এক. প্রতি শনিবার সমসাময়িক বিষয়ে লিখি। রোববার ছাপা হয়। গত সপ্তাহে লিখতে পারিনি। হাসপাতালের বেডে ছিলাম। মগবাজারের ইনসাফ-বারাকাহ হাসপাতালের ৭১৪ নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন ছিলাম। পাশের ৭১৫ নম্বর কেবিনটি ছিল আমার দেশ-এর প্রিয় সম্পাদক মাহমুদ ভাইয়ের মমতাময়ী মা অধ্যাপিকা মাহমুদা বেগমের জন্য। যদিও মহান রবের ডাকে সাড়া দেওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি আইসিইউতেই ছিলেন। স্বজনরা ওই কেবিনে বসে চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের বোর্ড বসিয়েছেন এবং চিকিৎসার অগ্রগতির খোঁজ রেখেছেন।

আমি সুস্থ হয়ে যেদিন বাসায় ফিরেছি, সেদিনই মাহমুদা বেগমও গুলশানের ৭৭ নম্বর রোডের ১ নম্বর বাড়িতে ফিরেছেন। তবে তিনি ফিরেছেন কফিনে মুড়ে, ফ্রিজার ভ্যানে চড়ে। শ্রদ্ধাভাজন প্রবীণ শিক্ষাবিদ মাহমুদা বেগম ছিলেন অত্যন্ত দৃঢ় মনোবলের এক বিদুষী নারী। যতবার দেখা হয়েছে, তার ব্যক্তিত্ব ও সাদামাটা জীবন অভিভূত করেছে। আমাদের সঙ্গে নিজ সন্তানের মতোই পরম মততায় কথা বলেছেন। একমাত্র সন্তানের ওপর রাষ্ট্রীয় ভয়াবহ নিপীড়ন, রিমান্ড, নির্যাতন ও নির্বাসনের বিভীষিকাময় দিনগুলোয় পাহাড়ের মতো অটল-অবিচল ছিলেন। কখনো ভেঙে পড়েননি। সাহস জুগিয়েছেন সন্তানকে, আমাদের।

ছেলে ড. মাহমুদুর রহমান যখন জীবনের নিরাপত্তাহীনতার মুখোমুখি হয়ে দীর্ঘ ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়েছেন, তখন বার্ধক্যের নানা জটিলতা নিয়ে অধ্যাপিকা মাহমুদা বেগম গুলশানে একা নিঃসঙ্গ জীবন কাটিয়েছেন। পুত্র ও পুত্রবধূর অনুরোধেও বিদেশমুখো হননি। শঙ্কা ছিল রাষ্ট্রীয় রোষানলে পড়ার, মহাবিপদের। কারণ তার বিরুদ্ধেও আমার দেশ প্রকাশনা-সংক্রান্ত মামলা ছিল। সেসব তোয়াক্কা করেননি। মিন্টো রোডের ডিবি অফিসে সন্তান যখন রিমান্ডে নির্যাতিত হচ্ছেন, তখন দিনরাত একাকার করে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে ডিবি অফিসের সামনের ফুটপাতে বসে ছিলেন। ঘোর অমানিশার দিনগুলোয়ও সন্তানকে আপসের পরামর্শ না দিয়ে শির উঁচু রাখতে উৎসাহ দিয়েছেন, সাহস জুগিয়েছেন। রত্নগর্ভা মহীয়সী এ নারীকে আল্লাহ জান্নাতবাসী করুন।

এবারের লেখাটি ফেনী-নোয়াখালী অঞ্চলের বানভাসি মানুষদের দুর্দশা ও কষ্টগাথায় সীমিত রাখার ইচ্ছা ছিল। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের দায়িত্বহীনতা ও সময়োপযোগী পদক্ষেপের অভাব একটি সমৃদ্ধ অঞ্চলের মানুষকে কীভাবে বারে বারে বিপন্ন করে তুলছে, দিনে দিনে নিঃস্ব করছে, সে চিত্রের মধ্যেই এবারের লেখা সীমাবদ্ধ রাখাতে চেয়েছিলাম। এ ছাড়া লেখা যেত সপ্তাহের অন্যতম আলোচিত ইস্যু জুলাই অভ্যুত্থানকালে মানবতাবিরোধী অপরাধ নিয়ে বিবিসির অনুসন্ধানী রিপোর্ট, শেখ হাসিনার লিথল ওয়েপন ব্যবহারের নির্দেশ-সংক্রান্ত অডিও, যাত্রাবাড়ীতে ৩০ মিনিটে ৫২ জনকে হত্যা ও হাসিনার আইজিপির ‘রাজসাক্ষী’ হওয়ার মাজেজা নিয়ে। সেসব ইস্যু পাশে রাখছি আপাতত।

