অন্তর্বর্তী সরকারের সাংবিধানিক বৈধতার বিতর্ক ও প্রাসঙ্গিক বিষয়
Share on:
ছাত্র-জনতার এ অভ্যুত্থানকে মূল্যায়ন করতে গেলে আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম থেকে শুরু করতে হবে। একাত্তরে আমরা স্বাধীন হওয়ার পর জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
কিন্তু স্বাধীনতা অর্জনের পর অতি স্বল্প সময়ের মধ্যে রাজনৈতিক অদূরদর্শিতার কারণে আমরা গণতান্ত্রিক শাসন থেকে সরে গিয়ে একদলীয় শাসন বা বাকশাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়েছি। এরপর দুটি সেনা শাসন এবং গণতান্ত্রিক শাসনের মোড়কে স্বৈরশাসনে এ বিচ্যুতি অব্যাহত ছিল। পরবর্তীকালে আবার আমাদের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল নব্বইতে। তিন জোটের রূপরেখার আলোকে আন্দোলনের মাধ্যমে আবার গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা স্থাপনের দ্বার উন্মোচন হয়েছিল। তিন জোটের রূপরেখা বা তাদের প্রতিশ্রুতির ওপর আমরা যে বিশ্বাস রেখেছিলাম, তারা সেটা রক্ষা করতে পারেনি বা করতে চায়নি। রাজনৈতিক দলগুলো তিন জোটের যে রূপরেখার ওপর ভিত্তি করে ক্ষমতায় এসেছিল তারা সংবিধানের দুর্বলতাগুলোকে সংশোধনের অঙ্গীকার করেও তার বরখেলাপ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে জাতি হিসেবে আমরা যে তিমিরে ছিলাম সেই তিমিরেই রয়ে গেছি।
এরপর ১৯৯০-২৪ পর্যন্ত একই ধারা চলেছে। একটি রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য যে আইনি কাঠামো থাকে, সেই আইনি কাঠামোর সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকে সংবিধান। সংবিধানে যদি দুর্বলতা থাকে তাহলে সেই দুর্বলতা ব্যবহার করে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন পদ্ধতিতে ‘ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট’ সিস্টেমকে ব্যবহার করে কার্যত ‘উইনারস টেক অল’ জাতীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে। এতে দলগুলো ক্ষমতাসীন হয়ে আইন-কানুনও তাদের মর্জি মতো প্রণীত করে। জাতীয় নির্বাচনে যে দল জয়ী হয় অনেক ক্ষেত্রে সংসদীয় আসনভিত্তিক ভোটের শতকরা হার বেশি হওয়ার কারণে আসন বেশি পেলেও সামগ্রিক ভোটের শতকরা হার কম পেয়েও তারা সরকার গঠন করতে পারে। এ প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়ে সংবিধানকে কাঠামোগতভাবে দুর্বল করে ফেলা হয়েছে। যদিও-বা ১৯৭২-এর মূল সংবিধানের কাঠামো মোটামুটি শক্তিশালী ছিল। কিছু কিছু ক্ষেত্রে যার ব্যত্যয়ও ছিল। কিন্তু জনস্বার্থে নয় বরং ক্ষমতাসীন দল তার কোটারি স্বার্থ চরিতার্থ করতে গিয়ে সংবিধানে বিভিন্ন সময়ে সংশোধনী এনেছে। সংবিধানে যে ১৭টি সংশোধনী হয়েছে তার মধ্যে কয়েকটি নির্দোষ সংশোধনী ছিল। কিন্তু বিশেষ কিছু (যেমন চতুর্থ, সপ্তম, চতুর্দশ, পঞ্চদশ ও ষোড়শ) সংশোধনীর কারণে এটি কাঠামোগতভাবে দুর্বল হয়ে সরকারকে স্বৈরাচারী হওয়ার সংবিধানে পরিণত হয়েছে।
সংবিধান যেহেতু একটি রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সর্বোচ্চ আইন, এর দুর্বলতার কারণে রাজনৈতিক দলগুলোর স্বেচ্ছাচারী ও স্বৈরাচারী হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। নব্বইয়ের গণ-আন্দোলনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রথমে বিএনপি এবং এরপর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। এভাবে ২০০৭ সালের আগ পর্যন্ত প্রধান দুই রাজনৈতিক দল পালাক্রমে ক্ষমতায় ছিল। সর্বোচ্চ আইনের কাঠামোগত দুর্বলতার কারণে প্রত্যেকটি সরকারই স্বৈরাচারী হওয়ার মতো সুযোগ তৈরি হয়েছে। এগুলো একদলীয় শাসন বা কার্যত এক ব্যক্তির শাসনে পরিণত হয়েছিল। সর্বশেষ ২০২৪ সালে ১৯৯০-এর মতো একটি সুযোগ তৈরি হলো। কিন্তু চরিত্রগতভাবে নব্বইয়ের অভ্যুত্থান ও চব্বিশের অভ্যুত্থানের মধ্যে বিরাট একটা পার্থক্য রয়েছে। কারণ নব্বইয়ের অভ্যুত্থানটি হয়েছিল রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে। চব্বিশের যে গণ-অভ্যুত্থান ঘটেছে সেটি সাধারণ ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে সংঘটিত হওয়ায় এ অভ্যুত্থানকে একটি ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে।
