নবদ্বীপের রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের সভায় গোপাল ভাঁড় ছিলেন একজন কৌতুকপ্রিয়, ব্যঙ্গাত্মক কিন্তু তীক্ষ্ণবুদ্ধিসম্পন্ন চরিত্র। রাজসভায় অনেক সময় এমন সব পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো, যেখানে রাজা নিজেই গোপালকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করতেন। কিন্তু গোপাল তার প্রখর বুদ্ধিমত্তা, রসবোধ এবং কৌশলী জবাবে রাজার সেই ফাঁদ থেকে বের হয়ে আসতেন।

আবার তিনি কখনো কখনো রাজাকে এমন কথা বলে খেপিয়ে তুলতেন, যা শুনে মনে হতো রাজদ্রোহ করেছেন। কিন্তু পরক্ষণেই সেই কথার এমন ব্যাখ্যা দিতেন যে, পুরো রাজসভা চমক খেয়ে যেত! মহারাজা গোপালের বুদ্ধিতে এতটাই মুগ্ধ হয়ে যেতেন যে হাতে যা থাকত তাই গোপালের গলায় পরিয়ে দিতেন!

মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের পর আরো একজন মহারানি তার মহাসভার গোপালদের ওপর একইভাবে প্রসন্ন হয়ে পড়তেন। যেই গোপাল ভাঁড়রা তখন গণভবনের কথিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকতেন, তাদের সবাই হাজার কোটি থেকে শতকোটি টাকার মালিক বনে গেছেন।

শেখ হাসিনার আমলে আমাদের পুরো গণমাধ্যমটিই যেন গোপাল ভাঁড় দিয়ে ভরে গিয়েছিল। সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে দুই কিসিমের গোপাল ভাঁড়দের দেখা মিলেছে। প্রথম শ্রেণির ‘গোপাল ভাঁড়রা’ ছিলেন সেসব সাংবাদিক, যারা শেখ হাসিনার তথাকথিত সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিতে গণভবনে হাজির হতেন। এরা ছিল ঘিন্না-পিত্তি-কলিজাহীন আজব জীব।

অন্যদিকে, দ্বিতীয় শ্রেণির ‘গোপাল ভাঁড়রা’ ছিলেন অপেক্ষাকৃত পলিশ ও বুদ্ধিমান। তারা সরাসরি গণভবনে গিয়ে হাসিনার পা চাটতেন না, কিন্তু তীক্ষ্ণ কৌশলে, শব্দের আড়ালে অথবা নিরপেক্ষতার ভান করে সেই একই উদ্দেশ্য সাধন করতেন।

গণভবনের মহাসভা যারা অলংকৃত করতেন, তাদের নিয়ে সারা দেশ অনেক টীকা-টিপ্পনী করেছে। কিন্তু এই গণভবনের বাইরে নিরাপদে থেকে যারা গোপালভাঁড়ীয় সাংবাদিকতা করেছেন এবং আজও নিরাপদে এবং সসম্মানে সাংবাদিকতা ও সুশীলতা করে যাচ্ছেন, তাদের ব্যাপারে আমরা খুব একটা কথা বলছি না!

এই দুই ধরনের গোপাল ভাঁড়ই শেষ পর্যন্ত সাংবাদিকতার মর্যাদা ও জনবিশ্বাসের কাঠামোকে নষ্ট করেছে—একদল সরাসরি, আরেক দল ভিন্নপথে। তাই এখন সময় এসেছে—এই ‘ভাঁড়তন্ত্র’ থেকে গণমাধ্যমকে মুক্ত করা ।

