অন্তর্বর্তী সরকারের চ্যালেঞ্জ ও করণীয়
Share on:
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সামনে আইন-শৃঙ্খলা ফেরানোর পর দ্বিতীয় প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো অর্থনীতিতে স্থিতি ও গতি ফেরানো। বৈদেশিক খাতে মৌলিক কিছু সমস্যায় আগে থেকে অর্থনীতি ধুঁকছিল। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে এসে ঠেকছিল। বিনিময় হার ছিল তীব্র চাপের মুখে।
দ্বিতীয় পর্ব
ব্যাংকের চেয়ে হুন্ডিতে ডলারের মূল্য বেশি পাওয়ায় রেমিট্যান্স প্রবাহের গতি শ্লথ হয়ে পড়েছিল। এর বাইরে বিদেশী মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস রফতানির প্রকৃত অবস্থা আড়াল করে বাড়তি আয় দেখানোর বিষয়টি সমন্বয় করতে একবারেই ২০ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয় কমাতে হয়।
এর প্রভাব পড়ে লেনদেনের ভারসাম্যের হিসাব ও অর্থনীতির বিকাশ হারে। সে সাথে অব্যাহত আমদানি নিয়ন্ত্রণের কারণে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদায় স্থবিরতা সৃষ্টি হয়, যার চাপ পড়ে মূল্যস্ফীতিতেও। মে মাসে এসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে একটি নতুন রেকর্ড করে।
এসবের বাইরে ব্যাংকিং ব্যবস্থার ভঙ্গুর অবস্থা হয়ে পড়ে অর্থনীতির জন্য এক নম্বর সমস্যা। সরকারি ক্ষমতা প্রয়োগ করে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সেসব প্রতিষ্ঠানকে ফোকলা করে ফেলা হয়।
অধিকাংশ ব্যাংকের অবস্থা বিপজ্জনক পর্যায়ে উপনীত হয়। সিপিডির মতে, ২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে দেশের ব্যাংক খাতে বড় বড় অন্তত ২৪টি আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে। এর মাধ্যমে লোপাট হয়েছে ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা। এ অর্থ গত অর্থবছরের বাজেটের ১২ শতাংশ।
অন্যদিকে, এসময়ে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। ২০০৯ সালে খেলাপি ঋণের এই পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। পুরো ব্যাংক খাতই কার্যত নিয়মনীতির বাইরে চলে গেছে।
শেখ হাসিনার সরকার এ সময় প্রকৃত পরিস্থিতিকে আড়াল করে হিসাবের ম্যারপ্যাঁচ আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধমে টাকা ছাপিয়ে অবস্থার মলমমার্কা সমাধান দেয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছিল। ঠিক এই অবস্থায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকারের পতন ঘটায় নতুন এক পরিস্থিতি তৈরি হয়। লুটপাট ও অর্থ পাচারে সহায়তাকারী হিসেবে চাপে পড়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও চার ডেপুটি গভর্নর একযোগে পদত্যাগ করেন। অন্যদিকে কয়েকটি বেসরকারি শীর্ষ ব্যাংকে ব্যাংকারদের ক্ষোভের মুখে এমডিসহ শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা ব্যাংক ত্যাগে বাধ্য হন। সংবেদনশীল এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের জন্য এটি একটি বিরূপ সঙ্কেত সৃষ্টি করে। তিন দিন সরকারহীন অবস্থায় থাকার ফলে অস্থির অবস্থা কাটাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয়নি।
ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর বেশ কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে। কিন্তু পতিত সরকারের অস্থিরতা তৈরির অপচেষ্টার কারণে দ্রুত স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনার পথে অনেক বাধা কাজ করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর নিয়োগ করা হয়েছে একজন যোগ্য অর্থনীতিবিদকে। সার্চ কমিটি ডেপুটি গভর্নরও নির্বাচন করবেন। এতে কেমন সময় নেয়া হয় তা নিশ্চিত নয়। এখন প্রায় সব রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক চলছে এমডির উপস্থিতি ছাড়া। এস আলম গ্রুপের সাত ব্যাংকের অবস্থা বেশি খারাপ। সেসব ব্যাংকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিক্ষোভের মুখে অনেক শীর্ষ কর্মকর্তা অফিসে আসছেন না। অনুগত কর্মকর্তাদের দিয়ে ব্যাংকের অর্থ বের করে নেয়ার প্রচেষ্টা চলছে অবিরাম।
