পৃথিবীতে আজকের যে মানুষগুলো ইহুদি তারা হজরত মুসা (আ.)-এর বণী ইসরায়েলের বংশধর। মূলত তারা ছিল বেঈমান ও নাফরমান জাতি। হজরত মুসা (আ.) কে তারা অনেক কষ্ট দিয়েছে। মুসা (আ.) তাদের জন্য এত কষ্ট করেছিলেন তার পরও তারা বিভিন্নভাবে মুসা (আ.) কে বিভিন্ন অজুহাত দাঁড় করিয়ে বিচলিত ও পেরেশানিতে রাখত।
স্বয়ং আল্লাহ নিজেই তাদের ওপর নাখোশ ছিলেন। তাদের ওপর আল্লাহর লানত নাজিল হয়েছিল। ১৯৪৫ সালের আগ পর্যন্ত ইসরায়েল নামে কোনো রাষ্ট্র ছিল না। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তাদের আচার-ব্যবহারের কারণে তারা অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মানুষের দ্বারা চরমভাবে নির্যাতিত হতো।
হিটলার ৬০ লাখ ইহুদি মেরে তাদের বের করে দিয়েছিলেন। খ্রিস্টানরা যিশুখ্রিস্টের মৃত্যুর কারণ হিসেবে ইহুদিদের হত্যা করে। একসময় ব্রিটিশরা ইহুদিদের সন্ত্রাসী বলে ডাকত। ছিন্নবিচ্ছিন্ন ইহুদিরা নিজেদের অস্তিত্বের জন্য একটি আলাদা দেশ গঠন করতে চায়।
বিভিন্ন দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে ১৮৮১ সালে ফিলিস্তিন এলাকায় বসবাস করে। জেরুজালেম ছিল ইহুদিদের জন্য পবিত্র এলাকা। অটোমান সাম্রাজ্যের আমলে ইহুদি, খ্রিস্টান এবং মুসলমানরা একসঙ্গে বসবাস করত। পৃথিবীতে ইহুদিরা এত নিগৃহীত এবং অত্যাচারিত ছিল যে তাদের করুণ অবস্থা দেখে মুসলমানরা তাদের খুব ভালোবাসত। তারাও মুসলমানদের অনেক সমীহ করত।
ফিলিস্তিনি মুসলমানরা বিশাল ভূখন্ডে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের থাকার সুযোগ করে দিয়েছিল। ধীরে ধীরে তারা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্র গঠনের জন্য লড়ছিল এবং শক্তি প্রয়োগ করে ফিলিস্তিনিদের বের করে দিয়েছিল। ১৯৪৭ সালে মোট ভূখণ্ডের ৪৪%, ১৯৬৭ সালে ২২%, এবং ২০২০ সালে ১৫% দখল করে নেয়। ফিলিস্তিনিদের অধিকার, সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সারা জীবন নিজের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দিয়ে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত ঘুরে স্বীকৃতি আদায়ের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। তিনি ছিলেন প্যালেস্টাইন লেবার অরগাইজেশন (পিএলও) প্রধান ইয়াসির আরাফাত। তার অবদান ছিল অপরিসীম। তিনি অনেক ক্ষেত্রে সফলও হয়েছিলেন। তার নিরলস পরিশ্রম, ব্যক্তিত্ব উদারতা বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছিল। ইসরায়েল বুঝতে পেরে তাকে হত্যা করে।
পৃথিবীতে ৫৭টি মুসলিম রাষ্ট্র রয়েছে। মোট জনসংখ্যা ২০০ কোটিরও বেশি। রয়েছে তাদের সংগঠন ওআইসি। অথচ মানবতা বিবর্জিত তারা যে হত্যাযজ্ঞের খেলায় মেতে উঠেছে তার কোন প্রতিবাদ বা কারো হুঁশিয়ারি বা হুংকার পরিলক্ষিত হচ্ছে না। তুরস্ক, সৌদি আরব, পাকিস্তান, ইরান, জর্দান সবাই নীরব। মুসলিম দেশগুলো একে অপরের বিরোধী। সবাই কম বেশি আমেরিকার ওপর নির্ভরশীল। ফিলিস্তানিদের মৃত্যু যন্ত্রণা, চোখের পানি ছিন্ন ভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, হাত বেঁধে গুলি করে হত্যা, আকাশ থেকে বিধ্বংসী বোমা ও অস্ত্রের গর্জন, একদিকে গুলি অন্যদিকে খাদ্য ও পানির অভাব শিশুদের মৃত্যু বিশ্বের বিবেকবান মানুষের হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করেছে। অথচ সেই দেশে ঘুমিয়ে আছে মানবতার মুক্তির দূত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব নবীকূলের শিরোমনি হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.)। তারই তারই জন্মভূমিতে রাষ্ট্র পরিচালনায় যারা আছেন তাদের ভূমিকা নিষ্ক্রিয়।
পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেক দেশে প্রতিদিন বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ হচ্ছে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানসহ সারা বিশ্বের অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও প্রতিবাদ বিক্ষোভে ফেটে পড়ছে কিন্তু ফিলিস্তানিদের আশেপাশে যে মুসলিম রাষ্ট্রগুলো আছে তারা নির্বিকার তাদের দেহে রক্ত আছে কিন্তু সে রক্ত হিম শীতল। খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেটে রাস্তায় মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে তখন সাইকো ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কসাই নেতা নিয়াহু হাসিমুখে মিটিং চালিয়ে যাচ্ছেন, তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দিয়ে হোয়াইট হাউজে আনা হয়েছে। আর আমরা মুসলিম বিশ্ব সেটা করুন ভাবে চর্ম চক্ষু দিয়ে দেখছি আর দীর্ঘশ্বাস ফেলছি। আফসোস আমাদের ঈমানী শক্তি। মনে পড়ে নবী করীম (সঃ) এর জীবনের যুদ্ধ গুলোর কথা। অল্প সংখ্যক সৈন্য নিয়ে তিনি বড় বড় যুদ্ধ করে জয়ী হয়েছেন। ইসলামের পতাকা উড্ডায়ন করে প্রতিষ্ঠা করেছেন ইসলামী শাসন। পরাশক্তি চীন রাশিয়া সহ অন্যান্য দেশ আমাদের সাথে অভিনয় করে মজা নিচ্ছে। আমরা মুসলমানেরা হয় আমেরিকা না হয় চীন বা রাশিয়ার দ্বারস্থ হচ্ছি। তারা দুই দিক দিয়ে অস্ত্র বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে। আর আমরা হারাচ্ছি আমাদের ভাই-বোন এবং ছোট ছোট সোনামণিদের। তাদেরকে হাত বেঁধে গুলি করে গর্তের মধ্যে নিষ্ঠুরভাবে মাটি চাপা দেওয়া হচ্ছে। এই অকল্পনীয় এবং অভাবনীয় দৃশ্য ট্রাম প্রশাসন ও মধ্যপ্রাচ্যের কসাই নেতানিয়াহুর হৃদয় গলাতে পারেনি বরং তারা রক্তের হোলি খেলায় মেতে উঠেছে। এই কসাই নেতানিয়াহূর করুন পরিনতি পৃথিবীর ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও ফিলিস্তিনিদের প্রতি যারা সহানুভূতিশীল তারা দেখতে চায়। ফিলিস্তিনি মুসলমানদের হৃদয়হীন ভাবে আকাশ পথে স্থলপথে যে নির্যাতন নিপীড়ন ও মর্মান্তিকভাবে হত্যা করা হচ্ছে তাতে মনে হয় না পৃথিবীতে আমরা এখন সভ্য জাতি হিসেবে বসবাস করছি। হে আল্লাহ তোমার পবিত্র ভূমি মুসলমানদের প্রথম কেবলা আল আকসা মসজিদ। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেরাজে গমনের সময় পৃথিবীর সব পয়গম্বরদের সাথে নিয়ে এখানে নামাজ আদায় করেছিলেন। তাই এটা সমগ্র মুসলমানদের জন্য একটি পবিত্র ভূমি। যা রক্ষার দায়িত্ব সমগ্র মুসলিম বিশ্বের প্রতিটি জনগণের।
