আওয়ামী স্বৈরাচারে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষাঙ্গন তথা শিক্ষাব্যবস্থা। রাষ্ট্রের অন্য যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রাজনীতি, সমাজনীতি অথবা অর্থনীতিতে সংস্কার যতটা সহজ, ততটাই কঠিন শিক্ষাব্যবস্থার পুনর্গঠন। রাজনীতিতে শৃঙ্খলা বিধানের কাজ চলছে। সামাজিক স্থিতাবস্থা ক্রমে ক্রমে দৃশ্যমান হচ্ছে। কিন্তু শিক্ষাঙ্গন তথা শিক্ষাব্যবস্থায় নিয়ম-কানুন-শৃঙ্খলা ফিরে আসেনি; বরং তা গুরুতর অবজ্ঞা, অবহেলা ও অরাজকতায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যাদের রক্তের বিনিময়ে নির্মিত হয়েছে দ্বিতীয় স্বাধীনতা, সেখানে তাদেরকে লেখাপড়ামুখী না করে; বরং অধিকতর রাজনীতিমুখী করা হয়েছে।
আগে ছিল একদলীয় প্রভাব ও প্রতাপ, এখন বহুদলীয় কোন্দল, মারামারি এমনকি খুনাখুনিতে রক্তাক্ত হচ্ছে শিক্ষাঙ্গন। আন্দোলনের উত্তরাধিকারী হিসেবে তাদের যে আদর যত্ন ও পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়ার প্রয়োজন ছিল তা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তরফ থেকে নিষ্ঠার সাথে পালন করা যায়নি। রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিরা সম্ভবত তাদেরকে ‘যেমন খুশি তেমন সাজে’ সাজতে দিয়েছেন। অবশ্য এটি অস্বীকার করা যাবে না যে, আন্দোলন পরবর্তীকালে তারা ‘মানেনিকো কোনো আইন, নিয়ম-কানুন, শৃঙ্খল’। তারা অনেকটা অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করার অধিকার যেন পেয়ে বসেছিল। স্বাধীনতা মানে যে অবাধ স্বাধীনতা নয় রুশোর সেই মহৎ উক্তি- ‘Man is born free but everywhere he is in chain’ মনে করিয়ে দেয়ার গরজ অনুভব করেনি কেউ।
শিক্ষাব্যবস্থার সামগ্রিক সংস্কার প্রয়োজন। এই প্রয়োজনে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় পর্যন্ত বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা প্রয়োজন। এই সময়ে প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা অকার্যকর রয়েছে। এক্ষেত্রে আমাদের দেখতে হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আমরা কি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শেখাব নাকি বাংলাদেশের আদর্শে গড়ে তুলব। মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থা কিছুটা সচল থাকলেও সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জাঁতাকলে নিষ্পিষ্ট হচ্ছে সংশ্লিষ্ট ছাত্রসমাজ। মাধ্যমিক পর্যায়ে যেহেতু ভবিষ্যৎ নাগরিকদের গড়ে ওঠার প্রকৃষ্ট সময়, সেহেতু তাদেরকে একটি আদর্শ রাষ্ট্রের নাগরিকরূপে তুলে ধরার প্রয়োজনে নীতি ও মূল্যবোধের সমন্বয় ঘটাতে হবে
এমনিতেই গণ-অভ্যুত্থানের পর ছাত্র সংগঠনগুলো অনেকাংশে নিজ নিজ বলয়ে বা সংগঠনে প্রত্যাবর্তন করেছে। সেখান থেকে খুব স্বাভাবিকভাবেই সর্বজনীন, নিরপেক্ষ ও একাডেমিক আবেদন সম্ভব ছিল না। আন্দোলনকারীরা এই বিশাল জনশক্তিকে কাজে ব্যস্ত রাখার বা রাষ্ট্রিক উন্নয়নের কোনো ধারায় ব্যাপৃত করার ব্যবস্থা নেয়নি। অথচ ট্রাফিক ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারে ও নিরাপত্তা বিধানে তাদের প্রশংসাজনক ভূমিকা ছিল। প্লাবনে যেমন পানি আসে রাশি রাশি তেমনি আবর্জনাও আসে। গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তীকালে আমরা দেখলাম সাধারণ বিদ্যালয় থেকে, মহাবিদ্যালয় এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আইন, শৃঙ্খলা ও প্রাতিষ্ঠানিক কর্তৃত্ব নিজ হাতে