এ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়েছে। কিন্তু এখন বড় প্রশ্ন উত্থাপন হচ্ছে, এ সরকার সাংবিধানিক কিনা? এর উত্তরে বলা যায়, সংবিধানে অন্তর্বর্তীকালীন বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো বিধান এখন আর নেই। কারণ পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বিলোপ করা হয়েছে। তাই খুব বেশি আইনি বিশ্লেষণ ছাড়াই বলা যায় যে, নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাংবিধানিকভাবে কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। তারপরও এ সরকার গঠন হওয়া এবং রাষ্ট্র মেরামত বা সংস্কারের মাধ্যমে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করতে তাদের ক্ষমতা (ম্যান্ডেট) আছে কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন তোলা অবান্তর। কেন এ প্রশ্ন অবান্তর তার উত্তর হলো—সংবিধান প্রণীত হয়েছে জনগণের অভিপ্রায়ের অভিব্যক্তিস্বরূপ। এ অভ্যুত্থান ছাত্র-শিক্ষক এবং সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণেই হয়েছে বিধায় ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’-এর প্রয়োগে এ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের ম্যান্ডেট নিয়েই গঠন হয়েছে বলে ধরে নিতে হবে। এ কারণেই এ সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করা সমীচীন নয়। ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’-এর আলোকে এ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংবিধানের অধীনে হয়েছে নাকি হয়নি—এ রকম বিশ্লেষণ করা মানেই দেশে আরো বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করা। দেশে দু-একজন আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ এ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাংবিধানিক ভিত্তি বা বৈধতা নিয়ে বিতর্ক তুলছেন। আমি মনে করি, এ মুহূর্তে এ বিতর্ক আত্মঘাতী। কাজেই এখন এর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অর্থ হচ্ছে রাষ্ট্র মেরামতের লক্ষ্যে জনকল্যাণে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করার উদ্দেশ্যকে বাধাগ্রস্ত করা।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে রাষ্ট্র মেরামতের মাধ্যমে রাজনৈতিক বন্দোবস্তের একটি পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে তারপর সংসদীয় নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্যে আসতে হবে। যে সরকার গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে হয়েছে তা সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে আছে কিনা সে বিতর্ক অযৌক্তিক। রাষ্ট্র মেরামত ও রাজনৈতিক বন্দোবস্ত যদি নব্বইয়ের মতো রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে ছেড়ে দেয়া হয়, তাহলে অতীত অভিজ্ঞতা বলে যে, আমরা আবার সেই তিমিরেই ফিরে যাব।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে সম্মান জানিয়ে কোনো একটি প্রক্রিয়ায় গণপরিষদ গঠন করে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করবে—এটা তাদের মৌলিক উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। এটি এখন আইনগত ইস্যু নয় বরং ডকট্রিন অব নেসেসিটি। এর ব্যত্যয় হলে তার প্রতিফল এ জাতির পক্ষে বহন করা কঠিন হবে।