প্রখ্যাত টিভি-ব্যক্তিত্ব আব্দুন নূর তুষার গত বছর হাসিনার পতনের আগে আগে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে ঝড় তুলে ফেলেছিলেন। তখন হাসিনার এক পিয়নের ৪০০ কোটি টাকার সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের আইজি বেনজীরের কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’ হয়ে পড়ে । সেই মুহূর্তে আওয়ামী নূর তুষার এক বোমা ফাটালেন। স্ট্যাটাস দিলেন, চাকরের সম্পদ দেখে মনিবের সিন্দুকের গভীরতা টের পাওয়া যায়। এই মনিবটি যে কে জনগণের বুঝতে এক মুহূর্তও কষ্ট হয়নি। সংগত কারণেই তা নিয়ে মহা-হইচই শুরু হয়ে যায়।

মনে হলো মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র এবার গোপাল ভাঁড়ের গর্দান না কেটে থাকবেন না। তখন এই খালেদ মহিউদ্দিন তার ডয়চে ভ্যালে নিয়ে এগিয়ে এলেন। আব্দুন নূর তুষার ডিবিসি টিভির সিইও মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জুকে নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করলেন । সেখানে আব্দুন নূর তুষার অনেকটা গোপাল ভাঁড়ের স্টাইলে কথার স্রোত ঘুরিয়ে ফেললেন! তিনি বলেন, এখানে মনিব বলতে দেশের জনগণকে বুঝিয়েছেন। অর্থাৎ দেশের সম্পদ বা জনগণের সম্পদ বেড়েছে বলেই চাকররা এ রকম চুরির সুযোগ পাচ্ছে। তাতে হাসিনার রাগ উবে গিয়ে মুহূর্তেই প্রসন্নতায় রূপান্তরিত হয়ে পড়ল!

আমন্ত্রিত অতিথিদের এমন দুর্বল মুহূর্তে খালেদ মুহিউদ্দীন পাল্টা প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেন। কিন্তু সেদিন আর খালেদ মুহিউদ্দীন তার বিশেষ মুনশিয়ানার কিছুই প্রদর্শন করলেন না! আরেকবার নিজের অসুস্থ সন্তানকে উদ্ধৃত করে হাসিনার আধ্যাত্মিক মাহাত্ম্য উঁচুতে তুলতে গিয়ে অন্য সাসপেন্সের জন্ম দিয়েছিলেন!

অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কঠিন চ্যালেঞ্জঅবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কঠিন চ্যালেঞ্জ

দুদিন আগে সেই তুষার বিএনপির সমাবেশে গিয়ে আগের কথাটি বলে আবার নতুন করে হিরো সাজলেন, পরে খালেদ মুহিউদ্দীনের অনুষ্ঠানে গিয়ে যে গোপালভাঁড়ীয় সংশোধনী দিয়েছিলেন সেই কথাটি বেমালুম চেপে গেলেন! এটি স্বীকার করতে কোনো দ্বিধা নেই যে, গোপাল ভাঁড়ের চেয়েও হাজার গুণ বুদ্ধি নিয়ে দুনিয়ায় এসেছেন আব্দুন নূর তুষার এবং খালেদ মুহিউদ্দীনরা।

কিন্তু আফসোস! এই মাপের ব্রেনগুলো ঠিক জায়গায় ঠিকভাবে কাজে লাগালেন না! ছাত্রলীগের প্রাক্তন এই নেতারা এই কিসিমে সুশীল না সেজে সরাসরি রাজনীতিতে নামলে তাদের ছোঁয়ায় এদেশের সার্বিক রাজনীতি অনেক পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর হয়ে উঠত।

খালেদ মুহিউদ্দীনরা নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার নামে এক চতুর ধারার রাজনৈতিক অ্যাকটিভিজম শুরু করেছেন । আব্দুন নূর তুষার, মতি- মাহফুজ, মাসুদ কামাল, আনিস আলমগীর এবং এই ঘরানার আরো অনেকেই একই গোয়ালের সুশীল।

