জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া জনগণের বিশাল অংশকে বাদ দিয়ে শুধু রাজনৈতিক দলগুলো যেসব বিষয়ে একমত হচ্ছে, তাকেই ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ বলা হচ্ছে। এতে জনগণের অভিপ্রায় এবং আকাঙ্ক্ষা বাদ পড়ে যাচ্ছে এবং রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী যা মানবে তাকেই জুলাই সংস্কার বলে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এখন দেখা যাক জুলাই সনদের ১২টি প্রস্তাবে কী আছে। এসব প্রস্তাবকে আবার ‘মৌলিক সংস্কার’ বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যদিও এগুলো কোনোভাবেই মৌলিক নয়, বরং এগুলো দায়সারা গোছের কসমেটিক সংস্কারই বলা যায়।
সংস্কার প্রস্তাব ১ : জুলাই সনদে বলা হচ্ছে সংবিধান বাতিল নয়, বরং এর ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হবে; ‘এতে অর্থবিল ও আস্থা ভোট ছাড়া অন্য যেকোনো বিষয়ে সংসদ সদস্যরা দলের বিপক্ষে ভোট দিতে পারবেন। বিএনপির এতেও ভিন্নমত আছে—দলটি বলছে, জাতীয় নিরাপত্তা এবং সংবিধান সংশোধনের বেলায়ও এমপিরা দলের বিপক্ষে ভোট দিতে পারবেন না।’ এর মানে হচ্ছে ৭০ অনুচ্ছেদ রয়েই যাবে। কারণ অর্থবিল ও আস্থা ভোট, জাতীয় নিরাপত্তা—এসব বিষয়ে যদি এমপিরা দলের বাইরে মতামত দিতে না পারেন, তাহলে এমপিদের স্বাধীনতা আর থাকে কই?
ফলে ৭০ অনুচ্ছেদের হালকা সংস্কার কোনোভাবেই মৌলিক সংস্কার নয়। যদি এমপিরা অনাস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণ করার ক্ষমতা না পান, তাহলে আইনসভা কীভাবে প্রধানমন্ত্রী মানে নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতার চেক অ্যান্ড ব্যালান্স রক্ষা করবে? আমেরিকায় কিন্তু নির্বাহী বিভাগের প্রস্তাবিত অর্থবিল আটকে দেওয়ার ক্ষমতা আছে কংগ্রেসের। সংসদীয় গণতন্ত্রে প্রধানমন্ত্রী যেহেতু সরাসরি জনগণের ভোটে না, বরং এমপিদের ভোটে নির্বাচিত হন, সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণের জন্য অনাস্থা ভোট দেওয়ার ক্ষমতা অবশ্যই এমপিদের হাতে থাকতে হবে (যুক্তরাজ্যে তাই আছে)।
যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক কাঠামোতে সংসদ বা আইনসভার কাছে ব্যাপক ক্ষমতা থাকে, যা নির্বাহী বিভাগের মানে প্রধানমন্ত্রীর কাজের জবাবদিহি নিশ্চিত করে। এমনকি সংসদ প্রধানমন্ত্রীকে অনাস্থা ভোটে অপসারণও করতে পারে। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ বাংলাদেশের আইনসভার কাছ থেকে অনাস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রী অপসারণের ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে। ফলে বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্র আসলে ব্রিটিশ সংসদীয় গণতন্ত্র না, এটি নির্বাহী বিভাগ এবং প্রধানমন্ত্রীকেন্দ্রিক নির্বাচিত স্বৈরতান্ত্রিক কাঠামো। ৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল না করে আসলে এখানে সংসদীয় গণতন্ত্র চর্চা হবে না।
বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক চর্চাকে আরো সমৃদ্ধ করার জন্য দরকার সংসদীয় স্বৈরতন্ত্র বিলুপ্ত করে জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতির শাসনব্যবস্থা চালু করা, যেখানে রাষ্ট্রপতি নির্বাহী বিভাগের প্রধান হবেন। রাষ্ট্রপতির নির্বাহী ক্ষমতার ওপর সংসদের কার্যকর নিয়ন্ত্রণ থাকবে এবং সংসদ তার সিদ্ধান্তগুলোর চেক অ্যান্ড ব্যালান্স রক্ষা করবে।
সংস্কার প্রস্তাব ২ : ‘সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিত্ব : সরকারি হিসাব, অনুমিত হিসাব, সরকারি প্রতিষ্ঠান ও বিশেষ অধিকার সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি এই চারটিসহ জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি পদ সংসদে আসনের সংখ্যানুপাতে বিরোধী দলের মধ্য থেকে দেওয়া হবে। অর্থাৎ বিরোধী দলগুলো সংসদে যে কটি আসন পাবে, তার অনুপাতে সংসদীয় কমিটির সভাপতি পদ পাবে। ‘এটি বিরোধী দলের হাতে কিছু ক্ষমতা দেবে এবং নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা প্রয়োগে কিছু ভারসাম্য আনবে। কিন্তু এটিও মৌলিক সংস্কার নয়।’