ভারতের সংবিধানের জনক ড. ভীম রাও আম্বেদকর। তাকে গণপরিষদের সদস্য করার জন্য মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী, জওহরলাল নেহরু প্রমুখ আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এরপর তাকে বাংলা প্রদেশের যশোর আসন থেকে জেতানো হয়েছিল, যদিও-বা দেশ ভাগের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী সময়ে তাকে বোম্বাই প্রদেশের একটি আসন থেকে নির্বাচিত করা হয়। অর্থাৎ প্রথমে আম্বেদকরের মতো বিশেষজ্ঞকে চিহ্নিত করা হয়েছিল এবং এরপর তাকে প্রাদেশিক পরিষদের কোনো আসন থেকে জেতানোর মাধ্যমে গণপরিষদের সদস্য করা হয়েছিল। বাংলাদেশের জনগণ ও রাষ্ট্রের কল্যাণে সংবিধান প্রণয়নের জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
এ সরকারকে স্থানীয় সরকার কমিশন, পুলিশ কমিশন ও প্রসিকিউশন সার্ভিসকে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশনসহ এসব প্রতিষ্ঠানকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। এমনকি তথ্য কমিশনের বিষয়ে একই চিন্তা করা যেতে পারে। যেসব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বর্তমানে রয়েছে সেগুলোকে আরো শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করার ব্যবস্থা নতুন সংবিধানে রাখতে হবে।
স্থানীয় সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে ক্ষমতার বিভাজন সুস্পষ্ট করতে হবে এবং স্থানীয় সরকার কমিশনের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিচালনা করতে হবে। পাশাপাশি ‘ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট’ নির্বাচন পদ্ধতির পরিবর্তে ‘সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব’ নির্বাচন পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে, যাতে ছোট-বড় সব রাজনৈতিক দল শাসনক্ষমতায় অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। এটা চালু হলে রাজনৈতিক দলগুলো ‘উইনার টেকস অল’ দর্শন থেকে সরে আসতে বাধ্য হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে পরিবারতন্ত্র থেকে সরে আসার জন্য দলগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র সৃষ্টির উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক দল গঠন ও পরিচালনা আইন প্রণয়ন করতে হবে।
সংবিধানের যেসব বিধান মৌলিক কাঠামোর অংশ অর্থাৎ যেগুলো পরিবর্তন করলে জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন হয়ে যাবে, সেসব বিধানের সংশোধনও কঠিন করতে হবে। এছাড়া দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে, যাতে এসব বিধান পরিবর্তনের জন্য নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটের আবশ্যকতা থাকবে। প্রয়োজনে গণভোটের ব্যবস্থাও রাখতে হবে।
আর্থিক খাতে বাংলাদেশ ব্যাংক মনিটারি অথরিটি ও ব্যাংকের তদারকি কর্তৃপক্ষ উভয় ভূমিকাই পালন করছে, যেখানে স্বার্থগত দ্বন্দ্ব জড়িয়ে রয়েছে। মনিটারি অথরিটি ও ব্যাংক তদারকি কর্তৃপক্ষ আলাদা হওয়া উচিত। কারণ মুদ্রানীতি ও ব্যাংক তদারকি দুটোই এক প্রতিষ্ঠানের হাতে থাকায় স্বার্থগত দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হচ্ছে। আর্থিক খাতে বাংলাদেশ ব্যাংককে দুটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা যেতে পারে। এ স্বাধীন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর সরকারের অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ করার যথাযথ আইনি কাঠামো থাকা উচিত। সরকারি ব্যাংকগুলোকে ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের আওতায় রাখা দরকার। দেশে বর্তমানে আর্থিক খাতে যে সমস্যাগুলো বিদ্যমান, সেগুলোর জন্য একটি ব্যাংক সংস্কার কমিশন গঠন করে তার সুপারিশের ভিত্তিতে পরিবর্তনগুলো করা দরকার। এসব বিষয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর্মপরিকল্পনায় থাকা উচিত। মোদ্দা কথা, সবকিছুর কাঠামোগত সংস্কার সাধন করেই এ সরকারের যাওয়া উচিত।