এমন অবস্থায় ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হবে প্রধান চ্যালেঞ্জ। শৃঙ্খলা ফেরার পর দেখা দিতে পারে মূল চ্যালেঞ্জ। এক ধরনের লুটেরা মালিক রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধরদের সহায়তায় নামে বেনামে ঋণ সৃষ্টি করে ব্যাংকের তহবিল হাতিয়ে নিয়েছে। এসব মালিক ও তাদের সহায়তাকারী কর্মকর্তাদের বড় অংশ দেশ ছেড়ে পালিয়েছে অথবা ফেরারি হয়ে গেছে। এখন ব্যাংকগুলোর জন্য প্রথম চ্যালেঞ্জ হবে সেসব প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত অবস্থা নিরূপণ করা।
গ্রাহকদের আস্থার ওপর ভিত্তি করে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয় বলে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত অবস্থা প্রকাশ করা হলে হঠাৎ জনমনে বড় ধরনের আস্থাহীনতা তৈরি হতে পারে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিকভাবে বিদেশী ব্যাংকগুলো স্থানীয় ব্যাংকের এলসি গ্রহণে দ্বিধাগ্রস্ত হতে পারে। ব্যাংক খাতের বিপর্যয় কাটাতে হলে ঝুঁকিপূর্ণ হলেও সঠিক পথ গ্রহণের বিকল্প নেই।
আর্থিক খাতের সঙ্কট ছাড়া তৃতীয় যে চ্যালেঞ্জ সেটি হলো বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের সক্ষমতা তৈরি করা। বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্কটের মুখে অব্যাহতভাবে আমদানি নিয়ন্ত্রণের ফলে এর প্রভাব যেমন দেশের রফতানি আয়ের ওপর পড়েছে তেমনিভাবে রাজস্ব আদায়ের ওপরও এর প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোর কোনোটিতেই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যায়নি। ঘোষিত বাজেটে রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা থাকে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। আর আগের বছর রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ঘাটতি হওয়ায় সে লক্ষ্যমাত্রা দ্বিগুণ হয়ে পড়ে। এর ফলে সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা কাটছাঁট করার পরও আবার বড় অঙ্কের ঘাটতি সৃষ্টি হয়। এভাবে চক্রাকারে চলে আসছে বাজেট বাস্তবায়নে দুরবস্থা। গত কয়েক বছরে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বাজেট অবাস্তবায়িত থেকে গেছে লক্ষ্যমাত্রার নিম্নমুখী সংশোধন করার পরও। এবার রাজনৈতিক অস্থিরতার নতুন মাত্রা যোগ হওয়ায় রাজস্ব আদায়ে আরো দুরবস্থা দেখা দিতে পারে।
এর সাথে যুক্ত হবে স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো পুনর্গঠনের ব্যয়।
অবকাঠামোর ক্ষতি প্রাথমিক হিসাবে ১০ বিলিয়ন ডলারের সমান বলে ধারণা করা হচ্ছে। বহুমুখী সঙ্কটে বিপর্যস্ত অর্থনীতিতে এই অর্থের জোগান দেয়া কঠিন হতে পারে। ঠিক একই ধরনের অবস্থায় পড়েছিল শ্রীলঙ্কাও। তবে তারা বছর দুয়েকের মধ্যে শৃঙ্খলায় ফিরাতে পেরেছে।
বাংলাদেশের জন্য সঙ্কট উত্তরণের সম্ভাবনা কিছু কিছু ক্ষেত্রে আরো ভালো। কিন্তু এক্ষেত্রে বড় বাধা হতে পারে বড় রাজনৈতিক শক্তির যেকোনো অন্তর্ঘাতী তৎপরতা এবং তাতে বিদেশী কোনো শক্তির মদদ। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের দূরদর্শী পদক্ষেপ সঙ্কট উত্তরণে সহায়তা করতে পারে। সঙ্কট মোকাবেলায় সে পদক্ষেপগুলো কী হতে পারে?
