উপমহাদেশে আবারও যুদ্ধের দামামা বেজে উঠল। কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর সশস্ত্র হামলাকে কেন্দ্র করে ভারত বেশ কিছুদিন থেকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে আসছিল। শেষ পর্যন্ত ভারত একযোগে পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। এই হামলায় কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার প্রকৃত চিত্র এখনো পাওয়া যায়নি। বেশ কিছু বেসামরিক লোক মারা যাওয়ার খবর এসেছে। এ ছাড়া ভারত পাঁচটি যুদ্ধবিমান হারিয়েছে বলে পাকিস্তানের গণমাধ্যমে খবর এসেছে।

পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ফ্রান্সের নির্মিত তিনটি রাফালে জেট, একটি মিগ ২৯ ও একটি এসইউ-৩০ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করা হয়েছে। রাফালে জেট হারানো ভারতের জন্য বড় ধরনের বিপর্যয়, কারণ এই যুদ্ধবিমান দিয়ে ভারতের বিমানবাহিনীকে সাজানো হচ্ছে। পাকিস্তান দাবি করেছে, ইসরাইলের তৈরি একটি হেরন ড্রোন ভূপাতিত করেছে পাকিস্তান।

সম্ভবত ভারতের নীতিনির্ধারকরা আকাশযুদ্ধে পাকিস্তানের প্রস্তুতির বিষয়টি অনুধাবন করতে পারেননি। এর আগেও পাকিস্তানে হামলা করতে গিয়ে ভারতের একটি মিগ-২৯ ধ্বংস ও একজন পাইলট আটক হয়েছিলেন। পাকিস্তান এই হামলার প্রতিশোধ সীমিত আকারে নিতে শুরু করেছে। পাকিস্তানের সেনা মুখপাত্র দাবি করেছেন, একটি ব্রিগেড হেডকোয়ার্টার্স ও সেনাচৌকি ধ্বংস করা হয়েছে। অনেক বিশ্লেষক আশঙ্কা করছেন, ভারতের এই হামলার কারণে সীমিত আকারের যুদ্ধ যেকোনো সময় বড় আকারে রূপ নিতে পারে।

কাশ্মীরে যে হামলা নিয়ে ভারত যুদ্ধ শুরু করেছে, তা নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। পাকিস্তান বারবার বলে আসছে, এই হামলার সঙ্গে দেশটি জড়িত নয়। তারা এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানিয়ে আসছিল। কিন্তু ভারতের উগ্রপন্থি সরকার ও দেশটির জনগণের একাংশের মধ্যে অনেক দিন থেকে যুদ্ধ-উন্মাদনা লক্ষ করা যাচ্ছে। ভারতের সঙ্গে প্রতিবেশী কোনো দেশের সম্পর্ক ভালো নেই। এরই মধ্যে পাকিস্তানে হামলা করে ভারত হয়তো অন্য প্রতিবেশীদেরও কঠোর বার্তা দিতে চায়।

ভারত এমন এক সময় এই হামলা চালাল যখন নরেন্দ্র মোদির জনপ্রিয়তা কমতির দিকে। এ ছাড়া ওয়াক্‌ফ আইন নিয়ে সংখ্যালঘু মুসলিমরা সংক্ষুব্ধ। দেশের বিভিন্ন স্থানে মুসলমানদের সম্পদ দখল করা হচ্ছে। চলছে নিষ্ঠুর নিপীড়ন। যুদ্ধের মাধ্যমে ভারত তার অভ্যন্তরীণ সমস্যার দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিতে পেরেছে।

ভারতের গণমাধ্যমে চলছে যুদ্ধ-উন্মাদনা। এটি দেশটির বড় ধরনের বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। পাকিস্তান যে ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে, সে খবর এখন পর্যন্ত ভারতের মিডিয়ায় প্রচার করা হচ্ছে না। পাকিস্তানের ভাওয়ালপুরে বেসামরিক স্থাপনার ওপর হামলার ভিডিও শুধু দেখানো হচ্ছে ভারতীয় মিডিয়ায়, যার মধ্যে আছে একটি মসজিদ।

অপরদিকে পাকিস্তানসহ আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ভারতের বিমানের ধ্বংসাবশেষ দেখানো হচ্ছে। এতে ভারতের জনগণের মধ্যে উন্মাদনা বাড়লেও তারা যে বড় ধরনের ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন, তার আলামত এখন স্পষ্ট। কিন্তু প্রোপাগান্ডামূলক খবরের মাধ্যমে ভারতের জনগণকে আরো বেশি যুদ্ধংদেহি করা হচ্ছে; কিন্তু ভারতের মানুষ যুদ্ধের প্রকৃত চিত্র জানতে পারছে না। এ ছাড়া আন্তর্জাতিকভাবে ভারতের মিডিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা থাকছে না।

বাস্তবতা হচ্ছে, ভারত সামরিক দিক দিয়ে যত শক্তিশালী হোক না কেন দেশটির বিশাল জনগোষ্ঠী হতদরিদ্র। সাধারণ মানুষের জীবনমানের উন্নতির চেয়ে সামরিক খাতে দেশটি অব্যাহতভাবে ব্যয় বাড়িয়ে চলছে, যার একটি লক্ষ্য প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি পেশিশক্তি দেখানো। পাকিস্তানে হামলা এই মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ।

কিন্তু এ ধরনের যুদ্ধে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি। ভারতের উগ্রপন্থি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হয়তো এই হামলার মাধ্যমে যুদ্ধোন্মাদ মানুষের সমর্থন পাবেন, কিন্তু রাষ্ট্র হিসেবে ভারত আরো বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে। ভারতের প্রতিপক্ষ পাকিস্তান সামরিক দিক দিয়ে একেবারেই দুর্বল কোনো দেশ নয়।

ভারতের মতো পাকিস্তানের হাতে রয়েছে পারমাণবিক অস্ত্র। এখন ভারতের হামলার জবাবে পাকিস্তান প্রতিশোধ নিতে চাইলে তা পরমাণু যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। ফলে এই যুদ্ধের প্রভাব প্রতিবেশী দেশগুলোয় পড়তে পারে। প্রাথমিকভাবে হামলার সমর্থনে ভারত আন্তর্জাতিক সমর্থন পায়নি। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র হতাশা প্রকাশ করেছে। চীন ও তুরস্ক পাকিস্তানের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে, যা কূটনৈতিকভাবে ভারতকে দুর্বল অবস্থায় ফেলবে।

সূত্র, আমার দেশ