ফেনী-নোয়াখালীর অনেক এলাকা এখনো পানিতে ডুবে আছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, কোথাও কোথাও বেড়িবাঁধের ওপর দিয়েও নদীর পানি উপচে পড়ছে। সংবাদপত্রের খবর অনুযায়ী, এ পর্যন্ত প্লাবিত হয়েছে ফুলগাজীর ৬৭টি, পরশুরামের ২৭টি, ছাগলনাইয়ার ১৫টি, দাগনভূঞার দুটি আর ফেনী সদরের একটি গ্রাম। এ ছাড়া রেকর্ড বৃষ্টিতে ফেনী শহরও দুদিন থইথই পানিতে নিমজ্জিত ছিল। ফেনী-পরশুরাম সড়কের অনেক জায়গায় এখনো যান চলাচল বন্ধ। বল্লামুখায় ভারত অংশে বাঁধ ভেঙে বাংলাদেশ অংশে পানি ঢুকেছে। ফেনী জেলায় ৮৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৯ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।

গত বৃহস্পতিবার ফেনী ও নোয়াখালীর বন্যা ও জলাবদ্ধতার পরিস্থিতি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আলোচনা হয়েছে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানায়, গত বছরের ভয়াবহ বন্যায় ভেসে যাওয়া সোনাগাজী ও কোম্পানীগঞ্জ সীমান্তবর্তী মুসাপুর রেগুলেটর পুনর্নির্মাণ এবং বামনী ক্লোজারের নকশা চূড়ান্ত করা হয়েছে। ফেনী জেলায় একটি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজও চূড়ান্তকরণের পথে। সভায় জানানো হয়, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ফেনী ও নোয়াখালীর ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ, তীর প্রতিরক্ষা এবং পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে। যদিও কোথায় কীভাবে চলমান রয়েছে, তা দৃশ্যমান নয়।

ফেনী-নোয়াখালী দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চল নয়। এ অঞ্চলের মানুষ মোটামুটি স্বাবলম্বী। অধিকাংশ পরিবারে রয়েছেন রেমিট্যান্স যোদ্ধা। তারা প্রবাসে গতর খেটে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠান। তা দিয়ে রাষ্ট্রের অর্থনীতি যেমন পুষ্ট হচ্ছে, তেমনি পরিবারে আছে স্বাচ্ছন্দ্য। ফলে উপদ্রুত এলাকার মানুষ চাল-ডাল, চিড়া-গুড় ও শাড়ি-লুঙ্গি-ঢেউটিনের দিকে তাকিয়ে নেই। তারা চান স্থায়ী সমাধান। তাদের দাবি, বন্যা মোকাবিলায় ৭ হাজার ৩৪০ কোটি টাকার যে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, সেটি যেন দ্রুততম সময়ে সঠিক মানে বাস্তবায়িত হয়। প্রতিবছর তাদের সাজানো সংসারটা যেন তছনছ না হয়। ফসলের মাঠ, মাছের ঘের ও গোয়ালের গবাদি পশু যেন ভেসে না যায়।

দুই.

রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯)। গত বুধবার (৯ জুলাই) বর্বরোচিত এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। হত্যার আগে ডেকে নিয়ে তাকে পিটিয়ে এবং ইট-পাথরের টুকরা দিয়ে আঘাত করে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশ থেঁতলে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে তাকে বিবস্ত্র করা হয়। তার শরীরের ওপর উঠে লাফায় কয়েকজন নরপিশাচ। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ, মামলার এজাহার, নিহত লাল চাঁদের স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা এবং তদন্ত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বর্ণনায় হত্যাকাণ্ডের ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে।

মিটফোর্ড (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) হাসপাতালের সামনে ব্যস্ত সড়কে প্রকাশ্যে নৃশংস এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। এ ঘটনায় যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীদের সম্পৃক্ততা সামনে এসেছে। মামলার তদন্তকারী ও স্থানীয় সূত্রগুলোর বরাতে সংবাদপত্রের খবরে জানানো হয়েছে, হত্যাকাণ্ডের পেছনে মূল কারণ চাঁদাবাজি ও ব্যবসা দখল। নিহত লাল চাঁদও যুবদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