হে আল্লাহ তুমি দয়াশীল ক্ষমাশীল এবং পরাক্রমশীল। তুমি আমাদের দয়া করো। আমরা আর ফিলিস্তিনিদের কষ্ট সহ্য করতে পারছি না। নিষ্পাপ শিশুদের করুণ চাহনি ক্ষুধার কষ্ট মৃত্যু যন্ত্রণা নির্মমভাবে নারী-পুরুষ হত্যা আর যে সইতে পারছি না। বহিতে পারছি না তাদের কষ্ট। শহীদের রক্ত ও বারুদের গন্ধ বাতাস বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। হে আল্লাহ কোটি কোটি তোমার প্রিয় বান্দাদের দোয়া তোমার শাহী দরবারে পৌঁছে গেছে। হে আসমান জমিনের মালিক তুমি আরশে আজিমে বসে সবকিছু অবলোকন করছো। তুমি তাদের পাশে থেকে তাদেরকে হেফাজত করো। তাদের রক্ষা করো ইসলামের শত্রুদের ধ্বংস করো আমিন।
কয়েকদিন আগে গাজার একটি মসজিদ থেকে মুয়াজ্জিনের ঘোষিত পরম করুণাময় মহা শক্তিধর আল্লাহর নিকট করুন নিবেদন যা ছিল খুবই হৃদয়বিদারক। হে ইসলামের অনুসারীরা তোমাদের কাছে সাহায্যের আবেদন করছি। সব পথ বন্ধ হয়ে গেছে সব যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে গেছে, পৃথিবীর মানুষের সাহায্য ফুরিয়ে গেছে। এখন হে আল্লাহ তুমি ছাড়া আর কেউ নেই। হে আল্লাহ তারা নিজেদের শক্তির উপর গর্ব করে। আমরা তোমার শক্তির মাধ্যমে তাদের ওপর বিজয়ের প্রার্থনা করি।
গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে বাড়িঘর মাটির সাথে মিশে গিয়েছে। ওআইসি কে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি করে ইজরাইলকে এক ঘরে করে ফেলতে হবে। ইজরাইলের সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন এবং সকল প্রকার পণ্য বয়কট করতে হবে। ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়িয়ে খাদ্য বস্ত্র বাসস্থান চিকিৎসা ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করতে হবে। ওআইসি এর উচিত হবে সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে সাথে নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে কসাই নেতানিয়াহুর ও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে বিচার নিশ্চিত করা। মুসলিম দেশগুলোকে যদি একই ফ্রেমে আনা যায় তাহলে পরাশক্তিগুলো আমাদের পিছনে পিছনে ঘুরবে এটা আমি ধারণ করি ও বিশ্বাস করি।
পরিশেষে বলতে পারি জাতিসংঘ হল একটি ব্যর্থ প্রতিষ্ঠান। জাতিসংঘ থেকে যেদিন ভেটো ক্ষমতা রোহিত হবে সেদিন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে। মূলত জাতিসংঘ হল পরা শক্তিধর দেশগুলোর ধারক ও বাহক। বিশ্ব মোড়লের বিশ্ব ক্রীতদাস হলো জাতিসংঘের মহাসচিব। আমেরিকার টাকায় পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। জাতিসংঘের যদি নিজস্ব মেরুদন্ড না থাকে, কোন প্রশাসনিক ক্ষমতা না থাকে, তাহলে এই প্রতিষ্ঠানের কোন প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। ইউক্রেন যুদ্ধ ফিলিস্তিনিদের গণহত্যায় যে সংস্থার কোন ভূমিকা নাই, দিনের পর দিন যে মহামূল্যবান প্রাণগুলো অকালে ঝরে পড়ছে, তাদের জীবনের স্বপ্ন মাটির সাথে মিশে যাচ্ছে, সেখানে জাতিসংঘ নির্লজ্জ বেহায়ার মত বেতনভুক্ত কর্মচারী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। হায় জাতিসংঘ তুমি বড় অসহায়।
লেখক : অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান সমাজকর্ম বিভাগ মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজ, ঢাকা।