বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার অন্যান্য কিছু স্তরে গবেষণাকর্মের যথেষ্ট সমাদর থাকলেও মাধ্যমিক পর্যায়ে এটি অনেকটা উপেক্ষিত। পরোক্ষভাবে গবেষণাকর্মকে নিরুৎসাহিত করার পদ্ধতিগত সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা এখানে রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার অন্যান্য কিছু স্তরে গবেষণাকর্মের যথেষ্ট সমাদর থাকলেও মাধ্যমিক পর্যায়ে এটি অনেকটা উপেক্ষিত। পরোক্ষভাবে গবেষণাকর্মকে নিরুৎসাহিত করার পদ্ধতিগত সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা এখানে রয়েছে। আমরা জানি, শিক্ষার বুনিয়াদি ভিত মজবুতকরণে মাধ্যমিক স্তর একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। আর এ-ও জানি, একজন দক্ষ শিক্ষক ছাড়া কখনো মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে মাধ্যমিকে গবেষণার তেমন কোনো গুরুত্ব নেই, বেতন কাঠামোয় তিনটি ধাপ বৃদ্ধি ছাড়া অ্যাকাডেমিক কোনো পদমর্যাদা বাড়ানোর কোনো সুযোগও নেই।

মাধ্যমিকে শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে ওই সব মেধাকে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন, যারা মাধ্যমিকে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা নিয়ে দীর্ঘদিন মাধ্যমিকে শিক্ষকতা করেছেন। পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে শিক্ষা ও গবেষণায় অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, নায়েম, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর, সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজসহ যেখানে মাধ্যমিক সংশ্লিষ্ট কাজ রয়েছে এসব পদ মাধ্যমিক থেকে উঠে আসা গবেষকদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করলে মাধ্যমিক শিক্ষার গুণগত মান বাড়বে। এর প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে মাধ্যমিক থেকে গবেষণাকাজে তথা উচ্চশিক্ষা অর্জনের যাবতীয় অন্তরায়সমূহ তুলে ফেলতে হবে। মাধ্যমিকে গবেষণার চিন্তা মানেই অবজ্ঞা, উপেক্ষা ও বঞ্চনায় ভরা হাজারও যন্ত্রণা।

মাধ্যমিক থেকে উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে গেলে বাধ্য হয়ে অর্ধগড় বেতনে শিক্ষাছুটি নিতে হয়। দুই বছরের বেশি কোনোক্রমে শিক্ষাছুটি ভোগ করা যায় না। কোথাও স্কলারশিপের আবেদন করলেও সেটিকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয় না। স্কলারশিপ না পাওয়ায় এ সীমিত সময়ে প্রেষণে যাওয়ার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হতে হয়। ফলে অর্থনৈতিকভাবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হন। অবশ্যই এখানে কিছু সংস্কার প্রয়োজন। রাজস্ব খাতে চাকরি হলে তারা স্কলারশিপ পান বা না পান, উচ্চশিক্ষা চলাকালীন পূর্ণ বেতন ভাতায় প্রেষণে ছুটি ভোগ করার অধিকার রাখবেন। উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সময় পূর্ণকালীন এমফিল ও পিএইচডির জন্য পুরো সময়ে প্রেষণে শিক্ষাছুটি ভোগ করবেন। এমফিলের জন্য পূর্ণকালীন ন্যূনতম দুই বছর ও পিএইচডির জন্য পূর্ণকালীন ন্যূনতম তিন বছর। এক্ষেত্রে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি কলেজ, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বেসরকারি স্কুল-কলেজের মধ্যে কোনো ধরনের পার্থক্য থাকা অনুচিত। তাতে শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। উচ্চশিক্ষার সবস্তরে একই ধরনের নীতিমালা দরকার।

মাধ্যমিকে স্কলারশিপ অর্জনে যে বৈরী পরিবেশ রয়েছে সেটি দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান করে মাধ্যমিকে গবেষণাকর্মে সম্পৃক্ত হওয়ার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষাসহায়তা কল্যাণ ট্রাস্ট, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যেসব প্রতিষ্ঠান উচ্চশিক্ষায় স্কলারশিপ দিয়ে থাকে মাধ্যমিকের অধিকারের বিষয়টি তাদেরও নিশ্চিত করতে হবে। আশা করি, মাধ্যমিকে উচ্চশিক্ষা নিয়ে যে অনীহা রয়েছে এসব সরকারি প্রতিষ্ঠানের স্কলারশিপ প্রদানের মাধ্যমে সেই জটিলতা অচিরে কেটে যাবে। মাধ্যমিকে একটি গবেষণা সহায়ক গতিশীল পরিবেশ ফিরে আসবে।

লেখক : পিএইচডি গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সূত্র, নয়া দিগন্ত