নির্বাহী বিভাগ এবং প্রধানমন্ত্রীকেন্দ্রিক নির্বাচিত স্বৈরতান্ত্রিক কাঠামো, সংসদীয় সার্বভৌমত্বকেন্দ্রিক পার্লামেন্টারি ক্লেপ্টোক্রেসির (ব্যবসায়ী অলিগার্কদের সংসদীয় দখলদারি) সব ক্ষমতা কাঠামো বহাল রেখে বিরোধী দলের কয়েকজনকে সংসদীয় কমিটির পদ দিয়ে পুরোনো সিস্টেম চালু রাখার কৌশল নেওয়া হচ্ছে। এগুলো জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে প্রতারণা।
এ কারণেই দরকার নতুন সংবিধান প্রণয়ন। সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে যে—
১. সংসদ নয়, ব্যক্তিই সার্বভৌম (মাইক্রো লেভেলে) এবং জনগণই সার্বভৌম (মাইক্রো লেভেলে)। ফলে পার্লামেন্ট কোনোভাবেই নাগরিকের অধিকার হরণকারী কোনো আইন পাস করতে পারবে না।
২. সংবিধানে উল্লেখ থাকতে হবে পার্লামেন্ট দেশি-বিদেশি বৃহৎ করপোরেশনের কায়েমি স্বার্থ, পুঁজির অবাধপ্রবাহ নিশ্চিত করার জন্য কোনো আইনি প্রোটেকশন দেওয়া অবৈধ এবং জনগণের সামগ্রিক কল্যাণকেই প্রায়োরিটি দিতে হবে এবং
৩. দেশি-বিদেশি চুক্তি স্বাক্ষর এবং অধ্যাদেশ চালু করতে হলে শুধু এমপিদের ভোটই নির্ধারক ভূমিকা পালন করবে না; বরং পাশাপাশি জনগণের নানা অংশের সঙ্গে ডায়ালগ বাধ্যতামূলক থাকবে এবং জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গণভোট দিতে হবে।
বাংলাদেশের সংসদীয় শাসনব্যবস্থার মধ্যে লুটেরা, মাফিয়া ও অলিগার্ক শ্রেণির দখলদারিত্ব রোধে কোনো রূপরেখা জুলাই সনদের প্রস্তাবে নেই। নির্বাচনি ব্যবস্থার মৌলিক সংস্কারের মাধ্যমে ব্যবসায়ী অলিগার্কদের সংসদীয় দখলদারি নির্মূল করতে হবে। এমপিদের কাজ আইনপ্রণয়ন ও প্রশাসনের ওপর চেক অ্যান্ড ব্যালান্সে সীমিত রাখতে হবে এবং উন্নয়নকাজ স্থানীয় সরকারের হাতে হস্তান্তর করতে হবে।
সংস্কার প্রস্তাব ৩-৯ : নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা, বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ (রাজধানীর বাইরে প্রতিটি বিভাগে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ থাকবে), পর্যায়ক্রমে উপজেলা পর্যায়ে নিম্ন আদালত স্থানান্তর, জরুরি অবস্থা জারির ক্ষেত্রে মন্ত্রিসভার অনুমোদন নেওয়ার ধারা যুক্ত করা, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ পদ্ধতির সংস্কার (আপিল বিভাগের কর্মে জ্যেষ্ঠতম বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি), নির্বাচন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে সার্চ কমিটি গঠন (জাতীয় সংসদের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার (বিরোধী দল থেকে নির্বাচিত), প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা এবং প্রধান বিচারপতির প্রতিনিধি হিসেবে আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি) জুলাই সনদের এই ছয়টি প্রস্তাবের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছেছে। কিন্তু এসব প্রস্তাব কীভাবে ‘মৌলিক সংস্কার’ হয়? এগুলো রুটিন সংস্কারেও পড়ে, যা এমনিতেই হওয়ার কথা।
সংস্কার প্রস্তাব ১০ : ‘একই ব্যক্তি একসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান থাকতে পারবেন না, এমন বিধান করার বিষয়ে তিন-চতুর্থাংশ দল একমত হয়েছে। বিএনপিসহ যারা একমত হয়নি, তারা জাতীয় সনদে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিতে পারবে। ‘এটি অবশ্যই ভালো প্রস্তাব। কিন্তু বড় দল হিসেবে বিএনপি যদি এই প্রস্তাব না মানে, তাহলে এটি জুলাই সনদে রেখে কী লাভ?’
