বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সংকট ও পিআর পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, দেশে যতবারই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তার মধ্যেই একনায়কতান্ত্রিক চর্চা এবং ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ ফিরে এসেছে একটি ভয়ংকর রূপে। যে দলই রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেছে, তারা নির্বাচনব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করেছে, প্রশাসনকে দলীয়করণ করেছে এবং বিরোধী কণ্ঠকে দমন করার জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় শক্তিকে ব্যবহার করেছে।

বর্তমান প্রচলিত নির্বাচনি পদ্ধতি এমন একটি কাঠামো, যেখানে কোনো দল ভোটের মাত্র ৩০ শতাংশ পেয়েও সংসদের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ আসন পেতে পারে। এ ব্যবস্থায় প্রকৃত জনপ্রতিনিধিত্ব প্রতিফলিত হয় না এবং তা কার্যত একদলীয় স্বৈরতন্ত্রকে উসকে দেয়। এতে করে রাষ্ট্রের ক্ষমতার ভারসাম্য নষ্ট হয়, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বিপন্ন হয় এবং প্রশাসন রাজনৈতিক দখলদারিত্বে পরিণত হয় (ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, ২০২০)।

এই পরিস্থিতিতে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী এবং জনগণের প্রকৃত রায় প্রতিফলিত করতে হলে একটি কার্যকর ও ন্যায্য নির্বাচন পদ্ধতির প্রয়োজন। আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে দলগুলো ভোটের অনুপাতে সংসদীয় আসন পায়, ফলে কোনো দল এককভাবে ক্ষমতা দখল করতে পারে না এবং সংসদে ছোট দলগুলোর প্রতিনিধিত্বও নিশ্চিত হয়। এতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আলোচনা, আপস এবং যৌথ সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরিবেশ তৈরি হয়।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস দেখায়, কোনো দলই জাতীয় স্বার্থে নিজেদের দলীয় স্বার্থ বিসর্জন দেয়নি। পিআর পদ্ধতি চালু হলে দলগুলো বাধ্য হবে সম্মিলিত সিদ্ধান্ত গ্রহণে, যার ফলে একনায়কতান্ত্রিক প্রবণতা প্রতিহত করা সম্ভব হবে। এই পদ্ধতিতে দলগুলো শুধু নির্বাচনে জিততেই মনোযোগী হবে না, বরং জনগণের আস্থা অর্জনে নীতি ও কর্মসূচি নির্ধারণে মনোযোগী হবে।

এই পদ্ধতি সমাজের সব শ্রেণি ও সম্প্রদায়ের কণ্ঠস্বরকে জাতীয় সংসদে প্রতিফলিত করতে সক্ষম। বর্তমানের একচেটিয়া রাজনৈতিক প্রাধান্য ঠেকাতে এবং জনগণের প্রকৃত রায়কে মূল্যায়ন করতে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির কার্যকারিতা এবং আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা বিশ্বব্যাপী নির্বাচনব্যবস্থা উন্নয়নের ইতিহাসে একটি পরীক্ষিত ও সফল মডেল। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৯১টি দেশ এই পদ্ধতি অনুসরণ করছে, যার মধ্যে রয়েছে জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল, শ্রীলঙ্কা ও নেপাল (ইন্টারন্যাশনাল আইডিইএ, ২০২২; এসিই ইলেক্টোরাল নলেজ নেটওয়ার্ক) ।

এসব দেশের অভিজ্ঞতা বলে দেয়, পিআর পদ্ধতি শুধু মাত্র একটি ভোট গণনার পদ্ধতি নয়, বরং এটি একটি গভীর রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রতিফলন। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ সম্ভব হয়, কারণ এতে বড় দলগুলোর একচ্ছত্র আধিপত্য কমে আসে এবং ছোট দলগুলোর অংশগ্রহণ বাড়ে। এমন একটি কাঠামো তৈরি হয়, যেখানে বহুদলীয় রাজনৈতিক বাস্তবতা সংসদে প্রতিফলিত হয় এবং জাতীয় স্বার্থে দলগুলো পারস্পরিক সহযোগিতায় আগ্রহী হয়ে ওঠে।

