শুক্রবার কালবেলায় প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে, তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে সরকারের পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে প্রয়োজনীয় জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রীসহ প্রজনন স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রীর। বিভিন্ন জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির মধ্যে খাবার বড়ি (তৃতীয় প্রজন্ম) খুবই জনপ্রিয়, যা প্রায় ৪০ শতাংশ সক্ষম দম্পতি ব্যবহার করে। তবে দেশের অর্ধেকের বেশি উপজেলায় কনডম, খাবার বড়ি, আয়রন ট্যাবলেট এবং স্বাভাবিক সন্তান জন্মদান কিটসহ মা ও শিশু স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিভিন্ন সামগ্রীর মজুত শূন্যের কাছাকাছি। স্বভাবতই বিশাল একটি জনগোষ্ঠী জরুরি এ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ কারণে অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ের কর্মীদের কাজ প্রায় নেই বললেই চলে। এতে বাড়ছে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের ঝুঁকি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আয়রন ট্যাবলেট প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশের অধিকাংশ নারীর রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম। দরিদ্র ও অল্প বয়সে মা হওয়া নারীদের মধ্যে রক্তস্বল্পতা বেশি। আয়রন ট্যাবলেটের সরবরাহ না থাকলে তাদের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা আরও কমতে পারে, যা অন্তঃসত্ত্বা মা ও সন্তানের ওপর প্রভাব ফেলবে। এ ছাড়া কনডম ও খাবার বড়ির সংকটে পরিকল্পিত পরিবার পরিকল্পনায় প্রভাব পড়বে। অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ বাড়লে গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়বে, যা নারীর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করবে। এটি মাতৃমৃত্যুর কারণও হতে পারে।
আমরা জানি, জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি ও উপকরণ বিতরণের জন্য প্রতি ইউনিয়নে একজন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক ও তিনজন পরিবারকল্যাণ সহকারী দায়িত্ব পালন করেন। তাদের সপ্তাহে চার দিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে দম্পতিদের সঙ্গে আলোচনা ও এ-সংক্রান্ত সামগ্রী বিতরণ করে থাকেন। তবে উপকরণ ঘাটতি থাকায় অনেকেই এখন নিয়মিত যাচ্ছেন না। আবার যারা যাচ্ছেন, তারাও বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ বা মজুত না আসা পর্যন্ত বাজার থেকে কেনার পরামর্শ দিচ্ছেন।
দেশব্যাপী এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি কার্যক্রমের চলমান হালের কারণ হিসেবে যা জানা যাচ্ছে, তা আরও হতাশার। অর্থাৎ এ অবস্থার পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে অর্থ-সংকট। আর এ সংকট শুরু হয় চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে; কেনাকাটায় অনিয়মের অভিযোগকে কেন্দ্র করে। অভিযোগ ওঠায় তখন বাতিল হয় দরপত্র। তার সমাধান হয়নি আজও। তবে সংকট নিরসনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তেমন তৎপরতা না থাকার বিষয়টি হতাশার। আমরা জানি না ঠিক কী কারণে সংশ্লিষ্টরা এ ব্যাপারে উদাসীন।
আমরা মনে করি, দেশব্যাপী পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীনে চলা সেবাটির মাঠপর্যায়ের এই হাল গভীর উদ্বেগের। এ সেবা ব্যাহত হলে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ, মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যু বৃদ্ধির পাশাপাশি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বৃদ্ধি পাবে মোট প্রজনন হার। এটি সত্যিকারই দুশ্চিন্তার। ফলে মা ও শিশুর সুস্থতার জন্য এ সেবার স্বাভাবিক গতি চলমান রাখার কোনো বিকল্প নেই। কেননা উদ্যোগটির সুফল এরই মধ্যে স্বীকৃত ও প্রশংসনীয় হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা, বিশাল এক জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করে এ অনাকাঙ্ক্ষিত সংকট দূরীকরণে সরকার ও সংশ্লিষ্টরা দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।