সংস্কার প্রস্তাব ১১ : ‘একজন ব্যক্তি তার সমগ্র জীবনে সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন।’ দেশের ঔপনিবেশিক-ফ্যাসিস্ট-লুটেরা মাফিয়া সিস্টেমের ক্ষমতাবলয় অক্ষত রেখে এক ব্যক্তি তার সমগ্র জীবনে সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন ধারা যুক্ত করে কী লাভ? এগুলো তো জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রধান জনআকাঙ্ক্ষা না। ঔপনিবেশিক-ফ্যাসিস্ট-লুটেরা মাফিয়া সিস্টেমের কলকবজা দূর না করে এর মাধ্যমে আইওয়াশ করা হচ্ছে।
সংস্কার প্রস্তাব ১২ : ‘স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করা হবে’। এটি দরকারি কাজ। কিন্তু বলপ্রয়োগ বা সহিংসতার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা রাষ্ট্রীয় কাঠামো বিলুপ্ত করে জনগণের অধিকার ও মর্যাদার ভিত্তিতে নতুন কাঠামো প্রতিষ্ঠা না করে খালি স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন পর্যাপ্ত নয়। ১৮৬১ সালের পুলিশ আইন, ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধি আমূল সংস্কার বা বাতিল না করে পুলিশ সংস্কার হবে না।
এই পুরো আলাপে দেখা যাচ্ছে, জুলাই সনদে আসলে দেশের ফ্যাসিবাদী-ঔপনিবেশিক-মাফিয়া কাঠামোর কলকবজা প্রায় অক্ষত রেখে কসমেটিক সংস্কারের প্রস্তাব দিয়ে ভরিয়ে রেখে জনগণকে ধোঁকা দেওয়া হচ্ছে। এই জুলাই সনদ হচ্ছে জুলাই হাইজ্যাক করার দলিল। কেননা জুলাই সনদের নিচের কোনো কিছুই উল্লেখ নেই—
১. জনগণের সার্বভৌমত্ব ও অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রের ভিত্তিতে একটি নতুন র্যাডিক্যাল গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রণয়নের কোনো কথা নেই জুলাই সনদে।
২. ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন, র্যাব আইন-২০০৩-সহ সব দমনমূলক ও ঔপনিবেশিক আইন বাতিলের কোনো কথা নেই জুলাই সনদে। এর অর্থ হলো, বলপ্রয়োগের ওপর প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রযন্ত্র অক্ষত থাকবে।
৩. ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রযন্ত্র ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলো গণতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনা এবং জনগণের অধিকারকেন্দ্রিক প্রশাসনিক কাঠামো তৈরি করার ব্যাপারে কিছুই বলা নেই জুলাই সনদে।
৪. র্যাব বিলুপ্ত করা, এনটিএমসির মতো জঘন্য প্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত করা, ডিজিএফআইয়ের কর্মকাণ্ড সীমিত করা, সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার রাজনৈতিক ব্যবহার বন্ধ করা, সামরিক এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর গণতান্ত্রিক জবাবদিহি নিশ্চিত করার ব্যাপারে কোনো কিছুই নেই জুলাই সনদে।
৫. জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে গণভোটের ব্যবস্থা নিয়ে কোনো কিছুই নেই জুলাই সনদে।
৬. বিকেন্দ্রীভূত, ক্ষমতায়নকৃত ও জনগণের অংশগ্রহণভিত্তিক স্থানীয় সরকারব্যবস্থা গড়ে তোলার ব্যাপারে কিছুই নেই জুলাই সনদে।