উদাহরণস্বরূপ, নেপাল দীর্ঘ একনায়কতান্ত্রিক শাসনের পর ২০০৮ সালে পিআর পদ্ধতি চালু করে। এর ফলে তারা একটি দীর্ঘস্থায়ী সংবিধান প্রণয়ন করতে সক্ষম হয় এবং বহুদলীয় অংশগ্রহণের ভিত্তিতে সরকার গঠন করে। দক্ষিণ আফ্রিকা পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও ভাষাভাষীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে। এই অভিজ্ঞতাগুলো প্রমাণ করে, পিআর পদ্ধতি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্থিতিশীল ও গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হতে পারে।

বাংলাদেশে যেখানে রাজনৈতিক সহিংসতা, মেরূকরণ এবং একচ্ছত্র ক্ষমতা দখলের প্রবণতা রয়েছে, নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা, একতরফা সরকার গঠন এবং রাজনৈতিক প্রতিশোধের সংস্কৃতি। অন্যদিকে অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশের জনসংখ্যার জনমিতিক বিভাজন অপেক্ষাকৃত কম এবং ভৌগোলিকভাবে জনগণ একে অন্যের অত্যন্ত কাছাকাছি অবস্থানে বসবাস করেন। এই সামাজিক ও ভৌগোলিক ঐক্য বাংলাদেশের জন্য আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক বা পিআর নির্বাচন পদ্ধতির সফল বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী ভিত্তি হিসেবে কাজ করতে পারে। প্রতিনিধিত্ব, নারী ক্ষমতায়ন ও রাজনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির অন্যতম বড় সুবিধা হলো এটি সমাজের সব অংশের মানুষকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দেয়।

বর্তমানে প্রচলিত পদ্ধতিতে নির্বাচনে জয়লাভের জন্য প্রার্থীদের এককভাবে ভোট বেশি পেতে হয়, ফলে নারী, সংখ্যালঘু, আদিবাসী ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম থাকে। অন্যদিকে, পিআর পদ্ধতিতে দলীয় তালিকাভিত্তিক নির্বাচন হওয়ায়, প্রতিটি দল বাধ্য হয় তালিকায় নারী ও সংখ্যালঘুদের অন্তর্ভুক্ত করতে। বর্তমানে সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনের ব্যবস্থা থাকলেও, তা দলীয় মনোনয়নের ওপর নির্ভরশীল এবং অনেক সময় রাজনীতিতে নারীদের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে না। পিআর পদ্ধতিতে, সংরক্ষণের প্রয়োজন ছাড়াই নারীরা সরাসরি নির্বাচিত হতে পারবেন, যা নারীর ক্ষমতায়নের বাস্তব পথ উন্মোচন করবে। পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে নির্বাচনে নারী প্রতিনিধিত্ব নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছেÑযেমন রুয়ান্ডা (৬১%), সুইডেন (৪৭%), ও দক্ষিণ আফ্রিকা (৪৬%) সংরক্ষণের প্রয়োজন ছাড়াই দলীয় তালিকায় অন্তর্ভুক্তির ফলে নারী প্রতিনিধিরা সরাসরি নির্বাচিত হচ্ছেন (আন্তঃসংসদীয় ইউনিয়ন প্রতিবেদন, ২০২৩)।

এ ছাড়া স্থানীয় রাজনীতি ও কেন্দ্রীয় রাজনীতির মধ্যে ভারসাম্য আনতে এই পদ্ধতি কার্যকর ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ সম্ভব। এটি বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১ ও ৫৯ অনুযায়ী স্থানীয় সরকার বিকাশে সহায়ক হবে, যেহেতু পিআর পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট নির্বাচনি এলাকা থাকে না, তাই সাংসদরা স্থানীয় রাজনীতির প্রভাবমুক্ত থেকে জাতীয় আইন প্রণয়ন ও নীতিনির্ধারণে মনোনিবেশ করতে পারবেন। এটি স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে সহায়ক হবে। ফলে একটি ভারসাম্যপূর্ণ প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে উঠবে এবং সাংসদরা প্রকৃত অর্থে জনগণের আইনগত প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতে পারবেন।