এদের সবাই দুটি কাজ অত্যন্ত ঈমানদারীর সঙ্গে আমল করতেন । এক, আওয়ামী লীগের সবাই খারাপ, শুধু হাসিনা ভালো। দুই, বিএনপির সবাই ভালো, শুধু তারেক রহমান খারাপ। বিএনপির অ্যাকটিং চেয়ারম্যান সম্পর্কে একপেশে, প্রমাণহীন ও অত্যন্ত আপত্তিজনক অপ্রাসঙ্গিকভাবে উচ্চারণ করেছিলেন এই খালেদ মুহিউদ্দীন। সেটি ভাইরাল হলেও মহাসচিবের কাছে বোধ হয় পৌঁছায়নি। কিছুদিন পরই দেখা গেল বিএনপি মহাসচিব অত্যন্ত উৎসাহভরে খালেদ মুহিউদ্দীনের অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছেন। জামায়াতের আমির থেকে শুরু করে চরমোনাইয়ের পীর, সবাই খালেদ মুহিউদ্দীনের সঙ্গে বসতে পারলে সম্মানিত বোধ করেন। দুঃখজনকভাবে এটাই জাতীয়তাবাদী ও ইসলামি শক্তির মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট পলিসি।

খালেদ মুহিউদ্দীনের সর্বশেষ হেংকি-পেংকি দেখা গেল চরমোনাইয়ের পীর সাহেবকে নিয়ে! পীর সাহেবরা অনেক আধ্যাত্মিক জিনিস টের পেলেও খালেদ মুহিউদ্দীনদের প্রশ্নের পেছনের মতলবগুলো উপলব্ধি করতে পারেন না। ফলে সহজেই তার ট্র্যাপে পড়ে যান। যে কথা পীর সাহেবের মুখ থেকে শুনতে চাচ্ছিলেন, পীর সাহেব খুব দ্রুতই সেই কথাটি বলে ফেললেন! দেশের জনগণ ভোট দিয়ে নিশ্চয়ই পীর সাহেবকে অন্য একটি আফগানিস্তান তৈরি করতে দেবেন না।

এদেশের সুশীল সমাজের বড় অংশ ইসলামোফোবিক। ইসলামের নাম শুনলেই এরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং চোখের সামনে সরিষার ফুল দেখার মতো খালি আফগানিস্তান দেখতে পান। অথচ একটি মুসলিম দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক বিকাশের পরবর্তী ধাপ যে মালয়েশিয়া হতে পারে, তা এই খালেদ মুহিউদ্দীনরা দেখতে পান না।

শরিয়াহ নিয়ে এই মুহিউদ্দীনরা তার দর্শক-শ্রোতার মধ্যে আতঙ্ক ছড়ানÑতার জন্মটিও বাবা-মায়ের শরিয়াহভিত্তিক একটি চুক্তিনামার মাধ্যমেই হয়েছে। একটি জাতির বাস্তব জীবন ও সামগ্রিক সমাজকাঠামো গড়ে ওঠে তার অর্থনীতি, কূটনীতি, পরিবারনীতি, দাম্পত্যনীতি, শিক্ষানীতি, স্বাস্থ্যনীতি, সাংস্কৃতিকনীতি, পরিবেশনীতি, খাদ্যাভ্যাসনীতির ওপর ভিত্তি করে। এর সবগুলোই শরিয়তের নিয়ন্ত্রণাধীন। রাজনীতি শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলেও পুরো কাঠামোর একটি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র!

ব্রিটিশ শাসনামলেও মুসলমানদের ওয়ারিশ বণ্টন থেকে শুরু করে বিয়ে, তালাক, মিরাস—সবই শরিয়াহ অনুযায়ী পরিচালিত হতো। অনেক কিছুই আমরা করি, কিন্তু জানি না এটাও শরিয়তের অংশ। সমস্যা হলো, এ বিষয়ে অজ্ঞতাকে আমরা গর্বের বিষয় বলে গণ্য করি! আমাদের সুশীল এবং কিছু ইসলামি ব্যক্তিত্ব যুগপৎভাবে ইসলামের একটা ভয়াবহরূপ আমাদের অনুভবে তুলে ধরে।

তিনটি ধারার কোনটি আমাদের দেশের জন্য উপযোগী হবে?