লাল চাঁদ হত্যার ঘটনায় রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় বৃহস্পতিবার একটি মামলা করা হয়েছে। নিহতের বোন মঞ্জুয়ারা বেগম মামলাটি করেছেন। শুক্রবার পর্যন্ত র‌্যাব-পুলিশ হত্যাকাণ্ডে জড়িত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের একজনের কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের কথাও জানিয়েছে র‌্যাব। সাম্প্রতিক সময়ে চাঞ্চল্যকর হত্যা-ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তরা দ্রুত গ্রেপ্তার হয়েছে, বিচারের মুখোমুখি হচ্ছে—এটা যেমন স্বস্তির, একই সঙ্গে এ প্রশ্নও উঠছে, ঘটনার পর গ্রেপ্তার করে মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ কি সৃষ্টি করা যাবে। কেউ কোথাও নিরাপদ নয়, এটাই জানান দিচ্ছে ঘটনাগুলো। অবৈধ অস্ত্রের যথেচ্ছ ব্যবহার ক্রমাগতভাবে যে বাড়ছে, তার প্রতিকার কোথায়?

প্রকাশ্যে পিটিয়ে ও আঘাত করে নৃশংসভাবে হত্যার এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে নিথরভাবে পড়ে থাকা লাল চাঁদের শরীরের ওপর কয়েকজন ব্যক্তিকে কংক্রিটের বড় খণ্ড দিয়ে আঘাত করতে দেখা যায়। এ ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলো তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। কয়েকটি সংগঠন শুক্রবার রাতে ক্যাম্পাসে মিছিল করেছে। মিছিল হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, জগন্নাথ ও ইডেন ক্যাম্পাসে। মিছিলের স্লোগানেও নতুন মাত্রা ছিল। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে স্লোগান দিয়ে তাকে এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের দায় নিতে বলেছেন বিক্ষোভকারীদের কেউ কেউ। ছাত্রদলও ক্যাম্পাসে মিছিল করেছে হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে। বিএনপির রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলছেন, ফ্যাসিস্টের ভূমিকায় কাউকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হতে দেওয়া হবে না।

এরই মধ্যে শুক্রবার সন্ধ্যায় যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল সোহাগ হত্যার কয়েক আসামিকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছে। মিটফোর্ডের ঘটনা দেশের রাজনীতিকে বড় ধরনের ঝাঁকুনি দিয়েছে। বিশেষত আসন্ন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাপ্রত্যাশী বিএনপিকে বেশ চাপের মুখে ফেলেছে। এ ধরনের হত্যাকাণ্ড এটি প্রথম নয়। গত বছর ৫ আগস্টে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতন ও পলায়নের পর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের অভ্যন্তরীণ ও আধিপত্য বিস্তারের সংঘাতে অন্তত অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মীর প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। আবার দলের তরফে অপরাধে জড়িয়ে পড়া প্রায় চার হাজার নেতা-কর্মীকে বহিষ্কারের কথা জানানো হয়েছে। কিন্তু কিছুতেই থামছে না। তারেক রহমান অ্যাকশনে আছেন। হুঁশিয়ারিও অব্যাহত রেখেছেন। সবই বিফলে যাচ্ছে। অবশ্য একেবারে বিফলে যাচ্ছে, তাও বলা যাবে না। দলীয় শীর্ষ নেতৃত্বের কঠোর অবস্থান না থাকলে এ ধরনের ঘটনা হয়তো আরো অনেক বেশি ঘটতে পারত।

