অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনগণের যত প্রত্যাশা
Share on:
অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নিয়েছে। অভিজ্ঞতা এবং নিবেদিতপ্রাণ ও ত্যাগী তারণ্যের সমন্বয়ে গঠিত এই সরকারকে দেশ-বিদেশ থেকে স্বাগত জানিয়েছে। বাংলাদেশের ৫৩ বছরের ইতিহাসে এমন সরকার এই প্রথম। স্বৈরাচার এরশাদ পতনের পর দেশে প্রথম গঠিত হয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার।
পরবর্তীতে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। একবার অন্তর্বর্তী এবং দুই বার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়ায় দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠানিক ভিত্তি পেতে যাচ্ছিল। তৃতীয়বার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের সময় তখনকার বিরোধী দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট রক্তক্ষয়ী বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করায় দেশী-বিদেশী প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সেনাসমর্থিত সরকার গঠিত হয় ২০০৯ সালে।
ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার মানসে ২০১২ সালে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের দোহাই দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এরপর ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের বিনাভোটের পাতানো নির্বাচনে ক্ষমতায় থাকে আওয়ামী লীগ সরকার। মূলত দলীয় ক্যাডার, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং ভারতের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মদদে গুম, খুন, অত্যাচার, নিপীড়ন, দুর্নীতি, লুটতরাজ এবং অর্থপাচারের মাধ্যমে স্বৈরশাসন কায়েম করেন শেখ হাসিনা। ছাত্র-জনতা এ স্বৈরশাসককে পনের বছর সহ্য করেছেন। আর কত? কোটা সংস্কার ইস্যুতে গড়ে ওঠা আন্দোলনের তোড়ে ১৫ বছর ধরে গড়ে ওঠা স্বৈরশাসকের মসনদ তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল। জাতি পেল দ্বিতীয়বার স্বাধীনতার স্বাদ, রক্ষা পেল দেশের সার্বভৌমত্ব।
এবার আসা যাক, দেশে কী কী বৈষম্য রয়েছে এবং তা দূর করতে অন্তর্বর্তী সরকারের করণীয় কী তা নিয়ে আলোচনা। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি প্রত্যাশা হলো- পিএসসিসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের রিক্রুটিং পলিসি তৈরি করা এবং তার স্বচ্ছ বাস্তবায়নে মনিটর করা। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ, ছাত্র ভর্তি এবং ছাত্রদের সুযোগ সুবিধায় রয়েছে অব্যবস্থা। বিশেষ করে স্বৈরাচারী সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে ছাত্রদের লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহার করেছে। বিনিময়ে দিয়েছে অবারিত সুযোগ-সুবিধা। এ সমস্যার সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় লেজুরভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা এবং ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। সেই সাথে পুলিশ বাহিনীকে ঢেলে সাজানো।
গণ-অভ্যুত্থান নস্যাৎ করতে ষড়যন্ত্রকারীরা অরাজকতা ও ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। দ্রুত দেশে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। অরাজকতা দূর করতে হবে। পতিত স্বৈরাচারী সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছিল। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে হবে।