আমার মতে, বাংলাদেশ অর্থনীতির এখনকার সমস্যাগুলোকে চারটি বড় ভাগে ভাগ করে তা মোকাবেলায় পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। প্রথমত, বৈদেশিক খাতের সঙ্কট মোকাবেলায় প্রবাসী বাংলাদেশীদের কর্তৃত্ববাদী ও লুটেরামুক্ত পরিবেশে অধিক হারে রেমিট্যান্স পাঠাতে উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে। শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার এক সপ্তাহে রেমিট্যান্স প্রবাহে চাঙ্গাবস্থা সৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে। প্রবাসীদের উদ্বুদ্ধকরণ প্রচেষ্টা আরো বাড়াতে হবে। কী পরিমাণ অর্থ দেশ থেকে পাচার হয়েছে তা নিরূপণে পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি অর্থপাচারের সব রাস্তা বন্ধ করতে হবে। এর আগে সর্বোচ্চ রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের জোগসাজশে অলিগার্কদের দ্বারা অর্থপাচারের ঘটনা ঘটেছে বলে দ্রুততম সময়ে পাচার বন্ধে পদক্ষেপ নেয়া বর্তমান পরিবেশে সম্ভব হবে।
বৈদেশিক খাতে একটি বড় চাপ তৈরি করবে সরকারি বেসরকারি বিদেশী ঋণের দায় শোধের বিষয়টি। মার্চ ২০২৪ নাগাদ বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুসারে, সরকারি বেসরকারি দায় ১০০ বিলিয়ন ডলারের কোটায়। এর সাথে এলসির বকেয়া দায় যুক্ত করা হলে আরো ২০ শতাংশ বাড়বে। এই অবস্থায় প্রতি বছরই বিদেশী ঋণের দায় শোধের চাপ বাড়বে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সরকারি ঋণের দায় তিন থেকে চার বিলিয়ন ডলারের মধ্যে হতে পারে। এই অবস্থায় বড় অঙ্কের কিছু দায় পুনঃতফসিল করতে হতে পারে। অন্যদিকে জ্বালানি তেলের মূল্য পরিশোধে এর মধ্যে যে খেলাপি হওয়ার অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে তাতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সাথে এক বা দুই বছরের বিলম্বিত মূল্য পরিশোধের ব্যবস্থায় যেতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এটুকু সহায়তা পেতে পারে সৌদি আরব কাতার কুয়েত থেকে।
রফতানি খাতে একটি বড় সঙ্কট আসতে পারে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে। মধ্য আয়ের দেশে পৌঁছার পরও রেয়াতি সুবিধা বহাল রাখার আলোচনা মানবাধিকার হরণমূলক অবস্থার জন্য আগের সরকারের সময় ইউরোপীয় ইউনিয়ন স্থগিত করেছিল। এটি আবার শুরু করার ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যেতে পারে। প্রফেসর ইউনূস তার অবস্থান কাজে লাগিয়ে ইউরোপের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও জাপানের বাজারে পণ্যের আরো রেয়াতি প্রবেশাধিকার আদায় করতে পারবেন বলে আশা করা যায়। এসব পদক্ষেপ নেয়া হলে আশা করা যায় বৈদেশিক রিজার্ভ ও লেনদেনের ভারসাম্যে যে সঙ্কট এখন চলছে সেটি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।
ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ফেরানোর কোনো বিকল্প সরকারের সামনে নেই। এ জন্য সরকার অভিজ্ঞ অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকারের সমন্বয়ে একটি কমিশন গঠন করতে পারে। কমিশন প্রকৃত পরিস্থিতি নিরূপণে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ এবং চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ দিতে পারে।
তাৎক্ষণিকভাবে যে পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে তার মধ্যে রয়েছে লুটেরা মালিকদের হাত থেকে ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত করা। এক্ষেত্রে সরকারি ক্ষমতা খাটিয়ে যেসব আলোচিত গ্রুপ অনেক ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সেসব শেয়ার ব্যাংক থেকে হাতিয়ে নেয়া তহবিলের বিপরীতে সমন্বয় করে এ শেয়ার ভালো ও সৎ উদ্যোক্তাদের হাতে দেয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
দেশের সবচেয়ে বড় ও সঙ্কটাপন্ন বেসরকারি ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকের ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। সিপিডি বলেছে, এস আলম গ্রুপ একাই ইসলামী ব্যাংক থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে। এক সময় ইসলামী ব্যাংক ভালো ব্যাংক ছিল। দখলের পর তা মুমূর্ষু হয়ে গেছে।