ইসলামের পুরো ইমারতের মধ্যে দশভাগের মতো আছে রাজনীতি বা রাষ্ট্রনীতি-সংক্রান্ত বিষয়। বাদবাকি নব্বই ভাগ নিয়ে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে তেমন কোনো বিরোধ নেই! বিরোধটি তৈরি হয় শরিয়াহর রাজনৈতিক অংশটি নিয়ে। এ ব্যাপারে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো রাজতন্ত্র অনুসরণ করেন। এটি ইসলামে উৎসাহিত না হলেও অনুমোদিত। ইসলামি বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা আফগানিস্তানে শরিয়াহর রাজনৈতিক প্রয়োগটি ইসলামি রীতিনীতিতেই হয়েছে। এই দুটি ধারার বাইরে তৃতীয় ধারাটি গণতান্ত্রিক ধারা, যা আমরা মালয়েশিয়ায় দেখতে পাই।

এদেশের মানুষের ডিএনএর মধ্যেও গণতন্ত্রের উপদান রয়েছে। এমন একটা জনগোষ্ঠীকে গণতন্ত্র ছাড়া সন্তুষ্ট করা অসম্ভব। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশ কখনো যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্যের মতো একটি বস্তুবাদী সেক্যুলার সমাজে পরিণত হবে না। আবার আফগানিস্তানের মতো ‘মার্শাল নেশন’ হওয়া বাংলাদেশের জন্য সম্ভব নয় । বরং মালয়েশিয়ার মতো একটি ধর্ম ও গণতন্ত্রভিত্তিক ভারসাম্যপূর্ণ মডেল অনুসরণ করাই বাস্তবসম্মত।

প্রখ্যাত ইসলামিক বক্তা ড. জাকির নায়েক একাধিকবার বলেছেন, ‘মালয়েশিয়া পৃথিবীর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ গণতান্ত্রিক মুসলিম দেশ।’ একজন মুসলিম চিন্তাবিদের এমন উচ্চারিত মন্তব্য নিছক প্রশংসা নয়Ñএটি একটি দৃষ্টিভঙ্গি, একটি দিকনির্দেশনা। মালয়েশিয়া দেখিয়ে দিয়েছে, কীভাবে একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ইসলামি আদর্শ ও আধুনিক রাষ্ট্র পরিচালনার ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে।

মালয়েশিয়ায় শরিয়াহ আইন রয়েছে, আবার সাধারণ আইনের আধুনিক ব্যবস্থাও বিদ্যমান। নারীরা শিক্ষা ও কর্মজগতে সক্রিয়, আবার হিজাব পরেও উচ্চপদে পৌঁছাতে পারেন। রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকলেও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বজায় থাকে। রাষ্ট্র ইসলামকে রক্ষা করে, আবার অমুসলিমদের অধিকারও নিশ্চিত করে। এ যেন এক পরিপূর্ণ ভারসাম্যের মডেল।

একটি মডারেট ও গণতান্ত্রিক মুসলিম দেশের নেতৃত্বে কি বিএনপি থাকতে পারবে?

ধর্মনিরপেক্ষতার নামে আওয়ামী লীগ ধর্মহীনতার প্রসার ঘটিয়েছে। আওয়ামী লীগ যারা করেন, তারা সবাই ধর্মহীন নাস্তিক না হলেও প্রায় সব নাস্তিক ও ধর্মবিদ্বেষীরা আওয়ামী লীগ করেন। মতিউর রহমান রেন্টু লিখেছিলেন, নামাজি মানুষকে শেখ হাসিনা প্রচণ্ড ঘৃণা করেন! ১৬ বছর এদেশের মানুষ রেন্টুর এই কথাগুলোর সত্যতার যথাযথ প্রমাণ পেয়েছে।

