইন কিংবা বিশেষ করে আর্থিক খাতের নীতিগুলো অনেকটা শেয়ালের কাছে মুরগি বন্ধক দেয়ার আত্মঘাতী নিয়মে পরিণত হয়েছে। অর্থনীতিতে পড়েছে এর অশুভ ছায়া। দ্রুত ধনিক গোষ্ঠী সৃষ্টিতে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। কিন্তু আয়বৈষম্য বেড়েছে, খোদ সরকারি তথ্যেও তা ধরা পড়ে। সরকারি তথ্য অনেক পরিসংখ্যানের বিকৃতি ঘটায় বলে অভিযোগ রয়েছে। একজন সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এ রকম তথ্যবিকৃতি ঘটিয়ে বেকারত্ব ও মূল্যস্ফীতি কম দেখিয়ে এবং প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় বেশি দেখিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এতটাই প্রিয় হয়েছিলেন যে তাকে পরে অর্থমন্ত্রীর পদও দেয়া হয়েছিল, যে পদের জন্য তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ অযোগ্য ও বিপজ্জনক। কারণ আগে থেকেই শেয়ারবাজার বিধ্বংসী হিসেবে তার সুনাম ছিল। মুদ্রা পাচারেও ছিল তার অভূতপূর্ব হাতযশ। তিনি সম্ভবত জ্যোতিষীবিদ্যাও কিছু জানতেন। তাই আওয়ামী সরকারের পতনের বেশ আগেই সপরিবার পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন।
দুর্ভাগ্য আমাদের আইনসভায় এ ধরনের মানুষই অশুভ লবিং ও টাকার জোরে বারবার নির্বাচিত হয়ে আসেন এবং আইন প্রণয়নের মহান দায়িত্ব পান! মান্দার গাছ থেকে কখনো রজনীগন্ধার সুবাস আসে না। সংসদে অতি অল্প ভালো মানুষও আছেন, যারা যাত্রাগানের বিবেকের মতো এক কোণে পড়ে থাকেন। বৃদ্ধাতিবৃদ্ধ রাজনীতিক যারা আছেন তাদের প্রায় সবাই ১৯৬৯ ব্র্যান্ডের মডেল। তারা এ বয়সে চলৎশক্তিহীন হবেন, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু তাদের আমৃত্যু এমপি থাকার খায়েস বড়ই অস্বাভাবিক। তারা সংসদে থাকা না থাকা যেমন সত্য, তার চেয়েও বেশি সত্য যে তারা তাদের এলাকায় কমপক্ষে তিন প্রজন্মের নেতৃত্ব ক্ষমতা বিনষ্ট করে দিয়েছেন।
এতে একদল তরুণ হতাশ। কেউবা গাঁজা সেবনে মনোনিবেশ করেছেন। বাকিরা সেই নানি বা দাদু এমপি বা মন্ত্রী এলাকায় এলে তাকে ধরাধরি করে গাড়ি থেকে নামান, তার পেছনে বাইক দিয়ে মোটরযাত্রা করেন, ফুটফরমাশ খাটেন এবং এভাবেই তাদের ছদ্মবেশী নিয়োগ নিশ্চিত করেন। দলের মধ্যে এত কিছুর ব্যালান্স করতে গিয়ে প্রতিবাদী তারুণ্য কিংবা উদ্দীপ্ত বিতর্ক হারিয়ে গেল আইনসভা থেকে। একমাত্র উদ্দীপনা হলো দলের নেতা বা নেত্রী যখন যা বলবেন তার জন্য টেবিল চাপড়ানো। এ মজা পুকুর থেকে জাতিকে উদ্ধার করার প্রথম ধাপ হচ্ছে সংসদকে দ্বিধাপসম্পন্ন করা।
অর্থনীতিতে মন্দা মানেই সবকিছু খারাপ নয়। এ থেকে উৎপাদক নতুন প্রযুক্তির আশ্রয় নেন। ভোক্তা মিতব্যয়ী হতে শেখে। একইভাবে আইনসভার প্রতি মানুষের অশ্রদ্ধা মানেই জনতা ভালো কিছু চায়। ব্রিটেনে ত্রয়োদশ ও চতুর্দশ শতাব্দীতে ওদের সংসদে ‘হাউজ অব লর্ডস’-এর পাশে বিকশিত হয়েছিল ‘হাউজ অব কমন্স’। হালে এটিই হয়ে ওঠে আইনের আসল ঘর। যুক্তরাষ্ট্র প্রায় শুরু থেকেই দ্বিকক্ষায়িত। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আজ বাংলাদেশে এ আলোচনা আবার সতেজ হয়ে উঠেছে। এ সংস্কার এখনই জরুরি। এতে কিছু ধারা সংযোজিত হলে তা দীর্ঘমেয়াদে জাতির অর্থনীতিকে পেশাদারত্ব ও স্থায়িত্বের উপকারে বলবান করবে।
সংস্কারের প্রথম শর্ত হচ্ছে সংবিধানে স্থায়ীভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সংযোজিত করা। বিধানটি না থাকলে সব দলই ক্ষমতায় গেলে আর নামতে চাইবে না। বিগত সরকারের মতো ইচ্ছামাফিক সংবিধান সাজিয়ে এবং শেষে সংবিধানের দোহাই দিয়ে কখনো ‘নৈশভোট’ কখনো ‘পূর্বসান্ধ্য ভোট’ ঘটিয়ে ‘বিপুল ভোটে’ জয়ী হবে। এরপর অনুগতদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান বানাবে, যারা হবে কিঞ্চিৎ অপদার্থ কিংবা খল।