এই ব্যাংক থেকে যে অর্থ নামে বেনামে ঋণ সৃষ্টির মাধ্যমে বের করা হয়েছে সেটি হিসাব করে আদায়ের উদ্যোগ নিতে হবে। ব্যাংকটি আগে যেসব উদ্যোক্তার মালিকানায় ভালো চলছিল তাদের হাতে মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে। বিশেষত এর সাথে এক সময় যুক্ত থাকা ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক, বাহরাইন ও দুবাই ইসলামী ব্যাংক, কুয়েত ফাইন্যান্স হাউজ বা আল রাজি গ্রপের মতো প্রতিষ্ঠানকে এর মালিকানায় আবার ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। এভাবে ব্যাংকটিকে আবার আগের অবস্থায় ফেরানো সম্ভব হতে পারে।
এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা অন্যান্য ব্যাংকের মধ্যে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ক্ষেত্রেও অনুরূপ পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। আল আরাফা ইসলামী ব্যাংকে তহবিল লুট কম হওয়ার কারণে বিদ্যমান কাঠামোতে আগের উদ্যোক্তারাই এটিতে প্রাণ সঞ্চার করতে পারবেন। এর বাইরে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, কমার্স ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংকের ক্ষেত্রে একীভূত করার বিষয় ভাবতে হবে। এসব ব্যাংকের প্রায় সবগুলো অন্য ব্যাংকের তহবিল দিয়ে চালানো হচ্ছিল।
এস আলমের নিয়ন্ত্রণের বাইরে অথবা কিছুটা প্রভাবের মধ্যে থাকা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে এক্সিম ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক বা মার্কেন্টাইল ব্যাংক এমনকি ইউসিবিএল, আইএফআইসি বা এবি ব্যাংকও কম বেশি সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে নামে বেনামে তহবিল সরিয়ে নেয়ার কারণে। এসব প্রতিষ্ঠানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকি জোরদার করার পদক্ষেপ প্রয়োজন। অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অনেকগুলো এস আলম ও অন্য কিছু লুটেরা শূন্য করে দিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারে পৃথক কমিশন হতে পারে।
আওয়ামী লীগ সরকার চলতি অর্থবছরের জন্য যে বাজেট ঘোষণা করেছিল সেটি বাস্তবায়ন সরকারের পক্ষে কঠিন হতে পারে। এই বাজেটে বিভিন্ন খাতে আয় ব্যয়ের শুধু নতুন বিন্যাসের প্রয়োজন রয়েছে তাই নয়, এর কাঠামোতেও বড় ধরনের পুনর্বিন্যাস দরকার। উন্নয়ন প্রকল্পের ক্ষেত্রে সমাপ্তির জন্য অপেক্ষমাণ কিছু প্রকল্প দ্রুত সম্পন্ন করার, যে সব বড় প্রকল্প শুরু হয়নি সেগুলোর বরাদ্দ স্থগিত করে নতুন করে সেগুলোর প্রয়োজন মূল্যায়ন করতে হবে।
গত দেড় দশকে নির্বিচারে নিয়োগ দিয়ে সরকারের রাজস্ব ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। প্রয়োজনবোধে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাকে সংশ্লিষ্ট করে বাজেট কাঠামোতে মৌলিক সংস্কারের পদক্ষেপ নিতে হবে। বাজেটের মধ্যমেয়াদি লক্ষ্যসমূহের মধ্যে রাজস্ব-জিপিডির অনুপাত থেকে শুরু করে সরকারি বেসরকারি বিনিয়োগ জিডিপির অনুপাত পর্যন্ত কোনো লক্ষ্যই অর্জিত হচ্ছে না। এসব বিষয়ে সংস্কার উদ্যোগের সাথে সাথে এবারের বাজেটকে সেপ্টেম্বর নাগাদ পুনর্বিন্যাসের বিষয় ভাবা যেতে পারে। একই সাথে সরকারের অর্থনৈতিক তথ্য উপাত্তে বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরাতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে বড় সুবিধা হবে এ সময় রাষ্ট্রীয় সম্পদের লুটপাট বা পাচারের সম্ভাবনা না থাকা। এ সরকারের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন এবং দেশের মানুষের অপরিসীম ত্যাগের কারণে অনেক কঠিন কাজ প্রফেসর ইউনূস ও তার উপদেষ্টাদের জন্য সহজ হয়ে যেতে পারে। এই সরকার আগের সরকারের লুটপাটের চিত্র আড়াল করার জন্য অস্থিরতা তৈরির অপচেষ্টা মোকাবেলা করতে পারলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটিয়ে আবার তার লক্ষ্যপথে নবযাত্রা শুরু করতে পারবে বলে আশা করা যায়।