তুলে নিয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষকরা অপমানিত, অপদস্থ ও অবনমিত হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আওয়ামী ধারারই যেন পুনঃপ্রত্যাবর্তন হলো। আওয়ামী প্রাতিষ্ঠানিক কমিটিগুলো ভেঙে দেয়া সঙ্গত ছিল। কিন্তু আমরা দেখলাম অসঙ্গতিপূর্ণভাবে সেই দলীয় ধারার প্রত্যাবর্তন। যে সরকারটি অন্তর্বর্তীকালীন, নিরপেক্ষ এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার কথা, সেখানে কোনো রকম নীতি বা নিয়মের তোয়াক্কা না করে অনেক ক্ষেত্রে দলীয় লোকজন বসিয়ে দেয়া হলো। এই উদাহরণ প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত দেখা গেছে।
সন্দেহ নেই ছাত্ররা বিপ্লবের বা গণ-অভ্যুত্থানের রক্ষকের ভূমিকা পালন করেছে বারবার। কিন্তু একবার তারা যখন অন্যায় আবদার করল তখন তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ বা উপদেশ দেয়ার কাউকে পাওয়া গেল না। মব বা আন্দোলনের মুখে দাবি মেনে নেয়ার শুরুটা হয় গত আগস্টে। সবেমাত্র দায়িত্ব গ্রহণ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর মধ্যেই ২০২৪ সালের এইচএসসি ও সমমানের স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে ঢুকে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে তাদের দাবি নিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। সেখানে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে বাতিল করা হয় স্থগিত পরীক্ষাগুলো। সরকারের এ সিদ্ধান্তে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা তখন মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন। এমনকি শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ নিজেও হতাশা প্রকাশ করেন। কার্যত কিছুই করতে পারলেন না।
এরপর শিক্ষাকার্যক্রম পর্যালোচনা ও পরিবর্তন ক্ষেত্রেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় সুষ্ঠু সমাধানে যেতে পারেনি। কেবল অদল-বদল ও পরিবর্তন-পরিবর্ধনে কেটেছে সময়। পাঠ্যবই বিতরণ ক্ষেত্রেও তারা সাফল্য দেখাতে পারেনি। সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্যের কথা এই যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ডজন ডজন কমিশন গঠন করলেও শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে আজ পর্যন্ত কোনো কমিশন ঘোষণা করতে পারেনি। ইতোমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ে অদল-বদল ঘটেছে কিন্তু কোনো স্থিতাবস্থা ফিরে আসেনি। কেবলই আন্দোলনের মুখে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নিয়েছে। সাত কলেজের ছাত্ররা যে আন্দোলন করল তার পরিসমাপ্তি তাদের সিদ্ধান্ত মোতাবেকই নিতে হয়েছে। তিতুমীর কলেজের ছাত্রদের আন্দোলন কোনোরকম সিদ্ধান্ত ছাড়াই ধামাচাপা দেয়া হয়েছে। একটি রাজনৈতিক সরকার এ ধরনের মবের মুখে অনুকূল সিদ্ধান্ত নিতে পারে কিন্তু যে সরকারটি ক্ষমতার তোয়াক্কা করে না : ভালো কিংবা মন্দ, উচিত বা অনুচিত যেখানে সিদ্ধান্তের সীমারেখা হওয়া উচিত সেখানে তুষ্ট করার নীতি অনাকাক্সিক্ষত। প্রাথমিকভাবে শক্তি প্রয়োগ এবং অবশেষে আত্মসমর্পণ কোনো নীতি হতে পারে না।
সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশে এখন যে শিক্ষার পরিবেশ বিরাজ করছে তার কয়েকটি নমুনা দেয়া যাক : ১. তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বনানীতে পারভেজ মোশারফ (২৩) নামে প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। এই হত্যাকাণ্ডটির রাজনৈতিক লেবাস পরিলক্ষিত হয়। ছাত্রদল অভিযোগ করেছে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত আছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা। ২. আবার ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, সাতজন আহত, ২২ এপ্রিল ২০২৫। ৩. কুয়েটের উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শাহবাগে ‘ব্লকেড’, যান চলাচল বন্ধ, ২২ এপ্রিল ২০২৫। ৪. খামারবাড়ির সব ফটকে তালা দিয়ে কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, ২১ এপ্রিল ২০২৫। ৫. বরিশালে দাবি আদায়ে শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ, জনদুর্ভোগ, ৯ এপ্রিল ২০২৫। ৬. ছয় দফা দাবিতে এবার রেলপথ অবরোধের ঘোষণা পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের, ১৭ এপ্রিল ২০২৫। ৭. তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে স্কুলশিক্ষার্থীদের মারামারি, আহত ৫, ২১ এপ্রিল ২০২৫। ৮. স্কুল প্রাঙ্গণে মারামারি, দুই শিক্ষার্থী আজীবনের জন্য বহিষ্কার, ২২ এপ্রিল ২০২৫। ৯. মুন্সীগঞ্জে তুচ্ছ ঘটনায় স্কুলশিক্ষার্থীদের মারামারি, আহত ৪, ২২ এপ্রিল ২০২৫। ১০. ঢাবি ও জাবিতে দু’জনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪। এসব ঘটনাবলি শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা ও অরাজকতা প্রমাণ করে। দেখা যাচ্ছে, আগের মতোই রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা শিক্ষাঙ্গনকে বিষাক্ত করে তুলছে। খুব হাস্যকর বিষয় যে, ঢাকা কলেজ বনাম সিটি কলেজ কয়েক মাসের বিরতি দিয়ে আবারো তাদের যুদ্ধ শুরু করেছে। যেহেতু ঘটনাটি অনেক দিনের সেহেতু এই ক্রনিক ব্যাধি দূর করার জন্য কি কোনো কর্তৃপক্ষ নেই? ঢাকা কলেজ বা সিটি কলেজ কি অধ্যক্ষশূন্য? শিক্ষা অধিদফতর বা শিক্ষা মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি কি দৃশ্যমান হয়নি? সাত কলেজ, পলিটেকনিক শিক্ষার্থী কিংবা কৃষি ডিপ্লোমাধারীরা রাজপথে নামার আগে তাদের প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেয়া কি জরুরি ছিল না? প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ছাত্রটিকে হত্যা করা হয়েছে তার কারণ অতি তুচ্ছ। প্রতিদিন বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অঘটন ঘটছে এগুলো দেখার জন্য কি কেউ নেই?
ছাত্রসংগঠনগুলো পরস্পরবিরোধী অবস্থানে চলে গেছে। অথচ এই সেদিনে ছিল তারা ঐক্যবদ্ধ। কেবল ক্ষমতাকেন্দ্রিক প্রতিযোগিতার কারণে ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে মারামারি ও প্রতিহিংসা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সফল বিপ্লবের পর তাদের আনুষ্ঠানিক দাবি ছিল লেজুড়বৃত্তি ছাত্ররাজনীতির অবসান। আমরা আগেও বলেছি, বিষয়টি এতই সংবেদনশীল যে, যেকোনো দলীয় সরকার তাদের স্বার্থেই ছাত্ররাজনীতির এই ন্যূনতম সংস্কারটুকু মেনে নেবে না। তারা চাইবে আগের মতোই ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতার পাহারাদার হবে তাদের ছাত্রসংগঠন। প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার যেহেতু অরাজনৈতিক ও অন্তর্বর্তীকালীন, তারাই জাতীয় স্বার্থে ঝুঁকি নিতে পারে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দলীয় রাজনীতির অবসান ঘটাতে পারে। কিন্তু তারা নিশ্চল, নিশ্চুপ রয়েছে। এ পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপই নেয়া হয়নি। কিন্তু কেন?