ফলে জুলাই সনদ নামে যেসব প্রস্তাব নিয়ে আলাপ হচ্ছে, এগুলো আসলে বাংলাদেশের যে ফ্যাসিবাদী-ঔপনিবেশিক-মাফিয়া ক্ষমতা কাঠামো, তা অক্ষত রেখে ক্ষমতার নানা কেন্দ্রে হালকা চেক অ্যান্ড ব্যালান্সের আলাপ। এগুলোকে জুলাই সনদ কেন বলছে ইউনূস সরকার? এগুলো এমনকি ৯০-এর অভ্যুত্থানের পরের সংস্কার প্রস্তাবের মতোই দায়সারা গোছের। জুলাই সনদে থাকা দরকার ছিল কীভাবে দেশের ফ্যাসিবাদী-ঔপনিবেশিক-মাফিয়া রাষ্ট্রকাঠামো এবং কলকবজাগুলো দূর করা হবে, তার রূপরেখা। ফলে জুলাই সনদ পুরোনো কাঠামো অক্ষত রাখার একটা কৌশল। মোট ১০ বছরের বেশি একজন প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না, উচ্চকক্ষ প্রবর্তন, এই টাইপ কসমেটিক সংস্কার স্বাভাবিক সময়েই করা যায়, তার জন্য জুলাই গণঅভ্যুত্থান লাগে না।
শোষণ-জুলুম অব্যাহত রাখার ঔপনিবেশিক আমলাতন্ত্র, মাফিয়া বিজনেস অলিগার্ক, মাফিয়া গোয়েন্দা সংস্থা, পার্লামেন্টারি স্বৈরতন্ত্র ও ক্লেপটোক্রেসি, নিবর্তনমূলক আইনকানুন, গণনিপীড়নের হাতিয়ার পুলিশ আইন, গণসার্বভৌমত্ব-বিবর্জিত এলিট শাসনপ্রণালির সংবিধান, নাগরিক অধিকারহীন রাষ্ট্রকাঠামো বাতিল করে একটি গণতান্ত্রিক গঠনতন্ত্র তৈরির রূপরেখা দরকার ছিল আমাদের। এসব না করে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে হালকা সংস্কারের যে জুলাই সনদ হতে যাচ্ছে, তা জুলাই গণবিপ্লবের প্রতি সবচেয়ে বড় অবিচার।
জুলাই সনদের খসড়া পড়ে হতাশ হলাম। এতে একটা রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট অনেকটাই দুর্বল হয়ে গেছে। খসড়ায় জুলাইকে স্রেফ একটা স্বৈরাচারবিরোধী কাঠামো হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে। ফ্যাসিবাদী মাফিয়া সরকারের বিরুদ্ধে এবং আঞ্চলিক শক্তির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার যে লড়াই, তাকে নাই করে দেওয়া হয়েছে এই সনদে। এভাবে জুলাইকে স্রেফ ৯০-এর মতো একটা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন হিসেবে বয়ান তৈরি করে একে নির্জীব করে দেওয়ার একটা চেষ্টা হিসেবে জুলাই সনদ হাজির করা হচ্ছে।
জুলাইয়ের বিশেষত্ব হচ্ছে এটিই একমাত্র গণবিপ্লব, যার মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হয়েছে। ৯০-এর সঙ্গে এটাই ২৪-এর পার্থক্য। ফ্যাসিবাদবিরোধী এবং নব্য-উপনিবেশবাদী আগ্রাসনবিরোধী বয়ান বাতিল করে শুধু স্বৈরাচার বিরোধিতার বয়ান হাজির করা যে কি গুরুতর ভুল, তা অনেকেই এখন বুঝতে ও ধরতে পারছেন না। ‘জুলাই সনদ’ কসমেটিক সংস্কারের প্রস্তাব এনে জুলাইয়ের বৈপ্লবিক গুরুত্বকেই শুধু নষ্ট করছে না, একই সঙ্গে এটি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ভাষা-বয়ানও কেড়ে নিয়ে একে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়ার একটা গণবিরোধী কর্মও।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, ফার্মেসি অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়