বিশেষ করে আরপি পদ্ধতির মাধ্যমে সংসদ সদস্যদের স্থানীয় ভূমিকা হ্রাস পাবে, এটি একটি ইতিবাচক পরিবর্তন। এর ফলে স্থানীয় সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাড়বে এবং প্রকৃত বিকেন্দ্রীকরণ সম্ভব হবে। তবে শুধু এমপিদের স্থানীয় দায়িত্ব হ্রাস পেলেই যথেষ্ট নয় স্থানীয় সরকারকে সংবিধানগত ও রাজনৈতিকভাবে জাতীয় উন্নয়নে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে। তাদের ভূমিকা শুধু প্রশাসনিক বা স্থানীয় সেবাদানে সীমাবদ্ধ না রেখে জাতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর্যায়েও যুক্ত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে একটি বাস্তব উদ্যোগ হতে পারে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়ায় স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ভোটাধিকার প্রদান, যাতে জাতীয় নেতৃত্ব নির্বাচনে তৃণমূলের মতামত প্রতিফলিত হয়। এভাবে স্থানীয় সরকার কাঠামোকে শুধু সহযোগী নয়, বরং সাংবিধানিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে।

জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে এবং এটি ভবিষ্যতের রাজনীতিকে একটি নতুন ধারার, নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির বাস্তবায়নের অনিবার্য আকাঙ্ক্ষা ধারণ করছে। যারা এই বিপ্লবের মূল চালিকাশক্তি ছিল, তারা শুধু রাজনৈতিক পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন করেনি, বরং একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য, যেখানে গণতন্ত্র, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহির মতো বিষয়গুলো অগ্রাধিকার পাবে।

সেই বাস্তবতায় যেখানে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক নির্বাচন পদ্ধতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, ইসলামী ঐক্যজোট, বাসদ, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশ মুসলিম লীগসহ বেশির ভাগ মধ্য ও ছোট রাজনৈতিক দল, যারা ভোটের অনুপাতে সংসদে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এই পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। এসব দল বিশ্বাস করে, পিআর পদ্ধতি সুষ্ঠু গণতন্ত্র, রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তি ও ছোট দলগুলোর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে পারে।

বরাবরের মতো বিএনপি আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছে, যার পেছনে রয়েছে একটি কৌশলগত ও ক্ষণস্থায়ী রাজনৈতিক অভিপ্রায়। তারা বিশ্বাস করে, আগামী সাধারণ নির্বাচনে তারা ক্ষমতায় আসছে। এই ধারণা তাদের বর্তমান রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণে প্রভাব ফেলছে, ফলে তারা পিআর পদ্ধতির মতো একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গণতান্ত্রিক কাঠামোর বিষয়ে আগ্রহী নয়। কিন্তু সারা দেশের মাঠপর্যায়ে তথ্য বলছে, ভিন্ন কিছু বিএনপিকর্মীদের একটি অংশ বর্তমানে অতীতের আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী নীতির অনুকরণে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জমি দখল এবং অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে। এ ছাড়া, ভারতের সঙ্গে বিএনপির সম্ভাব্য গোপন রাজনৈতিক সমঝোতা নিয়েও নানা গুঞ্জন ও সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে, যা দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা আরো বাড়িয়ে তুলছে।

দলীয় প্রধানের দীর্ঘ অনুপস্থিতি, দেশের অভ্যন্তরে দুর্বল নেতৃত্ব, অভ্যন্তরীণ গ্রুপিং এবং দলীয় পদবাণিজ্য বিএনপিকে এক জটিল সংকটে ঠেলে দিয়েছে। প্রতিদিনই গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব বিষয়ে সমালোচনামূলক প্রতিবেদন, ভিডিও এবং মন্তব্য ভাইরাল হচ্ছে, যা দলটির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আরো হতাশা তৈরি করছে। এসব কারণেই সাধারণ মানুষ বিএনপির প্রতি আস্থা হারাচ্ছে। অন্যদিকে সব ইসলামি দলগুলো একসঙ্গে নির্বাচনী জোটের পথে এবং সেই বাস্তবতায় যদি তারা নির্বাচনে প্রত্যাশিত সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পায়, তবে তাদের অস্তিত্ব আরো সংকটাপন্ন হবে।