বর্তমান সংবিধানের আলোকে বিচারক নিয়োগের যোগ্যতার বিষয়ে আইন করার কথা। কিন্তু সাবেক আইনমন্ত্রী বারবার বলেছিলেন, আইন তৈরি হচ্ছে। কিন্তু সেই আইন আদৌ আলোর মুখ দেখেনি। এ আইন তৈরি করাও যদি নির্বাচিত সরকারের জন্য রেখে দেয়া হয় তাহলে সেটা আর হবে বলে মনে হয় না। অতীত অভিজ্ঞতা তা-ই বলে।
অধস্তন আদালত নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক হয়েছে, কিন্তু সংবিধানের ১১৬ নং অনুচ্ছেদ অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি তাদের নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলি করেন। রাষ্ট্রপতি যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ব্যতিরেকে তা করতে পারেন না, তাই কার্যত এটি সরকারই করে। অথচ ’৭২-এর মূল সংবিধান যদি আমরা দেখি, সেখানে বিচারকদের নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলি সুপ্রিম কোর্টের ওপর ন্যস্ত ছিল। এটি সুপ্রিম কোর্টের হাতেই ফিরিয়ে দেয়া উচিত।
স্বাধীন প্রসিকিউশন ব্যবস্থা থাকা দরকার। প্রসিকিউশন সিস্টেম সরকার থেকে পৃথক করে অনেক দেশের মতো বিচার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। মন্ত্রণালয়গুলো হবে কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারণী সংস্থা। সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলো ও স্থানীয় সরকারগুলো তাদের নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে সুনির্দিষ্ট আইনি কাঠামোর অধীনে সেই নীতি স্বাধীনভাবে বাস্তবায়ন করবে। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, পুলিশ ও স্থানীয় সরকারগুলো সুনির্দিষ্ট আইনি কাঠামোর অধীনে স্থায়ী সাংবিধানিক কমিশনের অধীনে করপোরেট সংস্কৃতি অনুসরণ করে পরিচালিত হবে। যেমন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের মেয়র/চেয়ারম্যান সরাসরি নির্বাচিত না হয়ে মেম্বার/কাউন্সিলরদের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। এতে মেয়র/চেয়ারম্যানের স্বেচ্ছাচারী হওয়ার সুযোগ কমবে।
বাংলাদেশের সংবিধানে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভাসংক্রান্ত যেসব বিধান রয়েছে, সেখানে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা পরিচালিত হওয়ার কথা বলা আছে এবং প্রধানমন্ত্রীকে নির্বাহী প্রধান করা হয়েছে। এতে কার্যত প্রধানমন্ত্রীর শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে, মন্ত্রিপরিষদের শাসন নয়। অথচ অন্য বিধানে আবার বলা হয়েছে, মন্ত্রিপরিষদ যৌথভাবে সংসদের কাছে দায়ী থাকবে। এ বৈপরীত্য দূর করে মন্ত্রিপরিষদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যেখানে প্রধানমন্ত্রী হবেন ‘ফার্স্ট অ্যামাং দি ইকুয়ালস’। এছাড়া কোনো ব্যক্তি দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না, এ বিধানও সংবিধানে রাখা উচিত। উপরন্তু রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। পাশাপাশি আমেরিকার মতো রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন করা যায় কিনা তা পর্যালোচনা করা যেতে পারে। বিষয়টির অবতারণা করা হচ্ছে এ কারণে যে ওয়েস্টমিনস্টার সিস্টেমে আইন বিভাগের প্রতিনিধিত্ব নিয়েই নির্বাহী বিভাগের মন্ত্রিপরিষদ গঠন হয় বিধায় সংসদীয় জবাবদিহিতা দুর্বল হয়ে পড়ে।