বিএনপির শত্রু, মিত্র এবং ভক্ত সবারই কিছু জিনিস জেনে রাখা উচিত। ১৯৭১ সালে ইসলামকে ধ্বংস করার জন্য দেশটি স্বাধীন করা হয়নি। তারপরও দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ দেশের মানুষ অত্যন্ত বেদনার সঙ্গে লক্ষ করে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রাম থেকে কোরআনের আয়াতটি খসে পড়েছে। বাদবাকি সব প্রতিষ্ঠান থেকে ‘ইসলাম’ শব্দটি উধাও হয়ে যেতে থাকল। সে সময় সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের অন্তরে দগদগে অনেক ঘায়ে কিছু মলমের ব্যবস্থা করেছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। তিনি আধিপত্যবাদী শক্তির রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সংবিধানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম সংযুক্ত করলেন। ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস প্রতিস্থাপন করলেন। এই কাজটি তিনি নিজের ভেতর থেকেই করেছিলেন। কোনো জামায়াত নেতা বা অন্য কারো পরামর্শে তা করেননি। এ কারণেই তাকে জীবনটি দিতে হয়েছে এবং তার নামের আগে শহীদ শব্দটি এ কারণেই মুসলিম উম্মাহ যোগ করেছে।

যারা ‘দুই সাপের এক বিষ’ তত্ত্বের প্রচারক তাদের ওপরের বিষয়টি স্মরণে রাখা উচিত। একইভাবে বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মী এবং ভক্ত ভাই-বেরাদারও শব্দচয়নে একটু সতর্ক থাকতে হবে। প্রতিপক্ষের শরিয়াহর দশভাগের বিরোধিতা বা ভিন্নমত দেখাতে গিয়ে বাদবাকি নব্বই ভাগের বিপক্ষে যেন অবস্থান নিয়ে না ফেলি। যদিও সংবিধানে কিছু পরিবর্তন এনে ইসলামের রাজনৈতিক অংশের সঙ্গেও একটা সমন্বয় বিএনপির পলিটিক্যাল ফিলোসফিতে স্পষ্ট করা হয়েছে। বিএনপির সেই অবস্থানের সঙ্গে ইসলামপন্থিদের কিছু মতপার্থক্য থাকতেই পারে। মালয়েশিয়ায় আনোয়ার ইব্রাহিম এবং তুরস্কের এরদোয়ানের সঙ্গেও নিজ নিজ প্যারেন্ট দলের সঙ্গে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। মুসলিম বিশ্বের এই দুই টাওয়ারিং ব্যক্তিত্ব তাদের মিশন বদলালেও ভিশন অপরিবর্তিত রেখেছেন।

কাজেই ইসলামপন্থিদের সঙ্গে বিএনপির যে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয়েছে, সেটাকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখলে তা থেকে দেশের গণতন্ত্র উপকৃত হবে। কিন্তু সেই দ্বন্দ্বের জায়গাগুলোয় এই গোপাল ভাঁড়দের হাওয়া দেওয়ার সুযোগ দিলে তা জাতির জন্য গলার কাঁটা হয়ে পড়তে পারে।

মহারানির সব লিগ্যাসি থেকে জাতিকে মুক্ত করতে হলে গণভবনের ভেতরের এবং বাইরের সব গোপাল ভাঁড়কেও চিহ্নিত করে আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক এবং সাংস্কৃতিক জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে। তা না হলে এরাই আবার ফ্যাসিবাদকে ফিরিয়ে আনবে। সংগত কারণেই এরা এখন বিএনপির দিকে ভিড়বে । এদের ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিএনপি নেতৃত্বকে একটু সতর্ক ও স্মার্ট হতে হবে! তা না হলে লাভের গুড় সব পিঁপড়ারা খেয়ে ফেলতে পারে!

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট

সূত্র, আমার দেশ