সে ক্ষেত্রে পিআর পদ্ধতিই বিএনপির জন্য নিরাপদ ও টেকসই বিকল্প হতে পারে, কারণ এই পদ্ধতিতে এমনকি তুলনামূলক কম ভোট পেলেও সংসদে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়। দলীয় অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা, রাজনৈতিক সহাবস্থান গড়ে তোলা এবং সরকার গঠনে অংশীদার হওয়ার সুযোগ পাওয়ার জন্য পিআর পদ্ধতি বিএনপির জন্যও নিরাপদ ভবিষ্যতের পথ। শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার স্বল্পমেয়াদি বাসনা নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি গণতান্ত্রিক টিকে থাকার জন্য পিআর একটি অপরিহার্য পন্থা। বিএনপি যদি এই বাস্তবতা অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়, তবে ভবিষ্যতে তারাই সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ক্ষতির শিকার হবে। রাজনৈতিক ঐক্য, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার পরিবেশ গঠনের জন্য আজ বিএনপিসহ সব দলকে দায়িত্বশীল ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে, যার প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে পিআর পদ্ধতির প্রতি ইতিবাচক মনোভাব গ্রহণ।

তত্ত্ব-উপাত্ত পর্যালোচনার পর আমার কাছে দুটি সমাধান এর যেকোনো একটির বাস্তবায়ন ছাড়া বর্তমান রাজনৈতিক সমাধানের কোনো বিকল্প নেই। যেহেতু সব দল দ্বিকক্ষের সংসদের বিষয়ে একমত হচ্ছেন, এ ক্ষেত্রে একটি দ্বিকক্ষের সংসদ গঠন হতে পারে উত্তম সমাধান নিম্নকক্ষে প্রচলিত পদ্ধতি এবং উচ্চকক্ষে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে, যা একদিকে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অন্যদিকে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করবে। অন্যদিকে এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে, যদি নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক চাপ বা মতপার্থক্যের কারণে মনে করে যদি পিআরসহ গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সংস্কার বাস্তবায়ন সম্ভব নয়, তবে জনগণের ম্যান্ডেট যাচাইয়ের একমাত্র গ্রহণযোগ্য পথ হবে একটি স্বচ্ছ, স্বাধীন ও সর্বজনগ্রাহ্য গণভোট আয়োজন করা।

চিলি (২০২২) ও তিউনিসিয়ার (২০২১) মতো দেশ গণতান্ত্রিক সংস্কার পরীক্ষায় গণভোটের পথ বেছে নিয়েছে (আইডিইএ গ্লোবাল রিপোর্ট, ২০২২), যা বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও অনুসরণযোগ্য। কারণ এই জাতি চায় প্রকৃত গণতন্ত্র, জবাবদিহি ও সবার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হওয়া। জনগণ তাদের রায় ইতোমধ্যেই স্পষ্ট করেছে, এখন সময় নেতৃত্বের সেই রায়ের প্রতিফলন ঘটানোর, নতুবা ইতিহাসে তারা স্থান পাবে সেসব দুর্বল নেতৃত্ব হিসেবে যারা সত্যের মুখোমুখি দাঁড়াতে ভয় পেয়েছিল। সর্বশেষ প্রত্যাশা, ভবিষ্যতের একনায়কতান্ত্রিক ধারা ও মেরূকরণ থেকে বেরিয়ে এসে একটি সহনশীল, অংশগ্রহণমূলক এবং সুস্থ রাজনীতির ভিত্তি স্থাপন করতে হলে পিআর পদ্ধতির কোনো বিকল্প নেই। গণতন্ত্রের মূল শক্তি হলো জনগণ এবং পিআর পদ্ধতিই সেই জনগণের প্রকৃত রায়কে সংসদে প্রতিফলিত করার সর্বোত্তম উপায়। এখন সময় এসেছে জনগণের ভোটাধিকারকে প্রকৃত মূল্য দিতে, রাজনৈতিক বৈচিত্র্যকে সম্মান করতে এবং আইনপ্রণয়ন প্রক্রিয়াকে অধিকতর প্রতিনিধিত্বমূলক ও জবাবদিহিমূলক করতে হলে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক নির্বাচন পদ্ধতির পথেই আমাদের হাঁটতে হবে।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, সানওয়ে ইউনিভার্সিটি, সেলাঙ্গর, মালয়েশিয়া

x ,ইসি, নির্বাচন

সূত্র, আমার দেশ