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অতি সাম্প্রতিককালে অতি উত্তপ্ত হওয়ার বড় কারণ ছাত্র সংসদ নির্বাচন। গত বছর জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যে ৯ দফা দাবি পেশ করেছিল তার ৭ নম্বরে ছিল ছাত্র সংসদ চালু করার কথা। নির্বাচন ব্যতীত ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠিত হওয়া অসম্ভব। শিক্ষাব্রতী মানুষজন ধারণা করেছিল, দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই দাবিটি পূরণ করবে। কিন্তু তা না করে তারা ছাত্রদের মধ্যে বিবাদ, বিসংবাদ ও শত্রুতা বাড়িয়ে দেয়ার সুযোগ দিয়েছে। ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে চারটি বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের দাবির মুখে কিছু তৎপরতা লক্ষ করা গেলেও তা অনিশ্চিত। কারণ চলমান ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে জনপ্রিয়তার তীব্র প্রতিযোগিতা রয়েছে। প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রধান রাজনৈতিক শক্তির ছাত্রসংগঠনটির অবস্থান নিরঙ্কুশ নয়। নতুন ছাত্রসংগঠন ও পুরনো সুসংগঠিত ছাত্রসংগঠনটি সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিষ্ঠানে জনপ্রিয়। তাই তারা দাবি তুলছেন জাতীয় নির্বাচনের পরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের। জাতীয় নির্বাচনের ধারা এসব প্রতিষ্ঠানেও প্রকট রয়েছে।
দায়িত্বশীল মহল মনে করে, ছাত্রদের শৃঙ্খলায় নিয়ে আসার জন্য ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান অপরিহার্য। এতে তাদের পারস্পরিক ঝগড়া বিবাদের সাময়িক অবসান ঘটাবে। তবে এসব নির্বাচনের আগে অতি অবশ্যই ছাত্ররাজনীতিকে জাতীয় রাজনীতি থেকে বিযুক্ত করতে হবে। যাতে ছাত্ররা ক্ষমতার জন্য এবং ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকার জন্য ছাত্রলীগের মতো ন্যক্কারজনক ভূমিকা পালন করতে না পারে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবে বলে শিক্ষানুরাগী মহল মনে করে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব সম্পর্কে সমীক্ষা নিলে একটি জেনারেশন গ্যাপ বা প্রজন্ম ব্যবধান লক্ষ করবেন। এর কারণ, বিগত তিন দশক ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়া। ভবিষ্যৎ জাতীয় নেতৃত্বের প্রয়োজনেই আশু ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান আবশ্যক।
শিক্ষাব্যবস্থার সামগ্রিক সংস্কার প্রয়োজন। এই প্রয়োজনে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় পর্যন্ত বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা প্রয়োজন। এই সময়ে প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা অকার্যকর রয়েছে। এক্ষেত্রে আমাদের দেখতে হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আমরা কি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শেখাব নাকি বাংলাদেশের আদর্শে গড়ে তুলব। মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থা কিছুটা সচল থাকলেও সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জাঁতাকলে নিষ্পিষ্ট হচ্ছে সংশ্লিষ্ট ছাত্রসমাজ। মাধ্যমিক পর্যায়ে যেহেতু ভবিষ্যৎ নাগরিকদের গড়ে ওঠার প্রকৃষ্ট সময়, সেহেতু তাদেরকে একটি আদর্শ রাষ্ট্রের নাগরিকরূপে তুলে ধরার প্রয়োজনে নীতি ও মূল্যবোধের সমন্বয় ঘটাতে হবে। উচ্চশিক্ষার অবস্থাও তথৈবচ। বাংলাদেশে ইতোমধ্যে ব্যাঙের ছাতার মতো হাজার মহাবিদ্যালয় গড়ে উঠেছে। প্রকৃত শিক্ষার প্রয়োজনে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়ার ক্ষেত্রেও নীতি ও আদর্শের বিকাশ ঘটাতে হবে। আমরা আগেই বলেছি, গত রেজিমে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষাক্ষেত্র। শিক্ষাক্ষেত্রের মধ্যে আবার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাসূচি ও শিক্ষার পরিবেশের সর্বনাশ সাধিত হয়েছে সবচেয়ে বেশি। সুতরাং শিক্ষার সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য অবিলম্বে একটি বলিষ্ঠ শিক্ষা কমিশন গঠন করার আবেদন জানিয়ে শেষ করছি।
লেখক : অধ্যাপক (অব:), সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়