মিটফোর্ডের ঘটনায় সরাসরি তারেক রহমানকে অভিযুক্ত করে যারা স্লোগান দিচ্ছেন, তাদের উদ্দেশ্য যে রাজনৈতিক, তা উল্লেখ করা বাহুল্য; নির্বাচনি রাজনীতির অংশ। নয়াপল্টনে চাঁদা নিয়ে লন্ডনে পাঠানো হয়—এমন স্লোগান বা অভিযোগও বিশ্বাসযোগ্য নয়। যে দলটির সামনে ক্ষমতা হাতছানি দিচ্ছে, সে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব প্রকাশ্যে বা গোপনে অপরাধীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেবেন, আস্কারা দেবেন, তা কোনো শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ বিশ্বাস করবে না। তাহলে কেন দলীয় নেতা-কর্মীদের অপরাধপ্রবণতা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না? দেড় দশক ধরে সামাজিক অপরাধ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এতটাই শিকড় গেড়েছে যে এটির মূলোৎপাটন সহজ নয়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীতে ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের অনুগতরা এখনো বহাল। তারা নিষ্ক্রিয় নীরব দর্শক। ক্ষেত্রবিশেষে উসকানি দিচ্ছে। আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে ফেরানোর নানা কৌশল যখন ব্যর্থ হয়েছে, তখন এ ধরনের নৃশংস ও বর্বরোচিত ঘটনা ঘটতে দিয়ে এক ঢিলে বহু পাখি মারছে। ড. ইউনূস সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করা যাচ্ছে। অনাগত সরকারি দলকেও চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করানোর ফায়দা আছে। গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিগুলোকে বিভাজিত করা যাচ্ছে। ১৫ বছরের গুম-খুন, পৈশাচিকতা ও বর্বরতার অপরাধগুলো লঘু করা ও আড়ালে ঠেলে দেওয়ার সুবিধা তো আছেই। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীতে ঘাপটি মেরে থাকা আওয়ামী অনুগতদের হয়তো এখন এটাই কৌশল।

বুধবারের ঘটনা প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পর শুক্রবার সামনে এলো কেন? ভিডিও ফুটেজ ও ছবি ভাইরাল হওয়ার আগে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কী করেছে? রাজধানীতে সংঘটিত এমন একটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের খবর মিডিয়াই বা কেন জানতে পারল না? সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাজ কী? এ প্রশ্নগুলোর সদুত্তর পাওয়া জরুরি। দিনের বেলায় প্রকাশ্যে শত শত মানুষের সামনে পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড ও লাশের ওপর উন্মত্ততা দেখেও মানুষজন কেন এগিয়ে এলো না, সে প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে। দুটি কারণে এমনটা হতে পারে। যাকে খুন করা হয়েছে, তার প্রতিও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অসন্তোষ থেকে থাকতে পারে। আবার খুনিরা এতটাই দুর্ধর্ষ ও বেপরোয়া যে এগিয়ে যাওয়া নিজেদের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করেছে সাধারণ মানুষ।

মিটফোর্ডের পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডে তোলপাড়ের মধ্যেই খুলনায় আরেক চাঞ্চল্যকর হত্যার ঘটনা ঘটেছে। জুমার পর নিজ বাড়ির সামনে গাড়ি পরিষ্কার করার সময় যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মাহবুবুর রহমান মোল্লাকে গুলি করে এবং পায়ের রগ কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। দিনদুপুরে মোটরসাইকেলে এসে এলোপাতাড়ি গুলি করেই তারা থামেনি, মৃত্যু নিশ্চিত করতে ঠান্ডা মাথায় দুপায়ের রগ কেটেছে। নিহত মাহবুব আলোচিত যুবদল নেতা। সম্প্রতি কুয়েটে এক সহিংসতায় হাতে রাম-দা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার সময়কার একটি ছবি ভাইরাল হয়। তখন তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। ওই ভাইরাল ছবিটিই যেন তার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পক্ষে যৌক্তিকতা দাঁড় করাচ্ছে! এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে তেমন প্রতিক্রিয়া নেই। রাম-দা হাতে মহড়া দেওয়ার কারণে তো তার গ্রেপ্তার হয়ে জেলে থাকার কথা, বিচারের মুখোমুখি হওয়ার কথা। তা না হয়ে নিজ বাড়ির সামনে এভাবে খুন হবেন, আর তা রাম-দার ছবি দিয়ে জাস্টিফায়েড হয়ে যাবে, এ কেমন মানসিকতা? কারা তাকে হত্যা করল, তা এ লেখা শুরু করা পর্যন্ত পরিষ্কার হয়নি।

মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ সৃষ্টি করতে না পারলে যেকোনো সরকারের অনেক ভালো কাজও যে মানুষের কাছে মূল্যহীন হয়ে যায়, তা নিকট অতীতে প্রমাণিত হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীতে কাঙ্ক্ষিত শুদ্ধি অভিযান প্রায় এক বছরেও সম্পন্ন না হওয়া হতাশাজনক। বাহিনীর যেসব কর্তারা বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ক্ষমতার হিসাবনিকাশ করে নির্লিপ্ত ভূমিকায় রয়েছেন, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা খুবই জরুরি।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও রাজনীতি বিশ্লেষক

সূত্র, আমার দেশ