দাবি উঠেছে কোনো প্রধানমন্ত্রী যেন সর্বোচ্চ দুই মেয়াদের বেশি ‘জনগণের সেবা’ করতে না পারেন। এ দাবি যথার্থ। বেশি দিন ‘সেবার সুযোগ’ দেয়া ভালো নয়। পরে লুটপাট আর আত্মীয়তন্ত্রের সেবা শুরু হয়ে যায়। এমপিদের বেলায়ও একই বিধান থাকা উচিত। বেশি দিন ক্ষমতায় থাকলে তাদের সম্পদ বৃদ্ধির হার বিল গেটসের দৌলত বৃদ্ধিকেও লজ্জিত করে। কোনো দলীয় প্রধানের উচিত নয় সরকারপ্রধান হওয়া। এতে রাজনীতিচর্চার শ্রম বিভাজন সাধিত হয় না। সরকারপ্রধান পুরোপুরি রাষ্ট্রীয় খরচে পালিত গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে শেষতক দল চালান। কর্মীরা দলীয় প্রধানের কাছে ভিড়তে পারেন না বলে যারা ভিড়তে পারেন সেই চাঁদাদাতা লুটেরা গোষ্ঠী ও উচ্চাভিলাষী আমলারা শেষে দলীয় মনোনয়ন বাগিয়ে এলাকায় ঢোকেন।
সংসদের মেয়াদ চার বছর করা উচিত। অনেকে অজুহাত দেন যে এতে রাষ্ট্রের নির্বাচন চালাতে খরচ একটু বাড়বে। এ বর্ধিত খরচের চেয়ে শেষের এক বছরে সংসদ সদস্যদের অর্থ লুণ্ঠনের পরিমাণ কয়েক গুণ বেশি। নির্বাচিত হওয়ার দুই বছরের মাথায় নিরপেক্ষ তৃতীয় সংস্থা কর্তৃক সব এমপির সম্পদের হিসাব নিতে হবে এবং তা মিডিয়ায় পরিবেশন করতে হবে। এই ‘মিড-পয়েন্ট চেকিং’ এমপিদের চৌর্যবৃত্তি, ডাকাতি ও অর্থ পাচার কমাবে। বিদেশে সম্পদ গড়ার প্রমাণ পাওয়া গেলে এমপিদের দেশীয় সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হবে এবং তাদের স্থায়ীভাবে ‘গলাধাক্কা’ বা ‘ডিপোর্ট’ করে দিতে হবে।
কোনো দলের মনোনয়নে কমপক্ষে অর্ধেক বা এক-তৃতীয়াংশ অনূর্ধ্ব চল্লিশের তরুণ থাকতে হবে। পঁচাত্তরোর্ধ্ব কাউকে কোনো মনোনয়ন দেয়া হবে না। দলের এ রকম কেউ মনোনয়ন চাইলে তাকে কোনো একটা উপদেষ্টা বানিয়ে তার জন্য কিঞ্চিৎ অবসর ভাতার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের যেমন র্যাংকিং হয়, এমপিদেরও সে রকম র্যাংকিং বা গ্রেডিং থাকতে পারে। যিনি বছরের পর বছর টেবিল চাপড়ানো ও গোপনে নানা কমিশন খেয়ে দৌলতস্ফীতি ছাড়া আর কোনো কাজই করেননি তিনি পাবেন শূন্য। এ ধরনের প্রার্থীকে যেন দ্বিতীয়বার মনোনয়ন দেয়া না হয় সে ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোকে অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের মতো নির্বাচনী ক্যালেন্ডার চালু করলে আর্থিক খাত ও জনজীবনে অনেক অনিশ্চয়তা কাটবে যা হবে বিনিয়োগ সহায়ক। নৈতিক বিষয়ক ভোটাভুটিতে ‘ফ্লোর ক্রসিং’-এর বিধান থাকা উচিত। ভেড়ার পালের মতো অন্ধভাবে দলীয় সিদ্ধান্ত প্রতিপালন করা মনুষ্য জীবনের অসারতা প্রমাণ করে। বিবেকহীন হয়ে সংসদে বসা অনুচিত। সর্বোপরি বড় দলগুলোর নেতাদের মধ্যে প্রাক-নির্বাচনী বিতর্ক বাধ্যতামূলক করা উচিত। নির্বাচন কমিশন ও মিডিয়া এগুলোর আয়োজন করবে। ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচনী ইশতেহারের দ্বিবার্ষিক পর্যালোচনা হবে পেশাজীবীদের সংসদীয় কক্ষে।
রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত আইনসভার এসব সংস্কার আগে নিশ্চিত করে এবং তারপর নিজ নিজ দলের মধ্যে সংস্কার এনে অবশেষে নির্বাচনের জন্য উদগ্রীব হওয়া। এগুলো করতে বছর দুই বা তিন লাগতে পারে। আশা করব অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আগামী মাসখানেকের মধ্যে আইনসভা সংস্কারের পরিকল্পনা পথ প্রদান করবে। এতে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের তারিখ নিয়ে অহেতুক উৎকণ্ঠা প্রকাশ করবে না বা অধৈর্য হবে না। তারা নিজ ঘর সামলানোর দিকে মনোযোগী হবে।