গত পনের বছরে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে গণহত্যা চালিয়েছে সদ্য পতিত স্বৈরাচার। ২০০৯ সালের পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বরে ২০১৩ সালের হেফাজতের আলেমদের হত্যা; ২০১৩ সালে দেলওয়ার হোসেন সাঈদীর মামলায় ফাঁসির রায় ঘিরে বহু মানুষের হত্যা কয়েকটি উদাহরণ মাত্র। এর সাথে ২০২৪ সালের কোটা আন্দোলনে হত্যাযজ্ঞের সুষ্ঠু তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক বিচার করতে হবে; যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের হত্যার সাহস কেউ না দেখায়।
দেশের উন্নয়নে একটি মজবুত পররাষ্ট্রনীতি প্রয়োজন। পররাষ্ট্রনীতি থাকবে, সব দেশের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে শত্রুতা নয়; বন্ধু থাকবে, প্রভু নয়। ভারতের সাথে অনেক চুক্তি হয়েছে। এসব চুক্তি রিভিউ করা দরকার। যৌথ পানি সোর্সে একচেটিয়া বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশকে পানি থেকে বঞ্চিত করে মরুভূমি বানিয়ে ফেলেছে ভারত। আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতা নিয়ে পানি সমস্যার সমাধান করতে হবে।
বাংলাদেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গত ৩০ বছরে অর্থনৈতিক বৈষম্যের মাত্রা নির্ণায়ক জিনি সহগ বেড়ে ৩৬ থেকে ৫০ এ পৌঁছেছে। এই ৫০ মাত্রা অর্থ হলো দেশে উচ্চ বৈষম্য বিরাজ করছে। দেশের ১০ শতাংশ শীর্ষ ধনীর সম্পদ মোট আয়ের ৪১ শতাংশ। সবচেয়ে ধনী ৫ শতাংশের আয় দেশের মোট আয়ের ৩০ শতাংশ। সার্বিকভাবে অর্থনীতিতে লুটপাট, অর্থপাচার তো রয়েছে। ব্যাংকগুলো ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। রাজনৈতিক বিবেচনায় দেয়া হয়েছে অনেক ব্যাংকের অনুমোদন। ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ খেলাপি। অথচ অনেক ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের ছাপানো টাকা ঋণ নিয়ে চলছে। স্বৈরশাসক ক্ষমতায় এসে পুঁজিবাজার লুটপাট শুরু করে। পুঁজিবাজার যেন জুয়াড়িদের আখড়ায় পরিণত হয়। এতে নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার দায় কতটুকু তা খতিয়ে দেখতে হবে। দুর্নীতিবাজ এবং জুয়াড়ি কর্মকর্তাদের বিতাড়ন করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। তাদের অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেন লুটপাটকারী ব্যাংক ও ফাইনান্সিয়াল প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের ক্লাবে পরিণত হয়েছিল। ব্যাংক কোম্পানি আইনের আমূল পরিবর্তন করে ওই ক্লাব ভেঙে দিতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে দুর্নীতিবাজদের বিতাড়িত করার মাধ্যমে পুরো ফাইনান্সিয়াল সেক্টরের দুর্নীতি সমূলে নির্মূল করতে হবে। অর্থনীতির সব সূচকে বাংলাদেশ বিশ্ব র্যাংকিংয়ে তলানিতে পৌঁছে গিয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় পৌঁছেছে। আশার কথা, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাক্তন সফল গভর্নর, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ মন্ত্রালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা। সুতরাং তার নেতৃত্বে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং পুঁজিবাজারে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে বলে সবাই আশাবাদী।
২০২১ সালের ৪৮ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ থেকে কমে ২০২৪ সালে ১৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। রেমিট্যান্স যোদ্ধারা হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠান। লুটেরারা দেশ থেকে ডলার পাচার করে। বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর বিষয়টি দুর্নীতিমুক্ত করে সহজ এবং সস্তা করে শ্রমিকদের কারিগরি প্রশিক্ষণ দিয়ে পাঠালে অনেক বেশি রেমিট্যান্স আসবে। প্রয়োজনে বিদেশ পাঠাতে সহজ শর্তে ব্যাংক লোনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কর্মসংস্থান এজেন্সিগুলোকে মনিটরিং করে অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। বিলাসী পণ্য আমদানি বন্ধ অব্যাহত রাখতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, শিল্পকারখানার যন্ত্রপাতি এবং কাঁচামাল আমদানি যেন বন্ধ না হয়। রফতানি শিল্প আমাদের প্রাণ। শিল্পের রফতানি ক্ষেত্রে ওভার ইনভয়েসিং এবং আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা পাচার হয়। এসব এখনি বন্ধ করতে হবে। এখানের দোষী সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। বাংলাদেশে বৈধ এবং অবৈধভাবে প্রায় ২৬ লাখ বিদেশী নাগরিক কাজ করেন। অথচ দেশের লাখো তরুণ এবং যুবক বেকার। অবিলম্বে এসব বিদেশী নাগরিককে ফেরত পাঠাতে হবে। অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
দেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে বেশ আগে। উন্নয়নের নামে এ ঋণের টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাঠিয়েছেন আমলা, পুলিশ এবং রাজনৈতিক নেতারা। এ অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ নিতে হবে। অনেক বিদেশী ঋণ চড়া সুদে এবং কঠিন শর্তে নেয়া হয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে না আসা পর্যন্ত মেগা প্রজেক্ট বন্ধ রাখা প্রয়োজন।
মূল্যস্ফীতির জাঁতাকলে পৃষ্ঠ মধ্যবিত্ত এবং নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণী। গত পনের বছরে দ্রব্যমূল্য প্রায় আড়াইশ গুণ বেড়েছে। দেশের উৎপাদিত কৃষি পণ্যের দাম সার, কীটনাশক, বীজ এবং সেচ খরচ বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা বেড়েছে। দাম বেশি বেড়ে যাওয়ার আরো একটি অন্যতম কারণ পথে পথে পণ্যপরিবহনে চাঁদাবাজি। দুর্নীতিবাজ সরকারের ছত্রছায়ায় অনেক শক্তিশালী ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় দায়ী। এখনই সময় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়ার।
দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সংশ্লিষ্ট অধিদফতর এবং মন্ত্রণালয়। এ দেশে তৈরি করা ইসলামবিদ্বেষী শিক্ষা কারিকুলাম নতুন করে প্রণয়ন করতে হবে। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও দেশের জন্য একটি সঠিক শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা সম্ভব হয়নি। এখনই সময় একটি বাস্তবধর্মী শিক্ষাকার্যক্রম তৈরির। মানহীন উচ্চশিক্ষা, যা দেশের কর্মসংস্থানে ভূমিকা রাখে না; এমন শিক্ষার চেয়ে ভোকেশনাল ট্রেনিং প্রতিষ্ঠান করে প্রশিক্ষিত জনগণকে বিদেশ পাঠাতে হবে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে শতাধিক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং তার চেয়েও বেশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থাকার প্রয়োজন আছে কি না ভেবে দেখতে হবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ রাজনৈতিক বিবেচনায় লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। যাদের উদ্দেশ্যই শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্য। প্রশ্ন আউট, নকল এবং নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষার মাধ্যমে লাখ লাখ জিপিএ ৫ দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে মানহীন করেছে। তাই প্রকৃত শিক্ষা ফিরিয়ে আনতে হবে।
শিক্ষাব্যবস্থার মতো দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থাও নাজুক। মানহীন ডাক্তার, মানহীন ওষুধ ও সেবার মানসিকতাহীন হাসপাতালগুলো যেন ব্যবসায়িক কসাইখানা। ফলে বিত্তবানরা বিদেশে চিকিৎসা করিয়ে দেশের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা নষ্ট করছে, তেমনি গরিবরা মানহীন চিকিৎসা নিয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরছে। রাজনৈতিকভাবে অনুমোদন পাওয়া মানহীন মেডিক্যাল কলেজগুলো বন্ধ করে বাকিগুলোর মান উন্নয়নে সচেষ্টা হতে হবে। যাতে আমাদের দেশের কাউকে বিদেশে চিকিৎসা করাতে না হয়।
বিচারব্যবস্থা এমনভাবে দলীয়করণ করা হয়, সরকার এবং সরকারি দলের লোকদের মনের মতো রায় যেন নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। যার কারণে উচ্চ আদালতের বিচারপতিরা অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের দৃষ্টতা দেখান। বিচার বিভাগকে পুরোপুরি স্বাধীন করে ঢেলে সাজাতে হবে। দলীয় এবং দুর্নীতিবাজ বিচারকদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। দলীয় পরিচয়ে বিচারক নিয়োগ বন্ধ করতে হবে। নিয়োগে মেধা এবং সততা হবে অন্যতম যোগ্যতা।
সংবাদমাধ্যমকে দেশের চতুর্থ স্তম্ভ। দেশে অসংখ্য টেলিভিশন, খবরের কাগজ এবং অনলাইন পত্রিকা রয়েছে, যা বলতে গেলে বিতাড়িত স্বৈরশাসকের দলীয় ভ্যানগার্ড। পাশাপাশি ভিন্নমতের পত্রিকা-টিভি চ্যানেল অন্যায্যভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সে জন্য একটি স্বচ্ছ মিডিয়া নীতিমালা প্রণয়ন করা দরকার; যেন বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রণয়নের মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ন রাখায় ভূমিকা রাখতে পারে।
উপরে বর্ণিত সব অব্যবস্থা মূলত গণতন্ত্রহীনতার জন্য। বিগত ১৫ বছরে মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নিজেদের পছন্দের জনপ্রতিনিধি বেছে নিতে পারেননি। ফলে মানুষ যেমন মৌলিক অধিকার হারিয়ে হতাশ হয়ে পড়েন, তেমনি ক্ষমতাসীন সরকারের স্বেচ্ছাচারী মনোভাবী হয়ে উঠেছিল লাগামহীন। পরিবেশ এমন বিষিয়ে যায় যে, মেধাবীরা দেশ ছাড়ছেন।
স্থায়ীভাবে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় চাই সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। অধিকন্তু সংবিধানে যত রকম কূটকৌশল স্বৈরশাসক ঢুকিয়েছে তা বাতিল করে, স্থায়ীভাবে আবার নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। দুবারের বেশি কেউ সরকার প্রধান হতে না পারার আইন সংবিধানে রাখা যেতে পারে। রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের আধিপত্য কমানোর উপায় বের করা যেতে পারে। নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা নতুন করে নির্ধারণ করা দরকার; যেন যোগ্যলোক রাষ্ট্রের অন্যতম স্তম্ভ আইন প্রণয়নে ভূমিকা রাখতে পারেন।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান হওয়ায় নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইউনূসের চেয়ে ভালো বিকল্প হতে পারে না। বিশ্বের হাতেগোনা কয়েকজন ব্যক্তিত্বদের মধ্যে তিনি একজন। বিশ্বব্যাপী রয়েছে খ্যাতি। আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং বিভিন্ন দেশের সাথে তার রয়েছে চমৎকার সম্পর্ক। তার সাথে রয়েছে অনেক স্বনামধন্য, অভিজ্ঞ, রাজনীতি নিরপেক্ষ উপদেষ্টামণ্ডলী। সব মিলিয়ে কার্যকর একটি টিম।
পরিশেষে কোনো রকম স্বার্থ, প্রতিহিংসা এবং ক্ষমতার বশবর্তী না হয়ে দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে সংস্কার এবং রাষ্ট্র মেরামতের কাজ করতে হবে। পলিসি তৈরি করতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা তার থ্রি-জিরো তত্ত্ব যেমন দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনার তত্ত্ব সারা বিশ্বে কাজে লাগিয়েছেন। তেমনি বাংলাদেশে টেকসই উন্নয়নে এ তত্ত্ব প্রয়োগের মাধ্যমে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে এগিয়ে নিবেন বলে সাধারণের প্রত্যাশা।
স্মরণ করা যেতে পারে, দলীয় সরকারের পক্ষে অনেক ধরনের সংস্কার বা পরিবর্তন করা সম্ভব হয় না। সুতরাং অন্তর্বর্তী সরকারকে এ দায়িত্ব নিতে হবে। এ ধরনের সংস্কার করতে যুক্তিসঙ্গত যত সময় প্রয়োজন তত সময় দিতে দেশের শান্তিপ্রিয় নাগরিক প্রস্তুত।